শ্বেতসার জাতীয় খাবার ও কার্বোহাইড্রেট

আমাদের দেহের শক্তি জন্য প্রয়োজন শর্করা। আর শর্করার প্রধান উৎস হলো শ্বেতসার বা স্টার্চ জাতীয় খাবার। সুষম খাদ্যাভ্যাসে প্রতিদিনই শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার থাকা প্রয়োজন।

শ্বেতসার জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে ভাত, আলু ও রুটি। এক্ষেত্রে সবসময় এসবের স্বাস্থ্যকর বিকল্পগুলো বেছে নেওয়া উচিত। যেমন: লাল চালের ভাত, খোসাসহ আলু, লাল আটা বা পূর্ণশস্য গমের তৈরি রুটি-পাউরুটি, পাস্তা ও নুডলস। সাদা বা পরিশোধিত শ্বেতসারের তুলনায় এসব অনেক বেশি পুষ্টি ও ফাইবার বহন করে।

এই আর্টিকেলে শ্বেতসার ও শর্করার গুরুত্ব, এগুলোর ভালো উৎস, খাবার সংরক্ষণ পদ্ধতি এবং খাবারের তালিকায় শ্বেতসার বাড়ানোর উপায় তুলে ধরা হয়েছে।

বিভিন্ন ধরনের শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার

ভাত

শ্বেতসার বা স্টার্চ সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে ভাত বেছে নিতে পারেন। এতে ফ্যাট বা স্নেহ থাকে না বললেই চলে। উপরন্তু ভাত থেকে অনেক শক্তি পাওয়া যায় এবং অর্থ সাশ্রয় হয়।

বিভিন্ন ধরনের চাল বাজারে পাওয়া যায়। যেমন: সাদা চাল, লাল চাল, বাসমতী চাল, চিকন দানার চাল ও মোটা দানার চাল। তবে চাল বেছে নেওয়ার সময়ে পূর্ণশস্য চাল, অর্থাৎ লাল চাল বেছে নেওয়া উচিত।

লাল চালে শর্করা ছাড়াও ফাইবার ও ভিটামিন বি থাকে।

ভাত গরম ও ঠান্ডা দুইভাবেই খাওয়া যেতে পারে। ভাত ঠান্ডা করে খেলে তাতে ‘রেজিস্টান্ট স্টার্চ’ নামক বিশেষ ধরনের শ্বেতসারের পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে।

ফ্রিজে ভাত সংরক্ষণ

রান্না করা ভাত পুনরায় গরম করে খাওয়ার এবং সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ হলো, ভাত রান্না করার পরেও তাতে ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু থেকে যেতে পারে। রান্না করা ভাত কক্ষ তাপমাত্রায় রেখে দিলে এসব জীবাণু থেকে বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন) সৃষ্টি হয়। এসব বিষাক্ত খাবার খেলে বমি ও ডায়রিয়া হতে পারে। মনে রাখতে হবে, খাবার পুনরায় গরম করলেও এসব বিষাক্ত পদার্থকে নিষ্ক্রিয় করা যায় না।

তাই ভাত রান্না করার পরপরই খেয়ে ফেলা সবচেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত। যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে রান্নার এক ঘন্টার ভেতরে ঠান্ডা করে পরবর্তীতে ব্যবহারের আগ পর্যন্ত রেফ্রিজারেটরে রেখে দেওয়া শ্রেয়। ফ্রিজে রাখা ভাত ২৪ ঘন্টার মধ্যে খেয়ে ফেলা উচিত।

ভাত সারারাত ধরে কক্ষ তাপমাত্রায় রয়ে গেলে সেটি ফেলে দেওয়া জরুরি।

ভাত পুনরায় গরম করার সময়ে খুব ভালোমতো গরম করতে হবে। এমনভাবে গরম করা উচিত যেন ভাতের সবদিক থেকেই ভাপ উঠতে থাকে। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভাতটুকু যেন ৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কমপক্ষে দুই মিনিট ধরে গরম হয় সেটি নিশ্চিত করা উচিত।

ভাত একবারের বেশি গরম করা উচিত নয়। দ্বিতীয়বার গরম না করে ভাতটুকু ফেলে দেওয়াই শ্রেয়। যদি ফ্রিজে ভাত কোনো কারণে যথেষ্ট ঠান্ডা না হয়ে থাকে তাহলে সেটিকে আবার গরম না করে ফেলে দেওয়া উচিত।

