এ সপ্তাহের হাইলাইটস
কৃত্রিম উপায়ে প্রসব শুরু করা
প্রসবে দেরি হতে থাকলে মা ও শিশুর দুজনের ক্ষেত্রেই কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।[১] তাই এ সপ্তাহে ডাক্তার আপনাকে কৃত্রিমভাবে প্রসব শুরু করানোর পরামর্শ দিতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে সিজার করানোর পরামর্শও দিতে পারেন।
প্রসব-পরবর্তী চেকআপ
ডেলিভারির পরও অন্তত ৪৫ দিন মায়ের স্বাস্থ্য গভীর পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। প্রসবের পর মা ও নবজাতকের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে অন্তত ৪ বার চেকআপ করাতে হবে।[২] প্রসব-পরবর্তী চেকআপের নিয়ম, শিডিউল ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে এখনই জেনে রাখুন।
এক পাশে কাত হয়ে ঘুমান
এ সপ্তাহেও ঘুমানোর সময়ে আপনার সুবিধামতো একদিকে কাত হয়ে ঘুমাবেন। কারণ চিৎ হয়ে ঘুমালে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।[৩][৪] ঘুমের সময়ে সাপোর্ট দেয় এমন আরামদায়ক কয়েকটা বালিশ নিয়ে ঘুমাতে পারেন।
আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান
বিগত সপ্তাহগুলোর মতো এ সপ্তাহেও নিয়মিত আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান। এগুলো গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[৫][৬] পাশাপাশি আপনাকে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।[৭]
- মাসে কত দিন? ১০ মাস ২ সপ্তাহ
- কোন ট্রাইমেস্টার? তৃতীয় ত্রৈমাসিক
- আর কত সপ্তাহ বাকি? ০
৪২ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি
আপনার গর্ভের শিশুর ওজন এখন প্রায় ৩–৪ কেজি। যদিও সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয় তবুও আপনি কল্পনা করে নিতে পারেন যে, আপনার গর্ভে ছোট্ট শিশু এখন প্রায় একটি বড় কাঁঠালের সমান লম্বা।
শিশু জন্মের সম্ভাব্য তারিখ
শিশু জন্মের সম্ভাব্য তারিখ এখন পার হয়ে যাওয়ার কথা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য তারিখের ২ সপ্তাহ আগে কিংবা পরের সময়টুকুতে শিশু পৃথিবীর আলোতে আসে।[৮] তাই ঘাবড়ে যাবেন না। যেকোনো মুহূর্তে প্রসব শুরু হতে পারে!
শিশুর ঘুমের রুটিন
গর্ভের ভেতরে আপনার শিশুর একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে ঘুমানোর এবং একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে জেগে থাকার রুটিন আছে।[৯] আপনি যখন ঘুমাতে যাচ্ছেন তখন হয়তো আপনার শিশু পুরোপুরি জেগে আছে। এমনকি সে হয়তো নড়াচড়া করতে ব্যস্ত।
ছোট্ট শিশু এখনো নিয়মিত নড়াচড়া করছে
আপনার গর্ভের শিশু এখন বেশ বড়সড় হয়ে গিয়েছে। তাই গর্ভের ভেতরে সে এখন অনেকটা চাপাচাপি করে শুয়ে আছে। তবুও তার নড়াচড়া কমে কিংবা বন্ধ হয়ে যাবে না।[১০]
শিশু তার নির্দিষ্ট ধরনে এখনো নিয়মিতভাবে নড়াচড়া করতে থাকবে। আপনার গর্ভের শিশুর নড়াচড়া স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে অথবা বন্ধ হয়ে গেলে জরুরি ভিত্তিতে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।[১১] কেননা এটি কোনো জটিলতার লক্ষণ হতে পারে।
নড়াচড়া কমেছে কি না সেটা বুঝতে কষ্ট হলে বাম কাত হয়ে ২ ঘন্টা শুয়ে থাকুন। এসময়ে ১০ বারের কম নড়াচড়া টের পেলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।[১২]
নড়াচড়া কমে যাওয়া মানেই যে খারাপ কিছু ঘটে গেছে, এমন না। তবে ডাক্তার দেখিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া প্রয়োজন।
৪২ সপ্তাহে মায়ের শরীর
দেরিতে প্রসব
গর্ভাবস্থার ৪২ সপ্তাহ পার হয়ে গেলে গর্ভফুল আগের মত ভালোভাবে কাজ করতে পারে না।[১৩] প্রসবে দেরি হতে থাকলে আরও কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে—মা ও শিশুর দুজনের ক্ষেত্রেই। তাই এ সপ্তাহে ডাক্তার আপনাকে কৃত্রিমভাবে প্রসব শুরু করানোর পরামর্শ দিতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে সিজার করানোর পরামর্শও দিতে পারেন।
দেরিতে প্রসব নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করবেন না। ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখের পরে প্রসব হওয়া বেশিরভাগ শিশুই সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে জন্মে।[১৪]
ধৈর্য হারানো, ক্লান্তি, ও হতাশা
এসময়ে এসে অন্যান্য অনেকের মতো আপনারও ক্লান্ত, ধৈর্যহারা কিংবা হতাশ লাগতে পারে। আপনজনরা হয়তো বিভিন্ন কথা বলে আপনাকে মানসিক সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করবে। তাদের সাথে আপনার অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে পারেন। পাশাপাশি যতখানি সম্ভব রিল্যাক্সড থাকার চেষ্টা করুন।
সিজারের পর সেরে ওঠা
