এ সপ্তাহের হাইলাইটস
যোনিপথের ম্যাসাজ করা শুরু করুন
এ সপ্তাহ থেকে যোনিপথের বিশেষ ম্যাসাজ শুরু করুন। তাহলে প্রসবের সময়ে এই জায়গাতে ছেঁড়া-ফাটা হওয়ার সম্ভাবনা কমতে পারে।[১] যারা প্রথমবারের মতো মা হচ্ছেন, তাদের জন্য এই ম্যাসাজ বিশেষভাবে উপকারী।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন
এসময়ে শরীর সুস্থ রাখতে হাঁটাহাঁটি চালিয়ে যান। হাঁটার সময়ে প্রথম কয়েক মিনিট স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তারপর দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে দ্রুত হাঁটুন। দ্রুত হাঁটা শেষ হলে ৫–১০ মিনিট স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে শেষ করুন।
এক পাশে কাত হয়ে ঘুমান
এ সপ্তাহেও ঘুমানোর সময়ে আপনার সুবিধামতো ডান অথবা বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমাবেন। কারণ চিৎ হয়ে ঘুমালে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।[২][৩] ঘুমের সময়ে সাপোর্ট দেয় এমন আরামদায়ক কয়েকটা বালিশ নিয়ে ঘুমাতে পারেন।
আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান
বিগত সপ্তাহগুলোর মতো এ সপ্তাহেও নিয়মিত আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যাবেন। এগুলো গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[৪][৫] পাশাপাশি আপনাকে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।[৬]
- মাসে কত দিন? ৮ মাস ৩ সপ্তাহ
- কোন ট্রাইমেস্টার? তৃতীয় ত্রৈমাসিক
- আর কত সপ্তাহ বাকি? ৫
৩৫ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি
আপনার গর্ভের শিশু এখন মাথা থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত প্রায় ৪৬.২ সেন্টিমিটার লম্বা—প্রায় দুটি পেঁপের সমান। তার ওজন এখন প্রায় ২.৪ কেজি।
ছোট্ট শিশু দিন দিন আরও নাদুস-নুদুস হচ্ছে
গর্ভের শিশুর দ্রুত ওজন বাড়ছে এবং শরীরে বেশি বেশি করে চর্বি জমছে।[৭] তার হাত-পাগুলো দেখতে এখন অনেকটা নাদুস-নুদুস লাগে।[৮] তার ত্বকও কোমল ও তুলতুলে হয়ে যাচ্ছে।[৯]
ছোট্ট শিশু গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে
আপনার গর্ভের ভেতরে ছোট্ট শিশু এখন বেশ বড়সড় হয়ে গিয়েছে। তার হাত-পা মেলে শুয়ে থাকার মতো জায়গা কিছুটা কম। তাই সে এখন হাত-পা কুঁকড়ে কিছুটা গুটিসুটি হয়ে শুয়ে থাকে।
শিশু নিয়মিত নড়াচড়া করছে
গর্ভের ভেতরে শিশুর নড়াচড়ার জায়গা কমে যাচ্ছে দিন দিন। তবে সে ক্রমাগত নড়াচড়া করে যাচ্ছে। এখনো আপনি আগের সপ্তাহগুলোর মতোই তার নড়াচড়া অনুভব করতে পারবেন।[১০]
যদি কোনো কারণে মনে হয় শিশুর নড়াচড়া স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গিয়েছে, তাহলে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।[১১]
নড়াচড়া কমে যাওয়া মানেই যে খারাপ কিছু ঘটে গেছে, এমন না। তবে ডাক্তার দেখিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া প্রয়োজন।
নড়াচড়া কমেছে কি না সেটা বুঝতে কষ্ট হলে বাম কাত হয়ে ২ ঘন্টা শুয়ে থাকুন। এসময়ে ১০ বারের কম নড়াচড়া টের পেলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।[১২]
৩৫ সপ্তাহে মায়ের শরীর
যোনিপথের ম্যাসাজ
