দশম সপ্তাহ নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন
এই সপ্তাহে আপনার গর্ভাশয় আকারে একটি বড়সড় কমলালেবুর মতো হয়। ক্রমশ বড় হতে থাকা গর্ভের কারণে আপনার খাবার হজমের সাথে জড়িত অঙ্গগুলোর উপর চাপ পড়ে, ফলে হজমের সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ও বুকে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
হজমের সমস্যা এড়াতে নিচের তিনটি কাজ করার চেষ্টা করুন:
- অতিরিক্ত তেলচর্বি বা মশলাযুক্ত ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন,
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন ও
- প্রতিবেলার খাবারের পর হালকা হাঁটাচলা করুন।
এছাড়াও নিচের লক্ষণগুলো থাকতে পারে:
- স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্লান্ত অনুভব করা,
- স্তনে হালকা ব্যথা বা চাপ দিলে ব্যথা অনুভব করা,
- মুখে ধাতব এক ধরনের স্বাদ (মেটালিক টেস্ট) পাওয়া বা খবারের স্বাদ বুঝতে না পারা,
- বমি বমি ভাব হওয়া (মর্নিং সিকনেস),
- মাথাব্যথা,
- মুড সুইং বা ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন হওয়া,
- খাদ্যাভ্যাসে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসা, হঠাৎ নতুন কোন খাবারে তীব্র রুচি বা প্রিয় কোন খাবারে অরুচি দেখা দেওয়া,
- ঘ্রাণ শক্তি আগের চেয়ে তীব্র হওয়া,
- মাথা ঘুরানো,
- সাদস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া,
- পিরিয়ডের ব্যথার মত তলপেটে মোচড়ানো বা ব্যথা হওয়া,
- পেটে অস্বস্তি বা পেট ফাঁপা হয়েছে এমন মনে হওয়া,
- চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ হওয়া।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
গর্ভবতী নারী ও গর্ভের সন্তান সহজেই ফ্লু তথা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে, তাই গর্ভবতী মা যেন ঠাণ্ডাজ্বর বা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত না হন, সে ব্যাপারে সাবধানে থাকতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের চেম্বার বা ম্যাটারনিটি ক্লিনিক থেকে ফ্লু বা হুপিং কাশির টিকা দেয়া যেতে পারে৷
গর্ভাবস্থায় কোন নারী যদি পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন তবে তা বিভিন্ন জটিলতা, মারাত্মক ইনফেকশন, এমনকি অকাল গর্ভপাত বা গর্ভের শিশুর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিশেষ তথ্য
এধরনের পরিস্থিতিতে যথাসম্ভব নিজেকে ও গর্ভের শিশুটিকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজন হলে আইনী সহায়তা নিতে হবে। নির্যাতন দমনে আইনী সহায়তার জন্য 10921, 999, 333, 109 সহ অন্যান্য সরকারী সহায়তা কেন্দ্রে ফোন করে সাহায্য চাইতে পারেন।
এছাড়া আপনি কোথায় (কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে বা সরকারিভাবে প্রশিক্ষিত দাই-এর সাহায্যে) সন্তান প্রসব করতে চান তা আপনার সুবিধা অনুযায়ী আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে, যেমন আপনার বাড়ির এলাকা, আপনার বা আপনার গর্ভের শিশুর কোনো রোগ বা অন্যান্য সমস্যা।
সব মিলিয়ে আপনার বাসার কাছাকাছি কোনো ভালো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকেই বেছে নেয়া উচিত।
গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
১০ সপ্তাহ সময়কালে আপনার শিশু মাথা থেকে পা পর্যন্ত প্রায় ৩০ মিলিমিটার বা এক ইঞ্চির চেয়ে সামান্য বেশি লম্বা হয়ে থাকে।
এসময় শিশুটির মাথার দু’পাশে কান দু’টি বিকশিত হতে থাকে, সেই সাথে কানের ভেতরের অংশগুলো (ear canal) মাথার মধ্যেই তৈরি হতে থাকে। শিশুর মুখমণ্ডল আরও সুগঠিত হয় – উপরের ঠোঁট আর ছোট্ট দুটি নাকের ফুটো এসময়ে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। চোয়ালের হাড়গুলো গড়ে উঠতে থাকে; এই সময়ের মাঝেই এতে ভবিষ্যতের সব দুধদাঁত তৈরি হয়ে যায়।
শিশুর হৃৎপিণ্ড এখন সম্পূর্ণ সুগঠিত থাকে। এটি মিনিটে ১৮০ বার বিট দিতে বা স্পন্দিত হতে থাকে, যা আপনার নিজের হৃৎস্পন্দন তথা হার্টবিটের তুলনায় প্রায় ২-৩ গুণ বেশি।
শিশুটি এসময় খানিকটা ঝাঁকুনির মত নড়াচড়া করে, যা আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যানের সময় দেখা যেতে পারে।