আপনি হয়তো প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে এতক্ষণে জেনে গিয়েছেন যে আপনি মা হতে চলেছেন। আপনাকে অনেক অভিনন্দন। আনন্দের সময়টা উদযাপন করার পাশাপাশি আপনার ও আপনার গর্ভের শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করাও আপনার দায়িত্ব। তাই গর্ভধারণের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরই যত দ্রুত সম্ভব গর্ভকালীন চেকআপে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিন।
গর্ভকালীন চেকআপ কী এবং এর গুরুত্ব
গর্ভকালীন চেকআপ বলতে প্রসবের আগ পর্যন্ত নির্দিষ্ট কয়েকটি সময়ে গর্ভবতীর স্বাস্থ্য পরীক্ষাকে বোঝায়। চেকআপের লক্ষ্য হলো নিরাপদ গর্ভকাল নিশ্চিত করে সুস্থ সন্তান প্রসবে আপনাকে সাহায্য করা। একে প্রসবপূর্ব সেবা বা এন্টিনেটাল কেয়ারও বলা হয়।
প্রত্যেক গর্ভবতী নারীর নিয়মিত গর্ভকালীন চেকআপ করানো উচিত। এতে গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় ও শিশুর জন্মের পর মা ও গর্ভের শিশুর সামগ্রিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নানান তথ্য উঠে আসে। ফলে কোনো স্বাস্থ্য জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সেটি আগেভাগে ধরে ফেলে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এভাবে গর্ভকালীন চেকআপ মা ও গর্ভের শিশু উভয়ের মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে আনে।[১]
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত, অর্থাৎ কমপক্ষে চারবার এন্টিনেটাল চেকআপে গিয়েছেন এমন নারীদের তুলনায় যারা চেকআপে অনিয়মিত ছিলেন তাদের গর্ভকালীন ও প্রসব সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।[২] যেমন—
- প্রিএক্লাম্পসিয়া ও এক্লাম্পসিয়া
- রক্তশূন্যতা
- অকাল প্রসব
- মৃত সন্তান প্রসব
- কম ওজনের সন্তান জন্মদান। এমন ক্ষেত্রে সদ্যোজাত শিশুর শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও খিঁচুনিসহ বিভিন্ন গুরুতর জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়
এ ছাড়া প্রসবপূর্ব সেবা না নিলে মা ও শিশুর নানান ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার ঝুঁকি বেড়ে যায়।[৩] তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চেকআপে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কখন থেকে শুরু করতে হবে?
গর্ভধারণের পরে যত দ্রুত সম্ভব গর্ভকালীন চেকআপ শুরু করা প্রয়োজন। নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে মা ও গর্ভের শিশুর মৃত্যুহার অনেকাংশেই কমে আসে।[৪] তবে যেকোনো অবস্থাতেই ১৬তম সপ্তাহের আগে আপনার প্রথম চেকআপ করিয়ে ফেলতে হবে।
তাই আপনি যে গর্ভবতী সেটি জানার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। ডাক্তার আপনার ও গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের অবস্থার ভিত্তিতে আপনার জন্য ব্যক্তিগত একটি পরিকল্পনা তৈরি করে দিতে পারেন।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গর্ভকালীন সময়ে আপনার চলাফেরা ও খাওয়া-দাওয়া কেমন হবে সেই বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া আপনার ও গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হবে। আপনার ও গর্ভের শিশুর সঠিক পরিচর্যার জন্য এসব তথ্য যত দ্রুত জানা যায়, ততই ভালো।
কয়বার গর্ভকালীন চেকআপ করা প্রয়োজন?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নারীদের গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে আটবার চেকআপ করানোর সুপারিশ করে।[৫] এর চেয়ে বেশি চেকআপ করলেও কোনো ক্ষতি নেই, বরং সেটি আরও ভালো। আমাদের দেশে একজন সুস্থ গর্ভবতী নারীকে সাধারণত নিচের সময় অনুযায়ী গর্ভকালীন চেকআপ করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়—
- গর্ভধারণের পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রথম চেকআপ
- প্রথম চেকআপের পর থেকে গর্ভকালীন ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি মাসে একবার চেকআপ
- ২৯ সপ্তাহ থেকে ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি দুই সপ্তাহে একবার চেকআপ
- ৩৭ সপ্তাহ থেকে প্রসবের আগ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার চেকআপ
বাংলাদেশ সরকারের সুপারিশ হলো, গর্ভকালীন সময়ে আপনাকে অবশ্যই কমপক্ষে চারবার গর্ভকালীন চেকআপ করাতে হবে।[৬] চেকআপের মাধ্যমে একজন সুস্থ মা একটি সুস্থ-সবল শিশু জন্ম দিতে পারেন। মা ও নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকিও কমে আসে।[৭] অন্যদিকে চারবারের চেয়ে কম চেকআপ করালে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়।[৮] আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে এই চারটি চেকআপের সময়ের সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
আপনি জানেন কি?
