এ সপ্তাহের হাইলাইটস
বুকের দুধ খাওয়ানোর সঠিক নিয়ম শিখুন
সঠিকভাবে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য শিশুর মাথা ও শরীর সোজা এক লাইনে রাখবেন। ছোট্ট সোনামণিকে এমনভাবে রাখবেন যাতে তার নাক আপনার স্তনের বোঁটা বরাবর থাকে, আর তার ঠোঁটের সাথে আপনার স্তনের বোঁটার ঘষা লাগে। এভাবে শিশু নিজেই মুখ হা করে খুলে বুকের দুধ খেতে শুরু করবে। আপনি নিজে থেকে শিশুর মুখের ভেতরে স্তনের বোঁটা ঢুকিয়ে দিবেন না।
প্রতি সপ্তাহে চেকআপে যান
গর্ভাবস্থার এসময়টায় সাধারণত প্রতি সপ্তাহে একবার করে চেকআপে যেতে হয়। প্রসবের আগ পর্যন্ত এভাবে চেকআপে যাওয়া চালিয়ে যেতে হবে। তবে গর্ভাবস্থায় কোনো জটিলতা না থাকলে ডাক্তার আপনাকে এর চেয়ে কম ঘন ঘন চেকআপ করাতে বলতে পারেন।
এক পাশে কাত হয়ে ঘুমান
এ সপ্তাহেও ঘুমানোর সময়ে আপনার সুবিধামতো ডান অথবা বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমাবেন। কারণ চিৎ হয়ে ঘুমালে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।[১][২] ঘুমের সময়ে সাপোর্ট দেয় এমন আরামদায়ক কয়েকটা বালিশ নিয়ে ঘুমাতে পারেন।
আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান
বিগত সপ্তাহগুলোর মতো এ সপ্তাহেও নিয়মিত আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যাবেন। এগুলো গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[৩][৪] পাশাপাশি আপনাকে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।[৫]
- মাসে কত দিন? ৯ মাস ২ সপ্তাহ
- কোন ট্রাইমেস্টার? তৃতীয় ত্রৈমাসিক
- আর কত সপ্তাহ বাকি? ২
৩৮ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি
আপনার গর্ভের শিশু এখন মাথা থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত প্রায় ৪৯.৮ সেন্টিমিটার লম্বা—প্রায় একটা লাউয়ের সমান। তার ওজন এখন প্রায় ৩ কেজি পার হয়েছে।
পায়ের আঙ্গুলের নখ তৈরি হয়ে গেছে
এ সপ্তাহে শিশুর পায়ের আঙ্গুলের নখ লম্বা হয়ে আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।[৬] হাতের আঙ্গুলের নখ আরও আগেই লম্বা হয়ে আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।[৭]
গায়ের নরম তুলতুলে লোম পড়ে গেছে
গর্ভাবস্থার বেশ কয়েক মাস জুড়ে শিশুর গায়ে নরম তুলতুলে লোমের আবরণ ছিল।[৮] কয়েক সপ্তাহ আগে ল্যানুগো নামক সেই লোমগুলো পড়ে যেতে শুরু করে।[৯] এখন তার গায়ে সেই নরম তুলতুলে লোম প্রায় সবটুকুই পড়ে গেছে।[১০] তবে শিশুর দেহে আবারও নতুন লোম গজাবে।[১১]
শিশু এখন আঁকড়ে ধরতে পারে
এখনো আপনি বেশ ভালোভাবেই গর্ভের শিশুর নড়াচড়া বুঝতে পারবেন। শিশু এখন কোনোকিছু ভালোভাবে আঁকড়ে ধরতে পারে।[১২] পা দিয়ে জোরেশোরে লাথিও মারতে পারে!
