গর্ভধারণের ৩১তম সপ্তাহ

এ সপ্তাহের হাইলাইটস

ডেলিভারির সম্ভাব্য স্থান নিয়ে দুইজন মিলে আলোচনা করুন

আপনাদের সন্তানের জন্ম হতে আরও কয়েক মাস বাকি আছে। তবুও এখন থেকে অল্প অল্প করে ডেলিভারির প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। কোন হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকে সন্তান প্রসব হলে আপনাদের দুইজনের জন্য সুবিধা হয়, সেটি এখন থেকেই আলোচনা করে ঠিক করে রাখুন।

এসময়ে সাধারণত সহবাস নিরাপদ

আপনার যদি গর্ভকালীন কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকে এবং ডাক্তার যদি সহবাস নিয়ে কোনো বিধিনিষেধ না দিয়ে থাকেন, তাহলে এসময়ে আপনি নিরাপদে সহবাস করতে পারবেন।[১] এতে গর্ভের শিশুর কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাড়ন্ত পেটের কারণে সহবাসে অস্বস্তি হলে সঙ্গীর সাথে বোঝাপড়া করে মানানসই অবস্থান বেছে নিন।

এক পাশে কাত হয়ে ঘুমান 

এ সপ্তাহেও ঘুমানোর সময়ে আপনার সুবিধামতো ডান অথবা বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমাবেন। কারণ চিৎ হয়ে ঘুমালে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।[২][৩] ঘুমের সময়ে সাপোর্ট দেয় এমন আরামদায়ক কয়েকটা বালিশ নিয়ে ঘুমাতে পারেন।

আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান

বিগত সপ্তাহগুলোর মতো এ সপ্তাহেও নিয়মিত আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যাবেন। এগুলো গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[৪][৫] পাশাপাশি আপনাকে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।[৬]

৩১ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি

Week-31
দেশি বাঙ্গি
আপনার বাচ্চা এখন প্রায়
একটি একটি দেশি বাঙ্গি
এর সমান
দৈর্ঘ্য
৪১.১ সেমি
ওজন
১.৫ কেজি

আপনার গর্ভের শিশু এখন মাথা থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত প্রায় ৪১.১ সেন্টিমিটার লম্বা। সে প্রায় একটি দেশি বাঙ্গির সমান লম্বা হয়ে গিয়েছে। তার ওজন এখন প্রায় ১.৫ কেজি।

শিশুর ওজন বাড়ছে

গর্ভের শিশুর শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এখন অনেকখানি তৈরি হয়ে গেছে। সামনের সপ্তাহগুলোতে দ্রুত ওজন বাড়বে।[৭] শেষ আড়াই মাসে ওজন দ্বিগুণ বা তার বেশি হয়ে যাবে।

ত্বক মসৃণ হচ্ছে

ছোট্ট শিশুর ত্বক এখনো কিছুটা কুঁচকানো।[৮] তবে সময়ের সাথে সাথে ত্বকের নীচের ফ্যাট বা চর্বির স্তর জমে ত্বক মসৃণ হতে থাকবে।[৯]

অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের পরিমাণ বাড়ছে

ছোট্ট শিশুটি গর্ভের ভেতরে ‘অ্যামনিওটিক ফ্লুইড’ নামের পানির মতো এক ধরনের তরল পদার্থের মধ্যে আছে। দিন দিন সেই অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের পরিমাণ বাড়ছে।[১০] কারণ আপনার শিশু এখন নিয়মিত প্রস্রাব করে এবং তার এই প্রস্রাব অ্যামনিওটিক ফ্লুইডে গিয়ে জমা হয়।[১১] তবে এই প্রস্রাবের প্রায় পুরোটাই পানি, কারণ মায়ের গর্ভফুল বর্জ্য পদার্থ সরিয়ে নেয়।[১২]

