এ সপ্তাহের হাইলাইটস
প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০ গ্রাম ফলমূল ও শাকসবজি খান
গর্ভবতী মায়ের খাবার থেকেই মূলত গর্ভের শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তির যোগান আসে। তাই সুষম খাদ্যাভ্যাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেল পেটে প্রতিদিন অন্তত ৪০০ গ্রাম ফলমূল ও শাকসবজি খাবেন।
প্রসব নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করুন
নরমাল ডেলিভারি ছাড়াও সাইড কাটা বা এপিশিওটোমি, সিজার, সিজার হওয়ার পরে নরমাল ডেলিভারি কিংবা ‘ভেন্টুস’ ও ‘ফোরসেপস’-এর মতো বিশেষ ডেলিভারি পদ্ধতিগুলো নিয়ে এখন থেকেই একটু একটু করে জানাশোনা শুরু করতে পারেন। এসব নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য জানা থাকলে ডেলিভারির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া সহজতর হবে।
ক্যালসিয়াম ও আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান
বিগত সপ্তাহগুলোর মতো এ সপ্তাহেও নিয়মিত আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান। এগুলো গর্ভের শিশুর ব্রেইন, হাড় ও অন্যান্য অঙ্গ স্বাভাবিকভাবে গড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[১][২] পাশাপাশি আপনাকে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।[৩]
- মাসে কত দিন? ৫ মাস ৩ সপ্তাহ
- কোন ট্রাইমেস্টার? দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক
- আর কত সপ্তাহ বাকি? ১৭
২৩ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি
এ সপ্তাহে আপনার গর্ভের শিশু মাথা থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত প্রায় ২৮.৯ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে গিয়েছে—প্রায় একটি পেঁপের সমান। তার ওজন এখন ৫০০ গ্রামের কাছাকাছি।
ছোট্ট শিশু চোখ নাড়াতে পারে
আপনার ছোট্ট শিশু এখন দ্রুত চোখ নাড়াতে শুরু করেছে।[৪][৫] আগে সে ধীরে ধীরে চোখ নাড়াতে পারতো। তার চোখ দুটো এখনো বন্ধ অবস্থায় আছে—চোখের পাতা এখনো তার চোখ দুটোকে ঢেকে রেখেছে।[৬][৭]
ত্বকের বিভিন্ন স্তর ও লোমকূপ তৈরি হচ্ছে
শিশুর ত্বক বা চামড়ার বিভিন্ন স্তর তৈরি হচ্ছে।[৮] ত্বকে ছোটো ছোটো লোমকূপ পরিণত হচ্ছে। হাতের তালু আর পায়ের তালু ছাড়া প্রায় সব জায়গাতেই লোমকূপ তৈরি হবে।[৯] সাথে সাথে শিশুর গায়ে নরম তুলতুলে লোমের আবরণ তৈরি হয়েছে।[১০][১১] এই তুলতুলে লোমকে ডাক্তারি ভাষায় ‘ল্যানুগো’ বলে।[১২]
শিশুর দাঁত তৈরি হচ্ছে
মাড়িতে দুধ দাঁতের সাথে আরেক সারি দাঁত তৈরির কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।[১৩] পরবর্তীতে জন্মের পর তার দুধ দাঁত যখন পড়ে যাবে, তখন এই দাঁতের সারি ধীরে ধীরে মাড়ি ভেদ করে বের হয়ে আসবে।
২৩ সপ্তাহে মায়ের শরীর
কমপক্ষে ৪০০ গ্রাম ফল ও শাকসবজি
আপনার এখন আগের চেয়ে বেশি ক্ষুধা লাগতে পারে। ক্ষুধা মেটাতে স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিন। সবসময় একটা স্বাস্থ্যকর ও সুষম ডায়েট মেনে চলার চেষ্টা করবেন। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কমপক্ষে ৪০০ গ্রাম ফলমূল ও শাকসবজি রাখার চেষ্টা করুন।[১৪] এসব খাবার থেকে আপনার অনেক ধরনের পুষ্টির চাহিদা মিটবে। শিশুও গর্ভে সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে।
