গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড

সন্তান নেওয়ার চেষ্টা শুরু করার পর থেকে সন্তান জন্ম দেওয়ার তিন মাস পর পর্যন্ত ফলিক এসিড খেতে হবে।

গর্ভাবস্থায় নিয়মিত নানান ধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার। তবে শুধুমাত্র খাবার দিয়েই কিছু পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পুরোপুরি মেটানো খুবই কষ্টসাধ্য। এরকম একটি পুষ্টি উপাদান হলো ফলিক এসিড, যা মা ও শিশু উভয়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান নেওয়ার চেষ্টা শুরু করার সময় থেকেই নারীদের প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে ফলিক এসিড গ্রহণ করা জরুরি।

ফলিক এসিড কী?

ফলিক এসিডের অন্য নাম ভিটামিন বি৯। ভিটামিন বি৯ বিভিন্ন খাবারে ‘ফোলেট’ হিসেবে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে সবুজ শাক, বিভিন্ন ফল ও বাদাম। এই ভিটামিন বি৯ যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয় তখন তাকে ফলিক এসিড বলে।

ফলিক এসিড ট্যাবলেট বা বড়ি হিসেবে ফার্মেসিতে পাওয়া যায়। পাশাপাশি মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেটে অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলের সাথে যুক্ত অবস্থাতেও পাওয়া যায়।

ফলিক এসিড এর উপকারিতা

আমাদের শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য ভিটামিন বি৯ বা ফলিক এসিড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ফলিক এসিড দেহের নানান গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভূমিকা রাখে। যেমন—

  • রক্তকণিকা ও প্রোটিন তৈরিতে অংশ নেয়
  • রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে
  • গর্ভের শিশুর ব্রেইন, মাথার খুলি ও স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য অংশ সঠিকভাবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে
  • গর্ভের শিশুর নানান জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে

ফলিক এসিড গর্ভের শিশুর ‘নিউরাল টিউব’ গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। গর্ভধারণের প্রথম দিকের সপ্তাহগুলোতে এই নিউরাল টিউব গড়ে ওঠে। নিউরাল টিউব থেকেই পরবর্তীতে শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য অংশ তৈরি হয়।

ফলিক এসিডের অভাব হলে শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য অংশের গঠনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন ক্ষেত্রে শিশু নানান জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মায়।[১] যেমন—

  • অ্যানেনসেফালি: এক্ষেত্রে মাথার খুলির হাড় ও ব্রেইন সঠিকভাবে গড়ে ওঠে না
  • স্পাইনা বিফিডা: এই জটিলতায় মেরুদণ্ড সঠিকভাবে তৈরি হয় না

গর্ভধারণের শুরুর দিকেই শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য অংশ দ্রুত বিকশিত হতে থাকে। বলে এই সময়ে ফলিক এসিডের অভাব থাকলে নানান জন্মগত ত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। এসব ত্রুটি প্রতিরোধে নিয়মিত ফলিক এসিড সেবন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করার সময় থেকেই ফলিক এসিড খাওয়া দরকার। সেটি সম্ভব না হলে, গর্ভধারণের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফলিক এসিড খাওয়া শুরু করতে হবে।[২]

গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড খাওয়ার নিয়ম

কতটুকু খাবেন?

গর্ভাবস্থায় আপনার প্রতিদিন ৬০০ মাইক্রোগ্রাম বা ০.৬০ মিলিগ্রাম ফলিক এসিড প্রয়োজন।[৩] তবে এর পুরোটা খাবার থেকে পাওয়া খুব কঠিন। তাই ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম বা ০.৪০ মিলিগ্রাম ফলিক এসিড ট্যাবলেট গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

কখন থেকে খাবেন?

সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করার সময় থেকেই ফলিক এসিড খাওয়া শুরু করা দরকার, যা সন্তান জন্মদানের পর তিন মাস পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে।[৪] তবে গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহগুলোতে গর্ভের শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য অংশ দ্রুত গড়ে উঠতে থাকে, তাই গর্ভধারণের ১২তম সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়মিত ফলিক এসিড খাওয়া বিশেষভাবে জরুরি।[৫]

কীভাবে খাবেন?

আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খালি পেটে খেলে সবচেয়ে ভালো কাজ করে। তাই যেকোনো খাবার খাওয়ার ১ ঘণ্টা আগে অথবা ২ ঘণ্টা পরে ১ গ্লাস পানি দিয়ে এই ট্যাবলেট খাবেন। এমনকি চা কিংবা দুধ খেলেও এই বিষয়টি মেনে চলতে হবে।

পানির পরিবর্তে ১ গ্লাস কমলার রস দিয়েও ট্যাবলেট খেতে পারেন। ধারণা করা হয়, কমলার রসে থাকা ভিটামিন সি শরীরকে আয়রন শোষণে সাহায্য করে।

তবে খালি পেটে আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খেলে আপনার যদি পেটে অস্বস্তি হয়, তাহলে খাবারের সাথে অথবা খাওয়ার ঠিক পর পরই ট্যাবলেটটি খেয়ে নিতে পারেন।

আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেটের সাথে একই সময়ে অ্যান্টাসিড অথবা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাবেন না। এতে আয়রনের কার্যকারিতা কমে যায়। অ্যান্টাসিড অথবা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার অন্তত ১ ঘণ্টা আগে অথবা ২ ঘণ্টা পরে আয়রন ট্যাবলেট খাবেন।

ফলিক এসিড ট্যাবলেট কোথায় পাবো?

বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গর্ভবতী নারীদের বিনামূল্যে ফলিক এসিড ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়। এই ট্যাবলেটে ফলিক এসিডের সাথে প্রয়োজনীয় আয়রনও যোগ করা থাকে। নিকটস্থ সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আপনি সহজেই এই আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট সংগ্রহ করতে পারবেন।

কোনো কারণে সরকারি হাসপাতাল থেকে আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট সংগ্রহ করতে না পারলে ফার্মেসি থেকে কিনে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে দুইটি অপশন রয়েছে। 

১। বাংলাদেশে ফলিক এসিড ০.৪০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট হিসেবে আলাদাভাবে কিনতে পাওয়া যায় না। তবে সরকারি হাসপাতাল থেকে বিতরণ করা ট্যাবলেটের মতই আয়রনযুক্ত ফলিক এসিড ট্যাবলেট ফার্মেসিতে কিনতে পাওয়া যায়। এগুলোতে ০.৪০ অথবা ০.৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণে ফলিক এসিড থাকে। এসব যে নামে পাবেন—

ব্র্যান্ড নামকোম্পানি
ফেরো প্লাসএমিকো ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড
জেনিফল প্লাসজেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
ফিওফল সিআইএস কে এফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
ফিওফলএস কে এফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
ফেরিগানমেডিমেট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
ফেরোসন টিআরহাডসন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
ফেরোস্প্যানড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড
ফেরোসিট টিআরএকমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড

২। অনেকসময় আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেটে জিংক যোগ করা থাকতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে গর্ভাবস্থায় জিঙ্ক গ্রহণ করলে বাচ্চার ওজনে ভালো প্রভাব পড়তে পারে।[৬] তাই আপনি এসব ট্যাবলেট অথবা ক্যাপসুলও কিনে খেতে পারেন। এমন কয়েকটি নাম হচ্ছে—

ব্র্যান্ড নামকোম্পানি
জিফ সিআইস্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
ফেরিক্স ভিরেনেটা লিমিটেড
প্রিনিড সিআইইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
প্রিন্যাট সিআইহেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
কারোফল জেডবেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
জিফোক্যাপনুভিস্‌তা ফার্মা লিমিটেড

ভুল ধারণা: গর্ভধারণের প্রথমদিকে আয়রন সেবন করা যাবে না।

বিজ্ঞান যা বলে: এমন ধারণা প্রচলিত আছে যে গর্ভধারণের প্রথম দুই–তিন মাসে আয়রন সেবন করা উচিত নয়। তবে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর জন্য গর্ভধারণের শুরু থেকেই আয়রন সেবন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গর্ভধারণের পরে যত দ্রুত সম্ভব দৈনিক আয়রন ও ফলিক এসিড খাওয়া শুরু করার পরামর্শ দেয়।[৭] পুরো গর্ভকাল জুড়ে এবং সন্তান জন্মদানের পর তিন মাস পর্যন্ত এটি চালিয়ে যেতে হবে।

আয়রন গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।[৮][৯] এ ছাড়াও এটি সঠিক সময়ের পূর্বেই শিশু জন্মদান এবং স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের শিশু জন্মদানের মতো জটিলতার সম্ভাবনা কমায়।[১০] একটা গবেষণায় দেখা গেছে যে গর্ভধারণের আগে থেকেই আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট সেবন করলে ২ বছর বয়সে শিশু তুলনামূলকভাবে বেশি লম্বা হয় এবং হাতের সূক্ষ্ম কাজে বেশি পারদর্শী হয়।[১১] যেমন: কাঁচি দিয়ে কিছু কাটা, মাটির ব্যাংকে পয়সা ভরা ও জুতার ফিতা বাঁধা।

যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

  1. সঠিক পরিমাণে আয়রন-ফলিক এসিডযুক্ত মাল্টিভিটামিন ঔষধ খেলে আলাদা করে আয়রন অথবা ফলিক এসিডের ট্যাবলেট খাওয়ার প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খেলে আলাদাভাবে আর আয়রন খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

    তবে আপনি যেই ঔষধই খান না কেন, বিষয়টি ডাক্তারকে জানাবেন। এতে তিনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় সঠিক ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারবেন।
  2. ফলিক এসিড আলাদাভাবে কিনতে হলে উচ্চ ডোজে ৫ মিলিগ্রাম বা ৫০০০ মাইক্রোগ্রাম ডোজের ট্যাবলেট হিসেবে কিনতে হয়। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এমন উচ্চ ডোজে ফলিক এসিড সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়, যা আর্টিকেলের পরের অংশে তুলে ধরা হয়েছে। আপনি কোন ডোজের ট্যাবলেট খাচ্ছেন সেটির ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
  3. অনেকে গর্ভধারণের আগে থেকে মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট সেবন করে থাকেন। এমন ক্ষেত্রে গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার পর থেকে সাধারণ মাল্টিভিটামিনের পরিবর্তে গর্ভাবস্থার জন্য বিশেষভাবে তৈরি ভিটামিন সাপ্লিমেন্টগুলো বেছে নিন। এই বিষয়টি আর্টিকেলের নিচের অংশে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার

প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড খাওয়ার পাশাপাশি আপনি প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এমন কিছু খাবার হলো—

  • বিভিন্ন শাক। যেমন: পালং শাক, পুঁইশাক, পাট শাক, কচু শাক, মেথি শাক, সজনে পাতা, লাল শাক, নটে শাক, সবুজ ডাঁটা শাক, মুলা শাক ও লাউ শাক 
  • বিভিন্ন সবজি। যেমন: বরবটি, মটরশুঁটি, ঢেঁড়স, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ব্রকলি
  • ছোলার ডাল, মাসকলাই ডাল ও মুগ ডাল
  • বিভিন্ন ফল। যেমন: কমলা
  • চিনাবাদাম

উল্লেখ্য, খাবার রান্না করলে সেখানে থাকা ফোলেট সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। আবার আমরা যে ফোলেট গ্রহণ করি, তা শরীর থেকে প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়। সবমিলিয়ে শরীর এটিকে বেশিদিন জমা রাখতে পারে না।

অন্যদিকে গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য গর্ভাবস্থায় দশগুণ পর্যন্ত ফলিক এসিড প্রয়োজন হতে পারে—যা শুধুমাত্র খাবার থেকে পূরণ করা খুবই কষ্টসাধ্য।

তাই গর্ভাবস্থায় ফোলেট এর অভাব প্রতিরোধে নিয়মিত ফলিক এসিড সেবন করা গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে ফোলেটযুক্ত খাবারও রাখতে হবে।

অতিরিক্ত ফলিক এসিড কখন প্রয়োজন?

কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনার প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম বা ০.৪০ মিলিগ্রামের চেয়ে বেশি ফলিক এসিড গ্রহণ করার প্রয়োজন হতে পারে। নাহলে আপনার গর্ভের শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য অংশের গঠনে সমস্যা হতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শে গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার সময় থেকেই আপনার দিনে ৫ মিলিগ্রাম করে ফলিক এসিড গ্রহণ করা দরকার। এমন কিছু ক্ষেত্র হলো[১২]

  • আপনি ডায়াবেটিসে ভুগলে
  • আপনার গর্ভধারণের পূর্বের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হলে[১৩]
  • আপনি বিটা থ্যালাসেমিয়া ও সিকেল সেল অ্যানিমিয়ার মতো রক্তশূন্যতাজনিত রোগে ভুগলে[১৪] 
  • আপনি এপিলেপ্সি বা খিঁচুনি রোগের জন্য ঔষধ সেবন করলে
  • আপনি এইচআইভি ভাইরাসের চিকিৎসায় অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ঔষধ সেবন করলে
  • আপনার অথবা আপনার গর্ভের শিশুর বাবার নিউরাল টিউবে সমস্যা থাকলে
  • আপনার অথবা গর্ভের শিশুর বাবার পরিবারের কারও নিউরাল টিউবজনিত সমস্যা থাকলে
  • আপনার পূর্বের কোনো গর্ভের শিশুর নিউরাল টিউবজনিত জটিলতার ইতিহাস থাকলে

এর কোনটি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলে অবশ্যই ডাক্তারকে জানাবেন। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ফলিক এসিড গ্রহণ করবেন।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করার সময় থেকেই কেন ফলিক এসিড খেতে হবে?