যোনিপথ ও পায়খানার রাস্তার মাঝখানে যে জায়গাটা থাকে, তাকে ‘পেরিনিয়াম’ বলা হয়। পেরিনিয়ামে এ সপ্তাহ থেকে নিয়মিত ম্যাসাজ করা শুরু করুন। তাহলে প্রসবের সময়ে এই জায়গাতে ছেঁড়া-ফাটা হওয়ার সম্ভাবনা কমতে পারে।[১৩] যারা প্রথমবারের মতো মা হচ্ছেন, তাদের জন্য এই ম্যাসাজ বিশেষভাবে উপকারী।
পেরিনিয়াম ম্যাসাজ করার জন্য প্রথমে হাতের নখ ছোটো করে কেটে হাত পরিষ্কার করে নিন। এবার যোনির ভেতরে দুই হাতের বুড়ো আঙুল ঢোকান। এবার আঙুল দিয়ে নিচের দিকে, অর্থাৎ পেরিনিয়ামের দিকে ম্যাসাজ করুন। ডানে-বামে কিংবা ইংরেজি U এর মতো প্যাটার্নে ম্যাসাজ করতে পারেন।
ম্যাসাজের বিস্তারিত নিয়ম জানতে আমাদের এই লেখাটা পড়তে পারেন।
গর্ভকালীন চেকআপ
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে যাতায়াত বেশ কষ্টকর হয়ে ওঠে। এরপরও শিডিউল অনুযায়ী সবগুলো চেকআপে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে আপনার ও শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসতে পারে, যা সাধারণ অবস্থায় বোঝা যায় না। যেমন, আপনার রক্তচাপ কোনো লক্ষণ প্রকাশ করা ছাড়াই বেড়ে যেতে পারে।
চেকআপের সময়ে করা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এই জটিলতাগুলো ধরে ফেলে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়।
পানি ভাঙা
গর্ভের ভেতরে শিশু একটা পানি-ভর্তি থলের মধ্যে থাকে। ডাক্তারি ভাষায় এই বিশেষ পানিকে বলা হয় ‘এমনিওটিক ফ্লুইড’। প্রসবের কাছাকাছি সময়ে থলেটা ফেটে গিয়ে মাসিকের রাস্তা দিয়ে পানি বের হয়ে আসতে পারে।[১৪] এটাকেই অনেকে বলেন ‘পানি ভাঙ্গা।’ এটা প্রসব শুরু হওয়ার একটা লক্ষণ।
মাসিকের রাস্তা দিয়ে একসাথে অনেক পানি বের হতে পারে, আবার একটু একটু করেও চুইয়ে পড়তে পারে।[১৫] আপনার যদি মনে হয় যে আপনার পানি ভাঙছে, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যাবেন।
নবজাতকের জন্ডিস
আপনার ছোট্টমণির জন্মের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় দিনে মৃদু জন্ডিস হতে পারে।[১৬] ফলে ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলদেটে দেখাতে পারে। জন্মের পর প্রথম সপ্তাহে এমন মৃদু জন্ডিস হওয়া খুব কমন।[১৭]
সাধারণত এই জন্ডিস ১০ দিনের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায়।[১৮] তবে যদি জন্মের প্রথম ২৪ ঘন্টার মধ্যে নবজাতকের জন্ডিস দেখা দেয়, তা কোনো গুরুতর জটিলতার লক্ষণ হতে পারে।[১৯] তাই এমন হলে শিশুকে সাথে সাথে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যান।
অন্যান্য লক্ষণ
এ সপ্তাহে আপনার আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—
- পেট টান-টান বা শক্ত হওয়া। একে ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্র্যাকশনও বলা হয়
- ঘুমের সমস্যা
- স্ট্রেচ মার্ক বা ফাটা দাগ
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে পেটের চারপাশের পেশিতে ব্যথা করা
- পাইলস
- মাথা ব্যথা
- কোমর ব্যথা
- পেট ফাঁপা লাগা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা
- অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা
- পা কামড়ানো
- মাথা ঘুরানো
- হাত–পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া
- প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হওয়া
