এ সপ্তাহের হাইলাইটস
চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া কমিয়ে দিন
চিনিযুক্ত খাবার (যেমন: মিষ্টি, পায়েস, মিষ্টি দই, সেমাই, কেক) বেশি খেলে আপনার ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে ওজন অতিরিক্ত বাড়লে তা নানান ধরনের গর্ভকালীন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এসব খাবার যতটা সম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
গর্ভের শিশুর নড়াচড়া না বুঝলে ডাক্তারকে জানান
এ সপ্তাহের মধ্যে যদি আপনি গর্ভে শিশুর নড়াচড়া অনুভব করতে না পারেন, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারকে এই বিষয়ে জানান। কোনো কারণে শিশুর নড়াচড়া কমে গেছে মনে হলেও দেরি না করে ডাক্তারকে জানাবেন।
আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান
বিগত সপ্তাহগুলোর মতো এ সপ্তাহেও নিয়মিত আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান। এগুলো গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[১][২] পাশাপাশি আপনাকে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।[৩]
- মাসে কত দিন? ৬ মাস
- কোন ট্রাইমেস্টার? দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক
- আর কত সপ্তাহ বাকি? ১৬
২৪ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি
এ সপ্তাহে আপনার গর্ভের শিশু মাথা থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে গিয়েছে—প্রায় একটা ডাবের সমান। তার ওজন এখন প্রায় ৬০০ গ্রাম।
শিশুর ত্বক দেখতে লালচে গোলাপি
ছোট্ট শিশুর ত্বকের রঙ এখন লালচে গোলাপি।[৪] ত্বকের নিচে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তনালীতে থাকা রক্তের কারণে ত্বকের রঙ এমন লালচে হয়।[৫] তার ত্বক এখনো বেশ পাতলা ও কুঁচকানো অবস্থায় আছে। সময়ের সাথে সাথে ত্বকের নিচে চর্বির স্তর জমে ত্বক মসৃণ হয়ে উঠবে।
কানের লতি তৈরি হয়ে যাচ্ছে
গত কয়েক মাস ধরে শিশুর মাথার দুই পাশে ছোটো ছোটো দুটো কান তৈরি হচ্ছে।[৬] কানের বিভিন্ন অংশের মধ্যে কানের লতিগুলো সবশেষে তৈরি হয়। এই সপ্তাহের মধ্যেই আপনার সোনামণির ছোটো ছোটো কানের লতি তৈরি হয়ে যাবে।[৭]
শিশুর ওজন বাড়ছে
এই কয়েক সপ্তাহে শিশুর ওজন বেশ অনেকখানি বাড়বে।[৮] তার হাত-পা ও মাথার অনুপাতে আরও সামঞ্জস্য আসবে।[৯] তবে এখনো সে বেশ ছোটোখাটো। আপনার গর্ভে পরম যত্নে সে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে।
২৪ সপ্তাহে মায়ের শরীর
গর্ভের শিশুর নড়াচড়া
আপনার গর্ভের শিশুর নড়াচড়া বুঝতে শুরু করার পর থেকে তার নড়াচড়ার ধরন সম্পর্কে খেয়াল রাখার চেষ্টা করুন। গর্ভের শিশু যদি কোনো কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তার নড়াচড়া স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়। যত তাড়াতাড়ি এসব পরিবর্তন খেয়াল করা যায়, ততই ভালো।
আপনার যদি মনে হয় যে গর্ভের শিশু স্বাভাবিকের চেয়ে কম নড়াচড়া করছে, অথবা গর্ভধারণের ২৪তম সপ্তাহের মধ্যেও যদি শিশুর কোনো ধরনের নড়াচড়া অনুভব না করেন, তাহলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।[১০][১১]
চিনিযুক্ত খাবার কমিয়ে ফেলা
এই সময়ে চিনিযুক্ত পানীয় ও খাবার খাওয়া কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন। এসব খাবার সাধারণত উচ্চ মাত্রায় ক্যালরিযুক্ত হয়। তাই চিনিযুক্ত পানীয় ও খাবার বেশি খেলে আপনার ওজন অনেকখানি বেড়ে যেতে পারে।
