এ সপ্তাহের হাইলাইটস
জন্মের পর পরই প্রথম কয়েক মিনিটে কী কী হয় সে সম্পর্কে জানুন
ছোট্ট শিশু জন্ম নেওয়ার পর পরই গা মুছিয়ে মায়ের বুকের ওপরে শুইয়ে দেওয়া হয়। জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হয়।[১] এসময়ে আপনার ও শিশুর এই সুন্দর মুহূর্তের কিছু ছবি তুলে রাখার কথা শিশুর বাবাকে বলে রাখতে পারেন।
গর্ভের শিশুর নড়াচড়া খেয়াল রাখুন
গর্ভের শিশুর নড়াচড়া স্বাভাবিকের তুলনায় কমে গেলে দেরি না করে হাসপাতালে যাবেন। কারণ তা শিশুর মারাত্মক অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে। তবে শিশুর নড়াচড়া কমে যাওয়া মানেই যে খারাপ কিছু ঘটে গেছে, তা না। কিন্তু ডাক্তার দেখিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া প্রয়োজন।
এক পাশে কাত হয়ে ঘুমান
এ সপ্তাহেও ঘুমানোর সময়ে আপনার সুবিধামতো ডান অথবা বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমাবেন। কারণ চিৎ হয়ে ঘুমালে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।[২][৩] ঘুমের সময়ে সাপোর্ট দেয় এমন আরামদায়ক কয়েকটা বালিশ নিয়ে ঘুমাতে পারেন।
আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান
বিগত সপ্তাহগুলোর মতো এ সপ্তাহেও নিয়মিত আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যাবেন। এগুলো গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[৪][৫] পাশাপাশি আপনাকে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।[৬]
- মাসে কত দিন? ৮ মাস
- কোন ট্রাইমেস্টার? তৃতীয় ত্রৈমাসিক
- আর কত সপ্তাহ বাকি? ৮
৩২ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি
আপনার গর্ভের শিশু এখন মাথা থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত প্রায় ৪২.৪ সেন্টিমিটার লম্বা—প্রায় তিনটি গাজরের সমান। তার ওজন এখন প্রায় ১.৭ কেজি।
চোখে আলো পড়লে শিশু বুঝতে পারবে
কয়েক সপ্তাহ আগে শিশু আলো–অন্ধকারের পার্থক্য বুঝতে শুরু করেছে।[৭] এখন সে আরও ভালোভাবে এই পার্থক্য বুঝতে পারে। এ সপ্তাহ শেষে চোখে আলো পড়লে ছোট্ট শিশুর চোখের মণি কুঁচকে যাবে।[৮]
গায়ের নরম লোমগুলো পড়ে যাচ্ছে
গত কয়েক মাস ধরে আপনার শিশুর পুরো দেহ ল্যানুগো নামক এক ধরনের নরম, মসৃণ ও তুলতুলে লোমের আবরণে আবৃত ছিল।[৯] এ সপ্তাহে লোমগুলো পড়ে যেতে শুরু করে।[১০] পরবর্তীতে আবার নতুন লোম গজাবে—যা আগের চেয়ে খানিকটা কম নরম হবে।[১১]
ছেলে শিশুর শুক্রাশয় নিচে নামছে
আপনার গর্ভের শিশু ছেলে হয়ে থাকলে এ সপ্তাহে তার শুক্রাশয় নীচের দিকে, অর্থাৎ স্ক্রোটাম বা শুক্রথলির দিকে নামতে শুরু করে।[১২] গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে ছেলে শিশুদের শুক্রাশয় পেটের দিকে থাকে।[১৩] পরবর্তীতে তা নীচে নেমে শুক্রথলির ভেতরে প্রবেশ করে।
৩২ সপ্তাহে মায়ের শরীর
আগামী মাসে প্রতি সপ্তাহে ৪৫০ গ্রাম বা প্রায় আধা কেজি করে আপনার ওজন বাড়বে।[১৪] আপনার পাশাপাশি গর্ভের শিশুর ওজনও বাড়তে থাকবে। তার শরীরে ফ্যাট বা চর্বি জমা হবে। এই ফ্যাট যে ছোট্টমণিকে শুধু গোলগাল করে তুলবে, তা নয়। শিশুর শরীরের এই ফ্যাট জন্মের পরে শরীরে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
প্রসবের সময়কাল
