গর্ভাবস্থায় ওজিটিটি 

ওজিটিটির মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা মেপে দেখা হয়। এভাবে আপনি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে ভুগছেন কি না সেটা নির্ণয় করা যায়।

গর্ভবতীর রক্তে সুগারের মাত্রা জানতে যে পরীক্ষাটি করা হয় সেটির নাম ‘ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট’ বা ওজিটিটি। এটি এক ধরনের রক্ত পরীক্ষা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভবতীর ডায়াবেটিসের অবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়।

ডায়াবেটিসের অবস্থা জানা থাকলে গর্ভবতীকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা যায় এবং সেই অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা করা যায়। তাই ওজিটিটি ডায়াবেটিস সংক্রান্ত গর্ভকালীন ও প্রসব-পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

ওজিটিটি করা কেন গুরুত্বপূর্ণ

ডায়াবেটিস হলে রক্তে সুগার তথা গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়। এই বাড়তি সুগার মা ও গর্ভের শিশুর শরীরে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তার মধ্যে রয়েছে—

  • গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ। চিকিৎসা না করালে এটি বিভিন্ন মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন: প্রি-এক্লাম্পসিয়া ও এক্লাম্পসিয়া।
  • গর্ভের শিশু আকারে স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হওয়া। এর ফলে প্রসবের সময় বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। কৃত্রিমভাবে প্রসব প্রক্রিয়া শুরু করার অথবা সিজার করার প্রয়োজন হতে পারে।[১]
  • অকাল প্রসব বা গর্ভাবস্থার ৩৭তম সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই সন্তান প্রসব হয়ে যাওয়া।
  • শিশু গর্ভে যেই অ্যামনিওটিক তরল দিয়ে ঘেরা থাকে তার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। একে ডাক্তারি ভাষায় পলিহাইড্রামনিওস বলে। এটি অকাল প্রসব ও প্রসব-সংক্রান্ত নানান জটিলতার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে
  • মৃতপ্রসব
  • জন্মের পর শিশুর ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলদেটে হয়ে যাওয়া। ডাক্তারি ভাষায় একে জন্ডিস বলে।[২] এর ফলে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন হতে পারে।
  • জন্মের পর পর হার্টের সমস্যা ও শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে নিওনেটাল আইসিইউ-তে চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন বেড়ে যাওয়া।[৩]
  • শিশুর পরবর্তী জীবনে অতিরিক্ত ওজন, স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া।[৪]

ওজিটিটির মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা মেপে দেখা হয়। এভাবে আপনি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে ভুগছেন কি না সেটা নির্ণয় করা যায়। আগে থেকে ডায়াবেটিসে ভুগলে গর্ভাবস্থায় সুগারের নিয়ন্ত্রণ কেমন—সেই সম্পর্কিত তথ্যও উঠে আসে।

ডায়াবেটিস সংক্রান্ত তথ্য জানা থাকলে ডাক্তার আপনাকে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখার খাবার তালিকা, ব্যায়াম ও ঔষধ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিতে পারবেন। সেই সাথে আপনার ও গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা যাবে। প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া যাবে। এগুলো ডায়াবেটিস সংক্রান্ত গর্ভকালীন ও প্রসব-পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারবে।

অন্যদিকে, রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে আপনি সেটা জেনে নিশ্চিন্ত হতে পারবেন। সেই সাথে স্বাভাবিক মাত্রা কীভাবে ধরে রাখবেন, সেই বিষয়ে ডাক্তার গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিতে পারবেন।

গর্ভাবস্থায় কখন ওজিটিটি করা হয়

বাংলাদেশে সাধারণত অন্তত দুইবার ওজিটিটি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রথম গর্ভকালীন চেকআপের সময়ে অন্যান্য রক্ত পরীক্ষার সাথেই প্রথম ওজিটিটি পরীক্ষা করে ফেলা হয়। এরপর গর্ভাবস্থার ২৪তম–২৮তম সপ্তাহের ভেতরে আরেকবার ওজিটিটি পরীক্ষা করাতে হয়। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। সেসব ক্ষেত্রে ২৪তম–২৮তম সপ্তাহের আগেই ওজিটিটি করানোর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। যেমন—

