সিজারের পর পুনরায় সন্তান জন্মদান

অনেকে ধারণা করেন যে, একবার সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি করালে পরবর্তীতেও কেবল সিজারই করাতে হবে, সাধারণ ডেলিভারি সম্ভব হবে না। তবে এই ধারণাটি ভুল।

সিজারের পর পুনরায় সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে যে সবসময় জটিলতা তৈরি হবে—বিষয়টি এমন নয়। আপনি যদি সুস্থ ও ফিট থাকেন, তাহলে ডেলিভারির জন্য সাধারণ ডেলিভারি অথবা পরিকল্পিত সিজারের মধ্যে যেকোনো একটি পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতিই নিরাপদ এবং ঝুঁকিও খুব সীমিত।[১]

সিজারের পর যোনিপথে ডেলিভারি

‘ভ্যাজাইনাল বার্থ আফটার সিজারিয়ান’ বা VBAC বলতে বুঝায় একবার সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের পর যোনিপথে পরের সন্তান প্রসব করা। প্রথম সন্তান সিজারের মাধ্যমে হয়েছে, পরবর্তী বা বর্তমান গর্ভধারণে কোনো জটিলতা হয়নি এবং প্রাকৃতিকভাবেই প্রসববেদনা উঠেছে—এমন নারীদের প্রতি ৪ জনের মধ্যে ৩ জনই যোনিপথে সন্তান প্রসব করেন।[২]

সিজার অপারেশনের পর যোনিপথে জন্মদান সফল হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায় যদি সিজারের আগে অথবা পরে কখনো নরমাল ডেলিভারি হয়ে থাকে। সেই সাথে গর্ভধারণের আগের বা প্রথম চেকআপের সময়কার বিএমআই ৩০ এর নিচে থাকলে তাও যোনিপথে ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়ায়।

সুবিধা

  • অচেতন করে ও পেট কেটে সার্জারি করার প্রয়োজন হয় না
  • স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে সময় কম লাগে
  • ইনফেকশনের ঝুঁকি কমে
  • রক্তক্ষরণ কম হয়
  • পরবর্তী গর্ভধারণে মা ও গর্ভের শিশুর সিজারের প্রয়োজনীয়তাসহ নানান জটিলতার ঝুঁকি কমতে পারে

অসুবিধা

  • প্রসব প্রক্রিয়ায় চলে যাওয়ার পরও কখনো কখনো জরুরি ভিত্তিতে সিজারিয়ান সেকশন প্রয়োজন হতে পারে। জরুরি ভিত্তিতে করা সিজারের ঝুঁকি পরিকল্পিত সিজারের তুলনায় বেশি।
  • গর্ভবতীকে রক্তদানের প্রয়োজন হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বেড়ে যায়।
  • জরায়ুতে আগের অপারেশনের কাটা স্থানের সেলাই খুলে অথবা ফেটে যেতে পারে।
  • শিশুর ব্রেইনের ক্ষতি ও মৃতপ্রসবের মতো গুরুতর জটিলতার ঝুঁকি পরিকল্পিত সিজারের তুলনায় বেশি থাকে।
  • যোনিপথে প্রসব করতে গিয়ে বিশেষ যন্ত্রপাতি (যেমন: ফরসেপ অথবা ভেনটুস) ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে।
  • প্রসবের সময়ে চাপ সৃষ্টির ফলে পায়খানার রাস্তা বা পায়ুপথের পেশি ছিঁড়ে যেতে পারে

এই ঝুঁকিগুলো নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, এসব দুর্ঘটনা সচরাচর ঘটে না। তাই অনেক নারী প্রথমবার সিজার অপারেশনের পরবর্তী শিশুর জন্মদানের জন্য যোনিপথে প্রসবের চেষ্টা করার অপশন বেছে নেন।