যদি কোনো কারণে মনে হয় শিশুর নড়াচড়া স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গিয়েছে, তাহলে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।[১৩] নড়াচড়া কমে যাওয়া মানেই যে খারাপ কিছু ঘটে গেছে, এমন না। তবে ডাক্তার দেখিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া প্রয়োজন।
নড়াচড়া কমেছে কি না সেটা বুঝতে কষ্ট হলে বাম কাত হয়ে ২ ঘন্টা শুয়ে থাকুন। এসময়ে ১০ বারের কম নড়াচড়া টের পেলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।[১৪]
৩৮ সপ্তাহে মায়ের শরীর
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো নিয়ে আপনার আগেভাগে যত বেশি জানাশোনা থাকবে, ততই ভালো। বিশেষ করে যদি শিশুর জন্ম হওয়ার আগের এই সময়টায় সঠিক নিয়ম ও টিপসগুলো জেনে নেন, তাহলে জন্মের পর ছোট্টমণিকে দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারটা অনেকখানি সহজ হয়ে আসবে।
বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করা
শিশু জন্মের পর প্রথম কয়েকদিন আপনার কাছ থেকে যেই বুকের দুধ পাবে, সেটাকে বলে শালদুধ।[১৫] শালদুধ সাধারণত সোনালি-হলুদ রঙের হয় এবং বেশ ঘন হয়। এই ঘন দুধে পুষ্টি উপাদানের ঘনত্বও বেশি। তাই প্রতিবার খাওয়ানোর সময়ে পরিমাণটা যদি খুব বেশি না-ও হয়, তবুও এখান থেকেই ছোট্টমণির পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে।
কয়েকদিন পর স্তনে শালদুধের পরিবর্তে আরেকটু পাতলা দুধ তৈরি হবে। পরিমাণে বেশি দুধ আসবে।[১৬] শিশু যত বেশি দুধ পান করবে, মায়ের শরীর তত বেশি করে দুধ তৈরি করতে থাকবে। এভাবে মায়ের শরীর শিশুর চাহিদা পূরণ করতে নিজেকে প্রস্তুত রাখে।
শিশু পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে কি না বোঝার উপায়
জন্মের পর শিশু ঠিকমতো বুকের দুধ পাচ্ছে কি না সেটা বোঝার একটা সহজ উপায় হলো তার ভেজা ন্যাপি বা ডায়াপার গোণা। শিশু জন্মের পর প্রথম ৪৮ ঘন্টায় দিনে মাত্র ১–২টা করে ন্যাপি ভেজাবে।[১৭] সময়ের সাথে সে আরও ঘন ঘন ন্যাপি বা ডায়াপার ভেজানো শুরু করবে।
জন্মের ষষ্ঠ দিন থেকে শিশু প্রতি ২৪ ঘন্টায় অন্তত ৬টা ন্যাপি ভেজানো স্বাভাবিক।[১৮] এর চেয়ে কম ন্যাপি ভেজানোর অর্থ হয়তো শিশু ঠিকমতো বুকের দুধ পাচ্ছে না। কাঁথা ব্যবহার করলে কয়বার কাঁথা ভিজছে সেটা হিসাব করতে পারেন।
সাঁতার কাটা
গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধি ও পেট বড় হওয়ার কারণে সাধারণ চলাফেরা ও ভারসাম্যে যে সমস্যা হয়, পানিতে সাঁতার কাটার সময়ে সেই সমস্যা থাকে না। বরং শরীর হালকা লাগে। তাই আপনি হয়তো সাঁতার বেশ উপভোগ করবেন। সুযোগ থাকলে তাই এখন নিয়মিত ব্যায়াম হিসেবে সাঁতার কাটতে পারেন।
গর্ভকালীন চেকআপ
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে সাধারণ যাতায়াতও বেশ কষ্টকর হয়ে ওঠে। এরপরেও শিডিউল অনুযায়ী সবগুলো চেকআপে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। আপনাকে এখন প্রতি সপ্তাহে একবার করে চেকআপে যেতে হবে। তবে গর্ভাবস্থায় কোন জটিলতা না থাকলে ডাক্তার আপনাকে এর চেয়ে কম ঘন ঘন চেকআপ করাতে বলতে পারেন।
চেকআপের শিডিউলটা জেনে নিয়ে পরবর্তী চেকআপের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে ফেলুন। গত চেকআপে কোনো পরীক্ষা করিয়ে থাকলে সেগুলোর রিপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে নিয়ে যাবেন।
অন্যান্য লক্ষণ
এ সপ্তাহে আপনার আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—
- পেট টান-টান বা শক্ত হওয়া। একে ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্র্যাকশনও বলা হয়
- ঘুমের সমস্যা
- স্ট্রেচ মার্ক বা ফাটা দাগ
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে পেটের চারপাশের পেশিতে ব্যথা করা
- পাইলস
- মাথা ব্যথা
- কোমর ব্যথা
- পেট ফাঁপা লাগা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা
- অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা
- পা কামড়ানো
- মাথা ঘুরানো
- হাত–পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া
- প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হওয়া
