নরমাল ডেলিভারি কত সপ্তাহে হয়?
শিশু যদি গর্ভাবস্থার ৩৭তম সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার পরে জন্মায়, তাহলে আমরা সাধারণত নরমাল ডেলিভারি হয়েছে বলি। এই সময়ের আগে ডেলিভারি হলে তাকে অকাল প্রসব বা প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি ধরা হয়। সচরাচর গর্ভকালীন ৩৭তম–৪২তম সপ্তাহের মধ্যে নরমাল ডেলিভারি হলে তা মা ও গর্ভের শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ বিবেচনা করা হয়।[১]
তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ৩৭তম–৪২তম সপ্তাহে জন্মানো সব শিশুর সুস্থ থাকার সম্ভাবনা সমান নয়।[২] বরং গর্ভাবস্থার ৩৯তম–৪১তম সপ্তাহের আগে অথবা পরে ডেলিভারি হওয়া শিশুদের গর্ভকালীন ও প্রসব-সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামুলক বেশি।[৩] তাই ডাক্তারের সাথে ডেলিভারির পরিকল্পনা তৈরি করার সময়ে এই বিষয়টি মাথায় রাখবেন।
নরমাল ডেলিভারির জন্য বাচ্চার ওজন কত হওয়া প্রয়োজন?
শিশু আকারে বড় হলে নরমাল ডেলিভারি করা কঠিন হয়ে পড়ে। সাধারণত জন্মের সময়ে একটি সুস্থ বাচ্চার ওজন ২.৫ থেকে ৪ কেজির মধ্যে হয়ে থাকে। মায়ের প্রসবের রাস্তা যথেষ্ট প্রশস্ত হলে এবং কোনো জটিলতা না থাকলে এই ওজনের শিশুর নরমাল ডেলিভারি করা যায়।
কিন্তু ৪ কেজির বেশি ওজনের শিশু আকারে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত বড় হয়।[৪] তাই নরমাল ডেলিভারির ফলে জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং সিজারের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রথমবার সিজার করলে পরের বার কি নরমাল ডেলিভারি সম্ভব?
অনেকে ধারণা করেন যে, একবার সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি করালে পরবর্তীতেও কেবল সিজারই করাতে হবে, নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হবে না। তবে এই ধারণাটি ভুল। আপনি যদি সুস্থ ও ফিট থাকেন, তাহলে ডেলিভারির জন্য সাধারণ ডেলিভারি অথবা পরিকল্পিত সিজারের মধ্যে যেকোনো একটি পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতিই নিরাপদ, ঝুঁকিও খুব সীমিত।[৫]
প্রথম সন্তান সিজারের মাধ্যমে হয়েছে, পরবর্তী বা বর্তমান গর্ভধারণে কোনো জটিলতা হয়নি এবং প্রাকৃতিকভাবেই প্রসববেদনা উঠেছে—এমন নারীদের প্রতি ৪ জনের মধ্যে ৩ জনই যোনিপথে সন্তান প্রসব করেন।[৬] যদি আপনার দ্বিতীয় গর্ভাবস্থায় সিজার করার মতো কোনো জটিলতা না থাকে সেক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি করা সম্ভব।
পড়ুন: সিজারের পর পুনরায় সন্তান জন্মদান
কত বয়স পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারি সম্ভব?
এর উত্তর নির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ এটি একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হতে পারে। তবে সাধারণত ৩৫ বছর বয়সের পরে প্রথমবারের মতো গর্ভধারণ করলে গর্ভকালীন ও প্রসব-সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।[৭] তাই এসব ক্ষেত্রে গর্ভের শিশুর সুস্থতা বিবেচনা করে নরমাল ডেলিভারির পরিবর্তে সিজার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
উল্লেখ্য, অনেক কম বয়সে (যেমন: ১৯ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে) গর্ভধারণ করলেও গর্ভকালীন ও প্রসব-সংক্রান্ত জটিলতায় ভোগার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।[৮] অকাল প্রসবের সম্ভাবনাও তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। ফলে সিজারের প্রয়োজন হতে পারে।
নরমাল ডেলিভারির পর পুরোপুরি সুস্থ হতে কত সময় লাগে?
নরমাল ডেলিভারির পর পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার সময়টা একেকজনের জন্য একেকরকম হতে পারে। তবে সাধারণত প্রসবের পর শরীর আগের অবস্থায় ফেরত আসতে কমবেশি ৬ সপ্তাহ সময় লাগে।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার কতদিন পর সহবাস করা যায়?
সাধারণত নরমাল ডেলিভারির ৬ সপ্তাহ, অর্থাৎ দেড় মাস পর থেকে স্বাভাবিকভাবে সহবাস করা যায়। তবে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার এই সময়টা সবার ক্ষেত্রে সমান হয় না। শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী কারও কম, আবার কারও অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগতে পারে। হাসপাতালে ডেলিভারি হলে আপনার ছুটির কাগজে সময়টা লিখে দেওয়া থাকবে। এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার কতদিন পর বাচ্চা নেওয়া যায়?
নরমাল ডেলিভারির কতদিন পর বাচ্চা নেওয়া যায় তার কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। দম্পতিরা তাদের নিজস্ব পরিবার পরিকল্পনা অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। কাগজে-কলমে সন্তান প্রসবের ১ মাস পরই আবার গর্ভধারণ করা সম্ভব। তবে মা ও ভবিষ্যৎ শিশুর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ডেলিভারির পরে অন্তত ১.৫ বছরের বিরতিতে গর্ভধারণ করা উচিত।