গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা নিয়ে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। এই পরীক্ষাটি কীভাবে করা হয়, কখন করা হয়, কী দেখা হয়, শিশু ছেলে না কি মেয়ে সেটা বোঝা যায় কি না, পরীক্ষাটি গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ কি না—সাধারণত এসব বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসা থাকে। এই প্রশ্নগুলো নিয়ে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আলট্রাসনোগ্রাফি কী?
আলট্রাসনোগ্রাফি এক ধরনের ইমেজিং বা ছবি দেখার পরীক্ষা। একে অনেকসময় সনোগ্রাম, আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা বা আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান বলা হয়। এই পরীক্ষায় বিশেষ শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে শরীরের ভেতরের অংশের ছবি দেখা যায়।
বিশেষ হাই-ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ তরঙ্গ তৈরি করা হয় ‘প্রোব’ নামক ছোটো ও ভোঁতা যন্ত্রের সাহায্যে। এই প্রোবটি শরীরের নির্দিষ্ট স্থানের সংস্পর্শে নেওয়ার মাধ্যমে সেই অংশের ছবি দেখা যায়। পরীক্ষার সময়ে যেই ছবিটি কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে ওঠে এবং পরবর্তীতে প্রিন্ট করা হয় তাকে আলট্রাসনোগ্রাম বলে।
গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফি কখন ও কেন করা উচিত?
আমাদের দেশে সাধারণত তিনবার আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়—
প্রথম আলট্রাসনোগ্রাফি
প্রথম গর্ভকালীন চেকআপের সময়ে আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। ডাক্তার আপনাকে সাধারণত গর্ভাবস্থার ১০–১৪তম সপ্তাহে প্রথম আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দিবেন। এই সময়ে পরীক্ষা করালে সাধারণত সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়। গর্ভধারণের পর বেশি আগেভাগে আলট্রাসনোগ্রাফি করালে সঠিক ফলাফল না-ও আসতে পারে।
প্রথম স্ক্যানে বেশ কিছু তথ্য উঠে আসে। যেমন: ভ্রূণ জরায়ুতে ঠিকমতো বসেছে কি না। ভ্রূণ অবস্থায় শিশু জরায়ুর বাইরে নিজেকে গেঁথে নিলে তাকে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি বলা হয়। এক্ষেত্রে শিশুটি বাঁচতে পারে না। দ্রুত সঠিক চিকিৎসা না নিলে মায়ের জীবনও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
প্রথম স্ক্যান থেকে উঠে আসা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের মধ্যে রয়েছে—
- আপনি কত সপ্তাহের গর্ভবতী
- ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ কবে
- গর্ভে যমজ বা একাধিক শিশু আছে কি না
- গর্ভের শিশু ঠিকমতো বেড়ে উঠছে কি না
- এ ছাড়া শিশুর কিছু শারীরিক অবস্থা নির্ণয় করা যায়। যেমন: মেরুদণ্ড ঠিকমতো বন্ধ না হওয়া (স্পাইনা বিফিডা)
বিশেষ তথ্য: আলট্রাসনোগ্রাফির সাহায্যে ডাউন সিনড্রোম পরীক্ষা
গর্ভের শিশু যদি ‘ডাউন সিনড্রোম’ এর ঝুঁকিতে থাকে—যেমন: গর্ভধারণকালে মায়ের বয়স বেশি হওয়া, বংশগত কারণ এবং মায়ের অপর কোনো সন্তানের ডাউন সিনড্রোম থাকা—তাহলে ডাক্তার ১০–১৪তম সপ্তাহের স্ক্যানের সময়ে বিশেষ পদ্ধতিতে আলট্রাসনোগ্রাফি করার পরামর্শ দিতে পারেন।
