এ সপ্তাহের হাইলাইটস
আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করার প্রস্তুতি নিন
সবকিছু ঠিক থাকলে গর্ভকালীন ৩৬তম–৩৮তম সপ্তাহের মধ্যে আপনাকে শেষবারের মতো আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করাতে হবে। ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখুন।
নিয়মিত পেলভিক ফ্লোরের ব্যায়াম করা চালিয়ে যান
যোনিপথের আশেপাশের মাংসপেশিগুলো শক্ত করার জন্য আপনি নিয়মিত পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ বা কেগেল ব্যায়াম করা চালিয়ে যান। কেননা এই পেশিগুলো দুর্বল হয়ে গেলে হাঁচি-কাশির সময় কয়েক ফোঁটা প্রস্রাব বেরিয়ে আসার সমস্যাসহ নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে।[১]
এক পাশে কাত হয়ে ঘুমান
এ সপ্তাহেও ঘুমানোর সময়ে আপনার সুবিধামতো ডান অথবা বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমাবেন। কারণ চিৎ হয়ে ঘুমালে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।[২][৩] ঘুমের সময়ে সাপোর্ট দেয় এমন আরামদায়ক কয়েকটা বালিশ নিয়ে ঘুমাতে পারেন।
আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান
বিগত সপ্তাহগুলোর মতো এ সপ্তাহেও নিয়মিত আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যাবেন। এগুলো গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[৪][৫] পাশাপাশি আপনাকে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।[৬]
- মাসে কত দিন? ৯ মাস
- কোন ট্রাইমেস্টার? তৃতীয় ত্রৈমাসিক
- আর কত সপ্তাহ বাকি? ৪
৩৬ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি
আপনার গর্ভের শিশু এখন মাথা থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত প্রায় ৪৭.৪ সেন্টিমিটার লম্বা। সে প্রায় একটি তরমুজের সমান লম্বা হয়ে গিয়েছে। তার ওজন এখন প্রায় ২.৬ কেজি।
শিশু হয়তো এখন মাথা নিচের দিকে দিয়ে আছে
আপনার গর্ভে এখন হয়তো ছোট্ট শিশুর মাথা নীচের দিকে এবং পা ওপরের দিকে আছে। এই অবস্থানে থাকলে নরমাল ডেলিভারি করা অনেকটা সহজ হয়।[৭] এ সপ্তাহ বা আগামী সপ্তাহের মধ্যে বেশিরভাগ শিশুই এই অবস্থানে চলে আসে।[৮]
ছোট্ট শিশু শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার চর্চা করছে
শিশুর ফুসফুস এখন বেশ সুগঠিত হয়ে গিয়েছে। জন্মের পর বেশ কয়েক বছর ধরে তা পরিণত হতে থাকবে।[৯]
ছোট্ট শিশু নিয়মিত শ্বাস নেওয়ার অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে।[১০] গর্ভের ভেতরে থাকা অবস্থায় শিশুকে বাতাস থেকে অক্সিজেন টেনে নিতে হয় না।[১১] আপাতত গর্ভফুল তাকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে যাচ্ছে।[১২] তবে জন্মের সাথে সাথে তাকে এই কাজটা করতে হবে। সেজন্য ছোট্ট শিশুর ফুসফুস প্রস্তুত হচ্ছে।[১৩]
শিশু নিয়মিত প্রস্রাব করছে
গর্ভের ভেতরে ‘অ্যামনিওটিক ফ্লুইড’ নামে যে বিশেষ পানির মধ্যে আছে, সেই পানি ছোট্ট শিশু এই সময়ে প্রতিদিন বেশ অনেকখানি গিলে ফেলে।[১৪] এই পানি থেকে প্রস্রাব তৈরি হয়, এবং শিশু সেই প্রস্রাব ত্যাগ করে।[১৫] প্রস্রাবের প্রায় পুরোটাই এখন পানি, কারণ মায়ের গর্ভফুল বর্জ্য পদার্থ সরিয়ে নেয়।[১৬]
৩৬ সপ্তাহে মায়ের শরীর
গর্ভের শিশু বেড়ে ওঠার কারণে আপনাকে অতিরিক্ত ওজন বহন করতে হচ্ছে। তাই এসময়ে ক্লান্ত লাগা খুব স্বাভাবিক।
আলট্রাসনোগ্রাম ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা
সাধারণত গর্ভাবস্থার ৩৬তম–৩৮তম সপ্তাহের মধ্যে আপনাকে রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা ও আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করাতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এসব পরীক্ষার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখবেন।
এবারের আলট্রাসনোগ্রাম থেকে গর্ভের শিশুর অবস্থান, গর্ভফুলের অবস্থান, এমনিয়োটিক ফ্লুইড বা শিশুকে ঘিরে থাকা তরলের পরিমাণসহ অনেক কিছু জানা যাবে। অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ অনুযায়ী পরীক্ষা করানোর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন।
স্তনের বোঁটায় ব্যথা
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করার পর প্রথম কয়েক সপ্তাহে স্তনের বোঁটায় ব্যথা করতে পারে। বুকের দুধ খাওয়াতে থাকলে সাধারণত ব্যথাটা ধীরে ধীরে চলে যায়।[১৭]
ব্যথা কমানোর জন্য কয়েকটা কাজ করতে পারেন। প্রতিবার খাওয়ানো শেষে একটুখানি বুকের দুধ চেপে বের করে সেটা স্তনের বোঁটায় লাগাতে পারেন। স্তনের বোঁটা থেকে স্তনের বাকি অংশে ব্যথা ছড়ালে হালকা গরম সেঁক দিতে পারেন।
এসবের পাশাপাশি খেয়াল রাখবেন বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়ে শিশুর মুখের ভেতর যেন শুধুমাত্র স্তনের বোঁটা না থাকে। শিশু মুখ বড় করে হা করে স্তনের বোঁটাসহ বোঁটার আশেপাশের কালো অংশও মুখের ভেতর নিলে স্তনের বোঁটায় ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।
ঘর গোছগাছ করা
এসময়ে এসে আপনার ক্লান্ত লাগা স্বাভাবিক। তবে এর মধ্যেই আপনার হঠাৎ করে গায়ে বেশ শক্তি আছে বলে মনে হতে পারে, পুরোদমে ঘর-বাড়ি গোছানোর ইচ্ছা জাগতে পারে।[১৮] ছোট্টমণির জন্য কিনে রাখা জামাকাপড় এখনই ভাঁজ করতে হবে কিংবা অনেক বছর ধরে অগোছালো কোনো ড্রয়ার বা আলমারি এই মুহূর্তেই পরিষ্কার করতে হবে—এমন তাড়না অনুভব করতে পারেন।
অনেক হবু মা-ই এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান।[১৯] নতুন শিশুকে স্বাগত জানানোর জন্য একটা স্বস্তির পরিবেশ সৃষ্টির ইচ্ছা থেকে এমন হতে পারে। আপনি একা একা অতিরিক্ত পরিশ্রম না করে ঘর গোছানোর কাজগুলো বাসার সবাই মিলে ভাগ করে নিতে পারেন।
গর্ভের শিশুকে ঘুরিয়ে মাথা নিচের দিকে আনা
আপনার শিশু হয়তো ইতোমধ্যে তলপেটের গভীরে মাথা ঢুকিয়ে প্রসবের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। তবে শিশুর মাথা যদি নিচের দিকে না থাকে, তাহলে ডাক্তার একটা বিশেষ পদ্ধতিতে শিশুর অবস্থান পরিবর্তন করার পরামর্শ দিতে পারেন। এই পদ্ধতিকে ডাক্তারি ভাষায় ‘এক্সটারনাল সেফালিক ভার্সন’ বলা হয়। সাধারণত ৩৭তম সপ্তাহ পূর্ণ হবার পর প্রয়োজনে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।[২০]
এই পদ্ধতির মাধ্যমে ডাক্তার পেটে বিশেষ পদ্ধতিতে আলতোভাবে চাপ দিয়ে গর্ভের শিশুকে ঘোরানোর চেষ্টা করেন। এভাবে শিশুর মাথা নিচে ও পশ্চাৎদেশ ওপরে—এমন অবস্থানে আনার চেষ্টা করা হয়। কারণ এটাই নরমাল ডেলিভারির জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থান।[২১] এই বিশেষ পদ্ধতি প্রায় ৫০% ক্ষেত্রে সফল হয়।[২২]
অন্যান্য লক্ষণ
এ সপ্তাহে আপনার আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—
- পেট টান-টান বা শক্ত হওয়া। একে ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্র্যাকশনও বলা হয়
- ঘুমের সমস্যা
- স্ট্রেচ মার্ক বা ফাটা দাগ
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে পেটের চারপাশের পেশিতে ব্যথা করা
- পাইলস