নিয়মিত বিরতিতে প্রসববেদনা ওঠা থেকে শুরু করে প্রসবের জন্য জরায়ুমুখ পুরোপুরি প্রস্তুত হতে সাধারণত ৮–১২ ঘন্টা সময় লাগে। তবে দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রেগন্যান্সিতে আরও কম সময় লাগে—সাধারণত ৫ ঘন্টার মত।[১৫]
জরায়ুমুখ পুরোপুরি খুলে যাওয়ার পর থেকে গর্ভের শিশু প্রসব হতে সাধারণত ৩ ঘন্টার বেশি সময় লাগে না।[১৬] তবে আগে সন্তান হয়ে থাকলে সাধারণত ২ ঘন্টার মধ্যেই গর্ভের শিশু প্রসব হয়। সন্তান প্রসবের পর প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল বের করে আনা হয়।
প্রসবের ঠিক পরের সব ঘটনা
প্রসবের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে মায়ের বুকে দেওয়া হবে। মায়ের ত্বকের সংস্পর্শে রাখার আগে সদ্যোজাত ছোট্ট শিশুর ভেজা শরীর একটি শুকনো ও পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নেওয়া হবে।[১৭] এরপর মায়ের বুকের ওপরের কাপড় সরিয়ে শিশুকে মায়ের ত্বকের সংস্পর্শে রাখা হয় এবং মা ও শিশু দুজনের ওপর একটা কাঁথা বা কম্বল দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়।[১৮]
মায়ের ত্বকের সাথে শিশুর ত্বক সরাসরি সংস্পর্শে থাকলে তা শিশুর হৃৎস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।[১৯]
জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে। জন্মের পর প্রথম ঘন্টার মধ্যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে নবজাতকের মৃত্যুর ঝুঁকি কমে আসে।[২০],[২১]
রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা
এ সপ্তাহে ডাক্তার আপনাকে রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন। রক্তশূন্যতা আছে কি না তা রক্তে হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করে দেখা হয়। সাথে সাধারণত আরও কিছু পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ডাক্তারের পরামর্শে সময়মতো এই পরীক্ষাগুলো করিয়ে ফেলবেন।
পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন
সন্তান জন্মানোর পর অনেকে ডিপ্রেশনে ভোগেন। ডিপ্রেশন রোগের লক্ষণগুলো চিনে রাখলে সময়মতো চিকিৎসা করানো সম্ভব। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে অল্পতে কান্না পাওয়া, মন খারাপ লাগা, কোনো কিছুতেই আনন্দ না পাওয়া, মনোযোগ দিতে না পারা।[২২] আপনজনের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে ইচ্ছা হতে পারে।
এসব লক্ষণ যদি ২ সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে, একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। সম্ভব হলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দেখানোর চেষ্টা করবেন।
অন্যান্য লক্ষণ
এ সপ্তাহে আপনার আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—
- ক্লান্তি
- ঘুমের সমস্যা
- স্ট্রেচ মার্ক বা ফাটা দাগ
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে পেটের চারপাশের পেশিতে ব্যথা করা
- পাইলস
- মাথা ব্যথা
- কোমর ব্যথা
- পেট ফাঁপা লাগা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা
- অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা
- পা কামড়ানো
- মাথা ঘুরানো
- হাত–পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া
- প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হওয়া
- যোনিপথে ইনফেকশন হওয়া
- মুখে মেছতার মতো বাদামি ও ছোপ ছোপ দাগ পড়া
- তৈলাক্ত ত্বক ও ত্বকে দাগ পড়া
- চুল ঘন ও ঝলমলে হওয়া