৩১ সপ্তাহে মায়ের শরীর

গর্ভধারণের ৩১তম সপ্তাহ

গর্ভাবস্থায় সহবাস

গর্ভাবস্থায় যদি ডাক্তার আপনাকে সহবাস থেকে বিরত থাকার পরামর্শ না দিয়ে থাকেন, তাহলে গর্ভাবস্থায় সহবাস করা আপনার জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। এতে গর্ভের সন্তানের কোনো ধরনের আঘাত পাওয়ার কিংবা অকাল প্রসবের সম্ভাবনা নেই।[১৩]

বাড়ন্ত পেটের কারণে সহবাস করাটা একটু কঠিন হতে পারে। তাই সঙ্গীর সাথে আলোচনা করে আপনাদের জন্য আরামদায়ক ও মানানসই অবস্থান বেছে নিন।

গর্ভাবস্থায় কীভাবে সহবাস করা নিরাপদ জানতে আমাদের এই লেখাটা পড়তে পারেন।

ব্র্যাক্সটন-হিক্স কনট্র্যাকশন

আপনার পেট কি ২০–৩০ সেকেন্ডের জন্য শক্ত বা টানটান হয়ে যাচ্ছে, তারপর আবার স্বাভাবিক হয়ে আসছে কিন্তু কোনো ব্যথা লাগছে না? এই ঘটনাকে ডাক্তারি ভাষায় ‘ব্র্যাক্সটন-হিক্স কনট্র্যাকশন’ বলা হয়।

পেটের ভেতরে জরায়ুর সংকোচন-প্রসারণের কারণে এমনটা হয়। এসময়ে ব্র্যাক্সটন-হিক্স কনট্র্যাকশন হওয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তবে এর সাথে যদি ব্যথা হয় কিংবা যদি নিয়মিত বিরতিতে এমন চলতে থাকে, তাহলে সেটা প্রসবের লক্ষণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

গর্ভকালীন চেকআপ

আপনাকে এখন প্রতি ২ সপ্তাহে একবার করে চেকআপে যেতে হবে। গর্ভাবস্থার ৩৬তম সপ্তাহ পর্যন্ত এই শিডিউলেই চেকআপ চলতে থাকবে। তাই সময়মতো চেকআপ করিয়ে আপনার ও গর্ভের শিশুর সুস্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হোন।

এ ছাড়া আগামী সপ্তাহে আপনাকে হয়তো রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করতে দেওয়া হবে। তার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে প্রস্তুত থাকুন।

ডেলিভারির জন্য ব্যাগ গুছিয়ে রাখা

ডেলিভারির জন্য হাসপাতালে যাওয়ার সময়ে তাড়াহুড়ায় যেন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাগজ অথবা জিনিস বাড়িতে ফেলে না যান, সেজন্য আগে থেকে একটা চেকলিস্ট তৈরি করে রাখুন।

গর্ভকালীন চেকআপের সবগুলো কাগজ সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। এগুলো আগে থেকেই ফাইলে গুছিয়ে রাখবেন। যেমন: প্রেসক্রিপশন, আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট, ব্লাড গ্রুপঅন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট

সেই সাথে আপনি নিয়মিত যেসব ওষুধ খান, সেগুলোর ৫–৬ দিনের ডোজ হিসেব করে ফাইল-পত্রের সাথে গুছিয়ে রাখুন। অন্তত বড় গলার একটা হাফ হাতা জামা বা ম্যাক্সি ড্রেস, পেটিকোট ও অন্তর্বাসের সেট তৈরি করে হাতের নাগালে রাখুন—যেন প্রসববেদনা উঠলে দ্রুত সেগুলো পরে হাসপাতালে চলে যেতে পারেন। এতে সঠিকভাবে প্রেশার মাপা, ইনজেকশন দেওয়া, প্রস্রাব পরীক্ষা করাসহ অনেকগুলো কাজে সুবিধা হবে।

