গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। অধিকাংশ গর্ভবতী নারীরই এই সমস্যা দেখা দেয়।[১] সাধারণত এটি তেমন গুরুতর কোনো সমস্যা নয়। কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে সহজেই বমি ভাব ও বমি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
গর্ভাবস্থায় কখন থেকে বমি বমি ভাব হতে পারে?
গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব ও বমি করার প্রবণতাকে ইংরেজিতে ‘মর্নিং সিকনেস’ বলে। নামে মর্নিং বা সকাল থাকলেও আসলে দিনের যেকোনো সময়েই আপনার বমি বমি ভাব হতে পারে।
সাধারণত গর্ভাবস্থার একদম প্রথম দিকেই (৪ থেকে ৭ সপ্তাহের ভেতর) এই সমস্যা দেখা দেয়।[২] অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে বমি বমি ভাব নিজে থেকেই কমে আসে।[৩] তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এই সময়ের পরেও—এমনকি পুরো গর্ভকাল জুড়ে বমি বমি ভাব অথবা বমি হতে পারে।
গর্ভধারণের পর পরই অনেকের বমি বমি ভাব ও বমি দেখা দেয়, তাই অনেকে মনে করেন যে এটি হয়তো গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ। তবে সব গর্ভবতী নারীরই বমির সমস্যা দেখা দেয় না। সেটাও খুব স্বাভাবিক। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।
গর্ভাবস্থায় বমি ভাব এর চিকিৎসা
বমি কমানোর ঘরোয়া চিকিৎসা
গর্ভাবস্থার বমি বমি ভাব অথবা বমি কমানোর জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। কারণ প্রতিটি গর্ভাবস্থাই একে অপরের থেকে আলাদা। তাই একই চিকিৎসায় যে সবার সমস্যা সেরে যাবে ব্যাপারটা তেমন নয়। তবে খাদ্যতালিকা ও দৈনন্দিন জীবনে সহজ কিছু পরিবর্তন এনে এই সমস্যা অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এজন্য—
১. আদাযুক্ত খাবার খান: বিভিন্ন গবেষণায় দেখে গিয়েছে, গর্ভাবস্থার বমি ভাব ও বমি কমাতে আদা কার্যকরী ভূমিকা রাখে।[৪][৫] এমনকি একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গর্ভকালীন বমি ভাব ও বমি উপশমে আদা একটি ঔষধের (পাইরিডক্সিন বা ভিটামিন বি৬) সমান কার্যকর।[৬]
আপনি কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন। সালাদ কিংবা ছোলামাখা খাওয়ার সময়ে পেঁয়াজ-মরিচের সাথে আদা কুচি মিশিয়ে নিতে পারেন। এ ছাড়া গরম পানিতে শুধু আদার কুচি দিয়ে আদা চা বানিয়ে খেতে পারেন।
২. খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলুন: খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ নিয়ম আপনার বমিভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে—
- খালি পেটে কাজ কর্ম শুরু করলে বমি বমি ভাব হতে পারে।[৭] তাই ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথে হালকা কিছু (যেমন: কয়েকটা বিস্কুট অথবা কোনো ফল) খেয়ে নিতে পারেন।
- ১-২ ঘন্টা পর পর অল্প পরিমাণে খাবার খেতে পারেন। এতে করে পেট খালি থাকার সম্ভাবনা কমে যায়।
- অতিরিক্ত তেল-চর্বি যুক্ত কিংবা খুব বেশি মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত মিষ্টি বা টক জাতীয় খাবারও কম খাওয়া ভালো।
- সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। কম তেল ও কম মশলাযুক্ত সহজপাচ্য খাবার আপনার বমি ভাব কমাতে দারুণ উপকারী হতে পারে। যেমন: ভাত, টোস্ট, কলা, চা ও শুকনো খাবার।
- বেশি বেশি প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রোটিন জাতীয় খাবার পেটে খাবারের চলাচল সহজ করে৷ ফলে বমি কমাতে এটি সাহায্য করতে পারে।[৮] মাছ, মাংস, ডিম আর দুধের তৈরি খাবারের পাশাপাশি বাদামও প্রোটিনের ভালো একটি উৎস।
- খাবার খাওয়ার কমপক্ষে আধাঘন্টা আগে ও পরে পানি বা পানীয় খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অনেকসময় খাবার খাওয়ার সাথে সাথে পানি খেয়ে নিলে পেট অতিরিক্ত ভরে গিয়ে বমি হতে পারে।
- ঠান্ডা পানি, পানীয় কিংবা টক ফলের জুস অনেকসময় বমি ভাব কমাতে সহায়তা করতে পারে।
