গর্ভধারণের ৩০তম সপ্তাহ

এ সপ্তাহের হাইলাইটস

নবজাতককে ঘুম পাড়ানোর নিয়ম জেনে রাখুন

জন্মের পর শিশুকে কখনো উপুড় করে ঘুম পাড়াবেন না। তাকে সবসময় পিঠের ওপর চিত করে শুইয়ে ঘুম পাড়াবেন, হোক দিনে বা রাতে।[১] নাহলে শিশুর বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। পরিবারের সবাইকে এই বিষয়ে সতর্ক করবেন।

এক পাশে কাত হয়ে ঘুমান

গত সপ্তাহের মত এ সপ্তাহেও ঘুমানোর সময়ে আপনার সুবিধামতো ডান অথবা বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমাবেন। কারণ চিৎ হয়ে ঘুমালে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।[২][৩] ঘুমের সময়ে সাপোর্ট দেয় এমন আরামদায়ক কয়েকটা বালিশ নিয়ে ঘুমাতে পারেন।

আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান

বিগত সপ্তাহগুলোর মতো এই সপ্তাহেও নিয়মিত আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যাবেন। এগুলো গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[৪][৫] পাশাপাশি আপনাকে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।[৬]

  • মাসে কত দিন? ৭ মাস ২ সপ্তাহ
  • কোন ট্রাইমেস্টার? তৃতীয় ত্রৈমাসিক
  • আর কত সপ্তাহ বাকি? ১০

৩০ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি

Week-30
৩টি ঢেঁড়স
আপনার বাচ্চা এখন প্রায়
একটি ৩টি ঢেঁড়স
এর সমান
দৈর্ঘ্য
৩৯.৯ সেমি
ওজন
১.৩ কেজি

আপনার গর্ভের শিশু এখন মাথা থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত প্রায় ৩৯.৯ সেন্টিমিটার লম্বা। সে প্রায় তিনটি ঢেঁড়সের সমান লম্বা হয়ে গিয়েছে। তার ওজন এখন প্রায় ১.৩ কেজি।

ছোট্ট শিশু চোখ খুলতে আর বন্ধ করতে পারে

কয়েক সপ্তাহ আগে শিশু চোখ মেলতে শিখেছে।[৭] প্রথমে সে আধো-আধো চোখ মেলতে পারতো। এ সপ্তাহে সে পুরোপুরি চোখ খুলে তাকাতে শিখে যাবে। নিজে নিজে চোখ খুলতে আর বন্ধ করতে পারবে।[৮] আর ইতোমধ্যেই সে এদিক-ওদিক চোখ নাড়াতে শিখে ফেলেছে।[৯][১০]

দৃষ্টিশক্তি বিকশিত হচ্ছে

প্রতিনিয়ত গর্ভের শিশুর চোখে দেখার ক্ষমতা বিকশিত হচ্ছে। এ সপ্তাহে সে আলো–অন্ধকারের পার্থক্যও একটু আধটু বুঝতে শিখে যাবে।[১১] জন্মানোর পর সে রং চিনতে শিখবে।[১২]

শিশুর মাথায় চুল বাড়ছে

কয়েক মাস আগেই শিশুর মাথায় চুল গজানো শুরু হয়েছে।[১৩] এ সপ্তাহে তার মাথায় ভালো পরিমাণে চুল থাকতে পারে।[১৪]

৩০ সপ্তাহে মায়ের শরীর

গর্ভধারণের ৩০তম সপ্তাহ

স্তনের যত্ন

এসময়ে আপনার স্তনের বোঁটা থেকে শালদুধ, অর্থাৎ দুধের মতো হলুদাভ-সাদা বা সোনালী রঙের আঠালো তরল বের হতে পারে। এতে আপনার অস্বস্তি হতে পারে কিংবা গায়ের কাপড় ভিজে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে টিস্যু পেপার অথবা ব্রেস্ট প্যাড (এই নামেই দোকানে কিনতে পাওয়া যায়) ব্যবহার করুন।

গর্ভাবস্থায় স্তনের কোন পরিবর্তন স্বাভাবিক আর কোনটা চিন্তার বিষয় তা জানতে আমাদের এই লেখাটা পড়তে পারেন।

চুলকানি কমাতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার

গর্ভকালীন সময়ে আপনার শরীরে ফাটা দাগ দেখা যেতে পারে এবং সেখানে চুলকানি হতে পারে। চুলকানি কমাতে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। কারণ শুষ্ক ত্বক চুলকানি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।[১৫] তাই আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম অথবা লোশন ব্যবহার করে আরাম পেতে পারেন।

অনেকে এসব দাগ দূর করার উপায় জানতে চান। কোনো লোশন অথবা ক্রিম ব্যবহারে এসব দাগ পুরোপুরি দূর হওয়ার কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে সাধারণত সন্তান জন্মের পর এসব দাগ ধীরে ধীরে হালকা হয়ে যেতে থাকে। দাগের কারণে অস্বস্তি হলে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।

