গর্ভধারণের ২৯তম সপ্তাহ

এ সপ্তাহের হাইলাইটস

এখন থেকে এক পাশে কাত হয়ে ঘুমাবেন

এখন থেকে ঘুমানোর সময়ে আপনার সুবিধামতো ডান অথবা বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমাবেন। কারণ চিৎ হয়ে ঘুমালে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।[১][২] ঘুমের সময়ে সাপোর্ট দেয় এমন আরামদায়ক কয়েকটা বালিশ নিয়ে ঘুমাতে পারেন।

২ সপ্তাহ পর পর চেকআপে যান

এখন থেকে ৩৬তম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি ২ সপ্তাহে একবার চেকআপে যেতে হবে। গত সপ্তাহে চেকআপে গিয়ে না থাকলে এ সপ্তাহে চেকআপের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে চেকআপ করিয়ে আসুন।

আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান

বিগত সপ্তাহগুলোর মতো এ সপ্তাহেও নিয়মিত আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যাবেন। এগুলো গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[৩][৪] পাশাপাশি আপনাকে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।[৫]

  • মাসে কত দিন? ৭ মাস ১ সপ্তাহ
  • কোন ট্রাইমেস্টার? তৃতীয় ত্রৈমাসিক
  • আর কত সপ্তাহ বাকি? ১১

২৯ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি

Week-29
৩টি সবরি কলা
আপনার বাচ্চা এখন প্রায়
একটি ৩টি সবরি কলা
এর সমান
দৈর্ঘ্য
৩৮.৬ সেমি
ওজন
১.২ কেজি

আপনার গর্ভের শিশু এখন মাথা থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত প্রায় ৩৮.৬ সেন্টিমিটার লম্বা—প্রায় তিনটি সবরি কলার সমান। তার ওজন এখন প্রায় ১.২ কেজি।

শিশুর নড়াচড়া দিন দিন বাড়ছে

আপনার গর্ভে শিশুর চঞ্চলতা বেড়েই চলেছে। সে এখন বেশ চটপটে। আপনি নিজেও হয়তো টের পেয়েছেন যে সে এখন আগের চেয়ে বেশি নড়াচড়া করে।

শিশু ঠিক কী পরিমাণে নড়াচড়া করবে তার কোনো নির্দিষ্ট হিসাব নেই। প্রত্যেক গর্ভাবস্থার স্বতন্ত্র ও আলাদা ধরন থাকে।[৬] তবে আপনার শিশুর নড়াচড়ার ধরন চিনতে শিখুন। নড়াচড়া স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।[৭]

নড়াচড়া কমেছে কি না সেটা বুঝতে কষ্ট হলে বাম কাত হয়ে ২ ঘন্টা শুয়ে থাকুন। এসময়ে ১০ বারের কম নড়াচড়া টের পেলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।[৮]

শিশুর নড়াচড়া কমে যাওয়া মানেই যে খারাপ কিছু ঘটে গেছে, এমন না। তবে ডাক্তার দেখিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া প্রয়োজন।

শিশুর ত্বক সুগঠিত হচ্ছে

সময়ের সাথে সাথে গর্ভের শিশু আরও বড়সড় হচ্ছে। ধীরে ধীরে তার ওজনও বাড়ছে। অন্যান্য অঙ্গের পাশাপাশি তার ত্বকের বিভিন্ন স্তর সুগঠিত হচ্ছে।[৯] তার ত্বকের নীচের ফ্যাট বা চর্বির স্তর আরও পুরু হচ্ছে।[১০]

ছোট্ট শিশু ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে

আপনার গর্ভের ভেতরে শিশুর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এরই মধ্যে নিখুঁতভাবে তৈরি হয়ে গিয়েছে। সামনের সপ্তাহগুলোতে তার অঙ্গগুলো ঠিকঠাকমতো কাজ করার জন্য আরও পরিণত হবে।