- যোনিপথে ইনফেকশন হওয়া
- মুখে মেছতার মতো বাদামি ও ছোপ ছোপ দাগ পড়া
- তৈলাক্ত ত্বক ও ত্বকে দাগ পড়া
- চুল ঘন ও ঝলমলে হওয়া
এ ছাড়াও এই সপ্তাহে আপনার প্রথম দিকের সময়ের লক্ষণগুলো থাকতে পারে। যেমন—
- ঘন ঘন মনমেজাজ বদলানো বা মুড সুইং। এই খুশি, আবার এই মন খারাপ—এমনটা হতে পারে। পাশাপাশি এসময়ে ছোটোখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা অথবা কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দিতে পারে
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
- অদ্ভুত জিনিস খাওয়ার ইচ্ছা হওয়া। যেমন: মাটি
- তীব্র ঘ্রাণশক্তি
- স্তনে ব্যথা
- স্তন থেকে তরল নিঃসৃত হওয়া
- সাদাস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
- যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত হওয়া। এমন হলে অবশ্যই একজন ডাক্তার দেখাবেন, কারণ এটা মারাত্মক জটিলতার লক্ষণ হতে পারে
এ সপ্তাহে বাবার করণীয়
ডেলিভারির সময় একেবারেই কাছে চলে এসেছে! এখন আমরা ডেলিভারি সংক্রান্ত তথ্যের পাশাপাশি শিশুর জন্মের পর পর কোন কাজগুলো গুরুত্বপূর্ণ, সেটাও তুলে ধরছি। এতে আপনি ডেলিভারির পর থেকেই নতুন শিশু ও শিশুর মায়ের যত্ন নিতে পারবেন।
ইমারজেন্সির জন্য প্রস্তুত থাকুন
গর্ভাবস্থার বিপদচিহ্ন ও করণীয়গুলো জেনে রাখা জরুরি। যোনিপথে রক্তপাত বা বাচ্চার নড়াচড়া কমে যাওয়ার মতো জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হলে শিশুর মাকে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার প্রয়োজন হবে। এমন অবস্থায় কোন হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে যাবেন সেটা নিয়ে আলোচনা করে আগেভাগে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখুন।
যানবাহনের বিষয়টাও ঠিক করে রাখুন। গাড়িচালকের ফোন নাম্বার ও দুই-একটা অ্যাম্বুলেন্সের নাম্বার আগে থেকেই দুজনের ফোনে সেভ করে রাখুন।
এসব ইমারজেন্সির জন্য আলাদাভাবে ঘরের একটা জায়গায় টাকা জমিয়ে রাখতে পারেন, যেন প্রয়োজনের সময়ে ব্যাংক কিংবা মোবাইল থেকে তোলার ঝামেলা না থাকে। এ ছাড়া শিশুর মায়ের সাথে কথা বলে চিকিৎসার কাগজগুলো সময়ে সময়ে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় গুছিয়ে রাখতে পারেন। এতে জরুরি অবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়তে পারবেন।
বাকি সন্তানদের দেখে রাখার ব্যবস্থা করুন
আপনাদের নিশ্চয়ই ডেলিভারি কোথায় হবে, কীভাবে হবে, সিজার হবে না নরমাল ডেলিভারি হবে, হাসপাতালে কতদিন থাকতে হবে—এসব বিষয়ে ইতোমধ্যে ভালো একটা ধারণা তৈরি হয়েছে।
সেই সময়ে বাসায় আপনাদের আরও বাচ্চা-কাচ্চা, আপনাদের ওপর নির্ভরশীল বয়স্ক মানুষ কিংবা পোষা প্রাণী থাকলে তাদের দেখভালের দায়িত্ব কার কাছে থাকবে, সেই ব্যাপারেও এখনই চিন্তাভাবনা শুরু করুন। আপনজনদের মধ্যে নিরাপদ ও দায়িত্বশীল কয়েকজনের মাঝে এই দেখভালের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
শিশু ঠিকমতো দুধ পাচ্ছে কি না বোঝার উপায় শিখে রাখুন
জন্মের পর শিশু ঠিকমতো বুকের দুধ পাচ্ছে কি না সেটা বোঝার একটা সহজ উপায় হলো তার ভেজা ন্যাপি বা ডায়াপার গোণা। জন্মের ষষ্ঠ দিন থেকে শিশু প্রতি ২৪ ঘন্টায় অন্তত ৬টা ন্যাপি ভেজানো স্বাভাবিক।[১৯] রুমাল বা কাঁথা ব্যবহার করলে কয়বার সেগুলো ভিজছে সেটা হিসাব করতে পারেন।
শিশু কোন বয়সে কয়টা করে ন্যাপি ভেজানোর কথা, ন্যাপির সংখ্যা কম হলে বা ঠিকমতো দুধ না পেলে করণীয় কী—এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর এখন থেকেই জেনে রাখুন।
আশেপাশে কোনো সুইমিং পুল আছে কি না খোঁজ নিন
এসময়ে সাঁতার কাটা শিশুর মায়ের জন্য খুবই ভালো ব্যায়াম। আপনাদের বাসা কিংবা কর্মক্ষেত্র থেকে সুবিধাজনক দূরত্বে এমন কোনো সুইমিং পুল আছে কি না যেখানে শিশুর মা স্বাচ্ছন্দ্যে সাঁতার কাটতে পারবেন, সেই ব্যাপারে খোঁজ নিতে পারেন।
সম্ভব হলে দুজনে একসাথে সাঁতার কাটতে পারেন। এতে দুজনেরই স্বাস্থ্যের উপকার হবে। পাশাপাশি একত্রে কিছু সুন্দর সময় কাটানো হবে। সাঁতারও হয়তো বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠবে।