গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের সময়ে এমন অনেক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, যেকারণে গর্ভের শিশুকে সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি করানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এমন অনেকগুলো জটিলতার পেছনে রয়েছে কিছু পরিচিত ও প্রতিরোধযোগ্য কারণ।
এসব কারণের মধ্যে অন্যতম হলো, গর্ভধারণের আগে মায়ের অতিরিক্ত ওজন ও গর্ভাবস্থায় দ্রুত ওজন বাড়া, ৩৫ বছর বয়সের পরে গর্ভধারণ, ডায়াবেটিস তথা রক্তে সুগার বেশি থাকা, ধূমপান ও গর্ভবতীর উচ্চ রক্তচাপ।
জীবনধারায় সহজ কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে এসব কারণ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব হতে পারে। এতে জটিলতার ঝুঁকি কমে, ফলে সিজারের প্রয়োজন হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। এভাবে জীবনধারার এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে রাখলে তা নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
এখানে নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়ানোর এবং নিরাপদ ডেলিভারিতে সহায়তা করার জন্য কিছু কার্যকর উপদেশ তুলে ধরা হয়েছে।
নিয়মিত ব্যায়াম করা
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যারা গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করেন তাদের নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বেড়ে যায়, সিজার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির সাহায্যে ডেলিভারির প্রয়োজন কম হয়।[১] সেই সাথে সময়ের আগে সন্তান প্রসব হওয়া ও কম ওজনের শিশু জন্মদানের ঘটনাও কমে আসে।[২]
নিয়মিত ব্যায়াম করলে তা গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন বাড়া প্রতিরোধ করে। অতিরিক্ত ওজন বাড়লে গর্ভের শিশু আকারে বেশি বড় হওয়ার এবং সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারির ঝুঁকি বেড়ে যায়।[৩]
পড়ুন: গর্ভাবস্থায় কতটুকু ওজন বাড়া উচিত
ব্যায়াম গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-এক্লাম্পসিয়া ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।[৪] এসব জটিলতাও সিজারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়ানোর পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করলে আরও কিছু উপকারিতা পাওয়া যায়। যেমন—
- পেশি শক্তিশালী করে তোলার মাধ্যমে কোমর ব্যথাসহ গর্ভকালীন বিভিন্ন ধরনের ব্যথা কমানো[৫]
- কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট ফাঁপা কমানো
- শরীরের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়া
- মন-মেজাজ ফুরফুরে রাখা
- ভালোমতো ঘুমাতে সাহায্য করা
গর্ভবতী নারীদের জন্য সপ্তাহে ২.৫ ঘণ্টা মাঝারি তীব্রতার ‘অ্যারোবিক’ শরীরচর্চাকে আদর্শ ধরা হয়।[৬] যেমন: দ্রুত হাঁটা, বাগান করা, সাঁতার কাটা, নাচ ও সাইকেল চালানো। এমন ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে দ্রুত হাঁটা, বাগান করা, সাঁতার কাটা, নাচ ও সাইকেল চালানো।
গর্ভাবস্থায় আপনার পছন্দমতো এমন যেকোনো ব্যায়াম বেছে নিতে পারেন। এ ছাড়া আগে থেকে ভারী ব্যায়াম করার অভ্যাস থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেটাও চালিয়ে যেতে পারেন।
আপনি সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ মিনিট ধরে ব্যায়াম করলেই এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবেন। আবার চাইলে দিনে ১০ মিনিট ধরে কয়েক ভাগে ব্যায়াম করে নিতে পারেন। এই রুটিনের পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার স্বাচ্ছন্দ্যের ওপর।
