১৩তম সপ্তাহ নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন
যদি আপনি এতদিন ধরে বমিবমি ভাব ও ক্লান্তি অনুভব করে থাকেন (মর্নিং সিকনেস), তবে ১৩ থেকে ১৪ সপ্তাহের দিকে আপনি সাধারণত একটু ভালো বোধ করতে শুরু করবেন।
অনেকের এ সময়ে যৌন সহবাসের ইচ্ছা বেড়ে যেতে পারে৷ গর্ভাবস্থায় হরমোনগুলোর তারতম্য ও কোমর থেকে যৌনাঙ্গ ও নিতম্বের অঞ্চলটুকুতে রক্ত চলাচল বেড়ে যাওয়ার কারণে এমনটা হতে পারে৷ অনেকের ক্ষেত্রেই আবার এমনটা হয় না এবং সেটাও খুব স্বাভাবিক।
গর্ভাশয়ের আকার বাড়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে আপনার পেটের আকার বড় হয় (Baby bump)। ক্রমশ বড় হতে থাকা গর্ভাশয় মূত্রথলিতে (দেহের এই অঙ্গটিতে প্রস্রাব জমা হয়) চাপ দেয়ার কারণে গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে ঘনঘন প্রস্রাব করার প্রয়োজন হয়৷ তবে ১৩তম সপ্তাহের কাছাকাছি সময়ে এসে এই সমস্যা সাধারণত আর থাকে না।
বিশেষ সতর্কতা
প্রস্রাব করার সময় ব্যথা অনুভব করলে ডাক্তারকে জানান। এই ব্যথা মূত্রনালীর ইনফেকশনের কারণে হতে পারে৷ গর্ভাবস্থায় মূত্রনালীর ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়ে যায়। দ্রুত চিকিৎসা করা না হলে এর থেকে কিডনিতেও ইনফেকশন ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
১৩তম সপ্তাহের সম্ভাব্য ১৫টি লক্ষণ:
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
- পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে এর চারপাশে পেশিতে টান বা ব্যথা অনুভব করা,
- মাথাব্যথা,
- কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া,
- পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
- বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
- চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
- পায়ে ব্যথা,
- অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
- মাথা ঘুরানো,
- হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
- প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
- যোনিপথে অর্থাৎ মাসিক/পিরিয়ডের রাস্তায় ইনফেকশন,
- মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
- অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা।
এছাড়া বিগত সপ্তাহগুলোর কিছু কিছু লক্ষণ এ সপ্তাহেও থেকে যেতে পারে, যেমন মর্নিং সিকনেস, মুড সুইং, ইত্যাদি।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন
- গর্ভাবস্থায় দাঁত ও দাঁতের মাড়িতে ব্যথা বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়া খুব কমন। তাই এসময় দাঁত ও মাড়ির সুস্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে ও নিয়মিত যত্ন নিতে হবে।
- আপনার গর্ভে যদি যমজ শিশু থাকে, তাহলে বাড়তি যত্ন ও সতর্কতার প্রয়োজন হবে। এ বিষয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জেনে নিন৷
- গর্ভাবস্থার ১৬-৩২ সপ্তাহ সময়কালে হুপিং কাশির টিকা দেয়া যেতে পারে৷ এ বিষয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে নিন।
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা জেসটেশনাল ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন থাকুন। প্রয়োজনে এর জন্য নির্ধারিত পরীক্ষাগুলো করিয়ে নিন।
গর্ভের শিশু এই সপ্তাহে কীভাবে বড় হচ্ছে
এসময় সাধারণত গর্ভের শিশুর ওজন প্রায় ২৫ গ্রাম হয়ে থাকে।
শিশুটির দেহের ভেতরে ডিম্বাশয়(মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে) বা শুক্রাশয় (ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে) পুরোপুরি তৈরি হয়ে যায়। দেহের বাইরের দিকে যৌনাঙ্গগুলো তৈরি হতে থাকে। ডিম্বাশয় ও শুক্রাশয় বয়ঃসন্ধিকালে হরমোন তৈরি এবং ভবিষ্যতে সন্তান জন্মদানসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গর্ভের ভেতরে এতদিন শিশুর দুই পায়ের মাঝে যে ফোলা অংশটি ছিল সেখানে এখন পুরুষাঙ্গ (ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে) বা ক্লিটোরিস নামের নারী-যৌনাঙ্গের একটি অংশ (মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে) তৈরি হতে থাকে। তবে আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান এর মাধ্যমে এখনো শিশুটির লিঙ্গ অর্থাৎ শিশুটি আসলে ছেলে না মেয়ে তা ধরা বুঝা যাবে না।