পূর্ণ চেকলিস্ট পেতে আমাদের এই লেখাটা পড়ে নিতে পারেন।

অন্যান্য লক্ষণ

এ সপ্তাহে আপনার আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—

এ ছাড়াও এই সপ্তাহে আপনার প্রথম দিকের সময়ের লক্ষণগুলো থাকতে পারে। যেমন—

এ সপ্তাহে বাবার করণীয়

গর্ভাবস্থায় কখন সহবাস করা বিপজ্জনক তা জেনে রাখুন

আপনারা হয়তো শুনে থাকবেন যে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে এবং শেষের তিন মাসে সহবাস করলে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। এই ধারণা সম্পূর্ণ সঠিক নয়।

গর্ভাবস্থা যদি স্বাভাবিক হয় এবং ডাক্তার আপনাকে সহবাস থেকে বিরত থাকার বিশেষ পরামর্শ না দিয়ে থাকেন, তাহলে গর্ভাবস্থায় সহবাস করা আপনাদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। এতে গর্ভের সন্তানের কোন ধরনের আঘাত পাওয়ার, ক্ষতি হওয়ার কিংবা অকাল প্রসবের সম্ভাবনা নেই।[১৪]

তবে কিছু ক্ষেত্রে সহবাস করা বিপজ্জনক হতে পারে। যেমন: গর্ভাবস্থায় মাসিকের রাস্তা দিয়ে ভারী রক্তপাত হলে, আগে কখনো অপরিণত অবস্থায় বা প্রিম্যাচিউর সন্তান প্রসব হয়ে থাকলে কিংবা পানি ভাঙলে।[১৫] এসব ক্ষেত্রে সহবাস এড়িয়ে চলতে হবে।[১৬]

আর কোন কোন অবস্থায় সহবাস করা বিপজ্জনক, তা জানতে আমাদের এই লেখাটা পড়তে পারেন।

শিশুর মায়ের সাথে প্রতিটি চেকআপে যাওয়ার চেষ্টা করুন

প্রতিটি গর্ভকালীন চেকআপ মা ও গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্যরে জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই চেকআপের সময়ে আপনিও সাথে থাকার চেষ্টা করুন। শিশুর মা কখন, কীভাবে ও কোথায় চেকআপে যাবেন, সেটি জেনে নিয়ে আপনার শিডিউল সেই অনুযায়ী ফাকা রাখুন। চেকআপে যাওয়ার জন্য আরামদায়ক যানবাহনের ব্যবস্থা করার দায়িত্বটি আপনি নিয়ে নিতে পারেন।

চেকআপে ডাক্তারের পরামর্শগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং সেগুলো মেনে চলতে শিশুর মাকে সহায়তা করুন। গর্ভাবস্থা বা ডেলিভারি নিয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে সেগুলো ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে একটা পরিষ্কার ধারণা নিয়ে নিতে পারেন।

হাসপাতালের ব্যাগ গোছানো শুরু করুন

হাসপাতালে যাওয়ার প্রস্তুতি না নিয়ে থাকলে এখন থেকেই ব্যাগ গোছাতে শুরু করুন। শিশু ও শিশুর মায়ের পরিচর্যার জন্য কী কী নিতে হবে সেটার একটা লিস্ট বানিয়ে নিন। এতে সব প্যাক করা সহজ হবে। বাড়িতে কিছু ভুলে ফেলে যাওয়ার সম্ভাবনা কমবে।

শিশু ও শিশুর মায়ের প্রয়োজনীয় জিনিসের পাশাপাশি আপনার প্রয়োজনীয় টুকটাক কিছু জিনিস (যেমন: ব্রাশ, ঔষধ, এক সেট জামাকাপড় ও ফোন চার্জার) নিতে ভুলবেন না। যানবাহনের ব্যবস্থাও আগে থেকে ঠিক করে রাখুন। যদি নির্ধারিত সময়ের আগে কোন কারণে হাসপাতালে যেতে হয়, তাহলেও এই প্রস্তুতিগুলো কাজে আসবে।

চাইলে আমাদের এই চেকলিস্টের সাহায্য নিতে পারেন।