গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম

নিয়মিত ব্যায়াম করার অনেক সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সিজারিয়ান অপারেশনের প্রয়োজন কমে গিয়ে নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া।

আপনি শারীরিকভাবে যতটা ফিট থাকবেন, আপনার জন্য গর্ভাবস্থার পরিবর্তনগুলোর সাথে মানিয়ে নেওয়া ততটাই সহজ হবে। আর গর্ভাবস্থায় ফিটনেস ধরে রাখার ক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করা নিরাপদ ও কার্যকর।[১] তাই আপনার বিশেষ কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা না থাকলে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত নিরাপদে ব্যায়াম করতে পারবেন।

এক্ষেত্রে আপনার জন্য কোন ব্যায়ামগুলো উপযোগী হবে তা খুঁজে বের করে কীভাবে নিরাপদে ব্যায়াম করা যায় সেটা জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া যেসব বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যায়াম বন্ধ করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি সেগুলোও মনে রাখতে হবে। এই আর্টিকেলে এসব বিষয়ের পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় ঘরে বসে নিরাপদে ব্যায়াম করার উপায় তুলে ধরা হয়েছে। সেই সাথে ঘরে বসে করা যায় এমন ৭টা ব্যায়ামের নিয়ম ধাপে ধাপে তুলে ধরা হয়েছে আর্টিকেলের শেষের অংশে।

কেন ব্যায়াম করবেন

গর্ভাবস্থায় শরীরচর্চা আপনাকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি আরও অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাহায্য করতে পারে। যেমন—

পড়ুন: গর্ভাবস্থায় আদর্শ ওজন

ডেলিভারি ও ডেলিভারি-পরবর্তী স্বাস্থ্যের ওপর ব্যায়ামের প্রভাব

গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যারা গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করেন তাদের সিজারিয়ান অপারেশন ও ফরসেপ-ভেনটুসের সাহায্যে ডেলিভারির প্রয়োজন কম হয়।[৫] অর্থাৎ নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।[৬] এ ছাড়া সময়ের আগে সন্তান প্রসব হওয়া ও কম ওজনের শিশু জন্মদানের ঘটনা কমে আসে।[৭]

শুধু তাই নয়, গর্ভাবস্থায় শরীরচর্চা করলে নারীরা সন্তান প্রসবের পরে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।[৮] ওজন কমিয়ে গর্ভধারণের আগের ওজনে ফিরে যাওয়া সহজ হয়।[৯] সেই সাথে এটি প্রসব-পরবর্তী বিষণ্ণতা বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

কীভাবে ব্যায়াম করবেন?

কোন ধরনের ব্যায়াম করা উচিত?

অ্যারোবিক শরীরচর্চাকে অনেকে ‘কার্ডিও’ বলে থাকে। এই ধরনের ব্যায়ামে আপনার হাত-পায়ের মতো বড় বড় পেশিগুলো নির্দিষ্ট ছন্দে নড়াচড়া করতে হয়। ফলে হার্ট রেট বা হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়। যেমন: দ্রুত হাঁটা, বাগান করা, সাঁতার কাটা, নাচ ও সাইকেল চালানো। গর্ভাবস্থায় এই ধরনের ব্যায়াম বেছে নিতে পারেন।

অ্যারোবিক ব্যায়ামের পাশাপাশি আরও কিছু ব্যায়াম আছে যা মানসিক চাপ কমাতে ও পেশির শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। যেমন: ইয়োগা, পিলাটেস (Pilates), তাই-চি ও আপার বডি এক্সারসাইজ। আপনি অ্যারোবিক ব্যায়ামের পাশাপাশি সপ্তাহে কয়েকদিন এসব ব্যায়ামও করতে পারেন। তবে ভারোত্তোলন জাতীয় কোনো ব্যায়াম শুরু করার আগে গাইনী ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

কতক্ষণ ধরে ব্যায়াম করবেন?

গর্ভবতী নারীদের জন্য সপ্তাহে ২.৫ ঘণ্টা মাঝারি তীব্রতার ‘অ্যারোবিক’ শরীরচর্চাকে আদর্শ ধরা হয়।[১০] আপনি সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ মিনিট ধরে ব্যায়াম করলেই এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবেন। আবার চাইলে দিনে ১০ মিনিট ধরে কয়েক ভাগে ব্যায়াম করে নিতে পারেন। এই রুটিনের পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার স্বাচ্ছন্দ্যের ওপর।

কতখানি তীব্র ব্যায়াম করা যাবে?

গর্ভাবস্থায় সাধারণত মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়। মাঝারি তীব্রতার অর্থ হলো অন্তত এমন তীব্রতার ব্যায়াম করা যে আপনার হার্ট রেট বেড়ে গিয়ে ঘাম ঝরা শুরু হয়। তবে এই অবস্থাতেও যেন আপনি একটা পূর্ণ বাক্য বলে শেষ করতে পারেন—এটা মাথায় রাখতে হবে।

ব্যায়াম করতে গিয়ে যদি আপনার কষ্ট হওয়া শুরু হয় তাহলে হয়তো সেই ব্যায়ামটি আপনার জন্য প্রযোজ্য নয়। সেক্ষেত্রে ব্যায়ামের তীব্রতা কিছুটা কমিয়ে আনা প্রয়োজন হতে পারে। সেই সাথে ব্যায়ামের বিশেষ সতর্কতাগুলো মাথায় রাখতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে ব্যায়াম করা বন্ধ করে দিয়ে দ্রুত গাইনী ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এই সম্পর্কে আর্টিকেলের নিচের অংশে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

আগে থেকে ব্যায়ামের অভ্যাস না থাকলে কীভাবে শুরু করবেন?