এক্ষেত্রে সাধারণ সব তথ্যের পাশাপাশি শিশুর ঘাড়ের কাছে থাকা তরলের পরিমাণ মেপে দেখা হয়। এই পদ্ধতিকে ডাক্তারি ভাষায় Nuchal Translucency Scan বলা হয়। এই সময়ে আলট্রাসনোগ্রাফির পাশাপাশি মায়ের রক্তের বিশেষ (ডিএনএ) পরীক্ষা করে ডাউন সিনড্রোমের ঝুঁকি নির্ণয় করা হয়।
দ্বিতীয় আলট্রাসনোগ্রাফি
গর্ভাবস্থার ১৮–২২তম সপ্তাহে দ্বিতীয় আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। একে অনেকসময় ‘অ্যানোমালি স্ক্যান‘ বলা হয়। গর্ভাবস্থায় অন্তত একবার আলট্রাসনোগ্রাফি করালেও এই সময়ে করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।[১] এই পরীক্ষার সময়ে শিশুর মুখমণ্ডল, হাত-পা, পেট ও নাড়িভুঁড়ি, হাড়, হার্ট, কিডনি, ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হয়। এই স্ক্যানে অনেকগুলো তথ্য পাওয়া যায়। যেমন—
- গর্ভের শিশুর কোনো ধরনের জন্মগত ত্রুটি বা ‘অ্যানোমালি’ আছে কি না
- শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে গড়ে উঠছে কি না
- শিশুর বৃদ্ধি স্বাভাবিক হারে চলছে কি না
- গর্ভের শিশুর আকার ও ওজন
- শিশু ছেলে না কি মেয়ে। এই তথ্য জানতে চাইলে স্ক্যানের শুরুতে ডাক্তারকে জানিয়ে রাখবেন। তবে মনে রাখবেন, শিশুর অবস্থানসহ বিভিন্ন কারণে শিশুর লিঙ্গ বুঝে ওঠা সম্ভব না-ও হতে পারে
তৃতীয় আলট্রাসনোগ্রাফি
গর্ভাবস্থার ৩৬–৩৮তম সপ্তাহে তৃতীয় আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এই স্ক্যানে প্রসবের আগে গর্ভের শিশু ও গর্ভফুলের অবস্থান দেখে নেওয়া হয়। এই স্ক্যান ডেলিভারির জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে ডাক্তারদের সাহায্য করে। এসময়ে দেখা হয়—
- গর্ভফুল বা প্লাসেন্টার অবস্থান। প্লাসেন্টার অবস্থান স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে আসলে ‘প্লাসেন্টা প্রিভিয়া’ নামক মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে সিজারের সাহায্যে ডেলিভারিসহ বিশেষ প্রস্তুতির প্রয়োজন হতে পারে
- গর্ভের ভেতরে শিশু লম্বালম্বি, আড়াআড়ি অথবা কোণাকুণি—কোন অবস্থানে আছে। নরমাল ডেলিভারির জন্য উপযুক্ত অবস্থানে না থাকলে নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্যে শিশুর অবস্থান পরিবর্তনের চেষ্টা করা হতে পারে। অন্যথায় সিজারের প্রয়োজন হতে পারে।
- গর্ভের শিশুর চারপাশে থাকা ‘অ্যামনিওটিক তরল’ এর পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করা হয়৷ এটি পরিমাণে বেশি বা কম হলে গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং ডেলিভারির সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে
- এ ছাড়া শিশু গর্ভের ভেতর ঠিকমতো নড়াচড়া করছে কি না সেটাও দেখা হয়
অন্যান্য স্ক্যান
এই তিনটি স্ক্যানের পাশাপাশি আপনার গর্ভাবস্থার ধরন, পূর্বের ইতিহাস ও সম্ভাব্য জটিলতার ভিত্তিতে ডাক্তার এর চেয়ে বেশি আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দিতে পারেন। কখন ও মোট কয়বার আলট্রাসনোগ্রাফি করতে হবে সেই বিষয়ে আপনি ও আপনার ডাক্তার আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন। সেই সাথে অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রয়োজন হলে ডাক্তার সেই অনুযায়ী পরামর্শ দিবেন।
আলট্রাসনোগ্রাফি করালে কি গর্ভের শিশুর ক্ষতি হতে পারে?
আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষায় গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।[২] গর্ভাবস্থায় এই পরীক্ষা করানো নিরাপদ।
এই পরীক্ষায় কোনো ধরনের ক্ষতিকর রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয় না। উচ্চ মাত্রার শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে শরীরের ভেতরের অংশের ছবি তোলা হয়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।[৩]
গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফি কিভাবে করা হয়?
গর্ভাবস্থায় মূলত দুটি উপায়ে আলট্রাসনোগ্রাফি করা হয়—
১. পেটের আলট্রাসনোগ্রাফি
এক্ষেত্রে পেটের, বিশেষ করে তলপেটের ওপরে প্রোব বসিয়ে জরায়ু, গর্ভের শিশু ও পেটের ভেতরের অন্যান্য অঙ্গের ছবি দেখা যায়। গর্ভাবস্থার বেশিরভাগ স্ক্যান এই উপায়েই করা হয়।
পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করার আগে, বিশেষ করে ১০–১৪ সপ্তাহের স্ক্যানের ১ ঘন্টা আগে আধা লিটার পানি অথবা তরল খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এর কারণ হলো, এই পরীক্ষার আগে যথেষ্ট প্রস্রাবের চাপ থাকতে হয়। এটি ডাক্তারকে পরীক্ষার সময়ে গর্ভের শিশুর তথ্যগুলো ভালোমতো নির্ণয় করতে সাহায্য করে।
আলট্রাসনোগ্রাফির জন্য প্রথমে আপনার বুক থেকে তলপেট পর্যন্ত থাকা কাপড় সরিয়ে তলপেটের ওপর আলট্রাসাউন্ড জেল লাগানো হবে। তারপর প্রোবের সাহায্যে আপনার পেটের বিভিন্ন অংশের ওপর চেপে চেপে ভেতরের ছবি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
স্ক্যানের সময়ে সাধারণত কোনো ব্যথা লাগে না। তবে ডাক্তার কখনো কখনো ভালোমতো দেখার জন্য পেটে সামান্য চাপ দিতে পারেন। এতে ব্যথা না হলেও কিছুটা অস্বস্তি হতে পারে। স্ক্যানের প্রক্রিয়াতে সাধারণত ১৫–৩০ মিনিট সময় লাগে।
প্রোব দিয়ে আপনার পেটের ভেতর হাই-ফ্রিকোয়েন্সি বা আলট্রাসনিক শব্দ তরঙ্গ পাঠানো হবে। এগুলো উচ্চ মাত্রার শব্দ তরঙ্গ, যা আমাদের শ্রবণসীমার বাইরে। এই শব্দতরঙ্গ নরম মাংসপেশি কিংবা তরলের ভেতর দিয়ে যেতে পারে কিন্তু শক্ত হাড়ের গায়ে লাগলে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে।
এভাবে এই তরঙ্গ আপনার জরায়ুর ভেতরে শিশুর গায়ে বাধা পেয়ে ফেরত আসবে। ফেরত আসা প্রতিধ্বনিগুলো আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন প্রসেস করে ভিডিও ইমেজ বা ছবিতে রূপান্তরিত করে৷
এই ছবি থেকে গর্ভের শিশুর আকার, আকৃতি, অবস্থান, নড়াচড়াসহ বিভিন্ন তথ্য ফুটে উঠবে। ছবি তাৎক্ষণিকভাবে কম্পিউটার স্ক্রিনে দেখা যাবে এবং পরে প্রিন্ট করে কিংবা ভিডিও ফাইল হিসেবে আপনাকে দেওয়া হবে। স্ক্রিন ভালোমতো দেখার সুবিধার্থে ডাক্তার রুমের আলো কমিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন।
২. যোনিপথের আলট্রাসনোগ্রাফি
এক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে সরু, আঙুলের মতো একটা প্রোব যোনিপথ বা মাসিকের রাস্তা দিয়ে ঢুকিয়ে ভেতর থেকে জরায়ু ও আশেপাশের অঙ্গের ছবি দেখা যায়। এই পদ্ধতিতেও ব্যথা লাগে না। তবে সামান্য অস্বস্তি হতে পারে। এই পদ্ধতিকে ‘ট্রান্সভ্যাজাইনাল আলট্রাসনোগ্রাফি’ বলা হয়।