বাংলাদেশে কমপক্ষে চারটি গর্ভকালীন চেকআপে যাওয়া নারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কম।[৯] গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, শহুরে নারীদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম (৪৩.২%) নারী গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে চারটি চেকআপে যান।[১০] গ্রামাঞ্চলে এই সংখ্যা আরও কম, প্রতি পাঁচজনে মাত্র একজন নারী (১৭.৯%) কমপক্ষে চারটি গর্ভকালীন চেকআপে অংশগ্রহণ করেন। অথচ মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমিয়ে আনতে গর্ভকালীন চেকআপের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কোথায় চেকআপ করানো হয়?
বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গর্ভবতী নারীদের প্রসবপূর্ব চেকআপ করানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে[১১]—
- মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
- সদর হাসপাতাল
- উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স
- নগর মাতৃসদন কিংবা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র
- ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র
- কমিউনিটি ক্লিনিক
- স্যাটেলাইট ক্লিনিক
- এনজিও ক্লিনিক (যেমন: সূর্যের হাসি ক্লিনিক ও সাজিদা ফাউন্ডেশন)
- প্রাইভেট হাসপাতাল
- গাইনী ও প্রসূতিবিদ্যা ডাক্তারের চেম্বার
এসব চেকআপে কী কী করা হয়?
প্রাথমিক জিজ্ঞাসা
গর্ভকালীন চেকআপে প্রথমে আপনাকে কিছু প্রশ্ন করা হবে। যেমন—
- আপনার বয়স কত
- আপনার কোনো সন্তান আছে কি না
- সন্তান থাকলে তার/তাদের বয়স কত এবং কীভাবে প্রসব হয়েছিল
- পূর্বের গর্ভাবস্থা ও প্রসবের সময়ে কোনো জটিলতা ছিল কি না। যেমন: গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, প্রিএক্লাম্পসিয়া ও এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি
- কখনো গর্ভপাত হয়েছে কি না
- ধনুষ্টংকার বা টিটেনাস প্রতিরোধের ‘টিটি টিকা’ নেওয়া আছে কি না। আগে টিকা নেওয়া থাকলে টিকা কার্ড ও আপনার হিসেবে এ পর্যন্ত কয় ডোজ টিকা নেওয়া হয়েছে সেটা লিখে রাখা হবে
- কখনো জন্ডিস হয়েছে কি না
- আগে থেকে কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা আছে কি না। যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েডের সমস্যা ও হৃদরোগ
এসব প্রশ্নের ভিত্তিতে আপনি গর্ভকালীন উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন কি না তা নির্ধারণ করা হবে এবং সেই অনুযায়ী চেকআপ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শগুলো দেওয়া হবে।
আপনি গর্ভকালীন সময়ে আপনার পরিবারের সদস্য অথবা অন্য কারও দ্বারা কোনো রকম শারীরিক অথবা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকলে প্রথম চেকআপের সময় আপনার ডাক্তারকে এই বিষয়ে জানাবেন। প্রয়োজনে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের ১০৯২১ নম্বরে ফোন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্য নিতে পারেন।[১২]
শারীরিক নির্যাতন অথবা অন্য কোনো কারণে আপনি যৌনাঙ্গে আঘাত পেয়ে থাকলে তা অবশ্যই আপনার ডাক্তারকে জানাবেন। কেননা এটা প্রসবের সময়ে সুস্থ সন্তান জন্মদানে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
শারীরিক পরীক্ষা
প্রশ্নোত্তরের পাশাপাশি প্রতিটি চেকআপে কিছু শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার ও গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে—
