গর্ভকালীন সময়ে আপনার কোনো খাবারের প্রতি হঠাৎ করেই অরুচি শুরু হতে পারে। অরুচির কারণে আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকা থেকে কোনো পুষ্টিকর খাবার বাদও পড়ে যেতে পারে। এমন সমস্যায় প্রায় অনেক গর্ভবতী মায়েরাই ভোগেন।
তবে সবারই এমন সমস্যা হয় না। এ ধরনের সমস্যায় ভুগলে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে একটু সচেতনতার সাথে খাবার তালিকা বাছাই করতে হবে। তাহলেই আপনার খাবার তালিকায় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হবে না। ফলে আপনি অপুষ্টিসহ অন্যান্য কিছু সমস্যা সহজেই এড়িয়ে চলতে পারবেন।
কখন শুরু হয়?
গর্ভাবস্থায় সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো সময় থেকে কোনো খাবারের প্রতি অরুচি শুরু হয় না। একেকজনের ক্ষেত্রে একেকসময়ে ও একেক খাবারের প্রতি এই লক্ষণ দেখা দেয়। আবার কারও কারও এধরনের কোনো লক্ষণই প্রকাশ পায় না।
কোন খাবারে হয়?
গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাওয়ার প্রতি অরুচি তৈরি হয় তার নির্দিষ্ট কোনো তালিকা নেই। ভিন্ন ভিন্ন নারীর ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন খাবারে এমন লক্ষণ দেখা দেয়।
যেহেতু অরুচির কোনো নির্দিষ্ট ধরন নেই সেহেতু আপনার যেকোনো খাবারের প্রতিই অরুচি সৃষ্টি হতে পারে। তবে সাধারণত মাছ, মাংস, পেঁয়াজ ও ডিমের প্রতি অরুচি বেশি দেখা যায়।[১] কারও কারও ক্ষেত্রে কিছুটা কড়া গন্ধযুক্ত যেকোনো খাবারে বেশি অরুচি হয়ে থাকে।
পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারে অরুচি হলে অনেকেরই অপুষ্টিতে ভোগার সম্ভাবনা থাকে। তাই কোনো নির্দিষ্ট পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারে অরুচি হলে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া ভালো। এতে করে ডাক্তার আপনাকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ ঔষধ অথবা বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।
কী করবেন?
গর্ভাবস্থায় যদি অপুষ্টিকর খাবারে (যেমন: ভাজাপোড়া) অরুচি হয়, তাহলে এসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। তবে গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবারে অরুচি হলে আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকা তৈরির সময়ে একটু সতর্ক থাকতে হবে, যাতে অরুচির কারণে কোনো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া বাদ না যায়।
এক্ষেত্রে যেসব পরামর্শ মেনে চলতে পারেন—
১. প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পুষ্টিমানের খাবার খান
যেসব খাবারে অরুচি হয় তার পরিবর্তে বিকল্প পুষ্টিকর খাবার খেতে পারেন। যেমন: আপনার মাছ খেতে অরুচি হলে এর পরিবর্তে মাংস, ডিম ও দুধ একটু বেশি করে খান।
কোনো নির্দিষ্ট ধরনের পুষ্টিগুণের সব খাবারের প্রতি অরুচি হলেও চেষ্টা করুন অল্প অল্প করে কয়েকবারে খাওয়ার। প্রয়োজনে রান্নার পদ্ধতি বদল করে নিজের পছন্দমতো উপায়ে রান্না করে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
তবে অপুষ্টি প্রতিরোধে অরুচি হলেও কোনো পুষ্টিকর খাবারকে তালিকা থেকে একেবারেই বাদ দিয়ে দেবেন না।
পড়ুন: গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
২. হালকা ও গন্ধহীন খাবার খান
গন্ধযুক্ত খাবারে অরুচি হলে তার পরিবর্তে সাময়িকভাবে গন্ধহীন, হালকা ও শুকনা খাবার খেতে পারেন। যেমন: মুড়ি, চিড়া অথবা বিস্কুট। তবে এসব খাবারে সব পুষ্টি উপাদান থাকে না। তাই এসব খাবার খাওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের খাবারগুলোও অল্প অল্প কয়েকবারে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
এ ছাড়াও অনেক সময়ে কোনো খাবারের গন্ধেও বমি বমি ভাব হতে পারে। ফলে সেই খাবার খেতে অনীহা তৈরি হয়। আপনার এমন সমস্যা থাকলে লেবু অথবা অন্য কোনো টক ফল দিয়ে খাবার খেতে পারেন। ধারণা করা হয় যে, গর্ভকালীন সময়ে যেসব টক ফল খেলে বমি বমি ভাব হওয়ার সম্ভাবনা একটু কমে যায়।[২]
৩. ডাক্তারের পরামর্শ নিন
অরুচির সমস্যা বেড়ে গেলে এবং সাধারণ পরামর্শে কাজ না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তার আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু পুষ্টি উপাদানের জন্য ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন। এতে আপনার অপুষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রোধ করা যাবে।
কেন হয়?
গর্ভাবস্থায় অরুচি হওয়ার জন্য দায়ী নির্দিষ্ট কোনো কারণ সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় যে, গর্ভাবস্থায় শারীরিক পরিবর্তনের কারণে রুচির এমন পরিবর্তন ঘটে।[৩]
এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব ও বমির সাথে বিভিন্ন খাবারে অরুচি হওয়ার সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে।[৪] কিছু গবেষণা থেকে ধারণা করা হয় যে, সাধারণত গর্ভকালীন সময়ে মা ও তার গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর খাবারগুলোর প্রতি অরুচি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হয়ে থাকে।[৫] তবে এসবের পক্ষে এখনও জোরালো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।[৬]