আপনার গর্ভধারণের আগে থেকে ব্যায়ামের অভ্যাস না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। গর্ভাবস্থায় নিশ্চিন্তে ব্যায়াম করা শুরু করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে শুরু করে সময়ের সাথে আপনার সহনশীলতা বাড়ান।

দিনে ৫–১০ মিনিট ব্যায়াম করা দিয়ে শুরু করতে পারেন। এভাবে সপ্তাহে ৩–৪ দিন ব্যায়াম করুন। তারপর আস্তে আস্তে সপ্তাহে ৫ মিনিট করে ব্যায়ামের সময় বাড়ান। এভাবে ব্যায়ামের সময় ও তীব্রতা বাড়াতে বাড়াতে এমন পর্যায়ে নিয়ে আসুন যেন দিনে ৩০ মিনিট ধরে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যায়াম করতে পারেন। এক্ষেত্রে ব্যায়াম শুরু করার আগে একজন গাইনী ডাক্তারের সাথে আপনার পরিকল্পনাটি আলোচনা করে নিলে সবচেয়ে ভালো হয়।

আগে কখনো ব্যায়াম না করে থাকলে হঠাৎ করে ব্যায়াম শুরু করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এজন্য সহজ কিছু কাজ প্রতিদিনের রুটিনে যোগ করতে পারেন। বাজারে কিংবা দোকানে গেলে একটু বেশি ঘুরে হেঁটে যাওয়ার রাস্তাটি বেছে নিতে পারেন। লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি বেছে নিন। মূল কথা হলো, ব্যায়ামের সব ধরনের উপকার পেতে প্রতিদিন একটু একটু করে শরীরচর্চার পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করুন এবং এটি নিয়মিত রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসুন।

ভারী ব্যায়াম করা যাবে কি?

আপনার যদি গর্ভধারণের আগে থেকেই নিয়মিত ভারী ব্যায়ামের অভ্যাস থাকে, তাহলে গাইনী ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেগুলো চালিয়ে যেতে পারবেন।[১১] তবে মনে রাখতে হবে যে, গর্ভকাল বাড়ার সাথে সাথে আপনার সহ্যক্ষমতা কমে আসবে। তাই আপনার জন্য যতটুকু ব্যায়াম সহনীয়, ততটুকুই করবেন। অতিরিক্ত ব্যায়াম করবেন না, এতে আপনার আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এ ছাড়া অনেক ভারী ব্যায়াম করলে গর্ভকালীন মাস অনুযায়ী আপনার যতটুকু ওজন থাকা প্রয়োজন, তার চেয়ে ওজন কমে যেতে পারে।[১২] এমন ক্ষেত্রে আপনার খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমে ক্যালরির পরিমাণ বাড়াতে হতে পারে।

গর্ভাবস্থার জন্য কিছু ঘরোয়া ব্যায়াম

গর্ভাবস্থায় নিরাপদে করা যায় এমন কিছু ঘরোয়া ব্যায়াম হলো—

  • পেটের পেশি শক্তিশালী করার ব্যায়াম
  • পিঠ ও কোমরের পেশি শক্তিশালী করার ব্যায়াম
  • ভারসাম্য ঠিক রাখার ব্যায়াম
  • কেগেল এক্সারসাইজ বা পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ
  • পেলভিক টিল্ট
  • পায়ের ব্যায়াম
  • হাতের ব্যায়াম

গর্ভাবস্থায় নিরাপদে ব্যায়াম করার কিছু পরামর্শ

গর্ভাবস্থায় নিরাপদ ও সহজে ব্যায়াম করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় বা পরামর্শ মেনে চলা উচিত।

যা করবেন

  • ব্যায়ামের আগে সবসময় ওয়ার্ম আপ করে গা গরম করে নিবেন এবং ব্যায়াম শেষে শরীরকে ঠান্ডা হওয়ার সময় দিবেন। এক্ষেত্রে ব্যায়ামের আগে ও পরে ৫ মিনিট ধরে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। সেই সাথে হাত, পা, ঘাড় ও কোমর নাড়াচাড়া বা স্ট্রেচিং করে নিতে পারেন।
  • গর্ভাবস্থায়, বিশেষ করে প্রথম ত্রৈমাসিকে ব্যায়াম করার সময়ে গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়া প্রতিরোধে যা করবেন[১৩]
    • খুব গরম, বদ্ধ, স্যাঁতস্যাঁতে কিংবা ঠিকমতো বাতাস চলাচল করে না এমন জায়গায় ব্যায়াম করা এড়িয়ে চলবেন। বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায় খুব ভারী ধরনের ব্যায়াম করবেন না। বাতাস চলাচল করে এমন সহনীয় তাপমাত্রার জায়গা বেছে নিন। সম্ভব হলে বাসার ভেতরে অথবা কোনো ঠান্ডা পরিবেশে ব্যায়াম করুন।
    • ব্যায়ামের সময়ে হাতের কাছে পানির বোতল রাখবেন। পানিশূন্যতা প্রতিরোধে ব্যায়ামের আগে-পরে ও ব্যায়াম করার ফাঁকে ফাঁকে পানি খেয়ে নিবেন।
    • ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক জামাকাপড় পরে ব্যায়াম করবেন।
  • ব্যায়ামের সময়ে ভালো সাপোর্ট দেয় এমন আরামদায়ক জুতা ও স্পোর্টস ব্রা পরবেন। গর্ভাবস্থার শেষের দিকে পেটে গর্ভাবস্থার জন্য তৈরি বিশেষ বেল্ট পরলে তা হাঁটা ও দৌড়ানোর সময়ে অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে। উল্লেখ্য, জামা-জুতা বেছে নেওয়ার সময়ে যেন কাপড়ের অংশ ও জুতার ফিতা ঠিকমতো বাঁধা থাকে এবং পড়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
  • কাঠের ফ্লোর অথবা কার্পেট বিছানো ফ্লোরে ব্যায়াম করবেন। এতে পা ফেলতে ও ভারসাম্য ধরে রাখতে সুবিধা হবে। প্রয়োজনে একটি ইয়োগা ম্যাট কিনে নিতে পারেন। ব্যায়াম করার সময়ে এমন জায়গা বেছে নিন যেন পা ফসকে কিংবা কোনো কিছু পায়ে লেগে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে। জিমে গিয়ে ব্যায়াম করলে কোথায় যন্ত্রপাতি আছে তা দেখে দেখে সাবধানে চলাফেরা করুন।

যা করবেন না

  • লাফঝাঁপ অথবা হঠাৎ করে দেহভঙ্গি পাল্টাতে হয় এমন ব্যায়াম করবেন না। এগুলো আপনার জয়েন্টে চাপ ফেলে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
  • দুই পা একত্রে উঠাতে অথবা নামাতে হয় এমন ব্যায়াম, ‘সিট আপ’ বা হাঁটু ভেঙে মাটিতে পুরোপুরি বসে আবার দাঁড়িয়ে যাওয়ার ব্যায়াম ও হাঁটু বেশি ভাঁজ করার ব্যায়াম করবেন না। এ ছাড়া বসে পা সোজা রেখে হাতের আঙুল দিয়ে পায়ের আঙুল স্পর্শ করার ব্যায়াম থেকেও বিরত থাকবেন।
  • ফ্লোরে শুয়ে থাকা কিংবা বসা অবস্থা থেকে হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে যাবেন না। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াবেন, নাহলে দাঁড়ানোর পরে মাথা ঘুরাতে পারে। দাঁড়িয়ে যাওয়ার পরে কিছুক্ষণ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে হাঁটুন।
  • ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে ভারোত্তোলনের মতো ব্যায়াম করবেন না। আপনার শারীরিক অবস্থা এবং আপনি কোন তীব্রতার ব্যায়াম করে অভ্যস্ত—এমন কিছু বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ডাক্তার আপনার জন্য ভারোত্তোলনের মাত্রা নির্ধারণ করে দিতে পারবেন।

গর্ভাবস্থায় কোন ব্যায়াম করা যাবে না?

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা উচিত। সেটি হলো, স্বাভাবিক সহ্যক্ষমতার বাইরে ব্যায়াম করা উচিত নয়। আপনার যদি আগে থেকে শরীরচর্চা করার অভ্যাস না থাকে, তাহলে হঠাৎ করে তীব্র শারীরিক কসরত শুরু না করে অল্প অল্প করে ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ব্যায়াম করার সময়ে যদি আপনার স্বাভাবিকভাবে একটি পূর্ণ বাক্য বলে শেষ করতে কষ্ট হয়, তার অর্থ আপনি হয়তো আপনার সহ্যক্ষমতার অতিরিক্ত কসরত করছেন।

গর্ভাবস্থায় অধিকাংশ ব্যায়াম নিরাপদে করা সম্ভব হলেও কিছু ব্যায়াম আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এই ধরনের ব্যায়াম এড়িয়ে চলা উচিত। যেমন—

  • যেসব খেলায় প্রতিপক্ষের সাথে হাতাহাতি হয়ে শরীরে, বিশেষ করে পেটে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।[১৪] যেমন: ফুটবল, বাস্কেটবল, হকি, জুডো, কুস্তি, বক্সিং, তাইকোয়ান্দো ও কারাতে।
  • আগে থেকে অভ্যাস না থাকলে গর্ভাবস্থায় লাফাতে হয় অথবা পুরো শরীর ঝাঁকুনি খায় এমন কোনো ব্যায়াম বা খেলা এড়িয়ে চলা উচিত। যেমন: র‍্যাকেট, ব্যাডমিন্টন ও টেনিস।[১৫] এতে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়ে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে আগে থেকে এসব খেলার অভ্যাস থাকলে শরীরের বদলে যাওয়ার ভারসাম্যের বিষয়টি মাথায় রেখে সাবধানে খেলা উচিত।
  • যেসব ব্যায়াম বা শরীরচর্চায় পড়ে গিয়ে পেটে ব্যথা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।[১৬] এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো মাটি থেকে অনেক উঁচুতে হয় কিংবা উঁচু স্থান থেকে লাফ দিতে হয় এমন কোনো শরীরচর্চা। যেমন: জিমন্যাস্টিকস, ডাইভিং, বাঞ্জি জাম্পিং, ঘোড়ায় চড়া ও পাকা রাস্তা ছাড়া অন্য কোথাও সাইকেল চালানো।
  • যেসব ব্যায়ামে অনেকক্ষণ চিত হয়ে শোয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে গর্ভধারণের ১৬তম সপ্তাহের পরে পেটের আকার যখন বড় হতে থাকে, তখন বাড়ন্ত পেট নিয়ে চিত হয়ে বেশিক্ষণ শুয়ে থাকলে তা শরীরের রক্তনালীগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করে রক্ত চলাচলে বাধা তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া একটানা অনেকক্ষণ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এমন কাজও এসময়ে এড়িয়ে চলা উচিত।
  • যেসব ব্যায়াম বা খেলাধুলায় শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি বেড়ে যায় সেগুলো গর্ভাবস্থার জন্য নিরাপদ নয়। যেমন: ‘হট ইয়োগা’। এমনকি খুব গরম, বদ্ধ কিংবা ঠিকমতো বাতাস চলাচল করে না এমন জায়গায় ব্যায়াম করা এড়িয়ে চলা উচিত।

এর কারণ হলো, পারিপার্শ্বিক অথবা আপনার শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গেলে তা গর্ভের শিশুর ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে প্রথম ত্রৈমাসিকে যখন শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর প্রাথমিক কাঠামো তৈরি হয় তখন উচ্চ তাপমাত্রা গর্ভের শিশুর জন্মগত ত্রুটির কারণ হতে পারে।[১৭][১৮]