  • যদি আগের কোনো গর্ভাবস্থায় আপনার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয়ে থাকে
  • যদি আপনার পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকে। যেমন: মা, বাবা, ভাই অথবা বোনের ডায়াবেটিস থাকে[৫]
  • যদি স্বাস্থ্যের সামগ্রিক অবস্থার ভিত্তিতে আপনি ডায়াবেটিসের বাড়তি ঝুঁকিতে থাকেন
  • যদি আপনি অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলতায় ভুগেন

বিশেষ দ্রষ্টব্য: গর্ভধারণের পরে যত দ্রুত সম্ভব গর্ভকালীন চেকআপ শুরু করা প্রয়োজন। নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে মা ও গর্ভের শিশুর মৃত্যুহার অনেকাংশেই কমে আসে।[৬]

চেকআপের সময়ে ডাক্তার আপনার ও গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের অবস্থার ভিত্তিতে আপনার জন্য ব্যক্তিগত একটি পরিকল্পনা তৈরি করে দিতে পারেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নির্দিষ্ট সময়ে ওজিটিটি-সহ গর্ভকালীন গুরুত্বপূর্ণ নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হবে।

সেই সাথে গর্ভাবস্থায় আপনার চলাফেরা ও খাওয়া-দাওয়া কেমন হবে, সেই বিষয়েও দিকনির্দেশনা দেওয়া থাকবে। তাই আপনার ও গর্ভের শিশুর সঠিক পরিচর্যার জন্য এসব তথ্য যত দ্রুত জানা যায়, ততই ভালো।

ওজিটিটি পরীক্ষার পূর্বপ্রস্তুতি

ওজিটিটি পরীক্ষার আগে কিছু প্রস্তুতি নিতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে খাওয়া-দাওয়া, ব্যায়াম, ধূমপান ও জীবনধারা বিষয়ক কিছু বিধিনিষেধ। যেমন—

পরীক্ষার আগের ৩ দিন স্বাভাবিক পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট খাওয়া

ওজিটিটি পরীক্ষার আগের ৩ দিন খাবারে কোনো বাড়তি বিধিনিষেধ রাখবেন না। এই ৩ দিন সাধারণত আপনি নিয়মিত যে ধরনের খাবার খেয়ে থাকেন, সেভাবেই চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। বিশেষ করে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাবার—যা ভেঙে শরীরে গ্লুকোজ বা সুগার তৈরি হয়—তার পরিমাণ অপরিবর্তিত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন: ভাত, রুটি, পাউরুটি, মুড়ি ও আলু।

আপনাকে ডাক্তার কোনো বিশেষ ডায়েট অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকলে পরীক্ষার আগে এই বিষয়ে আলোচনা করে নিন। সেক্ষেত্রে আপনাকে পরীক্ষার আগের ৩ দিন কমপক্ষে ১৫০ গ্রাম করে শর্করাজাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।[৭] এসব নিয়ম যথাসম্ভব সঠিক ফলাফল পেতে সাহায্য করবে।

পরীক্ষার আগে কমপক্ষে ৮ ঘন্টা খালি পেটে থাকা[৮]

ওজিটিটি পরীক্ষায় একবার খালি পেটে আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা এবং তারপর নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্লুকোজ মেশানো পানি খাওয়ার পরে আবারও রক্তে সুগারের মাত্রা মাপা হয়।

তাই ওজিটিটি করার আগের ৮–১০ ঘন্টার ভেতর কোনো ধরনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। তবে সাধারণত পানি পান করতে কোনো বাধা নেই। গর্ভবতীদের সুবিধার্থে তাই রাতে খাবার খেয়ে পরদিন সকালে ওজিটিটির জন্য রক্তের স্যাম্পল দিতে বলা হয়।

