২২তম সপ্তাহ নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন
এসময় গর্ভের আকার দ্রুত বাড়তে থাকে। ফলে পেটের ত্বকে টান পড়ে ‘স্ট্রেচ মার্কস’ দেখা দেয়। পেট ছাড়াও স্তন (breast) ও উরুর (thighs) আশেপাশেও এমন দাগ দেখা দিতে পারে। শুরুর দিকে এই দাগগুলো লালচে বা বেগুনি থাকে। সন্তান প্রসবের পরে আস্তে আস্তে দাগগুলো মিলিয়ে যেতে শুরু করে।
এই সময় বা এর পরের সপ্তাহগুলোতে আপনার স্তন থেকে মাঝেমাঝে সামান্য পরিমাণে বুকের দুধের মত তরল বের হতে পারে, যা খুবই স্বাভাবিক৷ মূলত এভাবেই আপনার শরীর ভবিষ্যতে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য তৈরি হয়৷
গর্ভাবস্থায় অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়ে থাকে। কারো কারো এসময় পাইলস, অর্শ্ব বা গেজ-এর মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে৷ তাই কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে প্রচুর পরিমাণে পানি ও আঁশযুক্ত খাবার খান।
এছাড়া এ সময়ে অন্যান্য যেসব লক্ষণ থাকতে পারে সেগুলো হল:
- বেশি ক্লান্ত লাগা,
- ঘুমের সমস্যা হওয়া,
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
- পেটে ব্যথা,
- কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
- পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
- বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
- চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
- পায়ে ব্যথা,
- অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
- মাথা ঘুরানো,
- হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
- প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
- যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন,
- মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
- অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা,
- রক্ত চলাচল বেড়ে গিয়ে ত্বক আগের চেয়ে উজ্জ্বল বা লাবণ্যময় মনে হওয়া (একে অনেকে ‘প্রেগন্যান্সি গ্লো’ বলে থাকেন)।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
- এই সপ্তাহ থেকে শিশুটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে এবং নির্দিষ্ট সময় ধরে জেগে থাকতে শুরু করে। শিশুর ঘুমানো ও জেগে থাকার রুটিন আপনার ব্যক্তিগত ঘুমের রুটিনের সাথে নাও মিলতে পারে। রাতে আপনার ঘুমানোর সময়ে সে অনেক নড়াচড়া করে আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই শিশুটি দিনের যে সময়ে কিছুটা চুপচাপ থাকবে আপনিও তখন বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করুন।
- গর্ভাবস্থায় অনেকে হুপিং কাশির প্রতিষেধক টিকা নিয়ে থাকেন। আপনি যদি এখনও টিকাটি নিয়ে না থাকেন তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে এ বিষয়ে কথা বলুন।
- চাকরিজীবী মায়েরা সন্তান প্রসবের মাস তিনেক আগে মাতৃত্বকালীন ছুটি’র জন্য আবেদন করে রাখতে পারেন। আপনার অফিস বা কর্মক্ষেত্রে এ বিষয়ে কী ধরনের নিয়মকানুন রয়েছে তা আগে থেকেই জেনে রাখার চেষ্টা করুন।
গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
২২ তম সপ্তাহে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ২৭.৮ সেন্টিমিটার বা প্রায় ১১ ইঞ্চি হয়, আর এ সময় তার ওজন হয় প্রায় ৪৩০ গ্রাম।
শিশুর ফুসফুস এখন আরও সুগঠিত হয়। এসময় সে ধীরে ধীরে শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়ার চেষ্টা করে। এই সপ্তাহ থেকে শিশুটি অল্প অল্প করে অ্যামনিওটিক তরল গিলতে শুরু করে। এই তরল তার পেটে জমা হতে থাকে এবং জন্মের পর ত্যাগ করা প্রথম মল বা পায়খানা হিসেবে তার শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। অ্যামনিওটিক তরল যুক্ত এই প্রথম মলকে বলা হয় ‘মেকোনিয়াম’।
এ সপ্তাহ থেকে শিশুর জিভে ‘টেস্ট বাড্স’ তৈরি হতে থাকে। ‘টেস্ট বাড্স’ খাবারের স্বাদ পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিশুর টেস্ট বাড্স-এর ওপর মায়ের খাদ্যাভাস এর প্রভাব থাকতে পারে। তাই এসময় যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।