গর্ভাবস্থায় অনেকেরই যোনি বা মাসিকের রাস্তায় চুলকানি হয়। গর্ভকালীন নানান শারীরিক ও হরমোনগত পরিবর্তনের কারণে শরীরের অন্যান্য অংশের পাশাপাশি যোনিপথে এমন চুলকানি হতে পারে। তবে কখনো কখনো এই চুলকানি যোনিপথে ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।
এই আর্টিকেলে গর্ভাবস্থায় যোনিপথে চুলকানির বিভিন্ন কারণ, ইনফেকশন চেনার উপায় ও ঘরোয়া চিকিৎসা তুলে ধরা হয়েছে।
সাধারণ কারণ ও সমাধান
গর্ভাবস্থায় চুলকানির সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—
- হরমোনগত পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরের হরমোনগুলো ওঠানামা করে। এতে যোনিপথের স্বাভাবিক পরিবেশে পরিবর্তন আসে। এসব পরিবর্তন যোনিপথকে স্পর্শকাতর করে তোলে। কারও কারও ক্ষেত্রে যোনিপথ শুষ্ক হয়ে ওঠে। এসব কারণে যোনিতে চুলকানি হতে পারে।
- ঘাম: গর্ভাবস্থার প্রভাবে যোনিপথে ঘাম হতে পারে। এই ঘাম যোনিপথ ও এর আশেপাশের ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। তা থেকে এরকম চুলকানি হতে পারে। বিশেষ করে বাতাস চলাচল করতে পারে না এমন অন্তর্বাস পরলে ঘাম হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে ঘাম থেকে যোনিতে চুলকানি—এমনকি ইনফেকশন হতে পারে।[১]
- যৌনাঙ্গের চুল: গর্ভাবস্থায় যৌনাঙ্গের চুল বড় হয়ে গেলে তার সাথে আশেপাশের ত্বকের ঘর্ষণ হতে পারে৷ বিশেষ করে আঁটসাঁট প্যান্ট বা অন্তর্বাস পরলে এমন ঘর্ষণের সম্ভাবনা বাড়ে। এখান থেকে চুলকানি হতে পারে।
- বিভিন্ন প্রসাধনীতে স্পর্শকাতরতা: গর্ভাবস্থায় যৌনাঙ্গ ও যোনিপথ বেশি স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। একারণে কিছু ডিটারজেন্ট, সাবান ও বডি ওয়াশের সংস্পর্শে আসলে সেখানে চুলকানি হতে পারে।
- ঔষধ: কিছু ঔষধ সেবনের ফলে আপনার যৌনাঙ্গ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।[২] এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিহিস্টামিন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট জাতীয় কিছু ঔষধ। যৌনাঙ্গ শুষ্ক হয়ে গেলে সেখানে চুলকানি হতে পারে।
- অতিরিক্ত সাদা স্রাব: গর্ভাবস্থায় সাধারণ অবস্থার চেয়ে বেশি সাদা স্রাব যাওয়া স্বাভাবিক। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই স্রাব যোনিপথকে ইনফেকশন থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে অতিরিক্ত স্রাবের সংস্পর্শে যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হতে পারে। ফলে সেখানে চুলকানি হতে পারে।
সমাধান
এখানে কিছু সহজ ও কার্যকর ঘরোয়া উপদেশ তুলে ধরা হয়েছে। এসব উপদেশ গর্ভকালীন যোনিপথের সাধারণ চুলকানি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
ঠাণ্ডা সেঁক
ভেজা কাপড় ও বরফ চুলকানি কমাতে সাহায্য করতে পারে। এজন্য বরফ এক টুকরা মোটা সুতি কাপড়ে মুড়িয়ে যৌনাঙ্গের যে স্থানে চুলকাচ্ছে সেখানে সেঁক দিতে পারেন। এভাবে ৫–১০ মিনিট আলতো করে চেপে ধরে রাখুন। এতেও কাজ না হলে, চুলকানি না কমা পর্যন্ত এভাবে আরও কিছুক্ষণ ধরে রাখতে পারেন।
নরম সুতি কাপড়
এসময়ে সুতির পাতলা অন্তর্বাস পরলে আরাম পেতে পারেন। সুতি কাপড়ের ঢিলেঢালা অন্তর্বাস পরলে ভালো হয়।[৩] খুব টাইট বা আঁটসাঁট অন্তর্বাস ও পায়জামা না পরাই ভালো।
চুলকানোর বিকল্প নিয়ম
