গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হওয়ার ঘটনা খুব কমন। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে এই ধরনের ব্যথা বেশী হয়ে থাকে।
লিগামেন্ট হলো সুতার মতো কিছু টিস্যু। শরীরের বিভিন্ন হাড় ও জয়েন্ট (গিরা) লিগামেন্ট এর মাধ্যমে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে।
গর্ভাবস্থায় শরীরকে প্রসবের জন্য প্রস্তুত করতে প্রাকৃতিকভাবেই এসব লিগামেন্ট নরম ও ঢিলেঢালা হয়ে যায়। ফলে কোমর ও কোমরের নীচের অংশের হাড়গুলোর ওপরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। একারণে গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা সারানোর উপায়
এখানে কোমর ব্যথা কমানোর ৯টি টিপস তুলে ধরা হয়েছে—
১. মেঝে থেকে কিছু তুলতে হলে আগে হাঁটু ভাঁজ করে নিন। পিঠ সোজা রেখে এরপর জিনিসটি তুলুন। সামনে ঝুঁকে মেঝে থেকে কোনো কিছু তোলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. ভারী জিনিস ওঠানামা করা থেকে বিরত থাকুন।
৩. কোনোদিকে ঘুরতে হলে খেয়াল রাখুন যেন মেরুদণ্ড বা শিরদাঁড়ার হাড় সোজা থাকে ও মোচড় না খায়। শরীরের কেবল ওপরের অংশটি না বাঁকিয়ে পুরো শরীর ঘুরিয়ে ফেলুন।
৪. শরীরের ওজন দুই পায়ে সমানভাবে বণ্টন করার জন্য হিল জুতা না পরে ফ্ল্যাট বা সমতল জুতা পরুন।
৫. কেনাকাটা করার সময়ে হাতে ব্যাগ বহন করতে হলে এমনভাবে বহন করুন যেন দুই হাতের ব্যাগের ওজনের মধ্যে ভারসাম্য থাকে।
৬. ঘরে অথবা অফিসে বসে কাজ করার সময়ে পিঠ সোজা রাখুন। গর্ভাবস্থায় ব্যবহারের জন্য বিশেষ বালিশ (ম্যাটারনিটি সাপোর্ট পিলো) ব্যবহার করতে পারেন।
৭. পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষের কয়েক মাস যথেষ্ট বিশ্রামের বিষয়টি নিশ্চিত করুন।
৮. কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। এ ছাড়া শরীর ম্যাসাজ বা হালকাভাবে মালিশ করতে পারেন।
৯. এমন জাজিম, তোষক ও ম্যাট্রেস ব্যবহার করুন যা সঠিকভাবে শরীরের ভার বহন করতে পাররে। প্রয়োজনে নরম জাজিমের নিচে একটি হার্ডবোর্ড রেখে সেটি কিছুটা শক্ত করার ব্যবস্থা করতে পারেন।
ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা না থাকলে এই কোমর ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। সবসময় ঔষধের সাথে থাকা কাগজে যে নির্দেশনা লেখা আছে সেটি পড়ে নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা কমানোর ব্যায়াম
এখানে চারটি ধাপে একটি হালকা ব্যায়ামের পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে। এই ব্যায়ামটি পেটের পেশিগুলোকে শক্তিশালী করে তোলে। এভাবে এই ব্যায়াম গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ধাপ ১
ছবি ১ এর মতো চার হাত-পায়ে ভর দিয়ে এমন একটি অবস্থান গ্রহণ করুন যেন—
- হাঁটু কোমর বরাবর থাকে
- হাতের তালু কাঁধ বরাবর থাকে
- আঙুলগুলো সামনের দিকে থাকে
- পেটের পেশি টানটান অবস্থায় থাকে
- পিঠ সোজা ও মেঝের সমান্তরালে থাকে
ধাপ ২
এবার ছবি ২ এর মতো করে—
- পেটের পেশি ভেতরের দিকে টেনে নিন এবং পিঠ ওপরের দিকে উঁচু করুন
- মাথা ও কোমর ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামান
- কনুই নমনীয় রাখুন। কনুই একেবারে সোজা ও শক্ত করে ফেলা যাবে না
- পিঠ কোনো কষ্ট ছাড়া স্বাভাবিকভাবে যতটুকু উঁচু করা যায় ঠিক ততটুকুই উঁচু করবেন
ধাপ ৩
কয়েক সেকেন্ড এ অবস্থানেই থাকুন। এরপর ছবি ৩ এর মতো করে—
- ধীরে ধীরে আগের মতো, অর্থাৎ ছবি ১ এর মতো অবস্থানে ফিরে আসুন
- পিঠকে আগের মতো সোজা ও মেঝের সমান্তরালে নিয়ে আসুন
- পিঠ যেন বাঁকা না হয়ে যায় অর্থাৎ নিচের দিকে ঝুঁকে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন
ধাপ ৪
ধীরে ধীরে ও নিয়মিতভাবে মোট ১০ বার ধাপ ১ থেকে ধাপ ৩ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করুন। পিঠ ওঠানামা করার সময়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকুন।
যখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি
কোমর ব্যথা অনেক বেড়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তার আপনাকে ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে পাঠাতে পারেন। ফিজিওথেরাপিস্ট ব্যথা কমানোর বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম দেখিয়ে দিতে পারবেন।
কোমর ব্যথার সাথে নিচের কোনো লক্ষণ থাকলে দেরি না করে ডাক্তার দেখাতে হবে—
- যেকোনো এক পা কিংবা উভয় পায়ে, পায়খানার রাস্তার চারিদিকে অথবা যোনিপথে অবশ লাগা, অর্থাৎ বোধ হারিয়ে ফেলা
- জ্বর আসা, মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্ত যাওয়া ও প্রস্রাব করার সময়ে ব্যথা হওয়া
- বুকের পাঁজরের যেকোনো একপাশে কিংবা উভয় পাশেই ব্যথা হওয়া
বিশেষ দ্রষ্টব্য: গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস পার হয়ে যাওয়ার পরে তীব্র কোমর ব্যথা হলে সেটি সঠিক সময়ের আগেই প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। তাই দেরি না করে রোগীকে ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে।