২১তম সপ্তাহ নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন
এসময়ে আপনার পেট দ্রুত বড় হতে থাকে। শরীরের এই বাড়তি ওজনের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটাচলা করতে কষ্ট হতে পারে । ফলে অসাবধানতাবশত পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও এই সময়ে বেশি ঘটে। কখনো পড়ে গেলে খুব বেশি ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই, কারণ গর্ভে শিশুটি অ্যামনিওটিক থলের ভেতরে অত্যন্ত সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে। তাই সাধারণত মা পা পিছলে পড়ে গেলেও গর্ভের শিশুর এতে কোন ক্ষতি হয় না। তবে যদি আপনার প্রয়োজন মনে হয়, আঘাত অনেক তীব্র হয়, বা পড়ে যাওয়ার পরে পেটে ব্যথা বা অন্য কোন লক্ষণ দেখা দেয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত।
অনেক গর্ভবতী মায়েরই এসময় হালকা মাথাব্যথা হয়ে থাকে৷ তবে যদি আপনার তীব্র মাথাব্যথা হয় – যা একটানা কয়েক ঘন্টা ধরে থাকে এবং ওষুধ খেলেও সারে না – সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। এটি ‘প্রি-এক্লাম্পসিয়া’ নামের গর্ভকালীন এক জটিল সমস্যার লক্ষণ হতে পারে৷
এছাড়াও এ সপ্তাহে অন্যান্য যেসব লক্ষণ থাকতে পারে সেগুলো হল:
- স্ট্রেচ মার্কস (পেটের আকার বাড়াতে থাকায় চামড়ায় যে টান পড়ে তার কারণে ফাটা দাগের মত চিহ্ন দেখা দেওয়া),
- বেশি ক্লান্ত লাগা,
- ঘুমের সমস্যা হওয়া,
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
- পেটে ব্যথা,
- কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
- পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
- বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
- চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
- পায়ে ব্যথা,
- অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
- মাথা ঘুরানো,
- হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
- প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
- যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন,
- মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
- অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
- এসময় আপনার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষুধা লাগতে পারে৷ পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাদ্য ও নিয়মিত যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করার চেষ্টা করুন।
- এছাড়া নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।
গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
এ সপ্তাহে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ২৬.৭ সেন্টিমিটার বা প্রায় সাড়ে ১০ ইঞ্চি হয়। এসময় শিশুর ওজন হয় প্রায় ৩৫০ গ্রাম।
এ সময়ের আগ পর্যন্ত গর্ভফুল বা অমরার ওজন শিশুর ওজনের চেয়ে বেশি ছিল, তবে এখন শিশুটির ওজন প্লাসেন্টার ওজনের চেয়ে বেড়ে যায়৷ গর্ভাবস্থার বাকি সময়টাতে প্লাসেন্টা ও শিশু দুটোই আকারে বাড়বে, তবে শিশুটি অমরার চেয়ে দ্রুত গতিতে বড় হবে।
শিশুটির পুরো শরীর এক ধরনের পাতলা, নরম পশম দিয়ে আবৃত হয়ে যায়, যাকে ‘লানুগো’ বলা হয়। ধারণা করা হয়, এই পশম গর্ভের শিশুর শরীরে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে। শুধুমাত্র গর্ভাবস্থাতেই শিশুর শরীরে এই পশম থাকে, সাধারণত শিশুর জন্মের আগেই এগুলো চলে যায়।
এছাড়া এসময় শিশুটির মাথার চুল এবং ভ্রূ জোড়াও দ্রুত বাড়তে থাকে। জন্মানোর সময় কিছু কিছু শিশুর মাথাভর্তি চুল থাকে, আবার কারো কারো একেবারেই চুল থাকে না। এটি সাধারণত দুশ্চিন্তার কোন ব্যাপার নয় – এক বছরের মধ্যে সাধারণত এসব স্বাভাবিক হয়ে আসে৷