চুলকানির তাড়না আসলে সেটি দমিয়ে রাখা কঠিন। কিন্তু চুলকানি ওঠা স্থানে চুলকালে কয়েক মুহূর্ত আরাম লাগলেও তা চুলকানির তাড়নাকে বাড়িয়ে দেয়। এরপর আবার চুলকাতে ইচ্ছে করে। এভাবে অনেক ক্ষেত্রেই চুলকানি একটা চক্রের মতো চলতে থাকে।[৪] তা ছাড়া চুলকানোর ফলে ত্বকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষত সৃষ্টি হয়। এসবের ভেতর দিয়ে জীবাণু ঢুকে ত্বকে ইনফেকশন ঘটাতে পারে।
তাই চুলকানি উঠলেও যৌনাঙ্গ ও যোনিপথ না চুলকানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। চুলকানোর পরিবর্তে আঙুলের ত্বক দিয়ে চুলকানি ওঠা স্থানটি আলতো করে চেপে চেপে নিতে পারেন। আঘাত ও ইনফেকশন এড়াতে নখ ছোটো করে কেটে নিন এবং সবসময় মসৃণ ও পরিষ্কার রাখুন।
মেনথলযুক্ত ক্রিম-লোশন
যৌনাঙ্গের বাইরের অংশে মেনথল অথবা ক্যালামাইনযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো গর্ভাবস্থায় ব্যবহার করা নিরাপদ এবং চুলকানি থেকে কিছুটা আরাম দিতে পারে।
বেকিং সোডা
বেকিং সোডা যৌনাঙ্গের জ্বালাপোড়া ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করতে পারে। এজন্য একটা বড় গামলায় কুসুম গরম পানি নিয়ে তাতে ১–২ টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। এবার গামলায় এমনভাবে বসুন যেন আপনার পা দুটো ফাঁকা হয়ে থাকে এবং সোডা মেশানো পানি যৌনাঙ্গের সংস্পর্শে যায়। এভাবে ১০ মিনিট ধরে বসে থাকুন। দিনে দুইবার করে পর পর কয়েকদিন এভাবে বসতে পারেন।
যৌনাঙ্গ ও যোনিপথের পরিচ্ছন্নতা
যোনিপথের ভেতরের অংশ পরিষ্কার রাখার জন্য শরীরের নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে। এক্ষেত্রে বাইরে থেকে আলাদা কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। বরং সুগন্ধি সাবান কিংবা অন্য কিছু দিয়ে পরিষ্কার করতে গেলে হিতে বিপরীত হয়ে ইনফেকশন হতে পারে। তাই নিজে নিজে আলাদা করে যোনিপথের ভেতরে পরিষ্কারের চেষ্টা করবেন না।
যোনিপথ সুস্থ ও জীবাণুমুক্ত রাখতে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলুন—
- ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় ছত্রাক সহজে বংশবৃদ্ধি করে। তাই যৌনাঙ্গ সবসময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন। যোনিপথের বাইরের অংশটুকু পানি ও সাধারণ সাবান দিয়ে ধোয়ার পরে ভালোমতো শুকিয়ে নিন। কাপড় ভিজে গেলে (যেমন: সাঁতারের অথবা ব্যায়ামের পর) তা দ্রুত পাল্টে ফেলুন।
- পায়খানা শেষে পরিষ্কারের সময়ে সামনে থেকে পেছনের দিকে মুছে নিন, অর্থাৎ যোনির দিক থেকে পায়ুর দিকে পরিষ্কার করুন৷ এটি পায়ুপথ থেকে যোনিতে ব্যাকটেরিয়া ছড়ানোর সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করবে।
- যোনিপথে সুগন্ধি সাবান, শাওয়ার জেল, বিশেষ ওয়াশ কিংবা ডুশ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।[৫] সুগন্ধি ওয়েট টিস্যু অথবা পারফিউমও ব্যবহার করবেন না।
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল ব্যবহার করবেন না।
- শিডিউল অনুযায়ী নিয়মিত ‘ভায়া’ (VIA) পরীক্ষা করুন।
সহনীয় তাপমাত্রার পানি
বেশি গরম পানি ত্বককে শুষ্ক করে ফেলে, যা থেকে চুলকানি হতে পারে। এজন্য যৌনাঙ্গে গরম পানির ব্যবহার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। গোসল ও যৌনাঙ্গ পরিষ্কারের সময়ে কুসুম গরম অথবা স্বাভাবিক তাপমাত্রার কিংবা একটু ঠাণ্ডা পানি বেছে নিন।
ময়েশ্চারাইজার
শুষ্ক ত্বকের চুলকানি অনেকটা বাড়িয়ে দিতে পারে।[৬] শরীরে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা ধরে রাখার মাধ্যমে শুষ্কতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য আপনি যৌনাঙ্গের বাইরের অংশে ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম অথবা অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করতে পারলে বেশি ভালো হয়।[৭]