যদি সিজার করা প্রয়োজন হয়, তাহলে সিজারের পর আপনার অবস্থা মোটামুটি স্থিতিশীল হলে শিশু আপনার কাছেই থাকবে। এসময়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করবেন।
অপারেশনের পর সাধারণত ৩–৪ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। হাসপাতাল থেকে ছুটি নেওয়ার আগে অবশ্যই জেনে নিবেন সিজার অপারেশনে কোন ধরনের সেলাই দেয়া হয়েছে, সেলাই কাটাতে হবে কি না, কাটাতে হলে কবে ও কোথায় কাটাতে হবে।
সিজার অপারেশনের পর দ্রুত সেরে উঠতে করণীয়গুলো জানতে আমাদের এই লেখাটি পড়তে পারেন।
প্রসব-পরবর্তী চেকআপ
ডেলিভারির পর মা ও নবজাতকের সুস্থতা নিশ্চিত করতে অন্তত ৪ বার চেকআপ করাতে হয়।[১৫] প্রসবের ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রথম চেকআপ, ২–৩ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় চেকআপ, ৪–৭ দিনের মধ্যে তৃতীয় চেকআপ ও ৪২–৪৫ দিনের মধ্যে চতুর্থ চেকআপ করাতে হয়।
ডেলিভারির পর আপনার ও শিশুর স্বাস্থ্যের অবস্থার ওপরে নির্ভর করে আরও ঘন ঘন চেকআপের প্রয়োজন হতে পারে। ডেলিভারির পরও গর্ভকালীন চেকআপের কাগজগুলো সংরক্ষণ করুন, কারণ এগুলো ভবিষ্যতে প্রসব-পরবর্তী চেকআপের সময়ে কাজে লাগতে পারে।
অন্যান্য লক্ষণ
এ সপ্তাহে আপনার আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—
- পেট টান-টান বা শক্ত হওয়া। একে ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্র্যাকশনও বলা হয়
- ঘুমের সমস্যা
- স্ট্রেচ মার্ক বা ফাটা দাগ
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে পেটের চারপাশের পেশিতে ব্যথা করা
- পাইলস
- মাথা ব্যথা
- কোমর ব্যথা
- পেট ফাঁপা লাগা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা
- অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা
- পা কামড়ানো
- মাথা ঘুরানো
- হাত–পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া
- প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হওয়া
- যোনিপথে ইনফেকশন হওয়া
- মুখে মেছতার মতো বাদামি ও ছোপ ছোপ দাগ পড়া
- তৈলাক্ত ত্বক ও ত্বকে দাগ পড়া
- চুল ঘন ও ঝলমলে হওয়া
এ ছাড়াও এই সপ্তাহে আপনার প্রথম দিকের সময়ের লক্ষণগুলো থাকতে পারে। যেমন—
- ঘন ঘন মনমেজাজ বদলানো বা মুড সুইং। এই খুশি, আবার এই মন খারাপ—এমনটা হতে পারে। পাশাপাশি এই সময়ে ছোটোখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা অথবা কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
- অদ্ভুত জিনিস খাওয়ার ইচ্ছা হওয়া। যেমন: মাটি
- তীব্র ঘ্রাণশক্তি
- স্তনে ব্যথা
- স্তন থেকে তরল নিঃসৃত হওয়া
- সাদাস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
- যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত হওয়া। এমন হলে অবশ্যই একজন ডাক্তার দেখাবেন, কারণ এটা মারাত্মক জটিলতার লক্ষণ হতে পারে
এ সপ্তাহে বাবার করণীয়
সঙ্গীকে চেকআপে যেতে সাহায্য করুন
এসময়ে সপ্তাহে একবার করে চেকআপে যাওয়া জরুরি। চেকআপে গেলে ডাক্তার পরামর্শ দিবেন যে কৃত্রিমভাবে প্রসব শুরু করতে হবে কি না বা সিজার করা লাগবে কি না। যে পদ্ধতি মা ও শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ও উপযুক্ত, ডাক্তার সেই ব্যাপারে আপনাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন। তাই এখনো এ সপ্তাহের চেকআপ না করিয়ে থাকলে আজই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে চেকআপের ব্যবস্থা করুন। শেষ পর্যায়ের এই চেকআপগুলোতে আপনি অবশ্যই সাথে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
সেরে ওঠা সম্পর্কে জানুন
প্রসবের পর শিশুর মায়ের সেরে উঠতে বেশ সময় লাগতে পারে। এসময়ে আপনি কীভাবে সাহায্য করতে পারেন তা নিয়ে এখন থেকে জানাশোনা শুরু করুন। প্রসব-পরবর্তী চেকআপের শিডিউলসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান জেনে রাখতে আমাদের এই লেখাটি পড়ে নিতে পারেন।
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মায়ের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে আপনার সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে—সেজন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখুন। শিশুর সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি শিশুর মায়ের খাওয়াদাওয়া, ব্যায়াম ও বিশ্রাম ঠিকমতো হচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখার চেষ্টা করুন।
মাথা ঠাণ্ডা রেখে অপেক্ষা করুন
আপনাদের সন্তান এখন যেকোনো মুহূর্তে জন্মগ্রহণ করতে পারে! এই অনিশ্চয়তাকে চাপ হিসেবে না নিয়ে যতটা সম্ভব উপভোগ করুন। ঠিকঠাক প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে দুশ্চিন্তা কমানো সহজ হতে পারে। সম্ভব হলে নিজের জন্য খানিকটা সময় বের করুন। মাথা থেকে দুশ্চিন্তা সরিয়ে পছন্দের কোনো কাজ করে সময় কাটান।