ফল ও শাকসবজিতে থাকা ফাইবার পেট ভরা রাখতে, খাবার হজম করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। এসবের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাবেন।
গর্ভাবস্থায় কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত আর কোনগুলো এড়িয়ে চলা উচিত জানতে আমাদের তৈরি করা এই খাবার তালিকাটি দেখে নিতে পারেন।
ডেলিভারির বিভিন্ন পদ্ধতি
বেশিরভাগ নারীই ঝামেলাবিহীন নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে প্রসব করার পরিকল্পনা করেন। তবে বিভিন্ন কারণে সাইড কাটা, সিজার, সিজার-পরবর্তী নরমাল ডেলিভারি কিংবা ‘ভেন্টুস’ ও ‘ফোরসেপস’-এর মতো বিশেষ ডেলিভারি পদ্ধতির সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে এখন থেকেই জানাশোনা শুরু করুন। এতে ডেলিভারি সংক্রান্ত বিষয়ে মানসিক প্রস্তুতি থাকবে। ডাক্তার কোনো কারণে বিশেষ ডেলিভারি পদ্ধতি সুপারিশ করলে ঘাবড়ে যাবার সম্ভাবনা কমবে। এসব নিয়ে মাথায় কোনো প্রশ্ন ঘোরাঘুরি করলে সেগুলো লিখে রাখুন। চেকআপের সময়ে ডাক্তারের কাছ থেকে বিস্তারিত উত্তর জেনে নিন।
বিস্তারিত জানতে ডেলিভারি নিয়ে আমাদের লেখাগুলো পড়তে পারেন।
শিশুর জন্য কেনাকাটা
আপনাদের অনাগত সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তালিকা তৈরি করা শুরু করে দিন। ছোট্ট ছোট্ট আরামদায়ক জামাকাপড়, মোজা, ডায়াপার, সঠিক মাপের কট বা ছোটো খাট, খাটের তোষক বা ম্যাট্রেস, খেলনা, ত্বক পরিচর্যার পণ্য—এমন ছোটো-বড় অসংখ্য জিনিস হয়তো কিনতে হবে।
এখন থেকেই কয়েকটা করে জিনিস কেনাকাটা করা শুরু করতে পারেন। কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে এসব কেনাকাটা করতে সঙ্গীর সাথে একত্রে বেরিয়ে পড়তে পারেন। অথবা অনলাইনেও বিভিন্ন জিনিস অর্ডার দিতে পারেন।
আর্থিক প্রস্তুতি
নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে কোনো ঝামেলা ছাড়াই একটা সুস্থ শিশু পৃথিবীতে আসবে—অনেকেই এমনটা চান। আপনিও হয়তো সেই অনুযায়ী আর্থিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। তবে ডেলিভারির সময়ে আপনার ও অনাগত শিশুর সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে জরুরি ভিত্তিতে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
আনুষঙ্গিক ঔষধপত্র, বিশেষায়িত চিকিৎসা, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে আইসিইউ বাবদ হাসপাতালের খরচ অনেকখানি বেড়ে যেতে পারে। তাই এখন থেকেই অপারেশন ও অন্যান্য পদ্ধতির খরচ কেমন হতে পারে সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করুন।
এ ছাড়া নতুন শিশুর আগমনের সাথে তার দেখভালের বিভিন্ন জিনিস কেনাকাটার প্রয়োজন হবেই। এসব বাবদ আগামী দিনগুলোতে খরচ বেড়ে যেতে পারে। এসব বিবেচনা করে এখন থেকে সেই অনুযায়ী টাকা-পয়সা জমানো শুরু করে দিন।
অন্যান্য লক্ষণ
এ সপ্তাহেও আগের সপ্তাহের মতো আপনার যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া ও মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- পাইলস
- পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে পেটের চারপাশে ব্যথা হওয়া
- মাথা ব্যথা
- নাক থেকে রক্ত পড়া
- পেট ফাঁপা লাগা ও কোষ্ঠকাঠিন্য
- বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা
- বেশি গরম লাগা
- মাথা ঘুরানো
- হাত–পা ফুলে যাওয়া