হাতের কাছে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম না পেলে ময়েশ্চারাইজিং লোশন ব্যবহার করতে পারেন। সুগন্ধিবিহীন ময়েশ্চারাইজারগুলো বেছে নেওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ অনেকসময় সুগন্ধী প্রসাধনসামগ্রী চুলকানি রিঅ্যাকশন ঘটিয়ে চুলকানি বাড়িয়ে দিতে পারে।
সাধারণ ময়েশ্চারাইজার কেবল যৌনাঙ্গের বাইরের অংশে ব্যবহার করবেন। যোনিপথে বা যৌনাঙ্গের ভেতরের অংশে ব্যবহারের জন্য যেসব বিশেষ ময়েশ্চারাইজার বানানো হয় তা আমাদের দেশে সবসময় সহজে পাওয়া যায় না। এমন ক্ষেত্রে কোন ধরনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন তা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন।
কনডম ও লুব্রিকেন্ট
কনডম যৌনবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাই সাধারণ অবস্থার মতো গর্ভাবস্থাতেও যৌনমিলনের সময়ে কনডম ব্যবহার করুন।
এ ছাড়া যোনি শুষ্ক হয়ে থাকলে চুলকানি হতে পারে। সেক্ষেত্রে যৌনমিলনের সময়ে লুব্রিকেন্ট বা পিচ্ছিলকারক ব্যবহার করতে পারেন।
মানসিক চাপ মোকাবেলা
মানসিক চাপ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। মানসিক চাপ চুলকানি বাড়িয়ে দিতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা
অযাচিতভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। কাজেই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা থেকে বিরত থাকুন। চিকিৎসক আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিক দিলে সঠিক ডোজে পর্যাপ্ত সময় সেবন করে ডোজ সম্পন্ন করুন।
ঘরোয়া চিকিৎসা শুরু করার পরও চুলকানি না কমলে, অস্বস্তি হলে অথবা যৌনাঙ্গে ইনফেকশনের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। ডাক্তার আপনাকে পরীক্ষা করবেন এবং ইনফেকশন থাকলে সেই অনুযায়ী যথাযথ চিকিৎসা দিবেন।
সময়মতো ইনফেকশনের চিকিৎসা না করলে তা মা ও গর্ভের শিশু উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে৷ ইনফেকশন নিয়ে আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
যখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
সাধারণ কারণগুলো ছাড়াও বিভিন্ন ইনফেকশন অথবা জটিলতা থেকে আপনার যোনিপথে চুলকানি হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই যোনিপথের স্রাবে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। যেমন—
ধূসর স্রাব—ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস
কোনো কারণে যোনিপথে থাকা জীবাণুগুলোর ভারসাম্যে পরিবর্তন হলে যোনিপথের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। তখন এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। একে ডাক্তারি ভাষায় ‘ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস’ বলে। এটি কোনো যৌনবাহিত রোগ নয়, তবে যৌন সহবাস করলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় যোনিপথের পরিবেশে পরিবর্তন হয় বলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে যোনিপথে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে—
- পাতলা ও ধূসর রঙের স্রাব যাওয়া
- স্রাব থেকে অনেকটা পচা মাছের মতো দুর্গন্ধ হওয়া। বিশেষ করে সহবাসের পরে এমন দুর্গন্ধ হয়।[৮]
- কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা, চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হওয়া।[৯] তবে এই রোগে সাধারণত এমন হয় না