কিছু দিন পরই তার শরীরের সব অঙ্গ পুরোদমে কাজ করতে শুরু করবে। কেননা আর মাত্র ১১ সপ্তাহের মধ্যেই আপনার কোল জুড়ে চলে আসবে আদরের ছোট্ট সোনামণি।

এ ছাড়া এসময়ে তার শরীরে ফ্যাট বা মেদ জমতে থাকে।[১১]

২৯ সপ্তাহে মায়ের শরীর

গর্ভধারণের ২৯তম সপ্তাহ

এক পাশে কাত হয়ে ঘুমানো

এই সপ্তাহ থেকে একপাশে কাত হয়ে শুয়ে ঘুমাবেন। কারণ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, গর্ভাবস্থার ২৮ সপ্তাহ পরে গর্ভবতী মা চিৎ হয়ে ঘুমালে মৃতপ্রসব হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।[১২][১৩] এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। তবে এখন থেকে দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময়ে এক কাত হয়ে শোয়ার কথা খেয়াল রাখবেন।

ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া করার কারণে জেগে ওঠার সময়ে নিজেকে চিৎ হয়ে থাকা অবস্থায় দেখলে দুশ্চিন্তা করবেন না। ঘুম ভেঙে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন খেয়াল করলে পুনরায় এক দিকে কাত হয়ে শুয়ে পড়ুন।

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা

এসময়ে শরীর সুস্থ রাখতে হাঁটাহাঁটি চালিয়ে যান।[১৪][১৫] হাঁটার সময়ে উঁচু হিল জুতার পরিবর্তে আরামদায়ক, ফ্ল্যাট জুতা বেছে নিন। কেডস বা স্নিকারস বেছে নিতে পারেন।

হাঁটার সময়ে প্রথম কয়েক মিনিট স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তারপর থেকে দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করুন। এভাবে প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট করে হাঁটলেও অনেক উপকার হবে। দ্রুত হাঁটা শেষ হলে ৫–১০ মিনিট স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে শেষ করুন। আস্তে আস্তে হাঁটার পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করুন। ৩০ মিনিট হাঁটার পাশাপাশি আপনার পছন্দের অন্য কোনো ব্যায়ামও বেছে নিতে পারেন।

গর্ভকালীন চেকআপ

আপনাকে এখন থেকে ৩৬তম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি ২ সপ্তাহে একবার চেকআপে যেতে হবে। গত সপ্তাহে গিয়ে না থাকলে এই সপ্তাহে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে চেকআপ করিয়ে আসুন।

গত চেকআপে কোনো পরীক্ষা করিয়ে থাকলে সেগুলোর রিপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে নিয়ে যাবেন। চেকআপ শেষে পরবর্তী চেকআপের শিডিউল জেনে আসবেন।

অনিচ্ছাকৃতভাবে খানিকটা প্রস্রাব বেরিয়ে আসা

গর্ভাবস্থার এসময়ে হাঁচি-কাশি, জোরে হাসা কিংবা পেটে চাপ পড়ার মতো সাধারণ কাজেও হুট করে কিছুটা প্রস্রাব বেরিয়ে আসতে পারে। এই ঘটনা ঘটে ‘পেলভিক ফ্লোর’ এর দুর্বলতার কারণে। আমাদের দুই পায়ের মাঝের যে পেশিগুলো যৌনাঙ্গ, পায়খানার রাস্তা ও মূত্রথলির মতো অঙ্গগুলোকে সাপোর্ট দেয়, সেগুলো মিলে এই ‘পেলভিক ফ্লোর’ তৈরি হয়।

নিয়মিত পেলভিক ফ্লোরের ব্যায়াম করার মাধ্যমে আপনি পেলভিক ফ্লোরের পেশিকে শক্তিশালী করে তুলতে পারেন, যা অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রস্রাব বেরিয়ে আসার এই বিরক্তিকর সমস্যা সমাধানে কার্যকর।[১৬]

পেলভিক ফ্লোরের ব্যায়াম করার নিয়ম জানতে আমাদের পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ লেখাটি পড়তে পারেন।