আপনি গর্ভধারণ করার প্রথম মাস থেকেই গর্ভের শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য অংশ গড়ে উঠতে থাকে।[১৫] কিন্তু প্রথম পিরিয়ড মিস হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি গর্ভবতী কি না সেটি হয়তো আন্দাজ করতে পারবেন না। ততদিনে গর্ভের শিশুর বয়স প্রায় এক মাস হয়ে যায়।

তাই সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করার সময় থেকেই প্রতিদিন ফলিক এসিড খাওয়া দরকার। এতে করে প্রথম মাসেও গর্ভের শিশু প্রয়োজনীয় ফলিক এসিড পাবে, যা শিশুর ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রে গঠনে সাহায্য করবে।[১৬]

গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড কত দিন খেতে হয়?

সন্তান নেওয়ার চেষ্টা শুরু করার সময় থেকে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরের তিন মাস পর্যন্ত আপনাকে কমপক্ষে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম বা ০.৪০ মিলিগ্রাম ফলিক এসিড ট্যাবলেট খেতে হবে। তবে গর্ভধারণের ১২তম সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়মিত ফলিক এসিড খাওয়া বিশেষভাবে জরুরি।

ফলিক এসিডের অন্য নাম কী?

ফলিক এসিডের অন্য নাম ভিটামিন বি৯। ভিটামিন বি৯ বিভিন্ন খাবারে ‘ফোলেট’ হিসেবে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। ভিটামিন বি৯ যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয় তখন তাকে ফলিক এসিড বলে।

আয়রন ও ফলিক এসিড ট্যাবলেট কোথায় পাবো?

আয়রন ও ফলিক এসিড একত্রে ট্যাবলেট হিসেবে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সব সরকারি হাসপাতালে গর্ভবতী নারীদের আয়রন ও ফলিক এসিড ট্যাবলেট বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। কোনো কারণে সেটি সংগ্রহ করতে না পারলে ফার্মেসি থেকে কিনে নিতে পারেন।

দেখুন: ফার্মেসিতে আয়রন-ফলিক এসিড যেসব নামে পাওয়া যায়

গর্ভাবস্থায় কোন মাল্টিভিটামিন খাবেন?

অনেকে গর্ভধারণের আগে থেকে মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট সেবন করে থাকেন। গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার পর থেকে সাধারণ মাল্টিভিটামিনের পরিবর্তে গর্ভাবস্থার জন্য বিশেষভাবে তৈরি মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্টগুলো বেছে নিন।
এক্ষেত্রে চারটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে—

১. সাধারণ মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেটে ফলিক এসিডের পাশাপাশি ভিটামিন এ-ও থাকে। অতিরিক্ত ভিটামিন এ গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর।[১৭] তাই মাল্টিভিটামিন খেতে হলে গর্ভাবস্থার জন্য বিশেষভাবে তৈরি মাল্টিভিটামিন বেছে নিন, যাতে গর্ভাবস্থার জন্য নিরাপদ পরিমাণে ভিটামিন এ আছে।

২. সাধারণ মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেটে সাধারণত ফলিক এসিডের পরিমাণ ৪০০ মাইক্রোগ্রাম বা ০.৪০ মিলিগ্রামের চেয়ে কম থাকে, যা জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করার জন্য যথেষ্ট নয়। তাই এসব মাল্টিভিটামিনের পরিবর্তে সঠিক ডোজে ফলিক এসিড আছে এমন ঔষধ বেছে নিতে হবে। কেনার আগে ঔষধের বোতলের গায়ে কিংবা প্যাকেটে থাকা নির্দেশিকা থেকে কমপক্ষে ০.৪০ মিলিগ্রাম করে ফলিক এসিড (ভিটামিন বি৯) আছে কি না সেটি দেখে নিতে হবে। গর্ভাবস্থার জন্য বিশেষভাবে তৈরি মাল্টিভিটামিনে সাধারণত সঠিক মাত্রায় ফলিক এসিড থাকে।

৩. সঠিক পরিমাণে আয়রন-ফলিক এসিডযুক্ত মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খেলে আলাদা করে আয়রন অথবা ফলিক এসিড খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

৪. ডাক্তারের কাছে গেলে আপনার মাল্টিভিটামিন সেবনের বিষয়টি ডাক্তারকে জানাতে হবে। এতে তিনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারবেন।