গর্ভধারণের ১২তম সপ্তাহ

১২তম সপ্তাহ নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন

গর্ভাবস্থার শুরুর দিকের সপ্তাহগুলোর নানা লক্ষণ এসময়ে এসে সাধারণত ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ১২তম সপ্তাহের মধ্য দিয়ে আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাস (ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার) শেষ হয়।

এসময় আপনার পাইলসকোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানা কষা হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। সবার ক্ষেত্রেই এমনটা হবে তা নয়, তবে এটি বেশ কমন এবং এমনটা হলে গর্ভবতী মায়েরা শারীরিক অস্বস্তি বোধ করে থাকেন। এই কোষ্ঠকাঠিন্য এড়ানোর জন্য বেশি বেশি আঁশযুক্ত খাবার ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সাথে প্রয়োজন নিয়মিত হালকা শরীরচর্চা বা ব্যায়াম। 

গর্ভাবস্থায় প্রায়ই পেটে ব্যথা বা পেটে মোচড় দেয়ার মত অনুভূতি হতে পারে৷ এটি সাধারণত চিন্তিত হওয়ার মত কিছু নয়। কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটফাঁপা বা পেট আকারে বড় হওয়ার সাথে সাথে লিগামেন্টগুলিতে টান পড়ার কারণে এমনটা হতে পারে৷ 

আপনার যদি একটানা পেট ব্যথা হতে থাকে,  বা খুব বেশি ব্যথা হয়, অথবা সাথে রক্তপাত ও অন্যান্য লক্ষণ থাকে তবে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:

গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার জন্য যেসব পরামর্শ মেনে চলা উচিত সেগুলো মানছেন কিনা খেয়াল করুন যেমন স্বাস্থ্যকর খাবার,  নিয়মিত শরীরচর্চা, ধূমপান এড়িয়ে চলা, ইত্যাদি।  

গর্ভাবস্থার ৮ম থেকে ১১তম সপ্তাহের মধ্যে ডাক্তার আপনাকে আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করার পরামর্শ দিতে পারেন। গর্ভে একাধিক/যমজ শিশু থাকলে এই স্ক্যানের মাধ্যমে তা জানা যাবে। এছাড়া স্ক্যান থেকে গর্ভের শিশুর আকার ও বৃদ্ধি দেখে সে অনুযায়ী আপনার ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখও হিসাব করা যাবে। 

এসময় গর্ভকালীন স্ক্রিনিং পরীক্ষা (অ্যান্টিনেটাল স্ক্রিনিং টেস্ট) করানোর পরামর্শ দেয়া হয়, যার মধ্যে থাকতে পারে অ্যানোমালি স্ক্যান ও কিছু রক্ত পরীক্ষা। গর্ভের শিশুর কোন স্বাস্থ্যগত সমস্যা বা জন্মগত ত্রুটি থাকলে তা এই স্ক্রিনিং টেস্টে ধরা পড়ে। এসব ক্ষেত্রে ডাক্তার সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনাকে জানাতে পারবেন৷ 

এছাড়া আপনি ডেলিভারি অর্থাৎ বাচ্চা প্রসব কোথায় করাবেন সে ব্যাপারেও এখন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখতে পারেন, এতে পরবর্তীতে আপনারই সুবিধা হবে৷ ডেলিভারির স্থান নির্ধারণের সময় আপনার ও পরিবারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা, বাসস্থান থেকে দূরত্ব ও কোথায় ভালো সেবা নিশ্চিত হবে – এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে

গর্ভাবস্থার ১২তম সপ্তাহে অর্থাৎ আপনার সর্বশেষ মাসিক/মেন্স তথা পিরিয়ডের ১২ সপ্তাহ পরে গর্ভের ভ্রূণটির (এই ভ্রূণই আপনার গর্ভের ভেতর বড় হতে থাকে এবং পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ শিশুতে পরিণত হয়) শরীরের কাঠামো পুরোপুরিভাবে তৈরি হয়ে যায়; এখন ভ্রূণটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৫.৪ সেন্টিমিটার বা ২ ইঞ্চির সামান্য বেশি ও ওজনে প্রায় ১৮ গ্রাম হয়। 

ইতোমধ্যে প্লাসেন্টা তথা গর্ভফুল বা অমরা পুরোপুরি তৈরি হয়ে ভ্রূণদেহে পুষ্টি সরবরাহের দায়িত্ব নিয়ে নেয়। শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, পেশি, হাত-পা ও হাড় জায়গামতো চলে আসে। যৌনাঙ্গও প্রায় গঠিত হয়ে যায়, যদিও শিশুটি ছেলে না মেয়ে তা এখনও বোঝা সম্ভব হয় না।

১২ সপ্তাহের পর থেকে শিশুটি আকারে আরও বড় ও পরিণত হতে থাকে৷ শরীরের নরম হাড় বা তরুণাস্থিগুলো সব আস্তে আস্তে মজবুত হাড়ে পরিণত হতে থাকে। 

এসময় শিশুটি গর্ভের ভেতরে হালকা নড়াচড়াও করতে পারে, তবে মা এত তাড়াতাড়ি গর্ভের শিশুর নড়াচড়া বুঝতে পারেন না। গর্ভের ১৬-২৪ সপ্তাহের মধ্যে একজন মা সাধারণত এই নড়াচড়া প্রথমবারের মত অনুভব করে থাকেন। তবে যারা প্রথমবারের মত মা হচ্ছেন, তারা সাধারণত ২০ সপ্তাহের আগে এই নড়াচড়া বুঝতে পারেন না।