অন্যান্য লক্ষণ

এ সপ্তাহে আপনার আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—

এ ছাড়াও এই সপ্তাহে আপনার প্রথম দিকের সময়ের লক্ষণগুলো থাকতে পারে। যেমন—

এ সপ্তাহে বাবার করণীয়

শিশুর মাকে কাত হয়ে শোয়ার কথা মনে করিয়ে দিন

এখন থেকে শিশুর মাকে ডান অথবা বাম পাশে কাত হয়ে ঘুমাতে হবে। কারণ চিৎ হয়ে ঘুমালে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।[১৭][১৮] তাই চিৎ হয়ে ঘুমানো থেকে বিরত থাকার কথা শিশুর মাকে মনে করিয়ে দিন। তার জন্য ঘুমের সময়ে সাপোর্ট দেয় এমন আরামদায়ক কয়েকটা বালিশ (যেমন: প্রেগন্যান্সি পিলো) অথবা কোলবালিশের ব্যবস্থা করতে পারেন।

দুজনে মিলে নিয়মিত একত্রে ব্যায়াম করুন

গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত ব্যায়াম শিশুর মাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।[১৯] এসময়ে আপনারা একসাথে ব্যায়াম করতে পারেন। একসাথে হাঁটতে বেরিয়ে পড়তে পারেন।

আপনি ব্যায়ামে যোগ দিলে এসময়টা শিশুর মায়ের জন্য আরও উপভোগ্য করে তুলতে পারবেন এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া হয়তো ভালো হবে। আর একসাথে ব্যায়াম করার অভ্যাস করলে হয়তো আপনি কিংবা আপনার সঙ্গী আলসেমি করে ব্যায়ামের রুটিনে আর ফাঁকি দিতে পারবেন না!

আপনি আদর্শ হয়ে দাঁড়ান

গর্ভাবস্থায় সব ধরনের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চলার কাজটা খুব সহজ নয়। শরীর আর মনের হাজারো পরিবর্তনের ভিড়ে শিশুর মা হয়তো সবসময় সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর সিদ্ধান্তটা নিতে পারছেন না। এক্ষেত্রে আপনি তাকে সাহায্য করতে পারেন। আপনি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চললে তিনিও আপনাকে দেখে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন!

খাওয়ার সময়ে বেশি বেশি ফল, শাকসবজি, মাছ, গোটা শস্যদানা (যেমন: লাল চালের ভাত ও লাল আটার রুটি) ও পানি খান। ভাজাপোড়া, মিষ্টি ও ফাস্টফুডের মতো অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। আপনাকে এগুলো করতে দেখলে হয়তো শিশুর মা স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো ধরে রাখার উৎসাহ পাবেন।

নবজাতকের যত্ন নিয়ে এখন থেকেই শিখুন

নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়াটা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং। সময়ের সাথে এই ব্যাপারটা সহজ হতে থাকবে। প্রথম প্রথম আপনি ও শিশুর মা দুজনেই হয়তো খুব ক্লান্ত হয়ে পরবেন। তবে চিন্তাভাবনা করে কয়েকটা দায়িত্ব ভাগ করে নিলে দুজনের জন্যই কাজটা সহজ হয়ে আসবে।

সেই সময়ে আপনি কোন কোন দায়িত্ব নিতে পারেন, তা এখন থেকেই চিন্তা শুরু করুন। যেমন, শিশুকে খাওয়ানোর পর ঢেঁকুর তোলানোর দায়িত্বটা আপনি নিয়ে নিতে পারেন। তার পরনের ন্যাপি বা ডায়াপার বদলে দিতে পারেন। তাকে গোসল করিয়ে দিতে পারেন। এসব কাজ কীভাবে করতে হয়, তা এখন থেকেই শেখা শুরু করতে পারেন। তাহলে নবজাতকের জন্মের পর নিজেকে অপ্রস্তুত মনে হবে না।