  • সমুদ্র বা পানির নিচে ঝাঁপ দিতে হয় এমন শরীরচর্চা (যেমন: স্কুবা ডাইভিং) গর্ভাবস্থায় নিরাপদ নয়।[১৯] কারণ এতে গর্ভের শিশু ‘ডিকমপ্রেশন সিকনেস’ নামক জটিলতার ঝুঁকিতে থাকে। এক্ষেত্রে শিশুর মস্তিষ্কে পর্যন্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে।[২০] তা ছাড়া গর্ভের শিশু শারীরিক ত্রুটি ও রক্তে গ্যাস ঢুকে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকতে পারে।[২১]

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা

একজন সুস্থ, স্বাভাবিক গর্ভবতীর ব্যায়াম করতে সাধারণত কোনো বাধা নেই। তবে আপনি যদি নির্দিষ্ট কিছু রোগ কিংবা গর্ভকালীন জটিলতার ঝুঁকিতে থাকেন, তাহলে সব ধরনের ব্যায়াম আপনার জন্য নিরাপদ না-ও হতে পারে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার আপনাকে দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো ও সাঁতারের মতো ব্যায়াম করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকার পরামর্শ দিতে পারেন। এমন কিছু জটিলতা হলো[২২]

  • হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কিছু রোগ
  • গুরুতর রক্তশূন্যতা
  • জরায়ুমুখে কোনো দুর্বলতা কিংবা অস্বাভাবিকতা। যেমন: জরায়ুর ওজন ঠিকমতো ধরে রাখতে না পারা অথবা প্রসবের সময়ের আগে জরায়ুমুখ খুলে যাওয়ার প্রবণতা
  • গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ অথবা প্রি-এক্লাম্পসিয়া
  • যোনিপথে রক্তপাত
  • গর্ভাবস্থার ২৬তম সপ্তাহের পরে ‘প্লাসেন্টা প্রিভিয়া’ নামক গর্ভফুল সংক্রান্ত জটিলতা হওয়া। এক্ষেত্রে প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে নিচে নেমে জরায়ুমুখের কাছাকাছি চলে আসে—যা মা ও গর্ভের শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
  • সময়ের আগে প্রসব হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকা। যেমন: গর্ভে যমজ শিশু ধারণ করা
  • অকাল প্রসব, অর্থাৎ প্রসবের নির্ধারিত সময়ের আগেই পানি ভেঙে যাওয়া

আপনি এই ধরনের কোনো জটিলতায় ভুগলে ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।[২৩] এ ছাড়া আপনি বিশেষ কোনো জটিলতার ঝুঁকিতে আছেন কি না জানতে নিয়মিত গর্ভকালীন চেকআপ করানো জরুরি।

গুরুত্বপূর্ণ

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার সময়ে নিচের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে ব্যায়াম করা বন্ধ করে দ্রুত গাইনী ডাক্তারের পরামর্শ নিন[২৪]

  • মাথা ঘুরানো অথবা অজ্ঞান হয়ে যাবেন এমন মনে হওয়া
  • যোনিপথ দিয়ে রক্তপাত অথবা পানির মতো তরল বের হওয়া
  • বুকে ব্যথা অথবা ব্যায়াম করার আগে থেকে শ্বাসকষ্ট হওয়া
  • কাফ মাসেলে, অর্থাৎ হাঁটুর নিচে ও পায়ের পেছনের দিকে থাকা পেশিতে ব্যথা হওয়া অথবা ফুলে যাওয়া
  • মাথা ব্যথা হওয়া
  • গর্ভের শিশুর নড়াচড়া কমে যাওয়া[২৫]
  • নিয়মিত বিরতিতে পেটে প্রসববেদনার মতো ব্যথা হওয়া বা কামড়ানো

গর্ভাবস্থায় ঘরে বসে ব্যায়াম করার উপায়

এখানে এমন কিছু ঘরোয়া ব্যায়াম তুলে ধরা হয়েছে যা আপনার পেশিগুলোকে শক্তিশালী করে গর্ভাবস্থার অতিরিক্ত ওজন বহনে সহায়তা করে। সেই সাথে রক্ত চলাচল উন্নত করে, জয়েন্টের শক্তি বাড়ায়, ব্যথা কমায় ও সব মিলিয়ে সুস্থ বোধ করতে সাহায্য করে।

পেটের পেশির ব্যায়াম

গর্ভের শিশু আকারে বাড়ার সাথে সাথে আপনার পেটও সামনের দিকে বাড়তে থাকে। সেই সাথে কোমরের জায়গাটুকু আরও বাঁকিয়ে যেতে পারে। ফলে কোমর ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা কমানোর জন্য এই ব্যায়ামটি করা যেতে পারে।

পেটের পেশির ব্যায়াম
ছবি: পেটের পেশি শক্তিশালী করার ব্যায়াম
  1. প্রথমে ছবির মতো ‘বক্স পজিশন’-এ যান, অর্থাৎ চার হাত-পা এমনভাবে মাটিতে রাখুন যেন—
    • হাঁটু কোমর বরাবর থাকে
    • হাতের তালু কাঁধ বরাবর থাকে
    • আঙুলগুলো সামনের দিকে থাকে
    • পেটের পেশি টানটান অবস্থায় থাকে
    • পিঠ সোজা ও মেঝের সমান্তরালে থাকে
  2. এবার পেটের পেশিকে যথাসম্ভব টানটান করে পিঠের দিকে নিয়ে আসুন। এরপর শরীরের উপরিভাগ খানিকটা বাঁকিয়ে পিঠ ওপরের দিকে তোলার চেষ্টা করুন। আপনার ঘাড় ও মাথা রিল্যাক্স করুন, এতে মাথা আলতোভাবে কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। তবে খেয়াল রাখবেন যেন হাতের কনুই একদম সোজা হয়ে টানটান হয়ে না যায়।
  3. পেটের পেশি টানটান রেখে এই অবস্থানটি কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন। তারপর ধীরে ধীরে পিঠ নিচে নামিয়ে পূর্বের মতো বক্স অবস্থানে ফিরে আসুন। এসময়ে খেয়াল রাখুন যেন পেটের ওজনে পিঠ বেশি বাঁকা না হয়ে যায়। ব্যায়াম শেষে পিঠ সবসময় সোজা অবস্থানে আনতে হবে।
  4. এভাবে ১০ বার আস্তে আস্তে পিঠ সাবধানে ওপরে তুলুন আর সোজা করুন। প্রতিবারই পেটের পেশি টানটান করে রাখার চেষ্টা করুন।