- মাথা ব্যথা
- কোমর ব্যথা
- পেট ফাঁপা লাগা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা
- অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা
- পা কামড়ানো
- মাথা ঘুরানো
- হাত–পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া
- প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হওয়া
- যোনিপথে ইনফেকশন হওয়া
- মুখে মেছতার মতো বাদামি ও ছোপ ছোপ দাগ পড়া
- তৈলাক্ত ত্বক ও ত্বকে দাগ পড়া
- চুল ঘন ও ঝলমলে হওয়া
এ ছাড়াও এই সপ্তাহে আপনার প্রথম দিকের সময়ের লক্ষণগুলো থাকতে পারে। যেমন—
- ঘন ঘন মনমেজাজ বদলানো বা মুড সুইং। এই খুশি, আবার এই মন খারাপ—এমনটা হতে পারে। পাশাপাশি এসময়ে ছোটোখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা অথবা কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দিতে পারে
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
- অদ্ভুত জিনিস (যেমন: মাটি) খাওয়ার ইচ্ছা হওয়া
- তীব্র ঘ্রাণশক্তি
- স্তনে ব্যথা
- স্তন থেকে তরল নিঃসৃত হওয়া
- সাদাস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
- যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত হওয়া। এমন হলে অবশ্যই একজন ডাক্তার দেখাবেন, কারণ এটা মারাত্মক জটিলতার লক্ষণ হতে পারে
এ সপ্তাহে বাবার করণীয়
রক্ত পরীক্ষা ও আলট্রাসনোগ্রামের কথা মনে করিয়ে দিন
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে শিশুর মাকে শেষবারের মতো রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা ও আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করাতে হবে।
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষাগুলোর অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখার কথা মনে করিয়ে দিন। আগামী দিনগুলোতে, অর্থাৎ ৩৬তম সপ্তাহ থেকে প্রসবের আগ পর্যন্ত সপ্তাহে একবার করে সঙ্গীর চেকআপে যাওয়ার বিষয়টি মাথায় রাখুন।
শিশুর মায়ের মতো লক্ষণ আপনার মধ্যেও দেখা দিতে পারে
বিস্ময়কর হলেও সত্যি, শিশুর মায়ের মতো হবু বাবাদের মধ্যেও গর্ভাবস্থার বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে![২৩] ডাক্তারি ভাষায় একে ‘কুভাড সিনড্রোম’ বলা হয়। এসময়ে আপনার বমি ভাব, বমি, বুক জ্বালাপোড়া, কোমর ব্যথা ও গর্ভকালীন অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিতে পারে।[২৪]
গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে এমনটা বেশি দেখা যায় এবং সাধারণত শিশুর জন্মের পর এসব লক্ষণ চলে যায়।[২৫]
অফিস থেকে ছুটি নেওয়ার পরিকল্পনা ঠিক করুন
আপনি হয়তো বাবা হিসেবে আপনার সন্তানের জন্মের সময়ে উপস্থিত থাকতে চান। জন্মের পর শিশুর ও শিশুর মায়ের সাথে বেশি করে সময় কাটাতে চান, তাদের দেখভাল করতে চান। ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ মাথায় রেখে কাজ থেকে কোন সময়টায় ছুটি নিবেন সেটা এখনই ঠিক করে রাখুন।
কোন সময়ে ছুটি নিলে সবচেয়ে ভালো হয় সেই বিষয়ে শিশুর মায়ের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। আপনি চাকুরীজীবী হয়ে থাকলে অফিসের ছুটির নিয়ম জেনে নিয়ে সেই অনুযায়ী ছুটির আবেদন করে রাখতে পারেন।
অফিসের নিয়ম অনুযায়ী ছুটির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এখন থেকেই সংগ্রহ করে রাখুন। ছুটির কমপক্ষে কতদিন আগে আবেদন জমা দিতে হবে, সেটা জেনে ক্যালেন্ডারে বসিয়ে ফেলুন, যেন এই বিষয়ে পরবর্তীতে কোনো সমস্যা না হয়।