- খাবার খাওয়ার সাথে সাথে শুয়ে বিশ্রাম নেওয়া থেকে বিরত থাকুন৷ খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ হালকা হাঁটাহাঁটি করে নিলে খাবার ভালোভাবে হজম হয়।
৩. বমি ভাব উদ্রেক করে এমন জিনিস এড়িয়ে চলুন: গর্ভধারণ করার পরে অনেকের ঘ্রাণশক্তি আগের চেয়ে তীব্র হয়ে গিয়েছে বলে মনে হতে পারে।[৯] আপনি যেই গন্ধগুলো হয়তো আগে তেমন বুঝতে পারতেন না কিংবা খেয়াল হতো না, সেগুলোও এখন নাকে এসে লাগতে পারে।[১০] গর্ভাবস্থায় ঘ্রাণশক্তি তীব্র মনে হওয়ার সাথে বমি বমি ভাব বেড়ে যাওয়ার একটি সম্পর্ক থাকতে পারে।[১১][১২] তাই যেসব গন্ধে অস্বস্তি হয় সেগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
নির্দিষ্ট কোনো খাবার, পারফিউম অথবা কোনো কিছুর গন্ধ খারাপ লাগলে যতটা সম্ভব হয় সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। বদ্ধ ঘরে রান্না করলে অনেকসময় কাঁচা খাবারের গন্ধ খারাপ লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে জানালা খুলে রান্না করা যেতে পারে। গরম খাবারের গন্ধ অস্বস্তিকর মনে হলে খাবার কিছুটা ঠাণ্ডা করে তারপর খেতে পারেন। ময়লা ফেলার ক্ষেত্রে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাহায্য নিন।
বিভিন্ন গন্ধের পাশাপাশি তাপ, আর্দ্রতা, বদ্ধ পরিবেশ, মিটমিটে আলো কিংবা বিকট শব্দ আপনার বমি ভাবকে বাড়িয়ে দিতে পারে। এসবের মধ্যে যেগুলো আপনার জন্য সমস্যা তৈরি করে সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
৪. বেশি বেশি পানি ও তরল খাবার খান: গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার খাওয়া উচিত। এগুলো বমি ভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে।
একজন সুস্থ-স্বাভাবিক গর্ভবতী নারীর প্রতিদিন গড়ে ২–৩ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। কাপ কিংবা গ্লাসের হিসাবে আপনাকে সারাদিনে মোট ৮–১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে। তবে এই বিষয়ে কখনো যদি ডাক্তার কোনো বিশেষ পরামর্শ দিয়ে থাকেন তাহলে সেটিই অনুসরণ করবেন।
এ ছাড়া পানি ও তরল খাবার (যেমন: ভাতের মাড় ও ওরস্যালাইন) বমির কারণে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া পানির চাহিদা পূরণেও সহায়তা করে। পানিশূন্যতা এড়াতে প্রতিবার বমি করার পরে যখনই কিছু খেতে পারবেন, তখনই অল্প অল্প করে বারবার তরল খাবার খেতে থাকবেন। ফার্মেসি থেকে ওরস্যালাইন কিনে প্যাকেটের নির্দেশনা অনুযায়ী স্যালাইন বানিয়ে অল্প অল্প করে বারবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৫. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: শরীর ক্লান্ত থাকলে বমি বমি লাগার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। তাই পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামের ব্যাপারে খেয়াল রাখুন।
৬. আকুপাংচার থেরাপি অথবা আকুপ্রেশার ব্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন: আকুপ্রেশার ব্যান্ড ব্যবহার করে কব্জির একটি নির্দিষ্ট জায়গায় চাপ প্রয়োগ করা হয়। আকুপাংচার থেরাপি অথবা আকুপ্রেশার ব্যান্ড ব্যবহার করে অনেকের বমি ভাব কমে আসে বলে কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে।[১৩] তাই আকুপাংচার করিয়ে দেখতে পারেন। তবে আকুপাংচারের কার্যকারিতা এখনো নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়। এ নিয়ে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন।[১৪]
বিশেষ তথ্য