উল্লেখ্য, পিঠে ব্যথা থাকলে সাবধানে পিঠ ওঠানোর চেষ্টা করবেন। যতদূর পর্যন্ত ওঠাতে কষ্ট না হয় ততটুকুই ওপরে তুলবেন।

পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ

দুই পায়ের মাঝখানে একটা পেশিবহুল পর্দার মতো অংশ থাকে। একে পেলভিক ফ্লোর বলা হয়। এটি জরায়ু, মূত্রথলি ও নাড়িভুঁড়িকে সঠিক স্থানে ধরে রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় বাড়ন্ত জরায়ুকে সাপোর্ট দেয়।

প্রসবের সময়ও এই পেশিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো কারণে পেলভিক ফ্লোরের পেশি দুর্বল হয়ে গেলে হাঁচি, কাশি অথবা চাপ দিয়ে মলত্যাগ করার সময় কয়েক ফোঁটা প্রস্রাব বেরিয়ে আসার সমস্যাসহ নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় অথবা প্রসবের পরে অনেকেরই এই সমস্যা দেখা দেয়৷ নিয়মিত পেলভিক ফ্লোরের ব্যায়াম করলে এই ধরনের সমস্যা এড়ানো সম্ভব।

পেলভিক ফ্লোরের ব্যায়াম অনেকের কাছে ‘কেগেল ব্যায়াম’ নামেও পরিচিত। এই ব্যায়ামটি দাঁড়িয়ে, বসে অথবা শুয়ে যেকোনো ভাবেই করা যায়—

পেলভিক ফ্লোর
  1. প্রথমে পায়খানার রাস্তা চাপ দিয়ে এমনভাবে বন্ধ করে রাখুন যেন পায়খানা আটকানোর চেষ্টা করছেন। একই সাথে যোনিপথকে চাপ দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন। প্রস্রাবের রাস্তাতেও এমনভাবে চাপ দিন যেন প্রস্রাব আটকানোর চেষ্টা করছেন।

মোট কথা, প্রস্রাব-পায়খানার বেগ আটকানোর জন্য যেভাবে আমরা দুই পায়ের মাঝখানের পেশিগুলোকে শক্ত করে রাখি সেভাবে পেশিগুলো শক্ত করুন।

  1. প্রথম কয়েকবার করার সময়ে ব্যায়ামটি দ্রুত করুন। ওপরের পদ্ধতিতে দ্রুত চাপ প্রয়োগ করুন এবং ছেড়ে দিন।
  2. এবার ব্যায়ামটা ধীরে ধীরে করার চেষ্টা করুন। যতক্ষণ সম্ভব হয় পেশিগুলো চাপ দিয়ে ধরে রাখুন। এভাবে চাপ ধরে রেখে মনে মনে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুনবেন।
  3. এরপর ধীরে ধীরে পেশিগুলো রিল্যাক্স করে চাপ ছেড়ে দিন।
  4. এরকম ভাবে ৮–১০ বার চাপ দেওয়া এবং ছেড়ে দেওয়াকে এক সেট ব্যায়াম ধরা হয়।

হিসাবের সুবিধার জন্য প্রতিবেলার খাবারের পরে ব্যায়ামটি করতে পারেন। সেই সাথে হাঁচি অথবা জোরে কাশি দেওয়ার সময়ও পেশিগুলো শক্ত করে রাখার প্র‍্যাকটিস করতে পারেন। তবে প্রস্রাব অথবা পায়খানা করার সময় এই ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন। ব্যায়াম করতে কোনো অসুবিধা হলে অথবা নির্দেশনা ঠিকমতো বুঝতে না পারলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

পেলভিক টিল্ট

  1. প্রথমে আলতোভাবে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ান। এসময়ে যেন কাঁধ আর শরীরের নিচের অংশ বা নিতম্ব দেয়ালের সাথে লেগে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  2. হাঁটু রিল্যাক্স করে রাখুন।
  3. এবার আপনার পেটকে নিজে নিজে এমনভাবে ভেতরের দিকে ঢুকানোর চেষ্টা করুন যাতে পিঠ পেছনে দেয়ালের সাথে লেগে যায়। এভাবে ৪ সেকেন্ড ধরে রেখে পেট আবার স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসুন।
  4. এভাবে মোট ১০ বার পর্যন্ত করুন।

পিঠ ও কোমরের পেশির ব্যায়াম

এই ব্যায়ামটি পিঠ, কোমর ও পেটের পেশিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। এজন্য—

  1. প্রথমে মাটিতে বা শক্ত বিছানার ওপরে হাঁটু ভাঁজ করে বসুন।
  2. ধীরে ধীরে শরীরের ওপরের অংশ ডানদিকে ঘুরানোর চেষ্টা করুন। এরপর ডান হাত পেছনে নিয়ে তা দিয়ে বাম পায়ের গোড়ালি স্পর্শ করুন। এসময়ে ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য বামহাত ওপরের দিকে তুলে রাখতে পারেন।
  3. কিছুক্ষণ এই অবস্থানে থাকার পর ধীরে ধীরে শুরুর অবস্থানে ফিরে আসুন। এরপর একই নিয়মে বাম দিকে শরীর ঘুরিয়ে বাম হাত দিয়ে ডান পায়ের গোড়ালি স্পর্শ করার চেষ্টা করুন।
  4. এভাবে উভয় পাশে ৪-৬ বার ব্যায়াম করুন। প্রতিবার ব্যায়াম করার সময়ে দিক পরিবর্তন করে নিন।