- উচ্চতা ও ওজন পরিমাপ করা: মা ও গর্ভের শিশুকে বিভিন্ন গুরুতর রোগ থেকে বাঁচাতে মায়ের স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চেকআপের সময়ে ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম অথবা বেশি হলে আপনার জন্য বিশেষ সেবা পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। এর সাথে খাবার তালিকা ও শরীরচর্চার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হবে।
- রক্তচাপ মাপা: রক্তচাপ মাপার মাধ্যমে আপনার জন্য স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা নির্ণয় করা হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সেটি ধরে ফেলা যায়। এ ছাড়া গর্ভকালীন ২০তম সপ্তাহের পরে প্রি-এক্লাম্পসিয়ার ঝুঁকি আছে কি না সেটাও বের করা হয়।
- ইঞ্চি-ফিতা দিয়ে গর্ভের আকার মাপা: কখনো কখনো, বিশেষ করে প্রথম তিন মাসের পর থেকে আপনার গর্ভের আকার মেপে শিশু ঠিকমতো বড় হচ্ছে কি না সেই সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
বিভিন্ন টেস্ট
গর্ভকালীন চেকআপের সময়ে আপনাকে রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা ও আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হবে।
রক্ত পরীক্ষা
গর্ভাবস্থায় সাধারণত যেসব রক্ত পরীক্ষা করানো হয়—
- সিবিসি (CBC): এই পরীক্ষার মাধ্যমে মূলত আপনার রক্তশূন্যতা আছে কি না সেটা পরীক্ষা করা হয়। রক্তশূন্যতা থাকলে ডাক্তার আপনাকে খাবার তালিকায় নির্দিষ্ট কিছু খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন।
- ওজিটিটি (OGTT): পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার ডায়াবেটিস আছে কি না সেটা নির্ণয় করা হয়। ডায়াবেটিস থাকলে আপনাকে বিশেষ ডায়েট চার্ট মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। সেই সাথে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হবে।
- রক্তের গ্রুপিং: রক্তের সঠিক গ্রুপ বের করে রাখার মাধ্যমে পরবর্তীতে যেকোনো কারণে আপনাকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হলে আগেভাগে রক্তদাতা জোগাড় করে রাখা যাবে। এ ছাড়া আপনার রক্ত কোনো নেগেটিভ (-ve) গ্রুপের হলে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হবে।
- হেপাটাইটিস বি ও সিফিলিস পরীক্ষা: HBsAg পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে হেপাটাইটিস বি এর উপস্থিতি এবং VDRL পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে সিফিলিসের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়।
প্রস্রাব পরীক্ষা
আপনার শরীরে লক্ষণ না থাকলেও পরীক্ষার মাধ্যমে ইনফেকশনের উপস্থিতি ধরে ফেলার উদ্দেশ্যে মূলত এই পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রস্রাবে সুগার ও প্রোটিনের উপস্থিতি সম্পর্কে জানা যায়। এভাবে এটি ডায়াবেটিসসহ নির্দিষ্ট কিছু স্বাস্থ্য জটিলতা ধরে ফেলতে সাহায্য করে।
আলট্রাসনোগ্রাম
এই পরীক্ষার মাধ্যমে একেক সময়ে গর্ভের শিশু সংক্রান্ত একেক ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। যেমন: আপনার জরায়ুতে সঠিকভাবে গর্ভধারণ হয়েছে কি না, যমজ অথবা দুইয়ের বেশি সন্তান পেটে আছে কি না, সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ কত, শিশুর শারীরিক বিকাশের হার কেমন, গর্ভফুল ও গর্ভের শিশু ঠিক কোন অবস্থানে আছে ও গর্ভের শিশুর কোনো শারীরিক ত্রুটি আছে কি না।
