এ সপ্তাহের হাইলাইটস
বিপদ চিহ্নগুলো জেনে রাখুন
আপনিসহ বাসার সকলের গর্ভাবস্থার বিপদ চিহ্নগুলো জেনে রাখা প্রয়োজন। কোনো জরুরি অবস্থা দেখা দিলে সেসব লক্ষণ চিহ্নিত করে যত দ্রুত সম্ভব সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
এক পাশে কাত হয়ে ঘুমান
এ সপ্তাহেও ঘুমানোর সময়ে আপনার সুবিধামতো ডান অথবা বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমাবেন। কারণ চিৎ হয়ে ঘুমালে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।[১][২] ঘুমের সময়ে সাপোর্ট দেয় এমন আরামদায়ক কয়েকটা বালিশ নিয়ে ঘুমাতে পারেন।
আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান
বিগত সপ্তাহগুলোর মতো এ সপ্তাহেও নিয়মিত আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যাবেন। এগুলো গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[৩][৪] পাশাপাশি আপনাকে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।[৫]
- মাসে কত দিন? ৮ মাস ১ সপ্তাহ
- কোন ট্রাইমেস্টার? তৃতীয় ত্রৈমাসিক
- আর কত সপ্তাহ বাকি? ৭
৩৩ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি
আপনার গর্ভের শিশু এখন মাথা থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত প্রায় ৪৩.৭ সেন্টিমিটার লম্বা—প্রায় দুটি ফজলি আমের সমান। তার ওজন এখন প্রায় ১.৯ কেজি।
শরীরের হাড়গুলো মজবুত হচ্ছে
গর্ভের শিশুর শরীরের হাড়গুলো শক্ত ও মজবুত হচ্ছে।[৬] তবে তার মাথার খুলির হাড়গুলো শরীরের অন্যান্য হাড়ের তুলনায় এখনো অনেক নরম ও নমনীয়।
মাংসপেশি গড়ে উঠছে
গর্ভাবস্থার প্রথমদিকেই হাত-পায়ের মাংসপেশি তৈরি হতে শুরু করে।[৭] এখন সেগুলো আরও শক্তপোক্ত হচ্ছে। সাথে সাথে শিশুর নড়াচড়াও অনেকখানি বেড়ে যাচ্ছে।
সে এখন শ্বাস নিতে শিখছে
ছোট্ট শিশু গর্ভের ভেতরে শ্বাস নেওয়ার অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে। এতে তার ফুসফুসের বৃদ্ধি তরান্বিত হয়। সন্ধ্যার দিকে তার শ্বাসের গতি সবচেয়ে বেশি থাকে।[৮] আপনি কোনো কিছু খেলেও তার শ্বাসের গতি বেড়ে যায়।[৯]
শিশুর মস্তিষ্ক শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে
ছোট্ট শিশুর ব্রেইন বা মস্তিষ্ক দ্রুত বিকশিত হচ্ছে এবং সুগঠিত হচ্ছে।[১০] মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র ইতোমধ্যে এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে তা শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এবং শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে পারবে।[১১]
৩৩ সপ্তাহে মায়ের শরীর
প্রসব শুরুর লক্ষণ
এখন থেকেই প্রসব শুরু হওয়ার লক্ষণগুলো জেনে নিন। এসব লক্ষণের মধ্যে রয়েছে কিছুক্ষণ পর পর নিয়মিত পেটে ব্যথা হওয়া, ‘শো’ বা আঠালো রক্ত-মিশ্রিত স্রাবের দলা যাওয়া, মাসিকের রাস্তা দিয়ে পানি ভাঙ্গা, পায়খানার চাপ আসা এবং এমন কোমর ব্যথা হওয়া যা আপনার সাধারণত হয় না।
এসব লক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই লেখাটা পড়তে পারেন।
গর্ভাবস্থায় বিপদ চিহ্ন
গর্ভাবস্থায় মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতার কারণে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এসবের মধ্যে রয়েছে মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্তপাত, খিঁচুনি, তীব্র মাথাব্যথা যা কিছুতেই সারছে না, শরীর হঠাৎ করে ফুলে ওঠা বা অনেক বেশি ফুলে ওঠা, প্রচণ্ড পেট ব্যথা, গর্ভের শিশু নড়াচড়া কম করা বা একেবারেই নড়াচড়া না করা। এর মধ্যে যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে আপনাকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে যেতে হবে।
সবগুলো বিপদচিহ্নের তালিকা পেতে আমাদের এই লেখাটা পড়ে নিতে পারেন। চাইলে ফোনে সেভ করে রাখতে পারেন।
গর্ভকালীন চেকআপ
এই সপ্তাহের চেকআপ করানোর জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে ফেলুন। চেকআপে যাওয়ার সময়ে প্রয়োজনীয় সব কাগজ, প্রেসক্রিপশন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট নিতে ভুলবেন না। গর্ভাবস্থার ৩৬তম সপ্তাহ পর্যন্ত আপনাকে প্রতি ২ সপ্তাহে একবার করে চেকআপে যেতে হবে।
প্রসব-পরবর্তী চেকআপ
ডেলিভারির পর মা ও নবজাতকের সুস্থতা নিশ্চিত করতে অন্তত ৪ বার চেকআপ করাতে হয়।[১২] প্রসবের ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রথম চেকআপ, ২–৩ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় চেকআপ, ৪–৭ দিনের মধ্যে তৃতীয় চেকআপ ও ৪২–৪৫ দিনের মধ্যে চতুর্থ চেকআপ করাতে হয়।
