এ সপ্তাহের হাইলাইটস
নতুন শিশুকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হোন!
নতুন শিশুর জন্য অপেক্ষার প্রহর প্রায় শেষ হয়ে এসেছে! কিছুদিনের মধ্যেই আপনার গর্ভের ছোট্টমণি পৃথিবীর আলো দেখবে। যেকোনো মুহূর্তে প্রসব শুরু হতে পারে। আগামী কয়েকটা সপ্তাহ হয়তো আপনাদের খুব ব্যস্ত সময় কাটবে। তাই এখনই যতখানি সম্ভব প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন।
এক পাশে কাত হয়ে ঘুমান
এ সপ্তাহেও ঘুমানোর সময়ে আপনার সুবিধামতো ডান অথবা বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমাবেন। কারণ চিৎ হয়ে ঘুমালে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।[১][২] ঘুমের সময়ে সাপোর্ট দেয় এমন আরামদায়ক কয়েকটা বালিশ নিয়ে ঘুমাতে পারেন।
আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান
বিগত সপ্তাহগুলোর মতো এ সপ্তাহেও নিয়মিত আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যাবেন। এগুলো গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[৩][৪] পাশাপাশি আপনাকে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।[৫]
- মাসে কত দিন? ১০ মাস
- কোন ট্রাইমেস্টার? তৃতীয় ত্রৈমাসিক
- আর কত সপ্তাহ বাকি? ০
৪০ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি
আপনার গর্ভের শিশু এখন মাথা থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত প্রায় ৫১.২ সেন্টিমিটার লম্বা—প্রায় একটি বড় কাঁঠালের সমান। তার ওজন প্রায় ৩.৫ কেজি হয়ে গিয়েছে।
শিশু প্রসবের জন্য প্রস্তুত
ছোট্ট সোনামণি পৃথিবীর আলো দেখার জন্য প্রস্তুত।[৬] সে এখন ফুল টার্ম, অর্থাৎ মায়ের গর্ভে বেড়ে ওঠার জন্য সে পর্যাপ্ত সময় পেয়েছে।[৭] সে হয়তো এখন মাথা নিচের দিকে নিয়ে আপনার তলপেটের ভেতরে ঢুকে প্রসবের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।
শিশুর হাতের নখ লম্বা হচ্ছে
কয়েক সপ্তাহ আগে হাতের আঙুলের নখগুলো লম্বা হয়ে আঙুলের মাথা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল।[৮] এই সপ্তাহে আঙুলের নখগুলো লম্বা হয়ে আঙুলের মাথা কিছুটা ছাড়িয়ে যাবে।[৯]
ছোট্ট শিশু এখন বেশ নাদুস-নুদুস
শেষ কয়েক সপ্তাহে শিশুর শরীরে ভালো পরিমাণে চর্বি জমে—দিনে প্রায় ১৪ গ্রাম করে।[১০] তাকে দেখতে এখন অনেকটা নাদুস-নুদুস লাগে।[১১] তার ত্বক এখন কোমল ও তুলতুলে।
৪০ সপ্তাহে মায়ের শরীর
নতুন শিশুর জন্য অপেক্ষার প্রহর প্রায় শেষ হয়ে এসেছে! কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো আপনার গর্ভের ছোট্টমণি পৃথিবীর আলো দেখবে।
ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ
সম্ভবত এই সপ্তাহের শেষের দিকে আপনার ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ। তবে বেশিরভাগ নারী ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখের ২ সপ্তাহ আগে কিংবা পরের সময়টুকুতে সন্তান জন্মদান করেন।[১২] অর্থাৎ আপনার শিশু যেকোনো মুহূর্তে জন্মগ্রহণ করতে পারে!
কৃত্রিমভাবে প্রসব শুরু করানো
প্রসব হতে বেশি দেরি হলে ডাক্তার আপনাকে কৃত্রিমভাবে প্রসব শুরু করানোর পরামর্শ দিতে পারেন। নির্দিষ্ট ওষুধ বা ওষুধ ছাড়া বিশেষ কিছু পদ্ধতির মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে প্রসব শুরু করানোর চেষ্টা করা হতে পারে।
মেমব্রেন সুইপ
প্রসবে দেরি হলে ডাক্তার বিশেষ একটা পদ্ধতিতে জরায়ুমুখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে প্রসব শুরু করার ব্যবস্থা করতে পারেন। এই পদ্ধতিকে ডাক্তারি ভাষায় ‘মেমব্রেন সুইপ’ বলা হয়।
গর্ভের শিশুকে ঘিরে থাকা থলের মতো পর্দাগুলোকে জরায়ুমুখ থেকে আলাদা করা হয়। এতে করে প্রসবের জন্য সহায়ক বিশেষ হরমোন নিঃসৃত হয়।
গর্ভধারণের ৪০ সপ্তাহ পর এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে প্রাকৃতিকভাবে প্রসব শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেড়ে যায়।[১৩] তবে এই পদ্ধতিতে কিছুটা অস্বস্তি হতে পারে।
গর্ভকালীন চেকআপ
শেষের এই সময়টায় আপনার ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে শিডিউল অনুযায়ী চেকআপে যাওয়া জরুরি।
সাধারণত এই পর্যায়ে প্রতি সপ্তাহে চেকআপে যেতে বলা হয়। আপনারও এমন শিডিউল হলে এই সপ্তাহে চেকআপ করানোর ব্যবস্থা করে ফেলুন।
অন্যান্য লক্ষণ