গর্ভকালীন সময়ে ওজন অতিরিক্ত বাড়লে সেটি আপনার ও গর্ভের শিশু উভয়েরই নানান ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন: গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, অস্বাভাবিকভাবে বড় আকারের শিশু জন্মানো, ডেলিভারির সময়ে জটিলতা এবং সিজার অপারেশনের প্রয়োজন হওয়া।[১২][১৩]
এ ছাড়াও চিনিযুক্ত পানীয় ও খাবার খাওয়ার কারণে আপনার দাঁত ক্ষয় হয়ে যেতে পারে।[১৪] তাই মিষ্টি, পায়েস, পুডিং, ফিরনি, মিষ্টি দই, কেক, পেস্ট্রি কিংবা চিনিযুক্ত যেকোনো খাবার যতটা সম্ভব অল্প পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
জন্মের পর স্কিন-টু-স্কিন কন্ট্যাক্ট
জন্মের সাথে সাথেই ছোট্ট শিশুর ত্বক আপনার ত্বকের সংস্পর্শে রাখার অনেকগুলো উপকারিতা আছে। ডাক্তারি ভাষায় মায়ের ত্বক ও শিশুর ত্বকের এই নিবিড় সংস্পর্শকে বলে স্কিন-টু-স্কিন কন্ট্যাক্ট।
এই সংস্পর্শ শিশুর হৃৎস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।[১৫] নবজাতক শিশুর শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখে এবং বাইরের নতুন পরিবেশে তাকে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে। এই সংস্পর্শের ফলে বুকের দুধ খেতেও শিশুর আগ্রহ বাড়ে।[১৬]
তাই জন্মানোর পর ছোট্ট সোনামণিকে আপনার ত্বকের সংস্পর্শে রাখার চেষ্টা করুন।[১৭] আগে থেকে এ বিষয়ে কথা বলে রাখলে প্রসবের পর পরই আপনার ডাক্তার অথবা নার্স আপনাকে এই বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারবেন।
ছোট্টমণির নাম ঠিক করা
ছোট্টমণিকে কী নামে ডাকবেন, সেটা নিয়ে ভেবেছেন কি? আপনাদের দেওয়া নাম তার সারা জীবনের পরিচয় হয়ে দাঁড়াবে। কখনো কখনো এই গুরুদায়িত্ব পালন করার কথা ভেবে মনে দুশ্চিন্তাও ভর করতে পারে।
নামের অর্থ কেমন হলে কিংবা কোন ভাষার নাম হলে ভালো হয়—এসব এখন থেকেই ভেবে রাখুন। শিশুর বাবা, অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন নাম নিয়ে আলোচনা করুন। সেসব আলোচনা থেকেই হয়তো ভবিষ্যতের সোনামণির জন্য সেরা নামটা খুঁজে নিতে পারবেন।
অর্থসহ বিভিন্ন ভাষায় ছেলে ও মেয়ে শিশুর নাম পেতে আমাদের অ্যাপের ‘বেবি নেইমস’ অংশটা ঘুরে দেখতে পারেন।
অন্যান্য লক্ষণ
এ সপ্তাহে আপনার আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—
- ক্লান্তি
- ঘুমের সমস্যা
- স্ট্রেচ মার্ক বা ফাটা দাগ
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে পেটের চারপাশের পেশিতে ব্যথা করা
- পাইলস
- মাথা ব্যথা
- কোমর ব্যথা
- নাক দিয়ে রক্ত পড়া
- পেট ফাঁপা লাগা ও কোষ্ঠকাঠিন্য
- বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা
- পা কামড়ানো
- অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা
- মাথা ঘুরানো
- প্রস্রাবের ইনফেকশন হওয়া
- যোনিপথে ইনফেকশন হওয়া
- মুখে মেছতার মতো বাদামি ও ছোপ ছোপ দাগ পড়া
- তৈলাক্ত ত্বক ও ত্বকে দাগ পড়া
- চুল ঘন ও ঝলমলে হওয়া
এ ছাড়াও এই সপ্তাহে আপনার প্রথম দিকের সময়ের লক্ষণগুলো থাকতে পারে। যেমন—
- ঘন ঘন মনমেজাজ বদলানো বা মুড সুইং। এই খুশি, আবার এই মন খারাপ—এমনটা হতে পারে। পাশাপাশি এসময়ে ছোটোখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা অথবা কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দিতে পারে
- বমি বমি ভাব