গর্ভাবস্থায় সাধারণত তিনবার আলট্রাসনোগ্রাম পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রথম চেকআপের সময়েই একবার আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়। এরপরে গর্ভকালীন ১৮ সপ্তাহ থেকে ২২ সপ্তাহে গর্ভের শিশুর কোনো শারীরিক ত্রুটি আছে কি না দেখতে আবার পরীক্ষা করা হয়। অবশেষে ৩৬ সপ্তাহ থেকে ৩৮ সপ্তাহে গর্ভে শিশুর অবস্থান দেখতে তৃতীয় আলট্রাসনোগ্রাম করানো হয়।
এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন যে, আলট্রাসনোগ্রাম একটি ব্যক্তিনির্ভর পরীক্ষা। তাই সবসময় সব তথ্য সঠিকভাবে না-ও উঠে আসতে পারে।
উল্লেখ্য, আপনার স্বাস্থ্যের সার্বিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে আপনাকে আরও কিছু পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে কখন কোন পরীক্ষা করাতে হবে সেটি আপনার স্বাস্থ্য সমস্যার ধরনের ওপরে নির্ভর করবে।
সচেতনতা ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম
চেকআপের সময়ে আপনাকে পুষ্টিকর খাবার, বিশ্রাম ও ব্যায়াম, ধূমপানের অপকারিতা, প্রসব-পরবর্তী করণীয়, বুকের দুধ খাওয়ানো ও শিশুর যত্ন নেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হবে। কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চেকআপের দিন এসব বিষয়ের ওপর গর্ভবতী মায়েদের ক্লাস নেওয়া হয়। এ ছাড়া ছবি সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করা হয়।
গর্ভকালীন চেকআপের সময়সূচী
কমপক্ষে ৮টি চেকআপের সঠিক সময় হলো[১৩]—
প্রথম ট্রাইমেস্টার | |
প্রথম চেকআপ | যত দ্রুত সম্ভব, তবে অবশ্যই ১২তম সপ্তাহের মধ্যে |
দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার | |
দ্বিতীয় চেকআপ | ২০তম সপ্তাহে |
তৃতীয় চেকআপ | ২৬তম সপ্তাহে |
তৃতীয় ট্রাইমেস্টার | |
চতুর্থ চেকআপ | ৩০তম সপ্তাহে |
পঞ্চম চেকআপ | ৩৪তম সপ্তাহে |
ষষ্ঠ চেকআপ | ৩৬তম সপ্তাহে |
সপ্তম চেকআপ | ৩৮তম সপ্তাহে |
অষ্টম চেকআপ | ৪০তম সপ্তাহে |
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কমপক্ষে চারটি গর্ভকালীন চেকআপের সঠিক সময় হলো[১৪]—
প্রথম চেকআপ | গর্ভধারণের পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব |
দ্বিতীয় চেকআপ | ২৪তম–২৮তম সপ্তাহে বা ৬ষ্ঠ মাসে |
তৃতীয় চেকআপ | ৩২তম সপ্তাহে বা ৮ম মাসে |
চতুর্থ চেকআপ | ৩৬তম সপ্তাহে বা ৯ম মাসে |
উল্লেখ্য, গর্ভকালীন কোনো শারীরিক অথবা মানসিক সমস্যা দেখা দিলে বিষয়টি ডাক্তারকে জানাতে হবে। এমন ক্ষেত্রে প্রয়োজনবোধে ডাক্তার আপনার গর্ভকালীন চেকআপের সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দিতে পারেন।
প্রথম চেকআপ: যত তাড়াতাড়ি সম্ভব
গর্ভধারণের পরে যত দ্রুত সম্ভব প্রথম চেকআপে যাওয়া জরুরি। যত দ্রুত গর্ভকালীন চেকআপ শুরু করবেন, তত দ্রুত আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য সঠিক পদক্ষেপগুলো নিতে পারবেন। তবে প্রথম চেকআপে যেতে কোনোভাবেই যেন গর্ভধারণের ১৬তম সপ্তাহের বেশি সময় পার হয়ে না যায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রথম চেকআপের শুরুতেই সাধারণত বিভিন্ন বিষয়ে ওপরের ‘প্রশ্নোত্তর’ অংশের মতো কিছু প্রশ্ন করা হয়। সেই সাথে শারীরিক পরীক্ষা ও ওপরের ‘বিভিন্ন টেস্ট’ অংশে উল্লিখিত পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এভাবে আপনার ও গর্ভের শিশুর বিশেষ কোনো চিকিৎসা অথবা যত্নের প্রয়োজন আছে কি না সেটাও নির্ণয় করা হবে।
