গর্ভাবস্থায় শরীর কিছুটা ফুলে যাওয়া বেশ স্বাভাবিক। বিশেষ করে পা, পায়ের গোড়ালি, পায়ের পাতা ও আঙুল এভাবে ফুলে যেতে দেখা যায়। সাধারণত গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এই ধরনের সমস্যা বেড়ে যায়। এই ঘটনাকে অনেকে সচরাচর ‘পানি আসা’ বলে থাকে।
এমন ফুলে যাওয়ার সমস্যা ধীরে ধীরে দেখা দিলে সেটি সাধারণত মা কিংবা গর্ভের বাচ্চার জন্য তেমন ক্ষতিকর হয় না। তবে এটি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কিন্তু শরীর হঠাৎ করে ফুলে যাওয়া শঙ্কার কারণ। এটি কখনো কখনো প্রি-এক্লাম্পসিয়া নামক গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ জনিত জটিলতার লক্ষণ হতে পারে।
নিচের পাঁচটি লক্ষণের যেকোনোটি দেখা দিলে গর্ভবতী মাকে দেরি না করে ডাক্তার দেখাতে হবে—
- হঠাৎ করেই মুখ, হাত অথবা পা ফুলে যাওয়া
- তীব্র মাথাব্যথা হওয়া
- দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হওয়া। যেমন: দৃষ্টিশক্তি ঘোলাটে হয়ে যাওয়া অথবা চোখে আলোর ঝলকানির মতো কিছু দেখা
- বুকের পাঁজরের ঠিক নিচে তীব্র ব্যথা হওয়া
- ওপরের যেকোনো লক্ষণের পাশাপাশি বমি হওয়া
এগুলো প্রি-এক্লাম্পসিয়া এর লক্ষণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় পা ফুলে যাওয়ার কারণ
গর্ভাবস্থায় শরীর সাধারণ অবস্থার তুলনায় বেশি পানি ধরে রাখে, তাই শরীর ফুলে যায়।
সারাদিন ধরে এই বাড়তি পানি শরীরের নিচের অংশে জমা হতে থাকে। বিশেষ করে আবহাওয়া উষ্ণ থাকলে কিংবা গর্ভবতী নারী অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকলে এমন হতে দেখা যায়।
গর্ভাবস্থায় মায়ের জরায়ু বড় হতে থাকে। এই বাড়ন্ত জরায়ুর চাপ পায়ের রক্ত চলাচলে প্রভাব ফেলতে পারে। একারণে পা, পায়ের পাতা ও পায়ের গোড়ালিতে পানি জমে সেগুলো ফুলে যায়।
উল্লেখ্য, গর্ভাবস্থায় হাত অথবা মুখ অনেক বেশি ফুলে যাওয়া আশংকাজনক। এটি গর্ভাবস্থার বিপদ চিহ্নগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি চিহ্ন। এই ধরনের ফোলা গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক পানি আসার ফোলা থেকে ভিন্ন।
হাত ও মুখ আশংকাজনকভাবে ফুলে যাওয়ার লক্ষণগুলো হলো—
- হাত এতটাই ফুলে যাওয়া যে আঙুল ভাঁজ করতে কিংবা নিজের আংটি পরে থাকতে সমস্যা হয়
- মুখ এতটাই ফুলে যাওয়া যে চোখ পুরোপুরি খুলতে সমস্যা হয়
- মুখ ও ঠোঁট ফুলে আছে কিংবা অবশ হয়ে আছে বলে মনে হওয়া
গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসা কমাতে করণীয়
- দীর্ঘক্ষণ একটানা দাঁড়িয়ে থাকা থেকে বিরত থাকুন।
- আরামদায়ক জুতা-মোজা পরুন। পা ফুলে গেলে চাপ লাগতে পারে এমন ডিজাইনের জুতা এড়িয়ে চলুন।
- বিশ্রাম নেওয়ার সময়ে যথাসম্ভব পায়ের পাতা ওপরের দিকে রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে বিশ্রামের সময়ে পায়ের নিচে বালিশ দিতে পারেন।
- প্রচুর পানি পান করুন। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে সাহায্য করবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন। দিনের বেলা নিয়মিত হাঁটার অথবা পায়ের গোড়ালির ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
পায়ের গোড়ালির ব্যায়াম
বসে কিংবা দাঁড়িয়ে—যেকোনো অবস্থাতেই পায়ের গোড়ালির ব্যায়াম করা যায়। এই ব্যায়াম করলে তিনটি বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়—
- পায়ের রক্ত চলাচলকে উন্নত করে।
- পায়ের গোড়ালি ফুলে যাওয়ার সমস্যা কমায়।
- ‘কাফ মাসল’ এ টান লাগা বা খিঁচ ধরা প্রতিরোধ করে। কাফ মাসল হলো পায়ের পেছনের দিকে হাঁটুর নিচের অংশে থাকা পেশি।
যেভাবে ব্যায়াম করবেন—
- গোড়ালি ভাঁজ করে আবার সোজা করুন। একবার ওপরের দিকে ভাঁজ করবেন, পরের বার নিচের দিকে ভাঁজ করবেন। এভাবে মোট ৩০ বার করতে হবে।
- হাঁটু না নাড়িয়ে পায়ের পাতা বৃত্তাকারে, অর্থাৎ ঘড়ির কাটার মতো করে ঘুরান। একবার ঘড়ির কাঁটা যেদিকে ঘুরে সেদিকে, অর্থাৎ ডান দিকে, আটবার ঘোরাবেন। এরপর ঘড়ির কাঁটা যেভাবে ঘুরে তার বিপরীত দিকে আরও আটবার ঘোরাবেন। এভাবে মোট ১৬ বার ঘুরাতে হবে।