গর্ভাবস্থার একেবারে শুরুর দিকে এবং বিশেষ কিছু রোগ (যেমন: গর্ভবতীর জরায়ুমুখের সমস্যা) নির্ণয়ে এই পথে পরীক্ষা করা হতে পারে। কারণ গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে আপনার জরায়ু ও ডিম্বনালী তলপেট অপেক্ষা যোনিপথের বেশি কাছে থাকে। ফলে গর্ভের শিশুর ও আশেপাশের বিভিন্ন অঙ্গের ছবি অধিক পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়।[৪]
এক্ষেত্রেও পেটের আলট্রাসনোগ্রামের মতো একই নীতির ওপর ভিত্তি করে গর্ভের শিশু ও আশেপাশের অঙ্গগুলোর তথ্য খুঁজে বের করা হয়।
উল্লেখ্য, যোনিপথে আলট্রাসনোগ্রাম করতে হলে আগে সাধারণত পেটের ওপর আলট্রাসনোগ্রাম করে নেওয়া হয়। এরপর প্রস্রাব করে আসতে হয়। তারপর যোনিপথে প্রোব ঢুকিয়ে আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।
আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট কি ভুল হয়?
কখনো কখনো শিশুর অবস্থান কিংবা পরীক্ষার সময়সহ নানান কারণে আলট্রাসাউন্ড এর মাধ্যমে পুরোপুরি পরিষ্কার ছবি পাওয়া সম্ভব হয় না। তাই আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট সবসময় শতভাগ সঠিক না-ও হতে পারে।
যেমন, গর্ভাবস্থার ১০–১৪তম সপ্তাহের পরে আলট্রাসনোগ্রাফির সাহায্যে গর্ভের শিশুর ডেলিভারির তারিখ বের করার চেষ্টা করলে সেটি পুরোপুরি সঠিক ফলাফল না-ও দিতে পারে। আবার অনেকসময় হয়তো ১৮–২২তম সপ্তাহে অনেকগুলো জন্মগত ত্রুটি ধরে ফেলা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
নিচের ক্ষেত্রগুলোতে আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে শতভাগ সঠিক তথ্য খুঁজে বের করা কঠিন হতে পারে—
- গর্ভের ভেতরে শিশু সুবিধাজনক অবস্থানে না থাকলে
- গর্ভের শিশুকে চারপাশ থেকে ঘিরে থাকা ‘অ্যামনিওটিক তরল’ এর পরিমাণ বেশি হলে
- গর্ভবতী মায়ের ওজন অথবা পেটে চর্বির পরিমাণ বেশি হলে
- পেটে কোনো ধরনের কাটা দাগ অথবা সেলাই থাকলে
সাধারণ জিজ্ঞাসা
গর্ভকালীন ষষ্ঠ সপ্তাহেই যোনিপথে আলট্রাসনোগ্রাফি করা হলে কখনো কখনো শিশুর হৃৎস্পন্দন টের পাওয়া যেতে পারে। পেটের আলট্রাসনোগ্রাফি করলে হৃৎস্পন্দন টের পেতে আরেকটু বেশি সময় লাগতে পারে। কারণ গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে আপনার জরায়ু ও ডিম্বনালী তলপেট অপেক্ষা যোনিপথের বেশি কাছে থাকে।
তবে সাধারণত এই সময়ে আলট্রাসনোগ্রাফি করানো হয় না। প্রথম আলট্রাসনোগ্রাফি সাধারণত গর্ভকালীন ১০–১৪তম সপ্তাহে করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
গর্ভে শিশুর অবস্থানসহ বিভিন্ন কারণে আলট্রাসনোগ্রাফিতে সব তথ্য পরিষ্কারভাবে না-ও ফুটে উঠতে পারে। তাই সবসময় হার্টবিট না-ও বোঝা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা না করে ডাক্তারকে আলট্রাসনোগ্রাফির ফলাফল বুঝিয়ে দিতে অনুরোধ করুন।
পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করার আগে, বিশেষ করে ১০–১৪ সপ্তাহের স্ক্যানের ১ ঘন্টা আগে আধা লিটার পানি অথবা তরল খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এর কারণ হলো, এই পরীক্ষার আগে যথেষ্ট প্রস্রাবের চাপ থাকতে হয়। এটি ডাক্তারকে পরীক্ষার সময়ে গর্ভের শিশুর তথ্যগুলো ভালোমতো খুঁজে বের করতে সাহায্য করে।
উল্লেখ্য, যোনিপথে আলট্রাসনোগ্রাম করতে হলে আগে সাধারণত পেটের ওপর আলট্রাসনোগ্রাম করে নেওয়া হয়। এরপর প্রস্রাব করে আসতে হয়। তারপর প্রোব যোনিপথে ঢুকিয়ে আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।
গর্ভাবস্থায় ঠিক কতবার আলট্রাসনোগ্রাম করা যাবে তার নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। সাধারণত আলট্রাসনোগ্রাম তিনবার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ডাক্তার প্রয়োজনবোধে এর চেয়ে বেশি আলট্রাসনোগ্রাম করানোর পরামর্শ দিতে পারেন।
আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে সবক্ষেত্রে শিশুর লিঙ্গ উল্লেখ করা থাকে না। আপনি গর্ভের শিশু ছেলে না মেয়ে তা জানতে চাইলে আলট্রাসনোগ্রাম করানোর ঠিক আগে আপনার আলট্রাসনোগ্রামের ডাক্তারকে জানান।
কিছু রিপোর্টে ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে শিশুর gender/sex এর জায়গায় male অথবা XY লেখা থাকে। আর মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে female অথবা XX লেখা থাকে। নিজে রিপোর্ট বুঝতে না পারলে পরবর্তী চেকআপের সময়ে ডাক্তারকে আলট্রাসনোগ্রামের ফলাফল বুঝিয়ে দিতে অনুরোধ করতে পারেন।
উল্লেখ্য, অনেকসময় শিশুর অবস্থানসহ বিভিন্ন কারণে আলট্রাসনোগ্রাফির সময়ে শিশুর লিঙ্গ বোঝা সম্ভব না-ও হতে পারে।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ আসলেই যে আলট্রাসনোগ্রাম করাতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আর একদম শুরুর কয়েক সপ্তাহে আলট্রাসনোগ্রাম করে গর্ভাবস্থা সংক্রান্ত নানান তথ্য পরিষ্কারভাবে বোঝা যাওয়া কঠিন। তবে গর্ভাবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নানান তথ্য খুঁজে বের করার জন্য সঠিক সময়ে আলট্রাসনোগ্রাম করানো প্রয়োজন।
তাই প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ আসার পরে যত দ্রুত সম্ভব গর্ভকালীন চেকআপে যান। চেকআপের সময়ে ডাক্তার আপনাকে আলট্রাসনোগ্রাম করানোর শিডিউল নিয়ে সবচেয়ে উপযুক্ত পরামর্শ দিতে পারবেন। সাধারণত গর্ভাবস্থার ১০–১৪তম সপ্তাহে প্রথম আলট্রাসনোগ্রাম করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
আলট্রাসনোগ্রামের খরচ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালভেদে কম-বেশি হয়। তবে সাধারণত সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৫০০–৭০০ টাকার মধ্যে গর্ভাবস্থার আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করানো হয়। বেসরকারিভাবে এই পরীক্ষার খরচ কিছুটা বেশি হয়। হাসপাতাল ও ডাক্তারভেদে প্রায় ১,০০০–৩,০০০ টাকার মতো হতে পারে। আবার গর্ভাবস্থার আলট্রাসনোগ্রাম ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ের জন্য আলট্রাসনোগ্রাম করাতে হলে খরচ সেই অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হবে।