এসময়ে গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে সাধারণ শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়া ও চলাফেরা সম্পর্কে আপনাকে কিছু পরামর্শ দেওয়া হবে।[১৫][১৬] যেমন—
- নিয়ম মেনে ফলিক এসিড ও আয়রন ট্যাবলেট সেবন করা
- সুষম, পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া
- গর্ভাবস্থায় বিপদজনক ঔষধ খাওয়া এবং ধূমপান করা থেকে বিরত থাকা
- গর্ভাবস্থার ৪ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ২ ডোজ টিটি টিকা নেওয়া। তবে ইতোমধ্যে টিটি টিকার পূর্ণ ডোজ নেওয়া থাকলে গর্ভাবস্থায় টিকা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না[১৭]
- গর্ভাবস্থায় করা যায় এমন ব্যায়াম ও পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করা
- গর্ভাবস্থা ও প্রসবকালীন বিপদচিহ্নগুলো চিনে রাখা
- কর্মক্ষেত্রের কোনো কাজ গর্ভকালীন অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে কি না সেই বিষয়ে ধারণা দেওয়া
- মাতৃত্বকালীন ছুটি ও সুবিধাদি সম্পর্কে জেনে রাখা
গর্ভাবস্থায় টিটি টিকা
ডেলিভারির কমপক্ষে চার মাস আগে দুইবার টিটি টিকা দিতে হয়। এর মধ্যে প্রথম ডোজটি গর্ভাবস্থার যেকোনো সময়ে দেওয়া যায়।[১৮][১৯] তবে ৪ মাস–৮ মাসের মধ্যে টিটি টিকা নিলে সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা পাওয়া যায়।[২০] বাংলাদেশ সরকারও এই সময়েই ২ ডোজ টিকা নিতে সুপারিশ করে।[২১] যেকোনো ক্ষেত্রেই প্রথম ডোজ দেওয়ার কমপক্ষে এক মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয়।
এ টিকা সরকারিভাবে বিনা খরচে প্রদান করা হয়।
সাধারণ টেস্টগুলোর পাশাপাশি প্রথম চেকআপে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হতে পারে।[২২] যেমন—
- থাইরয়েডের অবস্থা দেখার রক্ত পরীক্ষা
- লিভার ও কিডনির সুস্থতা নির্ণয়ের পরীক্ষা
- রক্ত জমাট বাঁধা সংক্রান্ত পরীক্ষা
- সাধারণত গর্ভধারণের ১০ম–১৪তম সপ্তাহের মধ্যে গর্ভের শিশুর থ্যালাসেমিয়া আছে কি না দেখতে ‘থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং’
- আলট্রাসনোগ্রামের সময়ে বিশেষভাবে ‘ডাউন সিনড্রোম’ এর জন্য স্ক্রিনিং
এ ছাড়াও আপনাকে প্রেসক্রিপশন ও মাতৃত্ব সেবা কার্ডে প্রয়োজনীয় আরও কিছু পরামর্শ দেওয়া হবে। এতে পুরো গর্ভকালীন সময়ে করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেওয়া থাকবে।
মাতৃত্ব সেবা কার্ড
সাধারণত প্রথম চেকআপের সময়ে আপনাকে একটি মাতৃত্ব সেবা কার্ড দেওয়া হবে। এতে আপনার গর্ভকালীন বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন তথ্য নোট করা থাকবে। এই কার্ডটি আপনি প্রতিবার চেকআপ শেষে বাসায় নিয়ে যাবেন। আবার পরবর্তী চেকআপে যাওয়ার সময় আপনার সাথে করে নিয়ে যাবেন।
গর্ভকালীন সময়ে যেকোনো কাজে বাড়ির বাইরে গেলে এই কার্ডটি সাথে নিয়ে যাবেন। তাহলে যেকোনো জরুরি অবস্থায় আপনাকে চিকিৎসা দেওয়া সহজ হবে।
কার্ডের কোনো তথ্য সম্পর্কে বুঝতে না পারলে আপনার ডাক্তার অথবা স্বাস্থ্যকর্মীকে জিজ্ঞাসা করে বুঝে নিতে পারেন।
দ্বিতীয় চেকআপ: ৬ষ্ঠ মাসে
দ্বিতীয় চেকআপে সাধারণ চেকআপের পাশাপাশি যেসব অতিরিক্ত পরীক্ষা করানো হয়—
- পেটে হাত দিয়ে গর্ভের শিশুর অবস্থান জানার চেষ্টা করা হয়
- গর্ভের শিশুর হার্টবিট বা হৃৎস্পন্দন শোনা হয়
- মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে অ্যান্টি-ডি ইনজেকশন দেওয়া হয়