ডেলিভারির পর আপনার ও শিশুর স্বাস্থ্যের অবস্থার ওপরে নির্ভর করে আরও ঘন ঘন চেকআপের প্রয়োজন হতে পারে। ডেলিভারির পরও গর্ভকালীন চেকআপের কাগজগুলো সংরক্ষণ করুন, এগুলো ভবিষ্যতে প্রসব-পরবর্তী চেকআপের সময়ে কাজে লাগতে পারে।
অন্যান্য লক্ষণ
এ সপ্তাহে আপনার আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—
- ঘুমের সমস্যা
- স্ট্রেচ মার্ক বা ফাটা দাগ
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে পেটের চারপাশের পেশিতে ব্যথা করা
- পাইলস
- মাথা ব্যথা
- কোমর ব্যথা
- পেট ফাঁপা লাগা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা
- অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা
- পা কামড়ানো
- মাথা ঘুরানো
- হাত–পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া
- প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হওয়া
- যোনিপথে ইনফেকশন হওয়া
- মুখে মেছতার মতো বাদামি ও ছোপ ছোপ দাগ পড়া
- তৈলাক্ত ত্বক ও ত্বকে দাগ পড়া
- চুল ঘন ও ঝলমলে হওয়া
এ ছাড়াও এই সপ্তাহে আপনার প্রথম দিকের সময়ের লক্ষণগুলো থাকতে পারে। যেমন—
- ঘন ঘন মনমেজাজ বদলানো বা মুড সুইং। এই খুশি, আবার এই মন খারাপ—এমনটা হতে পারে। পাশাপাশি এসময়ে ছোটোখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা অথবা কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দিতে পারে
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
- অদ্ভুত জিনিস (যেমন: মাটি) খাওয়ার ইচ্ছা হওয়া
- তীব্র ঘ্রাণশক্তি
- স্তনে ব্যথা
- স্তন থেকে তরল নিঃসৃত হওয়া
- সাদাস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
- যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত হওয়া। এমন হলে অবশ্যই একজন ডাক্তার দেখাবেন, কারণ এটা মারাত্মক জটিলতার লক্ষণ হতে পারে
এ সপ্তাহে বাবার করণীয়
এ সপ্তাহগুলোতে আমরা এমন কিছু পরামর্শ তুলে ধরছি, যা শুধু গর্ভাবস্থায় নয়, বরং প্রসব ও শিশুর জন্মগ্রহণের পরেও আপনাকে শিশুর মা ও শিশুর পাশে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করবে।
প্রসবের লক্ষণ ও বিপদ চিহ্নগুলো জেনে রাখুন
আপনার ও পরিবারের সবার জন্যই প্রসবের লক্ষণ ও বিপদ চিহ্নগুলো জেনে রাখা খুব জরুরি। কারণ কখনো কখনো শিশুর মা সেই লক্ষণগুলো নাও বুঝতে পারেন বা বোঝার মতো অবস্থায় নাও থাকতে পারেন। যেমন: অজ্ঞান হয়ে পড়া বা খিঁচুনি হওয়ার মত বিপদচিহ্ন।
সেক্ষেত্রে তার আশেপাশে যারা আছে, তাদেরকে এসব লক্ষণ চিহ্নিত করে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তাই লক্ষণগুলো ভালো করে চিনে রাখুন। প্রয়োজনে ফোনে সেভ করে বা ছবি তুলে রাখুন। পরিবারের অন্যদের সাথেও এই বিষয়ে কথা বলুন।
হাসপাতালে যাতায়াতের খুঁটিনাটি আগেভাগে ঠিক করে রাখুন
প্রসববেদনা উঠলে আপনারা বাসা থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত কিভাবে যাবেন, সাথে কে বা কারা যাবে, কোন ধরনের যানবাহনে করে যাবেন, বাড়িতে ছোটো শিশু থাকলে তাদের দায়িত্ব কে নেবে—এসব ব্যাপারে এখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলুন।
সিএনজিতে যাবেন, গাড়ি ভাড়া করবেন, উবার ডাকবেন না কি নিজেদের গাড়ি থাকলে সেটাতে করে যাবেন তা ঠিক করে রাখুন। ড্রাইভারদের ফোন নাম্বার নিয়ে রাখুন। একের অধিক অপশন হাতে রাখতে পারলে খুব ভালো হয়।
শিশুর মায়ের সাথে কথা বলে আপনি ছাড়াও হাসপাতাল পর্যন্ত যাওয়ার জন্য অন্তত ২–৩ জনকে বলে রাখুন। এতে করে হঠাৎ কোনো প্রয়োজন হলে কিংবা কোনো কাজে আটকা পড়লে অন্যরা সহযোগিতা করতে পারবে।
শিশুর মা চাইলে তার ব্যক্তিগত কাজে সাহায্য করার জন্য পরিবারের একজন নারী সদস্যকে বলে রাখতে পারেন। তা ছাড়া সম্ভাব্য রক্তদাতা কারা হতে পারে, সে ব্যাপারেও চিন্তা করুন।
শিশুর মায়ের প্রসব-পরবর্তী চেকআপের কথা মাথায় রাখুন
শুধুমাত্র গর্ভাবস্থাতেই নয়, সন্তান প্রসবের পরও শিডিউল অনুযায়ী প্রসব পরবর্তী চেকআপ করানো প্রয়োজন। নবজাতক ও তার মায়ের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে অন্তত ৪ বার চেকআপ করাতে হয়।[১৩] সাধারণত প্রসবের ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রথম চেকআপ, ২–৩ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় চেকআপ, ৪–৭ দিনের মধ্যে তৃতীয় চেকআপ ও ৪২–৪৫ দিনের মধ্যে চতুর্থ চেকআপ করাতে হয়।
প্রসব-পরবর্তী চেকআপের নিয়ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও শিডিউল সম্পর্কে এখনই জেনে রাখুন, যেন চেকআপের সময় আসলে শিশুর মাকে সহায়তা করতে পারেন।