এ সপ্তাহে আপনার আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—
- পেট টান-টান বা শক্ত হওয়া। একে ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্র্যাকশনও বলা হয়
- ঘুমের সমস্যা
- স্ট্রেচ মার্ক বা ফাটা দাগ
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে পেটের চারপাশের পেশিতে ব্যথা করা
- পাইলস
- মাথা ব্যথা
- কোমর ব্যথা
- পেট ফাঁপা লাগা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা
- অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা
- পা কামড়ানো
- মাথা ঘুরানো
- হাত–পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া
- প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হওয়া
- যোনিপথে ইনফেকশন হওয়া
- মুখে মেছতার মতো বাদামি ও ছোপ ছোপ দাগ পড়া
- তৈলাক্ত ত্বক ও ত্বকে দাগ পড়া
- চুল ঘন ও ঝলমলে হওয়া
এ ছাড়াও এই সপ্তাহে আপনার প্রথম দিকের সময়ের লক্ষণগুলো থাকতে পারে। যেমন—
- ঘন ঘন মনমেজাজ বদলানো বা মুড সুইং। এই খুশি, আবার এই মন খারাপ—এমনটা হতে পারে। পাশাপাশি এসময়ে ছোটোখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা অথবা কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
- অদ্ভুত জিনিস খাওয়ার ইচ্ছা হওয়া। যেমন: মাটি
- তীব্র ঘ্রাণশক্তি
- স্তনে ব্যথা
- স্তন থেকে তরল নিঃসৃত হওয়া
- সাদাস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
- যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত হওয়া। এমন হলে অবশ্যই একজন ডাক্তার দেখাবেন, কারণ এটা মারাত্মক জটিলতার লক্ষণ হতে পারে
এ সপ্তাহে বাবার করণীয়
ডেলিভারির সময় একেবারেই কাছে চলে এসেছে! এখন আমরা ডেলিভারি সংক্রান্ত তথ্যের পাশাপাশি শিশুর জন্মের পর পর কোন কাজগুলো গুরুত্বপূর্ণ, সেটাও তুলে ধরছি। এতে আপনি ডেলিভারির পর থেকেই নতুন শিশু ও শিশুর মায়ের যত্ন নিতে পারবেন।
ন্যাপি বা ডায়াপার পাল্টানো শিখে রাখুন
শিশু ন্যাপি বা ডায়াপার ভেজালে তা কীভাবে পালটাবেন, তা শিখে রাখুন। আপনার আপনজন ও বন্ধুদের মধ্যে কারও এই বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকলে তাদের কাছ থেকে টিপসগুলো জেনে নিন। আপনার মাথায় এই সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন থাকলে তারা হয়তো সেটারও উত্তর দিতে পারবেন। ন্যাপি পাল্টানোর সময়ে শিশুর সাথে কিছুক্ষণ একান্তে সময় কাটানোও হয়ে যাবে।
নিজেদের জন্য সময় নিন
গত ৯ মাস ধরে হয়তো আপনাদের সব চিন্তাভাবনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল আপনাদের অনাগত সন্তান। গর্ভাবস্থার একেবারে শেষের এসময়ে এসে নাহয় নিজের ও শিশুর মায়ের দিকে একটু মনোযোগ দিন। একসাথে একটু রিল্যাক্স করুন।
দুজনেই উপভোগ করেন এমন একটা কাজ বেছে নিতে পারেন। এতে ডেলিভারির জন্য একটানা অপেক্ষা করা থেকে বিরতি পাবেন। পাশাপাশি পরিবারে নতুন সদস্য যোগ হওয়ার আগে শেষবারের মতো একান্তে কিছু সময় কাটাতে পারবেন।
নতুন শিশুকে নিয়ে বাড়ি ফেরার মানসিক প্রস্তুতি নিন
হাসপাতাল থেকে আপনার সোনামণি ও শিশুর মাকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পর কীভাবে তাদের দেখভাল করবেন, তা নিয়ে আপনার মনে অনেক ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে। শিশুর মা, পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং ডাক্তারের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করতে পারেন।
দুজনে মিলে শিশুর যত্নের কাজগুলো শেয়ার করতে পারেন। শিশুর মা যখন শিশুকে দুধ খাওয়াবেন, তখন তাকে একটা গ্লাসে পানি এনে দিন। শিশুর পরনের ন্যাপি বা ডায়াপার বদলে দিন। তাকে খাওয়ানোর পর কীভাবে ঢেঁকুর তোলাবেন, কান্না কীভাবে থামাবেন, কীভাবে ঘুম পাড়াবেন—এসব এখনই শিখে রাখুন।
শিশুর যত্ন নেওয়ার জন্য দোকান থেকে হয়তো অনেক কিছু কিনতে হবে। সেগুলোর একটা তালিকা তৈরি করে শিশুর মাকে দেখান। তার মাথায় আরও কোনো কিছু কেনার থাকলে সেটা লিস্টে যোগ করে কেনাকাটা করে ফেলুন।
আগামী দিনগুলোতে আপনারা ধীরে ধীরে আপনাদের ছোট্টমণি ও তার দেখাশোনা সম্পর্কে খুঁটিনাটি অনেক কিছু শিখে যাবেন। তাই তাড়াহুড়া না করে দুজনে মিলে ধৈর্য ধরে এই যাত্রায় এগিয়ে যান। মন খুলে নিজেদের অনুভূতিগুলো ভাগাভাগি করে নিলে আপনাদের মধ্যে বোঝাপড়া বাড়ানো সহজ হতে পারে।