ভারসাম্য ঠিক রাখার ব্যায়াম

গর্ভাবস্থায়, বিশেষ করে শেষ ত্রৈমাসিকে পেটের আকার সামনের দিকে অনেকটা বেড়ে যায়। একারণে শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এই সমস্যা মোকাবেলায় নিচের ব্যায়ামটি সাহায্য করতে পারে—

  1. প্রথমে যতটা সম্ভব সোজা হয়ে দাঁড়ান। এরপর দাঁড়ানো অবস্থায় দুই হাত পেছনে নিয়ে কোমরের ওপর রাখুন।
  2. এবার দুই হাতের ওপর ভার দিয়ে ধীরে ধীরে শরীর পেছনের দিকে কিছুটা বাঁকানোর চেষ্টা করুন। তবে ঘাড় পুরোপুরি বাঁকিয়ে ফেলার দরকার নেই।
  3. এই অবস্থানটি ২০ সেকেন্ডের মতো ধরে রাখুন।
  4. এভাবে মোট ৫-৬ বার ব্যায়ামটি করুন। ব্যায়ামটি করার সময়ে সাপোর্টের জন্য পাশে একটি চেয়ার রাখতে পারেন।

পায়ের ব্যায়াম

  1. পিঠ সোজা রেখে একটি চেয়ারে বসুন। পিঠ টানটান রাখার দরকার নেই, কিন্তু হেলান দেওয়াও যাবে না। এসময়ে আপনার দুই পা কিছুটা ফাঁকা রেখে পায়ের পাতা মাটিতে রাখুন।
  2. এবার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে পেট ভেতরের দিকে ঢুকানোর চেষ্টা করুন। পেট ছাড়া শরীরের বাকি অংশ রিল্যাক্সড রাখার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে দুই বাহু আর কোমরের একেবারে নিচের হাড়ের ওপর যেন চাপ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  3. পেট চেপে রাখা অবস্থায় বাম পা আস্তে আস্তে ওপরে তোলার চেষ্টা করুন। ওপরে তোলার সময় পা সোজা রাখতে হবে, হাঁটু ভাঁজ করা যাবে না। একই সময়ে ডান হাতও শপথ নেয়ার ভঙ্গিতে সামনের দিকে সোজা করে মেলে ধরুন। এই অবস্থানটি কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন।
  4. কয়েক সেকেন্ড পরে হাত-পা নামিয়ে আবার শুরুর অবস্থানে ফিরে আসুন। এবার ডান পা ও বাম হাত দিয়ে ব্যায়ামটি আবার করুন।
  5. এভাবে ডান ও বাম প্রতিপাশে ৪–৬ বার করে মোট ৮–১২ বার ব্যায়ামটি করুন। প্রতিবার পাশ পরিবর্তন করে নিন। অর্থাৎ প্রথমে ডানপাশে করলে এরপর বামপাশে এবং তারপর আবার ডানপাশে ব্যায়ামটি করুন।

হাতের ব্যায়াম

ব্যায়াম ১: এই ব্যায়ামটি মূলত দুই হাত ও বুকের পেশিকে মজবুত করতে সহায়তা করে। এই ব্যায়ামটি করার জন্য একটি রাবারের তৈরি লম্বা ব্যান্ড প্রয়োজন হবে, যা সাধারণত ফার্মেসিতে ‘রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড’ নামে পাওয়া যায়।

এই ব্যায়ামটি যেভাবে করবেন—

  1. প্রথমে পিঠ সোজা রেখে একটি চেয়ারে বসুন। পা স্বাভাবিকভাবে মাটিতে রাখুন। 
  2. এবার রাবারের তৈরি ব্যান্ডটি হাতে নিন। ব্যান্ডটি মাথার পেছনে নিয়ে যান। বাম হাতের সাহায্যে ব্যান্ডটির এক প্রান্ত কোমর বরাবর শক্ত করে ধরে রাখুন৷ ডান হাত দিয়ে আরেক প্রান্ত ধরুন।
  3. এবার প্রথমে ডান হাত দিয়ে ব্যান্ডটি টেনে লম্বা করে মাথার ওপরে নিয়ে যান। এরপর কনুই ভাঁজ করে ব্যান্ডটিকে ছোটো করে আনুন। অনেকটা স্প্রিং এর মতো ব্যান্ডটিকে এভাবে ছোটো-বড়ো করতে থাকুন। খেয়াল রাখবেন ব্যান্ডটি ছোটো-বড়ো করার সময়ে কোমরের কাছে শক্ত করে ধরে রাখা প্রান্তটি যেন স্থির থাকে। 
  4. এভাবে ৪–৬ বার ডান হাত দিয়ে ব্যান্ডটিকে ছোটো-বড়ো করুন।
  5. তারপর হাত বদল করে একেবারে প্রথম অবস্থানে ফিরে যান। এবার ডান হাত দিয়ে কোমরের প্রান্তটি ধরে রাখুন৷ আর বাম হাত দিয়ে ব্যায়ামটি করুন। এভাবে ক্রমান্বয়ে দুই হাতের ব্যায়াম করে নিন।

ব্যায়াম ২: এই ব্যায়ামটি আপনার শরীরের দুই পাশের আঁটসাঁট ভাব কমাতে ও শরীরকে রিল্যাক্স রাখতে সহায়তা করবে।