সাইড কাটা বা এপিশিওটোমি

নরমাল ডেলিভারির সময়ে কারও কারও যোনিপথের মুখের একপাশে সামান্য একটু অংশ কাটার প্রয়োজন হয়।[১৬] একে অনেকে সাইড কাটা নামে চেনেন। ডাক্তারি ভাষায় এই পদ্ধতিকে বলা হয় এপিশিওটোমি।

প্রসবের পর পরই কাটা জায়গা সেলাই করে দেওয়া হয়, যা সাধারণত এক মাসের মধ্যে সেরে ওঠে। এই বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে চেকআপের সময়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে নিন।

ছোট্টমণিকে ঘুম পাড়ানো

জন্মের পর শিশুকে কীভাবে নিরাপদে ঘুম পাড়াবেন, সেটা এখন থেকেই জেনে রাখুন। কেউ কেউ হয়তো শিশুকে উপুড় করে, অর্থাৎ পেটের ওপরে ঘুম পাড়ানোর পরামর্শ দিতে পারেন। তবে এভাবে ঘুমানো শিশুর জন্য নিরাপদ নয়।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, চিৎ করে শোয়ানোর তুলনায় উপুড় করে শোয়ানো শিশুদের মধ্যে মৃত্যুহার কয়েক গুণ বেশি হতে পারে।[১৭] ঠিক কী কারণে এমনটা হয়, তা এখনো পরিষ্কার নয়।[১৮]

এই ভয়ানক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে শিশুকে সবসময় চিৎ করে বা পিঠের ওপরে শুইয়ে ঘুম পাড়াবেন, সেটা হোক দিনের বেলা কিংবা রাতে ঘুমের সময়ে। শিশু যেখানে ঘুমায়, সেখানে বালিশ, কাঁথা, কাপড়ের খেলনা, যেগুলো শিশুর মাথা ঢেকে ফেলতে পারে, সেগুলো সরিয়ে রাখবেন। এসব ব্যাপারে বাড়ির অন্য সদস্যদেরকেও এখন থেকেই সতর্ক করে রাখুন।

অন্যান্য লক্ষণ

এ সপ্তাহে আপনার আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—

এ ছাড়াও এই সপ্তাহে আপনার প্রথম দিকের সময়ের লক্ষণগুলো থাকতে পারে। যেমন—

এ সপ্তাহে বাবার করণীয়

ছোট্টমণির ঘুমানোর জায়গা ঠিক করুন

শিশু জন্মের পর কোথায় ঘুমাবে, সেটা দুজনে মিলে আলাপ করতে পারেন। আপনারা যেই ঘরে ঘুমান, শিশুকেও সেই ঘরে আপনাদের বিছানার পাশেই আলাদা একটা কট বা ছোটো বিছানায় ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। এসব বিছানা কোথায় পাওয়া যায় সে বিষয়ে এখনই খোঁজ নেওয়া শুরু করে দিন।

ইন্টারনেটে ‘Cot’ বা ‘Crib’ লিখে সার্চ করলে বিভিন্ন মডেল ও ডিজাইন দেখতে পারবেন। কোনটা কেনা যায় সেই বিষয়ে দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিন। কেনার আগে ঘরে কটটা রাখার জন্য জায়গা তৈরি করে নিন।

শিশুকে ঘুম পাড়াতে শিখুন

প্রসবের পর শিশুর মা স্বাভাবিকভাবেই অনেক ক্লান্ত থাকবেন। তার ওপর প্রতি রাতেই কয়েকবার করে ঘুম থেকে উঠতে হবে শিশুকে খাওয়ানোর জন্য। খাওয়ানোর আগে ও পরের সময়টায় আপনি শিশুর দেখভাল করতে পারেন। তাকে ঘুম পাড়ানোর দায়িত্ব নিতে পারেন।

শিশুকে সবসময় পিঠের ওপর চিত করে শুইয়ে ঘুম পাড়াবেন।[১৯] কারণ পেটের ওপর উপুড় করে বা কাত করে শুইয়ে ঘুম পাড়ালে শিশুমৃত্যুর মত দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়তে পারে।[২০] পরিবারের অন্য যারা শিশুর দেখভালের দায়িত্বে থাকবেন, তাদেরকে এই ব্যাপারে সতর্ক করবেন।

সাইড কাটা বা এপিশিওটোমি সম্পর্কে জেনে রাখুন

নরমাল ডেলিভারির সময়ে শিশুর মায়ের যোনিপথের মুখের একপাশে সামান্য একটু কাটার প্রয়োজন হতে পারে।[২১] প্রসবের সময়ে পথটা একটু প্রশস্ত করতে এই পদ্ধতির সাহায্য নিতে হতে পারে। একে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় এপিশিওটোমি। অনেকে এটিকে সাইড কাটা নামে চেনেন।

প্রসবের পর পরই কাটা জায়গা সেলাই করে দেওয়া হয়। এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে চেকআপের সময়ে ডাক্তারের কাছে জিগ্যেস করতে পারেন।