এ ছাড়াও এই সপ্তাহে আপনার প্রথম দিকের সময়ের লক্ষণগুলো থাকতে পারে। যেমন—
- ঘন ঘন মনমেজাজ বদলানো বা মুড সুইং। এই খুশি, আবার এই মন খারাপ—এমনটা হতে পারে। পাশাপাশি এসময়ে ছোটোখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা অথবা কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দিতে পারে
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
- অদ্ভুত জিনিস খাওয়ার ইচ্ছা হওয়া। যেমন: মাটি
- তীব্র ঘ্রাণশক্তি
- স্তনে ব্যথা
- স্তন থেকে তরল নিঃসৃত হওয়া
- সাদাস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
- যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত হওয়া। এমন হলে অবশ্যই একজন ডাক্তার দেখাবেন, কারণ এটা মারাত্মক জটিলতার লক্ষণ হতে পারে
এ সপ্তাহে বাবার করণীয়
রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে সহায়তা করুন
এ সপ্তাহে ডাক্তার শিশুর মাকে রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন। পরীক্ষার সময় তার সাথে কে যাবে সেটা ঠিক করে রাখতে পারেন। কেউ কেউ বাড়িতে বসে পরীক্ষা করানোর অপশন বেছে নেন। কীভাবে শিশুর মায়ের সুবিধা হবে, সেটা তার সাথে কথা বলে সেই অনুযায়ী পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারেন।
প্রসবের সময়কাল জেনে রাখুন
প্রসবের সময়কাল বেশ লম্বা। কতক্ষণ ধরে প্রসব চলতে পারে, তা নিয়ে ধারণা থাকলে আপনি সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারবেন এবং বিভিন্ন ধাপে শিশুর মাকে কীভাবে সাপোর্ট দিতে পারেন, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করতে পারেন।
প্রসববেদনা ওঠা থেকে শুরু করে প্রসবের জন্য জরায়ুমুখ পুরোপুরি প্রস্তুত হতে সাধারণত ৮–১২ ঘন্টা সময় লাগে। আগে কখনো ডেলিভারি হয়ে থাকলে তার চেয়ে কিছুটা কম সময় লাগবে—প্রায় ৫ ঘন্টার মতো।[২৩]
তারপর শুরু হয় কষ্টের ধাপ। আপনার সঙ্গী গর্ভের শিশুকে প্রসব করে ফেলার তাড়না অনুভব করবেন। শিশুর মা চাইলে এই ধাপে আপনি পাশে থেকে সাহস দিতে পারেন। প্রথম ডেলিভারির ক্ষেত্রে সাধারণত ৩ ঘন্টার মধ্যে, আর আগে কখনো ডেলিভারি হয়ে থাকলে হয়তো ২ ঘন্টার মধ্যে এই ধাপের সমাপ্তি হবে।[২৪]
তারপর গর্ভের ভেতরে শিশুকে ঘিরে থাকা সব পর্দা ও প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল বের করে আনা হয়।[২৫] এতে ৫–৩০ মিনিটের মতো সময় লাগতে পারে৷[২৬]
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই লেখাটা পড়তে পারেন।
শিশুর জন্মের পর পর কী কী ঘটবে সেটা ভালমতো জেনে নিন
ছোট্ট শিশু জন্ম নেওয়ার পর পরই শিশুর গা মুছিয়ে সাধারণত ডাক্তার অথবা নার্স মায়ের বুকের ওপরে শুইয়ে দেয়।[২৭] তারপর যত দ্রুত সম্ভব শিশুর মাকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে উৎসাহ দেওয়া হয়। এর মধ্যেই ডাক্তার শিশুকে ভালোমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পর্যবেক্ষণ করেন।
আপনি ডেলিভারি রুমে থাকলে শিশুর প্রথম কান্না, হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি ও ডাক্তারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দেখতে পাবেন। পরবর্তীতে এসব শিশুর মায়ের সাথে শেয়ার করতে পারবেন। এসময়ে আপনি সুন্দর কিছু মুহূর্তের ছবি তুলে রাখতে পারেন, যা স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে।