সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাসে ডিম একটি ভালো খাবার হতে পারে। আমরা ডিম থেকে প্রোটিন ছাড়াও প্রয়োজনীয় কিছু ভিটামিন ও মিনারেল পেয়ে থাকি।
ডিমের পুষ্টিগুণ
ডিম একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার। এতে পাওয়া যায়—
- প্রোটিন
- ভিটামিন ডি
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন বি২
- ভিটামিন বি১২
- ফোলেট বা ফলিক এসিড
- আয়োডিন
দিনে কয়টি ডিম খাওয়া যেতে পারে?
দিনে কতগুলো ডিম খাওয়া যাবে এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট পরামর্শ নেই। ডিমকে সব সময়ই সুষম খাদ্যতালিকার একটি উপাদান হিসেবে রাখা যায়। কিন্তু এটিকে লবণ ও তেল যোগ না করে রান্না করা সবচেয়ে ভালো। যেমন—
- ডিম সেদ্ধ অথবা পানিতে পোঁচ করে এবং কোনো লবণ না মিশিয়ে খেতে পারেন
- তেল অথবা মাখন ব্যবহার না করে ডিম ভর্তা বানিয়ে খেতে পারেন
ডিম ভেজে খেলে ক্যালরি ও চর্বির পরিমাণ ৫০% পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
ডিম সংরক্ষণ
ডিমকে ফ্রিজের মতো ঠান্ডা ও শুকনো কোনো জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে।
রান্না করার সকল স্থানগুলোকে এবং রান্না করার পাত্র, হাড়ি ও অন্যান্য উপকরণকে সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। ডিম হাত দিয়ে ধরার আগে ও পরে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
ডিমের শেলফ-লাইফ হলো ২৮ দিন। অর্থাৎ ডিম পাড়ার দিন থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত এটি খাওয়া উচিত।
‘বেস্ট বিফর ডেট’ বা ‘[এই] তারিখের মধ্যে খাওয়া উত্তম’ জাতীয় নির্দেশনা সম্বলিত ডিমের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দিনের পরে সেটি খাবেন না।
ডিম ঠিকমত সংরক্ষণ না করলে অথবা শেলফ-লাইফ এর পরে খেলে তা থেকে ফুড পয়জনিং হতে পারে।
ডিম ও কোলেস্টেরল
রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল থাকলে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। ডিমে কিছু মাত্রায় কোলেস্টেরল থাকে। তবে ডিমে থাকা কোলেস্টেরলের থেকেও আমরা কতটুকু স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাচ্ছি সেটি আমাদের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রার উপর বেশি প্রভাব ফেলে।
ডাক্তার যদি আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রার প্রতি লক্ষ রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার উচিত হবে খাদ্যতালিকা থেকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বাদ দেওয়া।
ডিম খাওয়া শুধুমাত্র তখনই কমাতে হবে যখন আপনার ডাক্তার অথবা পুষ্টি বিশেষজ্ঞ আপনাকে সুনির্দিষ্টভাবে ডিম খাওয়া কমানোর পরামর্শ দিবেন।
কাঁচা অথবা আধা সেদ্ধ ডিম খাওয়া
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কম এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে কাঁচা বা পুরো সেদ্ধ না করে ডিম খাওয়া উচিত নয়।
অর্থাৎ ডিম এমনভাবে রান্না করতে হবে যেন ডিমের কুসুম ও সাদা অংশ—দুটোই পুরোপুরি সেদ্ধ হয়ে শক্ত হয়ে যায়।
কাঁচা ডিমে টাইফয়েডের জীবাণু থাকতে পারে, যা খাদ্যে বিষক্রিয়া বা ফুড পয়জনিং করতে পারে। তবে সম্পূর্ণভাবে সেদ্ধ বা রান্না হওয়া ডিম খেলে এই ঝুঁকি থাকে না।
ফুড পয়জনিং এড়াতে ডিম পুরোপুরি রান্না করে খাওয়াই সবচেয়ে ভালো।
যেসব খাবারে মুরগির কাঁচা ডিম থাকে
কিছু খাবার প্রস্তুত করার সময়ে কাঁচা ডিম ব্যবহার করা হয়। যেমন—
- মেয়োনেজ ও মেয়োনেজ দিয়ে বানানো কিছু সস ও ড্রেসিং
- কিছু মিষ্টি বা ডেজার্ট জাতীয় খাবার। যেমন: চকলেট মুয, আইসক্রিম, তিরামিসু ও মেরাং
রেস্তোরাঁয় এই জাতীয় খাবার খাওয়ার সময়ে জিজ্ঞেস করে নিন খাবারগুলো বানাতে কাঁচা ডিম ব্যবহার করা হয়েছে কি না।
ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে যাওয়া রোধ করা
খোসার পাশাপাশি ডিমের ভেতরেও ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। সতর্ক না থাকলে ডিম থেকে ব্যাকটেরিয়া হাত, রান্নার পাত্র ও কাটাকাটির স্থানের মাধ্যমে অন্য খাবারেও খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এই টিপসগুলো আপনাকে ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার এড়াতে সাহায্য করতে পারে—
- ডিমকে অন্যান্য খাবার থেকে দূরে রাখুন। ডিম খোসার মধ্যে থাকা অবস্থায় এবং এগুলোকে ভাঙ্গার পর—উভয় ক্ষেত্রেই এগুলোকে অন্য খাবার থেকে দূরে সরিয়ে রাখা উচিত
- অন্য খাবার, রান্নার স্থান ও থালা-বাসনে খোলা ডিম যাতে ছড়াতে না পারে এই ব্যাপারে সতর্ক থাকুন
- ডিম স্পর্শ করার আগে ও পরে আপনার হাত গরম পানি ও সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিন
- ডিম ব্যবহারের পর গরম পানি ও সাবান দিয়ে থালা-বাসন ও পাত্রগুলোকে পরিপূর্ণভাবে পরিষ্কার করে ফেলুন
- ডিম অথবা ডিমের খোসা হাল্কা ভেঙ্গে থাকলে সেটি ব্যবহার করবেন না। কারণ এটির ভেতরে ময়লা অথবা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে