গর্ভধারণের ১৯তম সপ্তাহ

এ সপ্তাহের হাইলাইটস

ট্রান্স ফ্যাট এড়িয়ে চলুন

ডালডা বা বনস্পতি ঘি দিয়ে তৈরি খাবার (যেমন: বিস্কুট, চানাচুর, চিপস, ড্রাই কেক) এবং ডুবো তেলে ভাজাপোড়া স্ন্যাকস (যেমন: সিঙ্গাড়া, সমুচা, জিলাপি, পাকোড়া, পুরি)—এসবে ক্ষতিকর ট্র্যান্স ফ্যাট থাকতে পারে। তাই এসব খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।

খাবার তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার রাখুন

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে নিয়মিত আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন: ফলমূল, শাকসবজি, ডাল, লাল চাল ও লাল আটার মতো গোটা শস্যদানা, বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও বীজ। তবে হুট করে অনেক বেশি আঁশযুক্ত খাবার না খেয়ে খাবার তালিকায় ধীরে ধীরে ফাইবার যোগ করুন।

আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান

গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে আগের সপ্তাহগুলোর মতো এ সপ্তাহেও প্রতিদিন আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান।[১][২]

১৯ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি

Week-19
গাজর
আপনার বাচ্চা এখন প্রায়
একটি একটি গাজর
এর সমান
দৈর্ঘ্য
১৫.৩ সেমি
ওজন
২৪০ গ্রাম

আপনার গর্ভের শিশু এখন প্রায় ১৫.৩ সেন্টিমিটার লম্বা—প্রায় একটি গাজরের সমান। তার ওজন প্রায় ২৪০ গ্রাম।

শিশুর হাড় মজবুত হচ্ছে

ছোট্ট শিশুর শরীরের হাড়গুলো মজবুত হচ্ছে। আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করলে শিশুর বাড়ন্ত হাড়গুলো এখন দেখা যাবে।[৩]

ফুসফুস বিকশিত হচ্ছে

শিশুর ফুসফুসে নালীর মতো ছোটো ছোটো শাখা-প্রশাখা তৈরি হতে শুরু করেছে।[৪] আগামী কয়েক মাস ধরে এই শাখা-প্রশাখা তৈরির কাজ চলতে থাকবে। এসব পরবর্তীতে বাতাস থেকে অক্সিজেন নিতে সাহায্য করবে।

ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু তৈরির কাজ শুরু হয়েছে

গর্ভের শিশু যদি মেয়ে হয়ে থাকে, তাহলে ইতোমধ্যেই তার ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে![৫]

শিশু ছেলে না কি মেয়ে তা এখন বোঝা যাবে

শিশুর জননাঙ্গ অনেকখানি পরিণত হয়ে গিয়েছে।[৬] এ সপ্তাহে যদি আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করেন, তাহলে গর্ভের শিশু ছেলে না কি মেয়ে সেটি বোঝা যাবে।[৭][৮] তবে কখনো কখনো পরীক্ষার সময়ে গর্ভের শিশুর অবস্থানের কারণে বোঝা সম্ভব না-ও হতে পারে।

১৯ সপ্তাহে মায়ের শরীর

গর্ভধারণের ১৯তম সপ্তাহ

ট্র্যান্স ফ্যাট এড়িয়ে চলা

ট্র্যান্স ফ্যাট হল এক ধরনের চর্বি, যা বিভিন্নভাবে শরীরের ক্ষতি করতে পারে।[৯][১০] এই ফ্যাট হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।[১১] তাই যেসব খাবারে ট্র্যান্স ফ্যাট আছে, সেগুলো খাদ্যাভ্যাস থেকে সরিয়ে ফেলুন। যেমন: ডালডা বা বনস্পতি ঘি দিয়ে তৈরি খাবার—বিস্কুট, চানাচুর, চিপস, ড্রাই কেক। ডুবো তেলে ভাজাপোড়া স্ন্যাকস (যেমন: সিঙ্গাড়া, সমুচা, জিলাপি, পাকোড়া, পুরি)—এসব খাবারেও ক্ষতিকর ট্রান্স ফ্যাট থাকতে পারে।