ঔষধের বিষয়ে সতর্কতা

কিছু ঔষধ ওজিটিটির ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন: স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ ও বিটা ব্লকার জাতীয় হার্ট/প্রেসারের ঔষধ। তাই পরীক্ষার ৩ দিন আগে সেসব ঔষধ সেবনের ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে। আপনি নিয়মিত কোনো ঔষধ খেলে তার ব্যাপারে আপনার ডাক্তারের সাথে আগেভাগেই আলোচনা করে নিন।

জীবনধারা বিষয়ক বিধিনিষেধ

পরীক্ষার আগের দিন থেকে শুরু করে পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনার স্বাভাবিক রুটিনের বাইরে ব্যায়াম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যারা ধূমপান অথবা মদপান করেন তাদের এই সময়ে বিশেষভাবে এসব থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এ ছাড়া চা-কফিও এই পরীক্ষার ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই পরীক্ষার আগে আগে এসব এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।

ওজিটিটি পরীক্ষার প্রক্রিয়া

ওজিটিটি পরীক্ষার পুরো প্রক্রিয়ায় প্রায় ২–২.৫ ঘন্টার মত সময় লাগে। এক্ষেত্রে মোট ২–৫ বার রক্ত নেওয়া হতে পারে।

প্রথমে সকালবেলা আপনি খালি পেটে থাকা অবস্থায় রক্তের স্যাম্পল নেওয়া হবে। এরপর আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্লুকোজ মেশানো পানি পান করতে দেওয়া হবে। তার ২ ঘন্টা পরে আপনার শরীরে এই গ্লুকোজের জন্য কী ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে তা আবার রক্ত পরীক্ষা করে দেখা হবে।

কিছু হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ক্ষেত্রে ওপরের পদ্ধতির পাশাপাশি গ্লুকোজযুক্ত পানি পান করার যথাক্রমে ৩০ মিনিট, ১ ঘন্টা ও ১.৫ ঘন্টা পরে আরও ৩টি স্যাম্পল নিয়ে তাতে সুগারের মাত্রা দেখা হয়।

এই পরীক্ষার ধাপগুলো হচ্ছে—

  • সারারাত খালি পেটে থাকার পর সকাল সকাল পরীক্ষার জন্য আপনাকে হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হবে।
  • প্রথমে আপনার হাতের শিরা থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হবে।
  • একবার রক্ত সংগ্রহ করার পর আপনাকে গ্লুকোজ মেশানো পানি পান করতে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে ২০০ মি.লি. পানিতে ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ ভালোমতো মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে, প্রায় ৫ মিনিট ধরে এই গ্লুকোজ মেশানো পানি খেতে হবে। খুব দ্রুত খেয়ে ফেললে পেটে অস্বস্তি হতে পারে।
  • গ্লুকোজ মেশানো পানি খাওয়ার পর আরও ১০০ মি.লি. সাধারণ পানি খেতে হবে। হিসাবের সুবিধার্থে বাসা থেকে দুইটা আলাদা বোতলে ২০০ মি.লি. ও ১০০ মি.লি. পানি ভরে নিয়ে যেতে পারেন।
  • এসব পান করার ২ ঘন্টা পর আবার রক্ত সংগ্রহ করা হবে। মাঝের ২ ঘন্টাতে আর কিছু খাবেন না।
  • উল্লেখ্য, অনেকসময় এই সময়ের মধ্যে আরও ৩ বার রক্তের স্যাম্পল নেওয়া হতে পারে। এগুলো সাধারণত গ্লুকোজ মেশানো পানি খাওয়ার যথাক্রমে ৩০ মিনিট, ১ ঘন্টা ও ১.৫ ঘন্টা পরে নেওয়া হয়।
  • অবশেষে ২ ঘন্টা পর স্যাম্পল নেওয়ার মাধ্যমে পরীক্ষাটি শেষ হবে।
  • যেহেতু অনেকটা সময় না খেয়ে থাকতে হবে, তাই পরীক্ষা করতে যাওয়ার সময় সাথে করে খাবার নিয়ে যেতে পারেন। ২ ঘন্টা পর শেষবারের মতো স্যাম্পল দেওয়া হয়ে গেলে তা খেয়ে নিবেন।

পরীক্ষার পর কি কোনো সমস্যা হতে পারে?

ওজিটিটি খুবই নিরাপদ একটি পরীক্ষা। সাধারণত এই পরীক্ষার পর কারোরই তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে সামান্য কিছু ক্ষেত্রে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন—

  • সুঁই ফুটানোর স্থানে ব্যথা
  • মাথা ঘুরানো
  • অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ
  • সুঁই ফুটানোর স্থানে ইনফেকশন
  • এলার্জি

কিছু বিরল ক্ষেত্রে সুঁই, সিরিঞ্জ বা ল্যান্সেটের মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। এটি প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে সবসময় স্টেরাইল বা জীবাণুমুক্ত সুঁই-সিরিঞ্জের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। রক্ত সংগ্রহ করার পদ্ধতি যথাসম্ভব জীবাণুমুক্ত রাখা উচিত।

ফলাফল

ওজিটিটি পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে সাধারণত ১–২ দিন সময় লাগে। রিপোর্ট সংগ্রহ করতে কবে ও কোথায় যেতে হবে সেটা পরীক্ষা শেষেই কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জেনে নিন।

আপনার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আছে বলে ধরা হবে যদি রক্তে সুগার বা গ্লুকোজের মাত্রা—

  • খালি পেটে: ৫.১ থেকে ৬.৯ mmol/L অথবা ৯৫ mg/dL এর বেশি  হয়
  • গ্লুকোজ মেশানো পানি পর: ৮.৫ থেকে ১১.০ mmol/L অথবা ১২০ mg/dL এর বেশি হয়

যদি রক্তে সুগারের মাত্রা ওপরে উল্লিখিত মাত্রার চেয়েও বেশি হয়, তাহলে গর্ভবতীর সাধারণ ডায়াবেটিস বা টাইপ ২ ডায়াবেটিস আছে ধরে স্বাস্থ্য পরামর্শ দেওয়া হয়।

ডায়াবেটিস ধরা পড়লে উভয় ক্ষেত্রেই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। এসময়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াদাওয়া, ব্যায়াম ও ডায়াবেটিসের ঔষধ সংক্রান্ত নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত রক্তের সুগার পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়মিত রক্তের সুগার মাপার মেশিন বা গ্লুকোমিটার দিয়ে রক্তের সুগার মাপার পরামর্শ দেওয়া হয়। দিনে কতবার এবং কোন সময়ে মাপতে হবে সেটা ডাক্তার আপনাকে জানিয়ে দিবেন।

এ ছাড়া একটা লম্বা সময় ধরে রক্তে সুগারের নিয়ন্ত্রণ কেমন ছিল তা জানতে রক্তের সুগার মাপার আরেকটি বিশেষ পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। এটিও একটি রক্ত পরীক্ষা, যার নাম এইচবিএ১সি (HbA1C)।

উল্লেখ্য, সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক হলে আপনার কোনো বাড়তি পদক্ষেপ নিতে হবে না। তবে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস চালিয়ে যেতে হবে।

পড়ুন: ঘরে বসে ডায়াবেটিস পরীক্ষা

ওজিটিটি পরীক্ষার খরচ

ওজিটিটি পরীক্ষা করতে আপনার ২০০–৩০০ টাকা খরচ হতে পারে। তবে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারভেদে এই খরচে বেশ-কম হতে পারে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

গর্ভাবস্থায় কখন ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে?

বাংলাদেশে সাধারণত অন্তত দুইবার ওজিটিটি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রথম গর্ভকালীন চেকআপের সময়ে অন্যান্য রক্ত পরীক্ষার সাথেই প্রথম ওজিটিটি পরীক্ষা করে ফেলা হয়। এরপর গর্ভাবস্থার ২৪তম–২৮তম সপ্তাহের ভেতরে আরেকবার ওজিটিটি পরীক্ষা করাতে হয়। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যেমন: পূর্বের গর্ভাবস্থাতে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়া ও পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকা। এসব ক্ষেত্রে ২৪তম–২৮তম সপ্তাহের আগেই ওজিটিটি করানোর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস পরীক্ষা কি ঘরে বসে করতে পারবে?