- ইতোমধ্যে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া শুরু না করলে তখন থেকে শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়
উল্লেখ্য, সাধারণ চেকআপের সবগুলো টেস্টের পরিবর্তে দ্বিতীয় চেকআপের সময়ে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু টেস্ট করানোর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
গর্ভের শিশুর নড়াচড়া
গর্ভের শিশুর নড়াচড়ার দিকে নিয়মিত লক্ষ করতে হবে। হঠাৎ করে যদি শিশুর স্বাভাবিক নড়াচড়ার ধরনে পরিবর্তন আসে, নড়াচড়া কমে যায় কিংবা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। বেশি দেরি হলে গর্ভের শিশু মারাও যেতে পারে। তাই এই বিষয়ে কখনই হেলাফেলা করা উচিত না।
ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর তিনি আল্ট্রাসনোগ্রাম ও কার্ডিওটোকোগ্রাফি পরীক্ষা করে গর্ভের শিশুর অবস্থান, বৃদ্ধি ও বিকাশ পর্যালোচনা করতে পারেন। এর ভিত্তিতে তিনি উপযুক্ত সিদ্ধান্ত দিবেন।[২৩]
পড়ুন: গর্ভের শিশুর নড়াচড়া
তৃতীয় চেকআপ: ৮ম মাসে
কমন সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করার পাশাপাশি তৃতীয় চেকআপে সাধারণত প্রসবকালীন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানানো হয়। যেমন—
- প্রসবের পূর্বপ্রস্তুতি[২৪]
- সত্যিকার প্রসববেদনা বনাম ব্র্যাক্সটন হিক্স সংকোচন চেনার উপায়
- প্রসববেদনা উঠলে করণীয়
- কোন পদ্ধতিতে ও কোথায় ডেলিভারি হলে আপনার জন্য ভালো সেই বিষয়ক আলোচনা
- সিজারিয়ান সেকশনের প্রয়োজনীয়তা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- আপনার রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে দ্বিতীয়বারের মতো অ্যান্টি-ডি ইনজেকশন দেওয়া
উল্লেখ্য, সাধারণ চেকআপের সবগুলো টেস্টের পরিবর্তে দ্বিতীয় চেকআপের সময়ে আপনাকে কিছু টেস্ট করানোর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
চতুর্থ চেকআপ: ৯ম মাসে
চতুর্থ চেকআপের অর্থ আপনার সন্তানের ডেলিভারি হতে বেশি সময় বাকি নেই। তাই ডেলিভারির প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আপনার ও পরিবারের সদস্যদের মনে আসা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সব ধরনের প্রশ্নের উত্তর ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিতে চেষ্টা করবেন।
এই চেকআপে কমন পরীক্ষাগুলোর পাশাপাশি গর্ভের শিশুর অবস্থান নির্ণয় করা হয়। এক্ষেত্রে অবস্থান বলতে বোঝানো হচ্ছে যে, শিশুর মাথা ওপরের দিকে আছে, নিচের দিকে আছে না কি শিশু পেটে আড়াআড়িভাবে আছে সেটি নির্ণয় করা।
প্রসবের সময় গর্ভের শিশুর মাথা জরায়ুর নিচের দিকে বা জরায়ুমুখের দিকে থাকলে নরমাল ডেলিভারি করা সহজ ও নিরাপদ হয়। তবে মাথার বদলে পা অথবা পশ্চাৎদেশ নিচের দিকে থাকলে নরমাল ডেলিভারি করা তুলনামূলকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।[২৫] একে ‘ব্রিচ প্রেজেন্টেশন’ বলা হয়। এক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি করার সাথে নবজাতকের নানান জটিলতা, এমনকি মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে।[২৬]