রুটি-পাউরুটি

লাল আটা ও অন্যান্য পূর্ণশস্য (হোল গ্রেইন) দিয়ে তৈরি রুটি ও পাউরুটি সুষম খাদ্যাভ্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে। এগুলোতে বিভিন্ন ধরনের বীজ মেশানো থাকলে পুষ্টিগুণ আরও বেড়ে যায়।

পূর্ণশস্য রুটি-পাউরুটিতে থাকা শর্করা দেহে শক্তি সরবরাহ করে। পাশাপাশি এগুলোতে ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, ফাইবার ও নানান ধরনের মিনারেল থাকে।

সাধারণ রুটি ও পাউরুটিতেও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। কিন্তু এতে পূর্ণশস্য ও লাল আটার রুটির তুলনায় কম ফাইবার থাকে।

কেউ কেউ গমে অ্যালার্জি ও অসহনীয়তার কথা চিন্তা করে রুটি-পাউরুটি খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। আবার অনেকে মোটা হওয়ার কথা চিন্তা করে রুটি খেতে চান না।

তবে খাবারের তালিকা থেকে নির্দিষ্ট এক ধরনের খাবার সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দিলে সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত হতে হবে।

গমে অ্যালার্জি কিংবা অসহনীয়তা আছে মনে হলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

রুটি-পাউরুটি কক্ষ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়। তবে খাওয়ার সময়ে প্যাকেটের গায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তারিখের প্রতি লক্ষ রাখুন। সবসময় টাটকা রুটি ও পাউরুটি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

আলু

আলু শর্করা জাতীয় খাবারের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এটি শক্তি, ফাইবার, ভিটামিন বি ও পটাশিয়াম এর বেশ ভালো উৎস। এতে অল্প পরিমাণ ভিটামিন সি-ও পাওয়া যায়। পাশাপাশি এটি সস্তা ও সহজলভ্য।

আলু এক ধরনের সবজি হলেও একে শর্করা হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে, যেহেতু এটি শ্বেতসারের একটি প্রধান উৎস। এই কারণে প্রতিদিন যেই পাঁচ পরিবেশন ফল ও শাকসবজি খাওয়া উচিত তার মধ্যে আলু অন্তর্ভুক্ত হবে না।

আলু আমাদের ডায়েটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সেদ্ধ, ভর্তা, পোড়ানো কিংবা বেক করা—যেকোনোভাবে তৈরি করা আলুই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার হতে পারে। তবে রান্নার সময়ে অল্প পরিমাণ তেল ও লবণ ব্যবহার করতে হবে।

আলু ভাজা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও অন্যান্য চিপস ডুবোতেলে ভাজা ও লবণ দেওয়া হয়ে থাকে। এগুলো স্বাস্থ্যকর খাবার নয়।

আলু রান্না ও পরিবেশন করার সময়ে অল্প পরিমাণে আনস্যাচুরেটেড তেল ব্যবহার করুন। যেমন: অলিভ অয়েল ও সূর্যমুখীর তেল।

আলু সেদ্ধ করলে এর কিছু পুষ্টি উপাদান পানিতে চলে যায়। বিশেষ করে সেদ্ধ করার সময়ে খোসা ছাড়ানো থাকলে এমনটি হয়। এটি রোধ করতে চাইলে—

  • খোসাসহ আলু ব্যবহার করুন
  • আলুগুলোকে ডুবিয়ে রাখার জন্য যতটুকু পানি দরকার হয় ঠিক ততটুকুই ব্যবহার করুন
  • আলু সেদ্ধ হওয়ার জন্য যতক্ষণ রান্না করা দরকার ঠিক ততক্ষণই রান্না করুন

আলু সংরক্ষণ করার জন্য আলো থেকে দূরে একটি ঠান্ডা ও শুষ্ক স্থানে রাখুন। এভাবে আলুর অঙ্কুরোদগম প্রতিরোধ করা যায়। আলু থেকে অঙ্কুরোদগম শুরু হলে অঙ্কুরিত সবুজ অংশ কিংবা নষ্ট হয়ে যাওয়া কোনো অংশ খাওয়া উচিত নয়। এই অংশগুলোতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান (টক্সিন) থাকতে পারে।