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস পরীক্ষা ঘরে বসে করানো যাবে কি না তা নির্ভর করবে ঘরোয়াভাবে টেস্টের ব্যবস্থা করা প্রতিষ্ঠানের ওপর। এই পরীক্ষায় বিশেষ নিয়ম অনুসরণ করে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে কয়েকবার রক্ত নেওয়া হয়ে থাকে। ঘরোয়াভাবে অভিজ্ঞ স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে সঠিক নিয়মে রক্তের স্যাম্পল সংগ্রহ করে সময়মতো ল্যাবে পাঠানো হলে সঠিক ফলাফল পাওয়া সম্ভব।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস পরীক্ষা কতবার করতে হবে?

সাধারণত প্রথম গর্ভকালীন চেকআপের সময়ে ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষার সাথে প্রথম ওজিটিটি করে ফেলার পরামর্শ দিবেন। এটি গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহ বা ৩ মাসের মধ্যে হতে হবে। এরপর গর্ভাবস্থার ২৪তম–২৮তম সপ্তাহের ভেতরে আরেকবার ওজিটিটি পরীক্ষা করাতে হবে।
এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যেমন: পূর্বের গর্ভাবস্থাতে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়া ও পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকা। এসব ক্ষেত্রে ২৪তম–২৮তম সপ্তাহের আগেই ওজিটিটি করানোর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
সেই সাথে একটা লম্বা সময় ধরে রক্তে সুগারের নিয়ন্ত্রণ কেমন ছিল তা জানতে রক্তের সুগার মাপার আরেকটি বিশেষ পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। এটিও একটি রক্ত পরীক্ষা, যার নাম এইচবিএ১সি (HbA1C)।
পড়ুন: ঘরে বসে ডায়াবেটিস পরীক্ষা

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস এর মাত্রা কতটুকু থাকা স্বাভাবিক?

রক্তে সুগারের মাত্রা খালি পেটে ৫.১ মি.মোল/লি এর কম এবং ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘন্টা পর ৮.৫ মি.মোল/লি এর কম থাকা স্বাভাবিক।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস এর মাত্রা কত হলে বিপজ্জনক?

গর্ভাবস্থায় রক্তে সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে তা মা ও গর্ভের শিশুর জন্য নানান মারাত্মক ফলাফল বয়ে আনতে পারে। রক্তে সুগারের মাত্রা যথাসম্ভব স্বাভাবিক মাত্রার কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করা উচিত। আপনার যদি আগে থেকে ডায়াবেটিস থাকে কিংবা নতুন করে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলে আপনার জন্য খালিপেটে এবং ভরাপেটে রক্তের সুগারের লক্ষ্যমাত্রা কত হওয়া উচিত সেটা যেনে নিন।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস এর মাত্রা কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়?

সাধারণত গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে তা খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।[৯] এভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না আসলে কিংবা সুগারের মাত্রা অনেক বেশি হলে মেটফরমিন জাতীয় ডায়াবেটিসের ঔষধ অথবা ইনসুলিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ক্ষেত্রবিশেষে দুটোই একত্রে ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।[১০] আপনার রক্তের সুগারের মাত্রা কেমন থাকে, তার ওপর ভিত্তি করে ডাক্তার এই বিষয়ে উপযুক্ত পরামর্শ দিতে পারবেন।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের পরীক্ষার ফলাফল কি ভুল আসতে পারে?

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ডায়াবেটিসের পরীক্ষার ফলাফল ভুল হতে পারে। সেক্ষেত্রে পুনরায় পরীক্ষাটি করতে হতে পারে। কখনো কখনো ভিন্ন কোনো ল্যাব বা হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।