তাই এই চেকআপে শিশুর পা অথবা পশ্চাৎদেশ নিচের দিকে থাকলে অনেক ক্ষেত্রে একজন দক্ষ ডাক্তার মায়ের পেটের ওপরে বিশেষ কায়দায় চাপ দিয়ে দিয়ে শিশুর মাথা ঘুরিয়ে নিচে আনার চেষ্টা করে থাকেন। এই পদ্ধতিকে ‘এক্সটারনাল সেফালিক ভার্সন’ বলা হয়। এটি একটি নিরাপদ পদ্ধতি। সঠিকভাবে এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে সেটা সাধারণত গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ। এক্ষেত্রে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বিরল।[২৭] তবে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের ভিত্তিতে এই পদ্ধতিটি আপনার জন্য প্রযোজ্য কি না সেটা যাচাই করার পরেই কেবল ডাক্তার এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিবেন।
এক্সটারনাল সেফালিক ভার্সন সফল না হলে এবং পেটের ভেতরে শিশু আড়াআড়ি অবস্থানে থাকলে সাধারণত সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব ছাড়াও এই চেকআপে সাধারণত যেসব পরামর্শগুলো দেওয়া হয়—
- বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম ও উপকারিতা[২৮]
- নবজাতক শিশুর যত্ন
- জন্মের পরপর নবজাতক শিশুকে ভিটামিন কে খাওয়ানো অথবা ইনজেকশনের মাধ্যমে ভিটামিন কে দেওয়া[২৯]
- প্রসবের পরে আপনার নিজের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা
- প্রসব-পরবর্তী চেকআপে যাওয়ার নিয়ম ও গুরুত্ব তুলে ধরা
- প্রসব-পরবর্তী মানসিক সমস্যার বিষয়ে ধারণা দেওয়া। যেমন: প্রসবের পর মন খারাপ লাগা (পোস্টপার্টাম ব্লু) ও প্রসব-পরবর্তী ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা (পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন)[৩০]
- সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও, বিশেষত গর্ভাবস্থার ৪১তম সপ্তাহেরও পরে প্রসব না হওয়া সংক্রান্ত জটিলতা ও করণীয় তুলে ধরা[৩১]
- প্রত্যাশিত ডেলিভারির তারিখে প্রাকৃতিক উপায়ে প্রসববেদনা না উঠলে কৃত্রিম উপায়ে প্রসবের ব্যবস্থা করা (লেবার ইন্ডাকশন)
চেকআপের প্রস্তুতি কীভাবে নিবেন?
চেকআপে যাওয়ার আগে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা ভালো। তাহলে আপনার কষ্ট কিছুটা হলেও কমে যাবে। এমন কিছু বিষয় হলো—
- চেকআপে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় জিনিস ও মনের বিভিন্ন প্রশ্নগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে ফেলুন
- সম্ভব হলে আপনার সঙ্গীকে সাথে করে চেকআপে নিয়ে যাবেন
- চেকআপে বেশি সময় লাগার সম্ভাবনা থাকলে সাথে করে হালকা খাবার ও পানি নিয়ে যাবেন
- প্রয়োজনীয় রিপোর্ট, মাতৃত্ব সেবা কার্ড ও প্রেসক্রিপশন যত্ন করে সাথে নিয়ে যাবেন
উল্লেখ্য, অনেক ক্ষেত্রে চেকআপের সময়ে আপনার গর্ভকালীন যত্নের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়ে যেতে পারে। এই সম্ভাবনা এড়াতে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর মনে করে নিজে থেকেই কিছু তথ্য ডাক্তারকে জানানোর চেষ্টা করবেন।[৩২] যেমন—
- আগে কখনো গর্ভধারণ করে থাকলে সেই সময়ের জটিলতা অথবা ইনফেকশনের ইতিহাস। যেমন: প্রি-এক্লাম্পসিয়া হওয়া অথবা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই গর্ভের শিশু জন্মানো
- কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগ থাকলে। যেমন: ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ
- আপনি অথবা আপনার পরিবারের কোনো নারী আগে কোনো সময়ে জন্মগত ত্রুটিসম্পন্ন বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকলে। যেমন: স্পাইনা বিফিডা নামক মেরুদণ্ডের সমস্যাযুক্ত সন্তান প্রসব
- আপনার পরিবারে বংশগত অথবা অন্য কোনো বিশেষ রোগের রোগী থাকলে। যেমন: থাইরয়েডের সমস্যা, থ্যালাসেমিয়া, সিকেল সেল অ্যানিমিয়া অথবা সিস্টিক ফাইব্রোসিস