পাস্তা

পাস্তা আরেকটি স্বাস্থ্যকর খাবার। এটি এক ধরনের গম ও পানি দিয়ে তৈরি করা ডো বা খামির থেকে বানানো হয়। পাস্তাতে আয়রন ও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন বি পাওয়া যায়।

পূর্ণশস্য গম দিয়ে তৈরি পাস্তায় সাধারণ পাস্তার চেয়ে বেশি ফাইবার থাকে। তাই এটি অধিক স্বাস্থ্যকর। এই ধরনের পাস্তা হজম করতে পরিশোধিত খাবারের চেয়ে বেশি সময় লাগে, তাই বেশিক্ষণ ধরে পেট ভরা থাকে।

শুষ্ক পাস্তা কৌটায় ভরে সংরক্ষণ করা যায়। এভাবে এটি সাধারণত অনেকদিন ভালো থাকে। অন্যদিকে ফ্রেশ পাস্তা ফ্রিজে রাখতে হয়। পাস্তা সংরক্ষণের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে প্যাকেটের গায়ে উল্লেখ করা নির্দেশনা অনুসরণ করুন।

সিরিয়াল জাতীয় খাবার

গম, ওটস, বার্লি, যব ও চালের মতো বিভিন্ন শস্য থেকে ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল বানানো হয়ে থাকে। পূর্ণশস্য বা হোলগ্রেইন সিরিয়াল আমাদের আয়রন, ফাইবার, প্রোটিন ও বিভিন্ন বি-ভিটামিন এর চাহিদা পূরণে সাহায্য করতে পারে। উচ্চ আঁশযুক্ত সিরিয়াল শরীরে লম্বা সময় ধরে ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে।

ওটস বা ওটমিলের তৈরি সিরিয়াল ও অন্যান্য পূর্ণশস্য সিরিয়াল সকালের নাস্তা হিসেবে খাওয়া স্বাস্থ্যকর। এ ছাড়া ভুট্টা ও বার্লি দিয়ে তৈরি করা সিরিয়ালও স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়।

তবে বাজার ও বিভিন্ন সুপারশপে পাওয়া অনেক সিরিয়ালই পরিশোধিত শস্য দ্বারা তৈরি হয়। এগুলোতে নগণ্য পরিমাণে পূর্ণশস্য ও ফাইবার থাকে। তাছাড়া উচ্চমাত্রায় লবণ ও চিনি মেশানো থাকতে পারে। তাই সিরিয়াল কেনার সময়ে প্যাকেটের গায়ে খাদ্যের উপাদান সংক্রান্ত তথ্য বা ফুড লেবেল পড়ে নিন।

বেশি বেশি শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার উপায়

প্রতিবেলার খাবারের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ শ্বেতসার জাতীয় শর্করা দিয়ে পূরণ করা উচিত। নিচের টিপসগুলো ডায়েটে শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করবে—

নাস্তা

  • লাল আটার মতো পূর্ণশস্য দিয়ে তৈরি রুটি খেতে পারেন। এই ধরনের রুটির সাথে খোসাসহ রান্না করা সবজি কিংবা সালাদ খাওয়া যায়। এ ছাড়া আলাদা করে ফল খেতে পারেন। এভাবে উচ্চ পরিমাণে স্বাস্থ্যকর শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
  • সকালের নাস্তায় কর্ণ ফ্লেকস জাতীয় ‘ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল’ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটির বিকল্প হিসেবে পূর্ণশস্য সিরিয়াল বেছে নিন। প্রয়োজনে প্রথমে পছন্দের সিরিয়ালের সাথে কিছু পূর্ণশস্য সিরিয়াল মিশিয়ে খাওয়া যায়।
  • ওটস খেতে পারেন। এটি সকালের নাস্তা হিসেবে খুব স্বাস্থ্যকর। রান্না করাও সহজ। ওটস, দুধ অথবা দই ও ফল দিয়ে সহজেই নাস্তা তৈরি করে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এই ধরনের পুষ্টিকর নাস্তা খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকবে।