- প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন
- যোনিপথে ইনফেকশন
- মুখে মেছতার মতো বাদামি ও ছোপ ছোপ দাগ পড়া
- তৈলাক্ত ত্বক ও ত্বকে দাগ পড়া
- চুল ঘন ও ঝলমলে হওয়া
এ ছাড়া গর্ভাবস্থার প্রথমদিকের কিছু লক্ষণ থেকে যেতে পারে। যেমন—
- ঘন ঘন মনমেজাজ বদলানো বা মুড সুইং। এই খুশি, আবার এই মন খারাপ—এমনটা হতে পারে। পাশাপাশি এসময়ে ছোটোখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা অথবা কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দিতে পারে
- বমি বমি ভাব
- অদ্ভুত জিনিস খাওয়ার ইচ্ছা। যেমন: মাটি
- তীব্র ঘ্রাণশক্তি
- স্তনে ব্যথা এবং বোঁটা থেকে দুধের মতো তরল বের হওয়া
- সাদাস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
- যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত হওয়া। এমন হলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তার দেখাবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা কোনো মারাত্মক কারণে হয় না। তবে কখনো কখনো এটা গর্ভপাতের একটা লক্ষণ হতে পারে।
এ সপ্তাহে বাবার করণীয়
ছোট্টমণির সাথে কথা বলুন
আপনাদের শিশু এখন বাইরের শব্দ শুনতে পায়![১৫] তাই তার সাথে নিয়মিত কথা বলার চেষ্টা করুন। সময় পেলেই তার সাথে গল্প জুড়ে দিন। তাকে গান গেয়ে শোনাতে পারেন। এতে করে আপনার ও আপনার শিশুর মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন তৈরি হবে।
শিশুর জন্য কেনাকাটা শুরু করতে পারেন
এসময় থেকেই আপনাদের ছোট্ট সোনামণির জন্য কেনাকাটা শুরু করে দিতে পারেন। শিশুর মায়েরও এসময়ে নতুন করে ঢিলেঢালা কাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্রের প্রয়োজন হতে পারে। তাই দুজনে মিলে এসব কেনাকাটা করতে যেতে পারেন। বাইরে কেনাকাটা করতে গেলে যদি শপিং ব্যাগ ভারী হয়ে যায়, তাহলে আপনি সেটা বহন করার দায়িত্ব নিতে পারেন। এ ছাড়া অনলাইনেও কিছু কেনাকাটা সেরে ফেলতে পারেন।
টাকা-পয়সা জমাতে শুরু করুন
অনেকেই ধরে নেন যে, নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই সন্তান প্রসব হবে এবং সেই অনুযায়ী আর্থিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। তবে ডেলিভারির সময়ে গর্ভের শিশু ও শিশুর মায়ের সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে জরুরি ভিত্তিতে সিজার করার প্রয়োজন হতে পারে।
এ ছাড়াও শিশুর মা ও শিশুর জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা করতে হবে। এসব মাথায় রেখে এখন থেকেই টাকা-পয়সা জমানো শুরু করে দিন।
এ মাসের চেকআপ হয়েছে কি?
এ মাসের চেকআপ করানো না হয়ে থাকলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চেকআপের ব্যবস্থা করতে সাহায্য করুন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনাদের গর্ভাবস্থার ২৮তম সপ্তাহ পর্যন্ত মাসে একবার করে চেকআপে যেতে হবে। এরপর ৩৬তম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি ২ সপ্তাহে একবার, তারপর প্রসবের আগ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার চেকআপে যেতে হবে।
নিয়মিত চেকআপে যাওয়া আপনার ও গর্ভের শিশুর সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।[১৬] চেকআপে কোনো সমস্যা ধরা পড়লে দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেটার চিকিৎসা শুরু করা যাবে।