- আপনি অথবা আপনার সন্তানের বাবা কোনো জেনেটিক রোগ অথবা বংশগত রোগের বাহক হলে। যেমন: সিকেল সেল অ্যানিমিয়া অথবা থ্যালাসেমিয়া
- আপনি আগে কখনো বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা করিয়ে থাকলে
- আপনি কখনো ডোনার শুক্রাণু অথবা ডোনার ডিম্বাণুর সাহায্যে গর্ভধারণ করে থাকলে
- আপনার অথবা বাড়ির কারও ধূমপান অথবা মাদক ব্যবহারের ইতিহাস থাকলে
পরিবারের ভূমিকা
গর্ভকালীন সময়ে পরিবারের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। প্রতি চেকআপের সময় আসার সপ্তাহখানেক আগে থেকেই কার সাথে চেকআপে যাবেন সেটি ঠিক করে রাখুন। তাকে যানবাহনের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দিতে পারেন। প্রশ্নগুলো গুছিয়ে ওঠাতে পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিন।
এসবের পাশাপাশি চেকআপের পরামর্শগুলো মেনে চলতে তারা কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারে এই সম্পর্কে সবাই মিলে বিস্তারিত আলোচনা করুন। সম্ভব হলে একেকজনকে একটু একটু করে এই সংক্রান্ত বিভিন্ন দায়িত্ব দিন। যাত্রাটি পরিবারের সদস্যদের সাথে ভাগাভাগি করে নিলে পথচলা অনেকটা সহজ হয়ে আসবে।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
গর্ভকালীন চেকআপ সুস্থ বাচ্চা জন্মানোর সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় প্রমাণিত যে, নিয়ম মেনে গর্ভকালীন চেকআপ করলে মা ও শিশুর মৃত্যুহার অনেকাংশে কমে যায়।[৩৩] তাই মা ও শিশুর সুরক্ষায় প্রত্যেক গর্ভবতী নারীর সঠিক নিয়ম মেনে গর্ভকালীন চেকআপ করানো উচিত।
আট মাসের পরে মা ও শিশুর সুরক্ষার জন্য সাধারণত একটি আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। এ ছাড়া বিশেষ প্রয়োজনে ডাক্তার আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার পরামর্শ দিলে সেটাও করানো যাবে। অনেক ক্ষেত্রেই ইমারজেন্সি বা জরুরি অবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাম করে চিকিৎসকেরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। তবে প্রয়োজন ছাড়া নিজ উদ্যোগে আলট্রাসনোগ্রাম না করাই ভালো।
আমাদের দেশে একজন সুস্থ গর্ভবতী নারীকে সাধারণত নিচের শিডিউল বা সময়সূচী অনুযায়ী গর্ভকালীন চেকআপ করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়—
– গর্ভধারণের পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রথম চেকআপ
– প্রথম চেকআপের পর থেকে গর্ভকালীন ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি মাসে একবার চেকআপ
– ২৯ সপ্তাহ থেকে ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি দুই সপ্তাহে একবার চেকআপ
– ৩৭ সপ্তাহ থেকে প্রসবের আগ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার চেকআপ
গর্ভাবস্থার শুরু থেকে কমপক্ষে চারবার চেকআপ করানো খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে গর্ভধারণের পরে যত দ্রুত সম্ভব প্রথম চেকআপ করাতে হয়। এরপর ৬ষ্ঠ মাসে দ্বিতীয় চেকআপ, ৮ম মাসে তৃতীয় চেকআপ ও ৯ম মাসে চতুর্থ চেকআপ করাতে হবে।
নানান প্রয়োজনে এই চেকআপের সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে এর চেয়ে কম বার চেকআপ করলে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং সেসব জটিলতা থেকে মৃত্যুবরণ করার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পা