- অদ্ভুত জিনিস খাওয়ার ইচ্ছা। যেমন: মাটি
- তীব্র ঘ্রাণশক্তি
- স্তনে ব্যথা এবং বোঁটা থেকে দুধের মতো তরল বের হওয়া
- সাদাস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
- যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত হওয়া। এমন হলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তার দেখাবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা কোনো মারাত্মক কারণে হয় না। তবে কখনো কখনো এটা গর্ভপাতের একটা লক্ষণ হতে পারে
এ সপ্তাহে বাবার করণীয়
চিনিযুক্ত খাবার কেনা কমিয়ে ফেলুন
এ সময়ে আপনার সঙ্গী চিনিযুক্ত খাবার বেশি খেলে তার ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত ওজন মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।[১৮][১৯] তাই এখন আপনিও বাড়িতে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার কেনা এড়িয়ে চলুন। যেমন: মিষ্টি ও মিষ্টি দই।
আবার অনেকসময় বাড়িতে মেহমান আসার সময়ে মিষ্টি নিয়ে আসতে পারে, যা পরের কয়েকদিন ধরে বাসায় খাওয়া হতে থাকে। তখন শিশুর মায়ের জন্য মিষ্টি এড়িয়ে চলা কঠিন হতে পারে।
জন্মের পর পর শিশুর সাথে মায়ের ত্বকের নিবিড় সংস্পর্শ সম্পর্কে জানুন
জন্মের পর পরই শিশুর ত্বক তার মায়ের ত্বকের সরাসরি সংস্পর্শে থাকা জরুরি।[২০] এটা শিশুকে নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে। তাই প্রসবের পরে শিশুকে মায়ের বুকের ওপর এমনভাবে রাখতে বলা হয়, যাতে দুজনের ত্বক সরাসরি সংস্পর্শে থাকে। একে বলে স্কিন-টু-স্কিন কন্ট্যাক্ট।
এই বিষয়টা আপনারও জানা থাকা প্রয়োজন। কেননা প্রসবের ঝক্কি পোহানোর পর স্কিন-টু-স্কিন কন্ট্যাক্ট করার কথা শিশুর মায়ের খেয়াল নাও থাকতে পারে। তখন আপনি ডাক্তার অথবা নার্সকে অনুরোধ করে শিশুকে তার মায়ের ত্বকের সংস্পর্শে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন।
শিশুর নাম রাখা নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন
ছোট্টমণির নাম কী রাখবেন সেটা এখন থেকেই চিন্তা করতে পারেন। কোন ভাষার নাম রাখতে চান, নামের অর্থ কেমন হলে ভালো হয়—এমন খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলো এখন থেকেই ভাবা শুরু করুন। শিশুর মা, আপনার পরিজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে আইডিয়া নিতে পারেন। ইন্টারনেটেও ঘেঁটে দেখতে পারেন। এসব থেকেই হয়তো সোনামণির জন্য সেরা নামটা খুঁজে পেয়ে যাবেন।
নাম নিয়ে মনোমালিন্য হলে যা করবেন
শিশুর নাম হবে একটাই। এই নাম নিয়ে আপনার ও শিশুর মায়ের মধ্যে ভিন্নমত থাকলে সেখান থেকে মনোমালিন্য সৃষ্টি হতে পারে। নাম নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মাঝে তিক্ততা এসে ভর করতে পারে। দুজনের পছন্দের দুটো নামই শিশুর পুরো নামের অংশ করা যায় কি না, সেটা ভেবে দেখতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে এই অপশন হয়তো মানানসই হবে না। সেক্ষেত্রে দুজনের বাছাই করা নামের মধ্যে কেবল একটা নামই হয়তো শিশুর ভবিষ্যৎ নাম হয়ে দাঁড়াবে, অপরজনকে ছাড় দিতে হবে।
নামের হিসেব কষার আগেই আপনি ও আপনার সঙ্গী এই বিষয়গুলো নিয়ে খোলাখুলি কথা বলে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। এতে নাম বাছাই করার প্রক্রিয়াটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনাদের জন্য একটা সুন্দর স্মৃতি হয়ে থাকবে।