ঝুঁকি
গর্ভাবস্থায় ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস হলে চিকিৎসা করানো জরুরি। কেননা গর্ভাবস্থায় এই রোগ হলে অকাল প্রসব এবং কম ওজনের সন্তান প্রসবের ঝুঁকি থাকে।[১০] তাই সময়মতো সঠিক চিকিৎসা করানো খুব গুরুত্বপূর্ণ।
তা ছাড়া এই রোগ এইচআইভি ও অন্যান্য যৌনবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। এসব থেকে আপনার ‘পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ’ হবার সম্ভাবনা থাকে, যা আপনার পরবর্তী গর্ভধারণকে কঠিন করে তুলতে পারে।[১১]
করণীয়
এই রোগের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তার আপনাকে গর্ভাবস্থার জন্য উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন। এক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট কিংবা মাসিকের রাস্তায় দেওয়ার ক্রিম অথবা জেল ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।[১২] সেই সাথে—
- যোনিপথের পরিচ্ছন্নতার উপদেশগুলো মেনে চলুন
- সহবাসের সময়ে সঠিকভাবে কনডম ব্যবহার করুন
- একাধিক যৌন সঙ্গীর সাথে সহবাস এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন[১৩]
সাদা রঙের চাকা চাকা স্রাব—ফাঙ্গাল ইনফেকশন
গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনসহ কিছু কারণে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।[১৪] এটি অনেকের কাছে ‘ঈস্ট ইনফেকশন’ নামেও পরিচিত।[১৫] এক্ষেত্রে অস্বাভাবিক ধরনের সাদা স্রাব হতে পারে। এসময়ে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে—
- অতিরিক্ত পরিমাণে দই অথবা পনিরের মতো সাদা ও চাকা চাকা স্রাব যাওয়া।[১৬] স্রাবে সাধারণত গন্ধ থাকে না
- যোনিপথের আশেপাশে প্রচুর চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হওয়া
- প্রস্রাব ও সহবাসের সময়ে ব্যথা কিংবা অস্বস্তি হওয়া
ছবি: সাদা রঙের চাকা চাকা স্রাব
ঝুঁকি
যোনিপথে কোনো কারণে উপকারী জীবাণুর সংখ্যা কমে গিয়ে এক ধরনের ফাঙ্গাসের সংখ্যা বেড়ে গেলে এই রোগ দেখা দিতে পারে।[১৭]
গর্ভাবস্থায় যোনিপথের পরিবেশে পরিবর্তন আসার ফলে এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অন্যান্য যেসব বিষয় এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে—
- ডায়াবেটিস থাকলে
- গর্ভধারণের আগে হরমোনযুক্ত জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল বা বড়ি সেবন করলে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে
- কোনো অসুস্থতার জন্য সম্প্রতি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে থাকলে। অ্যান্টিবায়োটিক মাসিকের রাস্তার ভালো জীবাণুকে মেরে ফেলতে পারে। সেই সুযোগে ফাঙ্গাস অনেক বংশবিস্তার করলে এই রোগ দেখা দিতে পারে।
গুরুতর ক্ষেত্রে ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে আপনার যোনিপথ ফুলে যেতে পারে এবং সেখানে ক্ষত হতে পারে। ক্ষত থেকে অন্য ইনফেকশনের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
করণীয়
গর্ভাবস্থায় ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলে ভয়ের কিছু নেই। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা নিলে এটি সহজেই সেরে যায়। এক্ষেত্রে ডাক্তার মাসিকের রাস্তায় ঢোকানোর ঔষধ বা ক্রিম দিতে পারেন। সাধারণত চিকিৎসা শুরু করার ১–২ সপ্তাহের মধ্যেই এই ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন সেরে যায়।