গর্ভাবস্থায় আরও কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলা ভালো, সেসব জানতে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা আর্টিকেলটি পড়ুন।

কোষ্ঠকাঠিন্যের দ্রুত সমাধান

গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য খুব কমন সমস্যা। পায়খানা খুব শক্ত হয়ে আছে, পায়খানার চাপ এসেছে কিন্তু এখন টয়লেটে গেলে খুব ব্যথা হবে বুঝতে পারছেন—এমন হলে চাপাচাপি করে পায়খানা করার চেষ্টা করবেন না। তাহলে পায়খানার রাস্তা চিঁড়ে-ফেটে গিয়ে ফিশার বা গেঁজ হতে পারে। এই জরুরি অবস্থা সমাধানে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে একটা বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন—পায়খানার রাস্তায় দেয়ার ‘গ্লিসারিন সাপোজিটরি’। এটি পায়খানাকে দ্রুত নরম করে। পাশাপাশি পায়খানার রাস্তাকে পিচ্ছিল করে পায়খানা হতে সাহায্য করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য ঠেকানোর ঘরোয়া উপায় জানতে আমাদের এই লেখাটা পড়তে পারেন।

কোমরের নিচের দিকে ব্যথা

গর্ভাবস্থায় কোমরের নিচের দিকে ব্যথা করতে পারে। দুই পায়ের মাঝখানে যেসব হাড় থাকে, সেগুলোর জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া বা স্বাভাবিক নড়াচড়ায় সমস্যা হওয়ার কারণে ব্যথা হয়। হাঁটা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা, বিছানায় এপাশ-ওপাশ করার মতো সাধারণ কাজের সময়ে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।

যেসব অঙ্গভঙ্গিতে ব্যথা হয়, সেগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তিনি আপনাকে ব্যথা সারানোর বিভিন্ন ব্যায়াম শিখিয়ে দিতে পারেন বা ফিজিওথেরাপি নেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।

খাদ্যে ফাইবার বা আঁশ

এ সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন: ফলমূল, শাকসবজি, ডাল, লাল চাল ও লাল আটার মতো গোটা শস্যদানা, বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও বীজ। এগুলো হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে।[১২] পায়খানা নরম করতে এবং নিয়মিত পায়খানা হতে সাহায্য করে।[১৩] এজন্য ভাতের সাথে শসা ও টমেটোর সালাদ খেয়ে নিতে পারেন। ভাতের ওপরে অল্প পরিমাণে তিসির বীজ বা সূর্যমুখীর বীজ ছিটিয়ে খেতে পারেন। সকালের নাশতায় দুধের সাথে চিয়া বীজ কিংবা বিকেলের নাশতায় কয়েকটা চিনাবাদাম বা গাজর খেতে পারেন।

তবে খাবার তালিকায় হুট করে অনেক বেশি আঁশযুক্ত খাবার যোগ করলে আপনার পেট ফাঁপা বা পেট ব্যথার সমস্যা হতে পারে। তাই খাবার তালিকায় ধীরে ধীরে ফাইবার যোগ করুন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।

গর্ভাবস্থায় আরও কী কী খাবার খাওয়া ভালো, সেসব জানতে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা আর্টিকেলটি পড়ুন।

অন্যান্য লক্ষণ

আপনার অথবা গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে? দুশ্চিন্তা কিংবা মন খারাপ না করে ডাক্তারকে এসব চিন্তার কথা জানান। তিনি হয়তো আপনাকে উপযুক্ত পরামর্শ দিতে পারবেন।

এ সপ্তাহেও আগের সপ্তাহের মতো আপনার যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—

এ ছাড়া গর্ভাবস্থার প্রথমদিকের কিছু লক্ষণ থেকে যেতে পারে। যেমন—

এ সপ্তাহে বাবার করণীয়

ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলুন

ভাজাপোড়া ও ফাস্টফুড জাতীয় খাবারে সাধারণত ট্র্যান্স ফ্যাট নামের অস্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে, যা বিভিন্নভাবে শরীরের ক্ষতি করতে পারে।[১৪][১৫] গর্ভবতী মা-সহ সবারই এই ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।

আপনি যদি এসময়ে বাড়িতে ভাজাপোড়া বা ফাস্টফুড আনেন, শিশুর মায়ের জন্য এসব মুখরোচক খাবার এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হতে পারে। তাই আপনি ও বাড়ির অন্যান্য সদস্যরাও ভাজাপোড়া ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। সবাই মিলে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।

পাতে স্বাস্থ্যকর খাবার সাজানোর উপায় জেনে নিন

গর্ভাবস্থায় শিশুর মাকে দৈনিক কমপক্ষে ৪০০ গ্রাম রঙিন ফল ও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি খেতে হবে। এসব ফলমূল ও শাকসবজি মা ও গর্ভের শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা মেটায়।

প্লেটে খাবার সাজানোর একটা সহজ পদ্ধতি আছে, যা প্রতি বেলার খাবারে ফলমূল ও শাকসবজি বাড়াতে সাহায্য করে। প্রথমেই প্লেটে ভাত অথবা রুটি না নিয়ে বরং শাকসবজি ও ফলমূল দিয়ে প্লেটের অর্ধেকটা ভরে ফেলুন। ফল আলাদা বাটিতে নিতে পারেন, তবে পরিমাণটা এমনভাবে চিন্তা করবেন যেন প্লেটের অর্ধেক শাকসবজি আর ফলমূলে ভরে যায়।

এরপর প্লেটে বাকি যে অর্ধেক জায়গা ফাঁকা থাকে, সেটাকে আবার মনে মনে দুই ভাগ করুন। এবারে ফাঁকা জায়গার একভাগে ভাত অথবা রুটির মতো শর্করা নিন। লাল চালের ভাত বা লাল আটার রুটি হলে ভালো হয়। অন্যভাগে প্রোটিন জাতীয় খাবার নিয়ে নিন। যেমন: মাছ, ডাল, মাংস অথবা ডিম। এরপর খাওয়া শুরু করুন।

শিশুর মাকে এভাবে প্লেটে খাবার সাজাতে সহায়তা করতে পারেন। তবে এই সহজ পরামর্শটা শুধু শিশুর মায়ের জন্য নয়। আপনার ও বাড়ির অন্য সদস্যরাও এটি অনুসরণ করে শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে পারেন। বাড়ির সবাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে শিশুর মাকে বেশি করে অনুপ্রেরণা দিতে পারবেন।

কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ এনে রাখুন

গর্ভবতী মায়েদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া খুব কমন। জরুরি অবস্থায় পায়খানাকে দ্রুত নরম করতে এবং পায়খানার রাস্তাকে পিচ্ছিল করে সহজে পায়খানা করার জন্য গ্লিসারিন সাপোজিটরি ব্যবহার করা যেতে পারে।

শিশুর মায়ের জন্য এই ওষুধটা কিনে বাসায় রেখে দিতে পারেন। ওষুধের সাথে থাকা নির্দেশিকা থেকে সংরক্ষণের সঠিক উপায় জেনে নিন। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের ঘরোয়া উপায় জানতে আমাদের এই লেখাটা পড়তে পারেন।

চেকআপ করানো হয়েছে তো?

এ মাসের চেকআপ করানো না হয়ে থাকলে সেটার ব্যবস্থা করতে সাহায্য করুন। নিয়মিত চেকআপে যাওয়া মা ও গর্ভের শিশুর সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।[১৬] চেকআপে কোনো সমস্যা ধরা পড়লে দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেটার চিকিৎসা শুরু করা যাবে।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনাদের গর্ভাবস্থার ২৮তম সপ্তাহ পর্যন্ত মাসে একবার করে চেকআপে যেতে হবে। এরপর ৩৬তম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি ২ সপ্তাহে একবার, তারপর প্রসবের আগ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার চেকআপে যেতে হবে।

তাই চেকআপের জন্য প্রস্তুতি নিন। কোনো প্রশ্ন মাথায় আসলে তা লিখে নিয়ে যান, সঙ্গী বিশেষ কিছু মনে রাখতে চাইলে সেটাও লিখে রাখুন। এতে চেকআপের দিন তাড়াহুড়ায় থাকলেও প্রশ্ন ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।