আপনার গর্ভধারণের আগে থেকে ব্যায়ামের অভ্যাস না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। গর্ভাবস্থায় নিশ্চিন্তে ব্যায়াম করা শুরু করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে শুরু করে সময়ের সাথে আপনার সহনশীলতা বাড়ান।
সহজ কিছু কাজ প্রতিদিনের রুটিনে যোগ করতে পারেন। যেমন, বাজারে কিংবা দোকানে গেলে একটু বেশি ঘুরে হেঁটে যাওয়ার রাস্তাটি বেছে নিতে পারেন। লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি বেছে নিন। মূল কথা হলো, ব্যায়ামের সব ধরনের উপকার পেতে প্রতিদিন একটু একটু করে শরীরচর্চার পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করুন এবং এটি নিয়মিত রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসুন।
তবে এসময়ে নতুন করে ভারী ধরনের কোনো ব্যায়াম শুরু না করাই ভালো। সেই সাথে যেসব এক্সারসাইজ করলে আপনার পড়ে যাওয়ার অথবা আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি থাকে (যেমন: বক্সিং, ব্যাডমিন্টন ও কারাতে) সেগুলো এসময়ে এড়িয়ে চলবেন।
গর্ভাবস্থায় ঠিক কোন ধরনের এক্সারসাইজগুলো আপনার জন্য নিরাপদ হবে তা আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নির্ধারণ করে নিতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।
গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার সময়ে স্বাভাবিক সহ্যক্ষমতার বাইরে ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার কোনো গর্ভকালীন জটিলতা থাকলে ব্যায়াম করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতামত মেনে চলুন।
পড়ুন: গর্ভাবস্থার জন্য ব্যায়াম
পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
গর্ভধারণ করলেই যে আপনাকে দুইজনের পরিমাণে খাবার খেতে হবে—এমনটা নয়। স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে অস্বাস্থ্যকর, অতিরিক্ত চিনি ও তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া যতটা সম্ভব বাদ দিয়ে দিন। আপনার জন্য সঠিক পরিমাণে সুষম খাবার খান। প্রচুর পানি পান করুন, পর্যাপ্ত শাকসবজি ও ফলমূল খান।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে সাধারণত বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না।[৭] তবে এর পরের মাসগুলোতে আপনাকে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি খাবার খেতে হবে। গর্ভাবস্থায় আপনি কতটুকু অতিরিক্ত খাবার খাবেন, সেটি খাবারে থাকা ক্যালরির সাহায্যে হিসাব করা যায়।
একজন স্বাভাবিক ওজনের গর্ভবতীর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে প্রথম ত্রৈমাসিকের চেয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৪০ ক্যালরি পরিমাণ অতিরিক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে, একজন স্বাভাবিক ওজনের গর্ভবতীকে তৃতীয় ত্রৈমাসিকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অতিরিক্ত প্রায় ৪৫০ ক্যালরির খাবার খেতে হবে।[৮]
তবে আপনার ওজন কম-বেশি হলে আরেকটু বেশি-কম পরিমাণে অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে। যমজ শিশু গর্ভধারণ করলেও হিসাব কিছুটা ভিন্ন হবে।
প্রয়োজন মাফিক পুষ্টিকর খাবার খেলে আপনার গর্ভকালীন বাড়তি ওজন স্বাভাবিক সীমার মধ্যে থাকবে। গর্ভকালীন চেকআপের সময়ে আপনি কী ধরনের খাবার খাচ্ছেন সে বিষয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন।
পড়ুন: মাস অনুযায়ী গর্ভবতীর খাবার তালিকা
নিয়মিত গর্ভকালীন চেকআপে যাওয়া