উল্লেখ্য, সব ধরনের অ্যান্টিফাঙ্গাল ঔষধ গর্ভাবস্থায় ব্যবহারের জন্য নিরাপদ নয়। যেমন, গর্ভাবস্থায় মুখে খাওয়ার কিছু অ্যান্টিফাঙ্গাল (যেমন: ফ্লুকোনাজোল) সেবনের ফলে গর্ভের শিশুর জন্মগত ত্রুটির আশঙ্কা থাকে। তাই নিজে নিজে ঔষধ কিনে চিকিৎসা শুরু করবেন না। ডাক্তারকে অবশ্যই আপনার গর্ভাবস্থা সম্পর্কে অবগত করবেন।
অ্যান্টিফাঙ্গাল চিকিৎসার পাশাপাশি পুনরায় ইনফেকশন হওয়া প্রতিরোধে যোনিপথের পরিচ্ছন্নতার উপদেশগুলো মেনে চলুন।
যৌনবাহিত ইনফেকশন
কিছু যৌনবাহিত ইনফেকশন হলে যোনিপথে চুলকানি হতে পারে। যেমন: গনোরিয়া, ক্ল্যামিডিয়া ও ট্রিকোমোনায়াসিস। এসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে কনডম জাতীয় সুরক্ষা ছাড়া সহবাস করলে আপনার মধ্যেও এগুলো ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিছু যৌনবাহিত রোগ মা ও গর্ভের শিশুর বিভিন্ন মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এমন ইনফেকশনের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
যৌনবাহিত রোগে যোনিপথে চুলকানির পাশাপাশি যেসব লক্ষণ থাকতে পারে—
- অস্বাভাবিক গন্ধ কিংবা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব
- সবুজ, হলুদ, লালচে অথবা ধূসর রঙের স্রাব
- যোনিপথের আশেপাশে ব্যথা অথবা চুলকানি
- প্রস্রাবের সময়ে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হওয়া
- যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হওয়া বা লালচে হয়ে যাওয়া
ঝুঁকি
যৌনবাহিত ইনফেকশন আপনার জরায়ুসহ প্রজননতন্ত্রের বিভিন্ন জায়গায় ইনফেকশন ঘটাতে পারে। সেখান থেকে নানান দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় গনোরিয়া ও ক্ল্যামিডিয়ার মতো ইনফেকশন হলে গর্ভের শিশুর নানান মারাত্মক জটিলতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গর্ভের শিশুর অকাল প্রসব, কম ওজন নিয়ে জন্মানো, সময়ের আগে গর্ভবতীর পানি ভেঙে যাওয়া ও গর্ভপাতের মতো মারাত্মক জটিলতার সাথে এসব যৌনবাহিত ইনফেকশনের সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে।[১৮][১৯]
করণীয়
যৌনবাহিত ইনফেকশনের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তার আপনাকে গর্ভাবস্থার জন্য নিরাপদ এমন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিবেন৷
এসব ইনফেকশন সহবাসের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই আপনার পাশাপাশি আপনার সঙ্গীরও চিকিৎসা করানো জরুরি। সঙ্গীর ইনফেকশনের চিকিৎসা না করলে তার কাছ থেকে পুনরায় আপনার ইনফেকশন হতে পারে। এ ছাড়া চিকিৎসার পরও, বিশেষ করে কনডম ছাড়া সহবাস করলে, পুনরায় এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কনডম ব্যবহারের মতো নিরাপদ শারীরিক সম্পর্কের নিয়ম মানা গুরুত্বপূর্ণ।
যখন জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
- গর্ভাবস্থায় যোনিপথে রক্তক্ষরণ হওয়া একটি অন্যতম বিপদচিহ্ন। এক্ষেত্রে দেরি না করে রোগীকে ডাক্তারের কাছে অথবা নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
- গর্ভাবস্থায় মাসিকের রাস্তা দিয়ে একটু পরপর অথবা একটানা পানি ভাঙতে থাকলে রোগীকে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। এটি সময়ের আগেই প্রসব শুরু হয়ে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে।
যোনিপথের ইনফেকশনের সাথে গর্ভের শিশুর নড়াচড়া কমে যাওয়া বিপদের লক্ষণ হতে পারে। এমন হলে দেরি না করে রোগীকে ডাক্তারের কাছে অথবা নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।