দুপুরের ও রাতের খাবার

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে লাল চালের ভাত খেতে পারেন। সেই সাথে বেশি করে শাকসবজি খেতে হবে। এখানে মনে রাখতে হবে, সাদা চালের তুলনায় লাল চাল অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। লাল চালের ভাত খেলে অধিক পরিমাণে ফাইবারসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করা সহজ হবে। এমনকি লাল চাল ওজন কমাতেও সহায়তা করবে।
  • সেদ্ধ অথবা বেক করা আলু খেতে পারেন। খোসাসহ খেলে বেশি বেশি ফাইবার পাওয়া যায়। তবে ভর্তা করে খেতে চাইলে কতটুকু তেল ব্যবহার করছেন সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
  • পূর্ণশস্য ও বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর বীজ (যেমন: মিষ্টিকুমড়ার বীজ ও সূর্যমুখীর বীজ) দিয়ে তৈরি রুটি-পাউরুটি বেছে নিন। এই ধরনের রুটিতে বেশি ফাইবার পাওয়া যায়।
  • নুডলস ও পাস্তাও খেতে পারেন। তবে এগুলো চর্বিবহুল সস ব্যবহার করে তৈরি করা উচিত নয়। রান্নার সময় বিভিন্ন ধরনের সবজি যোগ করে এগুলোকে আরও উপাদেয় বানানো যায়।

শ্বেতসার ও শর্করা

খাবার ও পানীয় থেকে পাওয়া প্রধান তিনটি পুষ্টি উপাদান হচ্ছে—শর্করা, আমিষ ও ফ্যাট।

শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবারে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট থাকে। শর্করা শরীরে শক্তি যোগানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। শর্করার পাশাপাশি শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবারে অনেক পুষ্টি উপাদানও থাকে। যেমন: ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স।

হজমের প্রক্রিয়ায় শর্করা জাতীয় খাবার ভেঙ্গে গ্লুকোজ বা সুগার তৈরি হয়। এই সুগার দেহের কোষ, টিস্যু ও অঙ্গগুলোর শক্তির প্রধান উৎস।

শ্বেতসার ও ফাইবার

ফাইবার বা আঁশ হলো ফল, সবজি ও শস্যের এমন অংশ যা আমাদের পাকস্থলী হজম করতে পারে না। তবে এটি খাবার পরিপাকের প্রক্রিয়ায় এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পূর্ণশস্য ও খোসাসহ আলু দিয়ে তৈরি খাবার ফাইবারযুক্ত শ্বেতসারের ভালো উৎস।

ফাইবার পেটকে বেশি সময়ের জন্য ভরা রাখে। তাই অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার সম্ভাবনা ও প্রয়োজন কমে যায়। ফলে পূর্ণশস্য ও খোসাসহ আলুর মতো শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।

কিছু ফাইবার খাওয়ার পরে পানিতে মিশে যায় না। এই ধরনের ফাইবার হজম প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময়ে গোটা অবস্থাতেই থাকে। এটি পানি শোষণ করার মাধ্যমে পায়খানা নরম করতে সাহায্য করে এবং মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ফলে শরীর থেকে সহজেই মল বেরিয়ে যেতে পারে। এভাবে ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে ও পায়খানা নিয়মিত হতে সাহায্য করে।

এই ধরনের ফাইবারযুক্ত শ্বেতসারের মধ্যে রয়েছে—

  • লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি
  • পূর্ণশস্য (হোল গ্রেইন) পাউরুটি, পাস্তা ও নুডলস
  • খোসাসহ আলু
  • খোসা ও বিচিসহ ফল-সবজি

শ্বেতসার ও ওজন বৃদ্ধি

ফ্যাট জাতীয় খাবারে থাকা শর্করার তুলনায় শ্বেতসার জাতীয় খাবারে থাকা শর্করায় ক্যালরি অনেক কম থাকে। তাই খাবারের তালিকায় পরিমিত পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ শ্বেতসার রাখলে সেটি ওজনের ভারসাম্য রক্ষা করতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

এক্ষেত্রে শ্বেতসার জাতীয় খাবার রান্না করার সময়ে যেন তেল, বাটার ও ঘি এর মতো অতিরিক্ত ফ্যাট যোগ করা না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ফ্যাট খাবারে ক্যালরির পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দেয়। তাই পোলাও, ফ্রাইড রাইস, আলুর চিপস ও পরোটা বানাতে ব্যবহৃত তেল ও ঘি, টোস্টের সাথে খাওয়া বাটার ও পাস্তাতে মেশানো বিভিন্ন চর্বিবহুল সস এড়িয়ে চলতে হবে।