ব্যায়ামটি যেভাবে করবেন—

  1. প্রথমে পিঠ স্বাভাবিক অবস্থানে রেখে চেয়ারে বসুন। পেটের পেশিগুলোকে টানটান করুন। পা সোজাভাবে মাটিতে রাখুন। দুই পায়ের মাঝে ফাঁকা জায়গা রাখুন।
  2. আপনার বাম হাত আপনার ডান হাঁটুর ওপর রাখুন। এবার ডান হাত উঁচু করে মাথার ওপর তুলুন। এরপর হাত ঐ অবস্থানে ধরে রেখে শরীর বামদিকে বাঁকানোর চেষ্টা করুন। যতদূর বাঁকালে শরীরের ডানপাশের পেশিগুলোতে হালকা টান বা স্ট্রেচ অনুভব করছেন ততদূর পর্যন্ত বাঁকান৷
  3. এই অবস্থানটি কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন। স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। কাঁধ আলাদা করে কম কিংবা বেশি বাঁকানোর দরকার নেই। শরীর বাঁকাতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে কাঁধ যেভাবে বাঁকে সেই অবস্থানই ধরে রাখুন।
  4. কয়েক সেকেন্ড পর সোজা হয়ে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসুন। এরপর পাশ পরিবর্তন করে আবার ব্যায়ামটি করুন। এবার ডান হাত বাম হাঁটুতে রাখুন এবং বাম হাত ওপরে তুলে ডান দিকে শরীর বাঁকানোর চেষ্টা করুন।
  5. এভাবে প্রতি পাশে ৪–৬ বার করে ব্যায়ামটি করুন। প্রতিবার পাশ পরিবর্তন করে নিন, অর্থাৎ একবার ডান পাশে করলে পরের বার বাম পাশে—এভাবে মোট ৮–১২ বার ব্যায়াম করুন।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কী হয়?

গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া উচিত। কিন্তু তাই বলে সবসময় শুয়ে-বসে থাকা মোটেও উচিত নয়।
লম্বা সময় ধরে শুয়ে থাকা কিংবা সীমিত চলাফেরা করার কারণে রক্ত চলাচলে সমস্যা হয়ে রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস এমন একটি মারাত্মক জটিলতা, যা থেকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া হাড় ক্ষয়, শক্তি ও মানসিক ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো জটিলতাও দেখা দিতে পারে।[২৬] তাই গর্ভাবস্থায় সবসময় শুয়ে-বসে না থেকে অন্তত নিয়ম মাফিক হাঁটাচলা করে কিংবা পছন্দের যেকোনো ব্যায়াম করে শরীর সচল রাখা উচিত।
উল্লেখ্য, একটি গবেষণায় গর্ভাবস্থার শেষ ত্রৈমাসিকে নিয়মিত একটানা ৯ ঘন্টার বেশি ঘুমানোর সাথে মৃতপ্রসবের সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে।[২৭] তবে এই ব্যাপারে আরও গবেষণা করার প্রয়োজন রয়েছে। তাই আপনি যদি রাতে নিয়মিত একটানা ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমান, তাহলে সতর্কতাবশত একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 
উল্লেখ্য, ডাক্তার যদি বিশেষ কোনো কারণে আপনাকে বেড রেস্ট বা সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলেন, তাহলে সেই পরামর্শ অনুযায়ীই চলার চেষ্টা করবেন।

নরমাল ডেলিভারির জন্য ব্যায়ামের প্রভাব?

গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করলে তা সিজারিয়ান সেকশন বা অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা হওয়ার ঝুঁকি কমায় এবং নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়ায়।[২৮] সেই সাথে নরমাল ডেলিভারিকে সহজ ও ঝামেলামুক্ত করে ‘অপারেটিভ ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি’ এড়াতেও সাহায্য করে।[২৯]

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা যাবে কি?

সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। গর্ভাবস্থার বাকি সময়ের মতো এই সময়েও আপনি নিরাপদে ব্যায়াম করতে পারবেন।
তবে গর্ভাবস্থার যেকোনো সময়েই ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আপনার শরীরের ওপর বেশি চাপ ফেলে এমন কোনো ব্যায়াম করা উচিত না। ব্যায়াম করার সময়ে ও আগে-পরে নিরাপদে ব্যায়াম করার পরামর্শ মেনে চলা উচিত। তা ছাড়া কোনো বিশেষ রোগ কিংবা জটিলতা অথবা এসবের ঝুঁকিতে থাকলে কোন ধরনের ব্যায়াম করা যাবে সেই বিষয়ে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় সিঁড়ি দিয়ে কি উঠানামা করা যাবে?

গর্ভাবস্থায় সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে সাধারণত কোনো ধরনের বাধা নেই। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা আপনার শরীরের জন্য একটি ভালো ব্যায়াম হতে পারে। তবে আপনার সহ্যক্ষমতার চেয়ে বেশি ওঠানামা করা থেকে বিরত থাকবেন। তা ছাড়া গর্ভাবস্থায় শরীরের ভারসাম্যে কিছুটা পরিবর্তন আসে। তাই পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়া প্রতিরোধে সাবধানে ওঠানামা করবেন।
এ ছাড়া কোনো রোগ অথবা জটিলতার কারণে যদি ডাক্তার আপনাকে সিঁড়ি দিয়ে চলাচল করতে মানা করে থাকেন, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলবেন।

(২৯)

