গর্ভধারণের ৩১তম সপ্তাহ

৩১তম সপ্তাহ নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন

গর্ভাবস্থার এসময়ে অনেকেই পিঠে বা কোমরে ব্যথা অনুভব করেন৷ ক্রমশ বাড়তে থাকা গর্ভের কারণে কোমরের পেশিতে চাপ পড়ে, ফলে এই সমস্যা দেখা দেয়। তাই এসময় ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কোমরে ম্যাটারনিটি বেল্ট পরতে পারেন। এছাড়া নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এই ব্যথা কমাতে সাহয্য করবে।

৩১তম বা এরপরের সপ্তাহগুলোতে গর্ভাশয়ের পেশীগুলোর সংকোচনের ফলে হঠাৎ হঠাৎ পেটে টান পড়ার মত অনুভূতি হতে পারে। এটি ২০-৩০ সেকেন্ড স্থায়ী হয় এবং এতে সাধারণত কোন ব্যথা অনুভব হয় না। ধারণা করা হয়, এই সংকোচনের মাধ্যমে আপনার গর্ভাশয় প্রসবের জন্য প্রস্তুত হয় (ব্রাক্সটন-হিক্স কন্ট্রাকসন)। কিন্তু যদি এর সাথে ব্যথা অনুভূত হয় বা একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর এমনটা হতে থাকে তবে তা নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই প্রসববেদনা শুরু হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। তাই এমনটা হলে দেরি না করে ডাক্তার বা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী বা একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীর শরণাপন্ন হন। 

এছাড়া এসপ্তাহে গর্ভবতী মায়েদের যে লক্ষণ গুলো থাকতে পারে সেগুলো হল:

  • ঘুমের সমস্যা হওয়া,
  • স্ট্রেচ মার্কস (পেটের আকার বাড়াতে থাকায় চামড়ায় যে টান পড়ে তার কারণে ফাটা দাগের মত চিহ্ন দেখা দেওয়া),
  • দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
  • পেটে ব্যথা,
  • পাইলসের সমস্যা দেখা দেওয়া বা হঠাৎ এই সমস্যা বেড়ে যাওয়া,
  • কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া, 
  • পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
  • বদহজম,
  • চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
  • পায়ে ব্যথা,
  • অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
  • মাথা ঘুরানো বা মাথা ব্যথা,
  • হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
  • প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
  • যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন, এবং
  • মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে 

গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ ‘প্রি- একলাম্পশিয়া’ এর লক্ষণ হতে পারে৷ এর ফলে প্রসবে নানাধরণের জটিলতা থেকে শুরু করে মা ও সন্তানের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷ গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ ও প্রি-একলাম্পশিয়া সম্পর্কে জানতে আমাদের এ সংক্রান্ত লেখাটি পড়তে পারেন।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে

৩১তম সপ্তাহে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ৪১.১ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয় এবং তার ওজন হয় প্রায় ১.৫ কেজির মত, যা আকারে প্রায় একটি নারিকেলের সমান৷ 

এখন শিশুটি গর্ভের ভেতরে খুবই সক্রিয় হয়ে ওঠে৷ প্রায় সারাক্ষণ ই এদিক সেদিক নড়াচড়া করতে থাকে, আঙুল চুষতে থাকে, এছাড়া মাঝেমাঝে গর্ভের ভেতরে ডিগবাজি বা উল্টে যাওয়ার মত অদ্ভূত কসরতও করতে পারে৷ তার নড়াচড়ায় হঠাৎ কোন অস্বাভাবিকতা অনুভব করলে বা স্বাভাবিক প্যাটার্নে ছন্দপতন হলে আপনার ডাক্তার কে বিষয়টি জানান। 

ইতিমধ্যে সে আরও ভালোভাবে চোখে দেখতে শুরু করে৷ আস্তে আস্তে সে কোন কিছু দেখার সময় ফোকাস করতে শিখে৷

এছাড়াও এখন সে মানুষের গলার স্বরও চিনতে শুরু করে৷ তাই এসময় থেকেই বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের তার সাথে কথা বলতে উৎসাহিত করতে পারেন৷ এতে করে তাদের মধ্যে একটি দৃঢ় বন্ধন গড়ে উঠতে শুরু করবে।