বমি করার সময়ে পাকস্থলীতে থাকা এসিড বমির সাথে বেরিয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় প্রায়ই বমি হলে দাঁত বারবার এই এসিডের সংস্পর্শে আসে। এতে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। ফলে আপনার দাঁত ও মাড়িতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই প্রতিবার বমি হওয়ার সাথে সাথে পানি দিয়ে ভালো করে কুলি করে নিন। এ ছাড়া বমি করার পর পরই দাঁত ব্রাশ না করে অন্তত এক ঘন্টা অপেক্ষা করুন। কেননা বমির পর পর দাঁত একটু দুর্বল থাকে। সাথে সাথে ব্রাশ করলে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে।
সাধারণ পানির পরিবর্তে পানিতে বেকিং সোডা মিশিয়ে কুলি করলে সেটা মুখে চলে আসা অ্যাসিডকে নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করতে পারে। ঘরেই এই মিশ্রণ তৈরির সহজ উপায় হলো এক কাপ পানিতে এক চামচ বেকিং সোডা গুলিয়ে এই পানি দিয়ে ভালোভাবে কুলি করে নেওয়া। এতে দাঁতের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে উপকার পেতে পারেন।
বমি ভাব কমানোর ঔষধ
ঘরোয়া পরামর্শগুলো ঠিকমতো মেনে চলার পরেও বমির সমস্যা না কমলে কিছু ঔষধ খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় বমি ভাব কমানোর জন্য ভিটামিন বি৬ বা পাইরিডক্সিন ব্যবহার করা হয়। এটি গর্ভাবস্থার বমি ভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গর্ভকালীন বমি ভাব ও বমি কমাতে এই ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেয়।[১৫]
ভিটামিন বি৬ একটি ওভার দা কাউন্টার ঔষধ। ফার্মেসি থেকে কিনে নিরাপদে সেবন করতে পারবেন। এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিন।
ভিটামিনের পাশাপাশি বমি ভাব কমাতে ডাক্তার আপনাকে ডক্সিলঅ্যামিন নামের একটি ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন। এই অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধটি গর্ভাবস্থার জন্য নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়।[১৬] এটি আলাদাভাবে সেবন করা যায়, আবার পাইরিডক্সিন মেশানো অবস্থায় একত্রেও কিনতে পাওয়া যায়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটা সেবন করা যাবে না।
এসব ঔষধে কাজ না হলে ডাক্তার আপনাকে বমির জন্য নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন। ফার্মেসিতে অনেক ধরনের বমির ঔষধ পাওয়া যায়৷ এগুলো সাধারণত ট্যাবলেট হিসেবে সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে যদি সব ধরনের খাবার ও পানীয় বমি হয়ে যেতে থাকে তাহলে সাপোজিটরি অথবা ইনজেকশন হিসেবেও বমির ঔষধ দেওয়া হতে পারে।
উল্লেখ্য, গর্ভাবস্থার জন্য সব ধরনের বমির ঔষধ নিরাপদ কি না তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি৷[১৭] তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের বমির ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। এতে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হতে পারে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
বমির সাথে নিচের কোনো লক্ষণ থাকলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন—
- রক্তবমি হলে
- প্রস্রাবের রঙ অনেক গাঢ় হলে অথবা ৮ ঘন্টার বেশি সময়ের মধ্যে প্রস্রাব না হলে
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে যা খাচ্ছেন কিংবা পান করছেন তার সবকিছুই বমি হয়ে গেলে
- শরীর প্রচণ্ড দুর্বল লাগলে
- মাথা ঘুরালে অথবা দাঁড়ানোর সময়ে অজ্ঞান হয়ে যাবেন এমনটা মনে হলে
- পেটে ব্যথা থাকলে
- জ্বর থাকলে
- মাথাব্যথা থাকলে
- প্রস্রাবের সময়ে ব্যথা হলে
- ওজন কমে গেলে
এগুলো পানিশূন্যতা, প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন অথবা কোনো গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি আপনার শারীরিক পরীক্ষা করবেন, প্রেসার মেপে দেখবেন এবং কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিবেন। যেমন: রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা ও পেটের আলট্রাসনোগ্রাম।
হাসপাতালে ভর্তি করা হলে আপনাকে শিরায় স্যালাইন দেওয়া হতে পারে। সেই সাথে বমির ঔষধ ও অন্যান্য ভিটামিন আপনার শরীরে ইনজেকশন হিসেবে দেওয়া হতে পারে। এমন চিকিৎসার পরে অনেকে সুস্থ বোধ করেন এবং দ্রুত বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।
পড়ুন: গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাব
হাইপারমেসিস গ্রাভিডেরাম
কিছু ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার বমি ভাব ও বমির সমস্যা একটি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এই মারাত্মক অবস্থাকে ডাক্তারি ভাষায় ‘হাইপারমেসিস গ্রাভিডেরাম’ বলা হয়। এক্ষেত্রে সারাদিনে অনেকবার বমি হয়। গর্ভবতীর খাবার-পানি কিছুই পেটে রাখতে পারে না। প্রতি ১০০ জন গর্ভবতীর মধ্যে ৩ জনের এমন গুরুতর বমির সমস্যা দেখা দিতে পারে।[১৮]
এই জটিলতায় আক্রান্ত হলে আপনি পানিশূন্যতা ও অপুষ্টিতে আক্রান্ত হতে পারেন। এমনকি শরীরের ওজন কমে যেতে পারে। শরীরে লবণ, ক্ষার ও এসিডের ভারসাম্য হারিয়ে নানান মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে বিশেষায়িত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে এবং অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হতে পারে।
পড়ুন: হাইপারমেসিস গ্রাভিডেরাম
কাদের মর্নিং সিকনেস হওয়ার প্রবণতা বেশি?
নিচের ক্ষেত্রগুলোতে গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়ার ঝুঁকি সাধারণের তুলনায় কিছুটা বেড়ে যেতে পারে।
যদি আপনার—
- গর্ভে যমজ, অর্থাৎ দুই বা তার বেশি সন্তান থাকে
- আগের কোনো গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব হয়ে থাকে
- মোশন সিকনেস থাকে, অর্থাৎ গাড়িতে চড়লে বমি বমি ভাব অথবা বমি হয়
- মাইগ্রেনের সমস্যা থাকে
- মা-বোন অথবা পরিবারের অন্যদের গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাবের ইতিহাস থাকে
- গর্ভধারণের আগে ইস্ট্রোজেনযুক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়ার ফলে বমি বমি ভাব হওয়ার ইতিহাস থাকে
- আপনি প্রথমবারের মতো গর্ভবতী হয়ে থাকেন
- ওজন অতিরিক্ত বেশি (বিএমআই ৩০ এর বেশি) হয়
- কোনো ধরনের মানসিক চাপ অথবা দুশ্চিন্তার ভেতর দিয়ে যেতে হয়
- গর্ভাবস্থায় ঘ্রাণশক্তি আগের চেয়ে তীব্র হয়ে যায়
বমি বমি ভাব হওয়ার কারণ কী?
গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের তারতম্য বমি বমি ভাবের অন্যতম কারণ বলে ধারণা করা হয়।এ ছাড়া আরও কিছু অসুখের কারণেও বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। যেমন—
- পেটের আলসার
- ফুড পয়জনিং
- থাইরয়েডের রোগ
- পিত্তথলির রোগ। যেমন: পিত্তথলিতে পাথর হওয়া
- কিডনির ইনফেকশন।[১৯] সঠিক চিকিৎসার অভাবে প্রস্রাবের ইনফেকশন কিডনিতে ছড়িয়ে গিয়ে বমি বমি ভাব কিংবা বমি হতে পারে
সাধারণ জিজ্ঞাসা
গর্ভাবস্থায়, বিশেষ করে প্রথম ত্রৈমাসিকে বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া খুবই কমন একটি লক্ষণ। এতে সাধারণত গর্ভবতী মায়ের অথবা গর্ভের শিশুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই৷[২০] বরং কিছু গবেষণায় গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে হওয়া বমি ভাব ও বমির সাথে গর্ভপাতের ঝুঁকি কমার সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে।[২১] তাই গর্ভাবস্থার বমি ভাব নিয়ে সাধারণত খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
তবে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত বমি ভাব কিংবা হাইপারএমেসিস গ্র্যাভিডেরাম হলে গর্ভের শিশু অনেকসময় স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন নিয়ে জন্মাতে পারে।[২২] তাই যদি গর্ভাবস্থায় বমি ভাব অথবা বমি আপনার স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কিংবা এ নিয়ে আপনার অনেক বেশি দুশ্চিন্তা হতে থাকে, তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। গর্ভকালীন চেকআপের সময়ে বিষয়টি আলোচনা করে নিতে পারেন।