সতর্কতা

কিছু ক্ষেত্রে যোনিপথে প্রসব করার পরামর্শ দেওয়া হয় না—

  • আগে তিন বা তারও বেশি সিজারিয়ান অপারেশন হলে
  • আগে কখনো প্রসব প্রক্রিয়ায় আপনার জরায়ু ফেটে গিয়ে থাকলে
  • আগের সিজারের সময়ে জরায়ুর ওপরের অংশে কাটা হলে
  • গর্ভাবস্থায় এমন কোনো জটিলতা থাকলে, যার জন্য পরিকল্পিত সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি করানো প্রয়োজন

পুনরায় সিজার

একবার সিজার করা হলে পরবর্তী সন্তান প্রসবের সময়ে আবার পরিকল্পিত সিজার করা যেতে পারে। প্রথম সিজারের মতো দ্বিতীয় সিজারও সাধারণত গর্ভাবস্থার ৩৯ সপ্তাহের পর করা হয়। নাহলে শিশুর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী নানান স্বাস্থ্য জটিলতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

সুবিধা

  • জরায়ু ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
  • প্রসব সংক্রান্ত ঝুঁকি ও শিশুর জন্য বিরল কিন্তু গুরুতর কিছু ঝুঁকি এড়ানো যায়। যেমন: প্রসবের চাপ থেকে পায়খানার রাস্তা বা পায়ুপথের পেশি ছিঁড়ে যাওয়া
  • শিশুর জন্মের দিন-ক্ষণ আগে থেকেই জানা যায়।
  • গর্ভবতীকে রক্তদানের প্রয়োজন হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কিছুটা কমে।
  • শিশুর ব্রেইনের ক্ষতি ও মৃতপ্রসবের মতো গুরুতর জটিলতার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম থাকে।

অসুবিধা

  • প্রতিবার সিজারের পর জরায়ুতে ক্ষত হওয়া এবং সেরে যাওয়া ক্ষতস্থানে গর্ভফুল সংযুক্ত হওয়ার আশংকা বেড়ে যায়। এর ফলে পরবর্তী ডেলিভারির সময়ে গর্ভফুল বের করতে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়তে পারে। এমনকি রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে জরায়ু পুরোপুরি কেটে ফেলার প্রয়োজন হতে পারে।
  • পুনরায় সিজার করার সময়ে অপারেশন জটিল হয়ে পড়ে এবং মূত্রথলি কিংবা নাড়িভুঁড়িতে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অপারেশনের পর পুরোপুরি সেরে উঠতে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় লেগে যেতে পারে।
  • পরবর্তীতে আবারও সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারির প্রয়োজন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • অপারেশনের স্থানে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে—যা সেরে উঠতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।
  • সাধারণত দ্বিতীয় বা তার পরের সিজার অপারেশন করতে প্রথমবারের থেকেও বেশি সময় লাগে। আগের সিজারের দাগের জন্য এমন হয়ে থাকে।
  • রক্ত প্রদানের প্রয়োজন হতে পারে।
  • পায়ে অথবা ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • এসব ছাড়া সাধারণ সিজার সংক্রান্ত সাধারণ ঝুঁকিগুলো এক্ষেত্রেও থেকে যায়।

উপরের বিষয়গুলো মাথায় রেখেই পরবর্তী ডেলিভারির জন্য কোন উপায় বেছে নেওয়া হবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই বিষয়গুলো বেশ জটিল। তাই ডাক্তারের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন।

(২)

  1. Royal College of Obstetricians and Gynaecologists. “Birth after Previous Caesarean Patient Information Leaflet.” RCOG, https://www.rcog.org.uk/for-the-public/browse-all-patient-information-leaflets/birth-after-previous-caesarean-patient-information-leaflet/.
  2. Royal College of Obstetricians and Gynaecologists. “Birth after Previous Caesarean Patient Information Leaflet.” RCOG, https://www.rcog.org.uk/for-the-public/browse-all-patient-information-leaflets/birth-after-previous-caesarean-patient-information-leaflet/.