- যোনিপথে ইনফেকশন হওয়া
- মুখে মেছতার মতো বাদামি ও ছোপ ছোপ দাগ পড়া
- তৈলাক্ত ত্বক ও ত্বকে দাগ পড়া
- চুল ঘন ও ঝলমলে হওয়া
এ ছাড়াও এই সপ্তাহে আপনার প্রথম দিকের সময়ের লক্ষণগুলো থাকতে পারে। যেমন—
- ঘন ঘন মনমেজাজ বদলানো বা মুড সুইং। এই খুশি, আবার এই মন খারাপ—এমনটা হতে পারে। পাশাপাশি এসময়ে ছোটোখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা অথবা কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দিতে পারে
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
- অদ্ভুত জিনিস খাওয়ার ইচ্ছা হওয়া। যেমন: মাটি
- তীব্র ঘ্রাণশক্তি
- স্তনে ব্যথা
- স্তন থেকে তরল নিঃসৃত হওয়া
- সাদাস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
- যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত হওয়া। এমন হলে অবশ্যই একজন ডাক্তার দেখাবেন, কারণ এটা মারাত্মক জটিলতার লক্ষণ হতে পারে
এ সপ্তাহে বাবার করণীয়
যোনিপথের ম্যাসাজ করতে সাহায্য করুন
এ সপ্তাহ থেকে শিশুর মা যোনিপথের বিশেষ ম্যাসাজ শুরু করবেন। এতে প্রসবের সময়ে এই জায়গাতে ছেঁড়া-ফাটা হওয়ার সম্ভাবনা কমতে পারে।[২০] এই ম্যাসাজ করতে আপনিও সহযোগিতা করতে পারেন।
ম্যাসাজ করতে যোনির ভেতরে দুই হাতের তর্জনী আঙুল ঢোকাবেন। ডানে-বামে কিংবা ইংরেজি U এর মতো প্যাটার্নে ম্যাসাজ করবেন। ম্যাসাজ করার আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিবেন। আঙুলের নখ যাতে লম্বা না থাকে, সেদিকেও খেয়াল রাখবেন।
ম্যাসাজে সহায়তা করতে চাইলে দুজনের মধ্যে যথেষ্ট বোঝাপড়া থাকা গুরুত্বপূর্ণ। ঠিকভাবে ম্যাসাজ হচ্ছে কি না এবং শিশুর মায়ের ব্যথা কিংবা জ্বালাপোড়া হচ্ছে কি না, তা শিশুর মায়ের কাছ থেকে অবশ্যই জেনে নিবেন।
নবজাতকের ডাক্তারের ব্যাপারে খোঁজখবর নিন
শিশুর জন্মের পর বিভিন্ন কারণে তাকে নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে কোন হাসপাতাল কিংবা কোন ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকলে সবচেয়ে ভালো হবে, সেই বিষয়ে এখন থেকেই তথ্য জোগাড় করা শুরু করুন।
যেসব ডাক্তারকে দেখানোর সুযোগ আছে, তাদের কয়েকজনের ব্যাপারে খোঁজখবর নিন। তারা কোথায় বসেন, ছুটিতে গেলে কাকে দায়িত্ব দিয়ে যান, সিরিয়াল নেওয়ার ব্যবস্থা কী, কতদিন আগে থেকে সিরিয়াল দিতে হয়—এই বিষয়গুলো জানা থাকলে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে।
যদি আপনার আত্মীয় অথবা বন্ধুদের মধ্যে কারও সম্প্রতি বাচ্চা হয়ে থাকে, তাহলে তাদের অভিজ্ঞতাও জেনে নিতে পারেন। সব জেনে দুজনে আলোচনা করে বিস্তারিত আলোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
চেকআপে সাথে থাকার চেষ্টা করুন
গর্ভাবস্থার শেষের দিকের চেকআপগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসময়ে ডেলিভারির প্রস্তুতি, শিশুর জন্ম ও সম্ভাব্য নানান জটিলতা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়। তাই শেষের এই কয়েকটা চেকআপে শিশুর মাকে সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করুন।
এখন থেকে ৩৬তম সপ্তাহ পর্যন্ত সাধারণত প্রতি দুই সপ্তাহে একবার চেকআপ এবং ৩৭তম সপ্তাহ থেকে প্রসবের আগ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার চেকআপ করাতে হয়।