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চেকআপে গিয়েছেন এমন নারীদের তুলনায় যারা চেকআপে অনিয়মিত ছিলেন তাদের গর্ভকালীন ও প্রসব সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।[৯] এসব জটিলতা সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারিসহ প্রসবের সময়ে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
নিয়মিত গর্ভকালীন চেকআপে গেলে গর্ভবতী ও গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে নানান গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে। ফলে এসব জটিলতা আগেভাগে ধরে ফেলে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়। এভাবে নিয়মিত চেকআপ নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
শুধু তাই নয়, চেকআপের কারণে গর্ভধারণ ও প্রসব সংক্রান্ত জটিলতায় মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার বর্তমানে অনেক কমে এসেছে। ১৯৯০ সালেই বাংলাদেশে প্রতি লাখে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ৫৮১।[১০] সেটা ২০১৭ সালে নেমে এসেছে ১৭৩ এ।[১১][১২]
একইভাবে আগের তুলনায় শিশুমৃত্যুর হারও অনেক কমে এসেছে। ১৯৯০ সালে যেখানে হাজারে ৬৫ নবজাতক শিশু মারা যেত, তা ২০২০ এ কমে এসেছে ১৭তে।[১৩][১৪] এই মৃত্যুহার এতখানি কমে আসার পেছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে নিয়মিত গর্ভকালীন চেকআপ।[১৫]
গর্ভধারণের পরে যত দ্রুত সম্ভব গর্ভকালীন চেকআপ শুরু করা প্রয়োজন। যেকোনো অবস্থাতেই ১২তম সপ্তাহের আগে আপনার প্রথম চেকআপ করিয়ে ফেলতে হবে। তাই আপনি যে গর্ভবতী সেটি জানার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
ডাক্তার আপনার ও গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের অবস্থার ভিত্তিতে আপনার জন্য ব্যক্তিগত একটি পরিকল্পনা তৈরি করে দিতে পারেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গর্ভকালীন সময়ে আপনার চলাফেরা ও খাওয়া-দাওয়া কেমন হবে সেই বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।
এ ছাড়া আপনার ও গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হবে। গর্ভাবস্থা শেষে একজন সুস্থ মা ও সুস্থ শিশুর ডেলিভারির জন্য এসব তথ্য যত দ্রুত জানা যায়, ততই ভালো।
পড়ুন: কীভাবে গর্ভকালীন চেকআপ করাবেন?
সঠিক মাত্রায় ওজন বৃদ্ধি নিশ্চিত করা
মা ও গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে গর্ভাবস্থায় সঠিক মাত্রায় ওজন বৃদ্ধি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ওজন বৃদ্ধির হার কম কিংবা বেশি হলে সেটি মা ও গর্ভের শিশুর জন্য বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।[১৬]
এসব জটিলতার কারণে সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি ও শিশুর জন্মের পরে বিশেষায়িত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যেতে পারে। এমনকি শিশুর জন্মের বহু বছর পরেও এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কতটুকু ওজন বাড়লে তা মা ও গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হবে, সেই হিসাবটা একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম। গর্ভধারণের আগে মায়ের ওজন ও শারীরিক গঠন কেমন ছিল, তার ওপর ভিত্তি করে গর্ভকালীন ওজন বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অনেকটাই কম-বেশি হতে পারে।
এসময়ে খুব দ্রুত ওজন না বাড়িয়ে ধীরে ধীরে বাড়ানোর লক্ষ্য রাখা উচিত। গর্ভধারণের ১৩তম সপ্তাহের পর থেকে ধীরে ধীরে এবং নির্দিষ্ট হারে আপনার ওজন বাড়তে থাকলে তা আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য সবচেয়ে ভালো হয়।[১৭]
পড়ুন: গর্ভাবস্থায় ওজন কতটুকু বাড়া উচিত?
গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই নিয়মিত নিজের ওজন মাপুন। এতে করে আপনার ওজন কী হারে বাড়ছে, সেটি সহজেই বুঝতে পারবেন। যদি প্রতি সপ্তাহে ওজন মাপেন, তাহলে সপ্তাহের একটা নির্দিষ্ট দিন ও সময় বেছে নিতে পারেন। যেমন, প্রতি শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রস্রাব করার পর খালি পেটে ওজন মাপতে পারেন।
আপনার ওজন ঠিকঠাক মতো বাড়ছে কি না সেই বিষয়ে গর্ভকালীন চেকআপের সময়ে ডাক্তারের মতামত নিন। ওজন বৃদ্ধিতে কোনো ধরনের সমস্যা থাকলে খাবার তালিকা ও ব্যায়াম নিয়ে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে আপনার জন্য একটি সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করে নিন।
মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকা
গর্ভাবস্থায় আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে যায়। এর মধ্যে যতটা সম্ভব মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করবেন। এই কাজটা সবসময় সহজ হয় না। অনেক বেশি চাপের মধ্যে থাকলে তা আপনার ও গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর বিভিন্ন ধরনের অস্বাস্থ্যকর প্রভাব ফেলতে পারে।
এসময়ে মানসিক অবস্থা নিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে খোলাখুলিভাবে কথা বলুন। আপনজনদের সাথে চাপ ভাগাভাগি করে নিলে তা মোকাবেলা করা সহজ হতে পারে। সেই সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ইয়োগা বা যোগব্যায়াম, শ্বাসের ব্যায়াম করুন। ডায়েরি লিখতে পারেন, পছন্দের গান শুনতে পারেন। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে তা কেবল আপনার গর্ভাবস্থায় নয়, বরং ডেলিভারির সময়েও সাহায্য করতে পারে।
গর্ভকালীন বিশেষ স্বাস্থ্য পরামর্শ মেনে চলা
এসব পরামর্শের মধ্যে রয়েছে—
- গর্ভধারণের পরিকল্পনা শুরু করার পর থেকে নিয়মিত আয়রন-ফলিক এসিড খাওয়া
- কাজের জায়গায় একটানা বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকা এবং ভারী জিনিস বহন করা এড়িয়ে চলা
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া
- রাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করা
- গর্ভাবস্থার বিপদচিহ্নগুলো জেনে রাখা এবং কোনোটি দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া
- অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলা। গর্ভকালীন সময়ে দৈনিক ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন জাতীয় খাবার অথবা পানীয় খাওয়া এড়িয়ে চলবেন।[১৮] সাধারণত ২ কাপ কফি কিংবা ২–৩ কাপ চায়েই এই পরিমাণ ক্যাফেইন থাকতে পারে।
- ধূমপান ও মদপান বাদ দেওয়া
কোন ধরনের কাজ গর্ভাবস্থার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জানতে পড়ুন: গর্ভাবস্থায় চাকরি
কেগেল এক্সারসাইজ করা
আমাদের দুই পায়ের মাঝখানে একটা পেশিবহুল পর্দার মতো অংশ থাকে। একে পেলভিক ফ্লোর বলা হয়। এটি জরায়ু, মূত্রথলি ও নাড়িভুঁড়িকে সঠিক স্থানে ধরে রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় বাড়ন্ত জরায়ুকে সাপোর্ট দেয়।
প্রসবের সময়ও এই পেশিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো কারণে পেলভিক ফ্লোরের পেশি দুর্বল হয়ে গেলে হাঁচি, কাশি অথবা চাপ দিয়ে মলত্যাগ করার সময় কয়েক ফোঁটা প্রস্রাব বেরিয়ে আসার সমস্যাসহ নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে। নরমাল ডেলিভারির পরে অনেকেরই এই সমস্যা দেখা দেয়। আগে থেকে নিয়মিত পেলভিক ফ্লোরের ব্যায়াম করলে তা এই ধরনের সমস্যা এড়াতে সাহায্য করে।
পেলভিক ফ্লোরের ব্যায়াম অনেকের কাছে ‘কেগেল এক্সারসাইজ’ বা ‘পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ’ নামে পরিচিত। এই ব্যায়ামটি দাঁড়িয়ে, বসে অথবা শুয়ে, যেকোনো ভাবেই করা যায়।
পড়ুন: কেগেল এক্সারসাইজ কিভাবে করে?
পেরিনিয়াল ম্যাসাজ
ব্যথার কারণে অনেকেই নরমাল ডেলিভারি করাতে ভয় পান। কেউ কেউ নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা শুরু করলেও পরে স্বেচ্ছায় সিজার করানোর সিদ্ধান্ত নেন। এটি প্রতিরোধে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ‘পেরিনিয়াল ম্যাসাজ’ করাতে পারেন।
এতে যোনিপথের ২–৩ সেন্টিমিটার ভেতরে আঙুল ঢুকিয়ে যোনি ও পায়ুর মাঝামাঝি পেশিতে নির্দিষ্ট নিয়মে ম্যাসাজ করা হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এই ম্যাসাজ ডেলিভারি জনিত যোনিপথের ব্যথা, এপিসিওটোমি ও যোনিপথে সেলাইয়ের প্রয়োজনীয়তা কমাতে সাহায্য করতে পারে।[১৯]