অনেকে মনে করেন যে শ্বেতসার জাতীয় খাবার খেলেই মানুষ মোটা হয়ে যায়। এই ধারনাটি সঠিক নয়। ওজন বৃদ্ধির কারণ হলো অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ। শ্বেতসার জাতীয় খাবার পরিমিত পরিমাণে খেলে ওজন বাড়ে না।

উল্লেখ্য, কিছু শ্বেতসার জাতীয় খাবার পরোক্ষভাবে ওজন বাড়াতে পারে। যেমন, নাস্তায় সাদা পাউরুটি ও জেলির মতো চিনিবহুল খাবার খেলে কিছুক্ষণ পরই আবার ক্ষুধা লাগতে পারে। কারণ এসব খাবারে ফাইবারের পরিমাণ নগণ্য, তাই পেট বেশিক্ষণ ভরা থাকে না। ফলে বেশি খাবার খেয়ে ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অন্যদিকে ফাইবার ও প্রোটিন সমৃদ্ধ সুষম নাস্তা খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে। ফলে পরের বেলার খাবার খাওয়ার আগে আর কিছু খাওয়ার প্রয়োজন হবে না। তাই শ্বেতসার বাছাই করার ক্ষেত্রে ফাইবার ও পুষ্টির বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

শ্বেতসার ও ক্যান্সারের ঝুঁকি

বিভিন্ন ধরনের খাবার (যেমন: আলু ও পাউরুটির মতো শ্বেতসার জাতীয় খাবার) দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করলে তাতে অ্যাক্রিলামাইড নামক এক ধরনের রাসায়নিক তৈরি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যাক্রিলামাইড থেকে ক্যান্সার হতে পারে।

ঘরে তৈরি খাবারে অ্যাক্রিলামাইডের ঝুঁকি কমানোর জন্য চারটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হলো—

১. সোনালি রঙকে প্রাধান্য দিন

আলু, মিষ্টি আলু, শালগম ও বীট জাতীয় সবজি অথবা রুটি-পাউরুটি দিয়ে খাবার তৈরির সময়ে এগুলোর রঙের বিষয়ে লক্ষ রাখুন। ভাজা, গ্রিল, বেক, টোস্ট কিংবা রোস্ট করার সময়ে এগুলো সোনালি অথবা হালকা বাদামী রঙ এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। এর থেকে বেশি গাঢ় রঙ হলে সেটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

২. প্যাকেটের নির্দেশনা মেনে চলুন

আলুর চিপস ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মতো প্যাকেটজাত ফ্রোজেন খাবার তৈরি করার সময়ে প্যাকেটের গায়ে উল্লেখ করা রান্নার নিয়ম অনুসরণ করুন। এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে রান্নার উপায় তুলে ধরার জন্য উল্লেখ করা থাকে। অর্থাৎ শ্বেতসার জাতীয় খাবার যেন দীর্ঘক্ষণ ধরে কিংবা অতিরিক্ত তাপমাত্রায় রান্না না করা হয় সেই উদ্দেশ্যে এসব নির্দেশনা প্রদান করা হয়ে থাকে।

৩. বৈচিত্র্যপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ খাবার গ্রহণ করুন

খাবারে অ্যাক্রিলামাইড থাকার ঝুঁকি পুরোপুরি এড়িয়ে চলা সম্ভব হয় না। তবে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও সুষম খাবারের তালিকা মেনে চললে সেটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। এজন্য খাবারের তালিকায় শ্বেতসারের পাশাপাশি প্রতিদিন পাঁচ পরিবেশন ফল ও শাকসবজি রাখতে হবে। সাধারণ হিসাবে প্রতি ৮০ গ্রাম টাটকা ফল অথবা শাকসবজিকে এক পরিবেশন ধরা হয়।

আলু, মিষ্টি আলু, শালগম ও বীটের মতো সবজি ভাজা কিংবা রোস্ট করার পরিবর্তে পানিতে অথবা ভাপে সেদ্ধ করে খাওয়া যায়। এভাবে অ্যাক্রিলামাইডের ঝুঁকি কমার পাশাপাশি এগুলোতে থাকা ফ্যাটের পরিমাণও কমানো যাবে।

৪. কাঁচা আলু ফ্রিজে রাখা থেকে বিরত থাকুন

কাঁচা আলু ফ্রিজে রাখলে অ্যাক্রিল্যামাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কাঁচা আলু একটি ঠান্ডা ও অন্ধকার স্থানে ৬° সেলসিয়াসের অধিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা উচিত।