৩২তম সপ্তাহ নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন
৩১তম সপ্তাহ থেকেই গর্ভাশয়ের পেশীগুলোর সংকোচনের ফলে হঠাৎ হঠাৎ পেটে টান পড়ার মত যে অনুভূতি শুরু হয়, তা সাধারণত ৩২তম সপ্তাহ বা এরপরেও একইভাবে থেকে যায়। এই অনুভূতি ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড স্থায়ী হয় এবং এতে সাধারণত কোন ব্যথা অনুভব হয় না। ধারণা করা হয়, এই সংকোচনের মাধ্যমে আপনার গর্ভাশয় প্রসবের জন্য প্রস্তুত হয় (ব্রাক্সটন-হিক্স কন্ট্রাকসন)। কিন্তু যদি এর সাথে ব্যথা অনুভূত হয় বা একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর এমনটা হতে থাকে তবে তা নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই প্রসববেদনা শুরু হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। তাই এমনটা হলে দেরি না করে ডাক্তার বা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী বা একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীর শরণাপন্ন হন।
এছাড়া এসময় আগের চেয়ে আরো বেশি দুর্বল অনুভব করতে পারেন৷ প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করার ও পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করুন।
এসময়ের অন্যান্য লক্ষণ গুলো হচ্ছে –
- ঘুমের সমস্যা হওয়া,
- স্ট্রেচ মার্কস (পেটের আকার বাড়াতে থাকায় চামড়ায় যে টান পড়ে তার কারণে ফাটা দাগের মত চিহ্ন দেখা দেওয়া),
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
- পেটে ব্যথা,
- পাইলসের সমস্যা দেখা দেওয়া বা হঠাৎ এই সমস্যা বেড়ে যাওয়া,
- কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
- পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
- বদহজম,
- চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
- পায়ে ব্যথা,
- অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
- মাথা ঘুরানো বা মাথা ব্যথা,
- হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
- প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
- যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন, এবং
- মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া।
কখন প্রসববেদনা শুরু হয় জেনে নিন
যদিও হিসাব অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে প্রসব তথা ডেলিভারীর সময় হতে এখনো কিছুদিন বাকি আছে, তবুও এ ব্যাপারে আগে থেকেই জেনে রাখা ভালো। প্রসববেদনা ও প্রসবের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আপনার ডাক্তার বা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে বিস্তারিত আলোচনা করে নিন। কোথায় কিভাবে ডেলিভারী হবে এ ব্যপারে পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে রাখুন।
গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
৩২তম সপ্তাহে শিশুটি লম্বায় প্রায় ৪২.৪ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয় এবং এসময় তার ওজন হয় প্রায় ১.৭ কেজি।
ইতিমধ্যেই শিশুর শারীরিক গঠন তৈরি হয়ে যায়, শুধু আকারে আরো কিছুটা বড় ও গর্ভের বাইরের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ার জন্য কিছুটা পরিণত হওয়া বাকি। এসময়ে ও এর পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে সে বড় হওয়ার সাথে সাথে আপনার গর্ভের আকারও দ্রুত বড় হতে থাকবে।
সাধারণত এ সময় থেকে শিশুটি গর্ভের ভেতরে “নিচের দিকে মাথা আর উপরের দিকে পা” দিয়ে অবস্থান করে । একে সেফালিক প্রেজেন্টেশন (cephalic presentation) বলা হয়। এতে স্বাভাবিক প্রসবের সময় প্রথমে মাথার দিকটা বেরিয়ে আসে, ফলে ডেলিভারী সহজ হয়। যদি এখনো শিশুটি এই অবস্থানে না আসে, তবুও চিন্তার কোন কারণ নেই৷ তবে, সামনের সপ্তাহ গুলোতে তার অবস্থান পরিবর্তন হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন৷
এছাড়া তার নড়াচড়ায় হঠাৎ কোন অস্বাভাবিকতা অনুভব করলে বা স্বাভাবিক প্যাটার্নে ছন্দপতন হলে আপনার ডাক্তার কে বিষয়টি জানান।