  1. “Physical Activity and Exercise During Pregnancy and the Postpartum Period.” Obstetrics & Gynecology, vol. 135, no. 4, Apr. 2020, pp. 991–93, https://doi.org/10.1097/aog.0000000000003773.
  2. American College of Obstetricians and Gynecologists. Your Pregnancy and Childbirth: Month to Month. American College of Obstetricians and Gynecologists Women’s Health Care Physicians, 2021, p. 375.
  3. “ACOG Committee Opinion No. 804: Physical Activity and Exercise During Pregnancy and the Postpartum Period.” ACOG, Apr. 2020, https://www.acog.org/clinical/clinical-guidance/committee-opinion/articles/2020/04/physical-activity-and-exercise-during-pregnancy-and-the-postpartum-period. Accessed 27 Nov. 2022.
  4. Dempsey, J. C. “Prospective Study of Gestational Diabetes Mellitus Risk in Relation to Maternal Recreational Physical Activity before and during Pregnancy.” American Journal of Epidemiology, vol. 159, no. 7, Apr. 2004, pp. 663–70.
  5. “ACOG Committee Opinion No. 804: Physical Activity and Exercise During Pregnancy and the Postpartum Period.” ACOG, Apr. 2020, https://www.acog.org/clinical/clinical-guidance/committee-opinion/articles/2020/04/physical-activity-and-exercise-during-pregnancy-and-the-postpartum-period. Accessed 27 Nov. 2022.
  6. “ACOG Committee Opinion No. 804: Physical Activity and Exercise During Pregnancy and the Postpartum Period.” ACOG, Apr. 2020, https://www.acog.org/clinical/clinical-guidance/committee-opinion/articles/2020/04/physical-activity-and-exercise-during-pregnancy-and-the-postpartum-period. Accessed 27 Nov. 2022.
  7. Berghella, Vincenzo, and Gabriele Saccone. “Exercise in Pregnancy!” American Journal of Obstetrics and Gynecology, vol. 216, no. 4, Apr. 2017, pp. 335–37.
  8. Price, Bradley B., et al. “Exercise in Pregnancy.” Medicine & Science in Sports & Exercise, vol. 44, no. 12, Dec. 2012, pp. 2263–69.
  9. American College of Obstetricians and Gynecologists. Your Pregnancy and Childbirth: Month to Month. American College of Obstetricians and Gynecologists Women’s Health Care Physicians, 2021, p. 375.
  10. American College of Obstetricians and Gynecologists. Your Pregnancy and Childbirth: Month to Month. American College of Obstetricians and Gynecologists Women’s Health Care Physicians, 2021, p. 376.
  11. American College of Obstetricians and Gynecologists. Your Pregnancy and Childbirth: Month to Month. American College of Obstetricians and Gynecologists Women’s Health Care Physicians, 2021, p. 376.
  12. American College of Obstetricians and Gynecologists. Your Pregnancy and Childbirth: Month to Month. American College of Obstetricians and Gynecologists Women’s Health Care Physicians, 2021, p. 376.
  13. American College of Sports Medicine. ACSM’s Guidelines for Exercise Testing and Prescription. LWW, 2017.
  14. American College of Obstetricians and Gynecologists. Your Pregnancy and Childbirth: Month to Month. American College of Obstetricians and Gynecologists Women’s Health Care Physicians, 2021, p. 378.
  15. American College of Obstetricians and Gynecologists. Your Pregnancy and Childbirth: Month to Month. American College of Obstetricians and Gynecologists Women’s Health Care Physicians, 2021, p. 379.
  16. American College of Obstetricians and Gynecologists. Your Pregnancy and Childbirth: Month to Month. American College of Obstetricians and Gynecologists Women’s Health Care Physicians, 2021, p. 378.
  17. Milunsky, A., et al. “Maternal Heat Exposure and Neural Tube Defects.” JAMA, vol. 268, no. 7, Aug. 1992.
  18. Graham, John M., et al. “Teratogen Update: Gestational Effects of Maternal Hyperthermia Due to Febrile Illnesses and Resultant Patterns of Defects in Humans.” Teratology, vol. 58, no. 5, Nov. 1998, pp. 209–21.
  19. Camporesi, Enrico M. “Diving and Pregnancy.” Seminars in Perinatology, vol. 20, no. 4, Aug. 1996, pp. 292–302.
  20. Cooper, Jeffrey S., and Kenneth C. Hanson. “Decompression Sickness.” NCBI Bookshelf, 10 Aug. 2022, https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK537264/. Accessed 27 Nov. 2022.
  21. Camporesi, Enrico M. “Diving and Pregnancy.” Seminars in Perinatology, vol. 20, no. 4, Aug. 1996, pp. 292–302.
  22. American College of Obstetricians and Gynecologists. Your Pregnancy and Childbirth: Month to Month. American College of Obstetricians and Gynecologists Women’s Health Care Physicians, 2021, p. 376.
  23. “ACOG Committee Opinion No. 804: Physical Activity and Exercise During Pregnancy and the Postpartum Period.” ACOG, Apr. 2020, https://www.acog.org/clinical/clinical-guidance/committee-opinion/articles/2020/04/physical-activity-and-exercise-during-pregnancy-and-the-postpartum-period. Accessed 27 Nov. 2022.
  24. American College of Obstetricians and Gynecologists. Your Pregnancy and Childbirth: Month to Month. American College of Obstetricians and Gynecologists Women’s Health Care Physicians, 2021, p. 377.
  25. Artal, R. “Guidelines of the American College of Obstetricians and Gynecologists for Exercise during Pregnancy and the Postpartum Period.” British Journal of Sports Medicine, vol. 37, no. 1, Feb. 2003, pp. 6–12.
  26. “ACOG Committee Opinion No. 804: Physical Activity and Exercise During Pregnancy and the Postpartum Period.” ACOG, Apr. 2020, https://www.acog.org/clinical/clinical-guidance/committee-opinion/articles/2020/04/physical-activity-and-exercise-during-pregnancy-and-the-postpartum-period. Accessed 27 Nov. 2022.
  27. O’Brien, Louise M., et al. “Maternal Sleep Practices and Stillbirth: Findings from an International Case‐control Study.” Birth, vol. 46, no. 2, Jan. 2019, pp. 344–54.
  28. “ACOG Committee Opinion No. 804: Physical Activity and Exercise During Pregnancy and the Postpartum Period.” ACOG, Apr. 2020, https://www.acog.org/clinical/clinical-guidance/committee-opinion/articles/2020/04/physical-activity-and-exercise-during-pregnancy-and-the-postpartum-period. Accessed 27 Nov. 2022.
  29. “ACOG Committee Opinion No. 804: Physical Activity and Exercise During Pregnancy and the Postpartum Period.” ACOG, Apr. 2020, https://www.acog.org/clinical/clinical-guidance/committee-opinion/articles/2020/04/physical-activity-and-exercise-during-pregnancy-and-the-postpartum-period. Accessed 27 Nov. 2022.