এ সপ্তাহের হাইলাইটস
ক্যাফেইনযুক্ত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলুন
গর্ভকালীন সময়ে ক্যাফেইন আছে এমন খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলুন। যেমন: চা, কফি, কোক, এনার্জি ড্রিঙ্কস। কারণ ক্যাফেইন গর্ভের শিশুর ওজন কম হওয়াসহ নানানভাবে ক্ষতি করতে পারে।[১][২][৩]
বসা অথবা শোয়া অবস্থা থেকে হুট করে উঠে দাঁড়াবেন না
অনেকসময় চেয়ারে বসা অথবা বিছানায় শোয়া অবস্থা থেকে হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে গেলে ব্রেইনে রক্ত সরবরাহ কমে যেতে পারে। ফলে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই বসা অথবা শুয়ে থাকা অবস্থা থেকে ওঠার সময়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন।
আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট সেবন চালিয়ে যান
আপনার শিশু এখন দ্রুত বেড়ে উঠছে। তার চোখ-নাক-কান ও ব্রেইন তৈরি হচ্ছে। এসব যাতে সঠিকভাবে তৈরি হতে পারে, সেজন্য আগের সপ্তাহগুলোর মতো এ সপ্তাহেও অবশ্যই মনে করে প্রতিদিন আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট সেবন চালিয়ে যাবেন।[৪]
- মাসে কত দিন? ২ মাস ৩ সপ্তাহ
- কোন ট্রাইমেস্টার? প্রথম ত্রৈমাসিক
- আর কত সপ্তাহ বাকি? ২৯
১১ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি
আপনার গর্ভের শিশু এখন প্রায় একটি কুল বরইয়ের সমান লম্বা—৪১ মিলিমিটারের কাছাকাছি!
শিশু এখন ভ্রূণ থেকে ফিটাস
এ সপ্তাহ থেকে আপনার ছোট্ট সোনামণির একটা পদোন্নতি হচ্ছে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত ছোট্ট শিশুটি একটি ভ্রূণ পর্যায়ে ছিল। এই সপ্তাহ থেকে তাকে ডাক্তারি ভাষায় ‘ফিটাস’ বলে ডাকা হবে।[৫] কারণ ইতিমধ্যে শিশুর শরীরের সব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ভিত তৈরি হয়ে গিয়েছে।[৬][৭] বাকি মাসগুলোতে এই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আরও পরিণত ও বিকশিত হতে থাকবে।[৮]
ছোট্ট শিশু এখন চোখ বুজে আছে
আপনার শিশুর দুই চোখের পাতা এখন বন্ধ হয়ে আছে।[৯] বেশ কয়েক মাস পর সে তার চোখের পাতা মেলবে।[১০] মাথার দুই পাশে ছোটোখাটো কান দুটো আরও স্পষ্ট হচ্ছে।
শিশুর মাথাটা এখন বেশ বড়
ছোট্ট শিশুর মাথাটা এখনো শরীরের বাকি অংশের তুলনায় বেশ বড়। পুরো শরীরের প্রায় অর্ধেকের সমান লম্বা তার মাথা।[১১][১২] তবে দেহের বাকি অংশগুলো এখন দ্রুত বেড়ে উঠছে।[১৩]
শিশু এখন নড়াচড়া করছে
ছোট্ট শিশু আপনার পেটের ভেতরে নড়াচড়া শুরু করে দিয়েছে।[১৪] তবে আপনি এখনই এসব নড়াচড়া টের পাবেন না—আরও কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
১১ সপ্তাহে মায়ের শরীর
আগামী সপ্তাহ পার হলেই আপনার গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস পূর্ণ হয়ে যাবে! তখন শরীরের হরমোনগুলো স্থিতিশীল হতে থাকে, ফলে অনেকের চেহারায় একটা লাবণ্যময় আভা আসে আর ক্লান্তি অনেকটা কমে আসতে থাকে।
সবুজ শাক
সবুজ শাকে গর্ভের শিশুর জন্য উপকারী অনেক ধরনের ভিটামিন মিনারেল আছে। যেমন: ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, পটাসিয়াম। তাই প্রতিদিন কিছু সবুজ শাক খাওয়ার চেষ্টা করবেন। পালং শাক, হেলেঞ্চা শাক, পুই শাক, ডাঁটা শাক, পাট শাক, লাউ শাক, কলমি শাক, কচু শাকসহ যেসব সবুজ শাক আপনার জন্য সহজলভ্য, সেগুলো খাওয়ার চেষ্টা করবেন। আর দিনে সবমিলিয়ে অন্তত ৪০০ গ্রাম পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি খাবেন।
গর্ভকালীন সময়ে আর কী কী খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ—এসব জানতে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা লেখাটি পড়ুন।
ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা
গর্ভকালীন সময়ে ক্যাফেইনযুক্ত খাবার অথবা পানীয় এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।[১৫] যেমন: চা, কফি, নির্দিষ্ট সফট ড্রিঙ্কস ও এনার্জি ড্রিঙ্কস। কারণ ক্যাফেইনযুক্ত খাবার বা পানীয় গর্ভের শিশুর ক্ষতি করতে পারে। জন্মের সময় শিশুর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হতে পারে।[১৬] গবেষণায় দেখা গেছে যে ক্যাফেইন গর্ভপাত ও মৃতপ্রসব হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দিতে পারে।[১৭][১৮]
তাই আপনার চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটা ছেড়ে দিন। বিকল্প হিসেবে আপনি চা পাতা ছাড়া বানানো আদা চা কিংবা মসলা চা বেছে নিতে পারেন।
ক্যাফেইন ছাড়তে না পারলে যতটুকু সম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন এবং অবশ্যই সবমিলিয়ে দিনে ২০০ মিলিগ্রামের কম খাবেন।[১৯] সাধারণত ২ কাপ ইনস্ট্যান্ট কফি কিংবা ২–৩ কাপ চায়ে এই পরিমাণ ক্যাফেইন থাকতে পারে। সফট ড্রিঙ্কস (যেমন: কোক-পেপসি ও এনার্জি ড্রিঙ্কস)-এ ক্যাফেইন থাকে, তাই গর্ভাবস্থায় এগুলো পরিহার করবেন।
একবার দুইবার চা-কফি বা কোক খেয়ে ফেললে অনেক দুশ্চিন্তা করবেন না। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে ক্যাফেইনের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়ে।[২০] তাই যতটা সম্ভব অল্প পরিমাণে খাবেন আর গর্ভাবস্থার সময়টুকুতে ছেড়ে দিতে পারলে সবচেয়ে ভালো।
মাথা ব্যথা
এই সময়ে আপনার প্রায়ই মাথা ব্যথা হতে পারে। হালকা মাথা ব্যথা হলে আপনি মাথায় ঠাণ্ডা সেঁক দিতে পারেন।[২১] খেয়াল করে দেখুন আপনার পানিশূন্যতা এবং ঘুমের অভাব হচ্ছে কি না, যেহেতু এগুলোর কারণেও আপনার মাথা ব্যথা হতে পারে। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ২–৩ লিটার পানি পান এবং রাতে অন্তত ৭ ঘন্টা ভালোমতো ঘুমানোর চেষ্টা করবেন।[২২][২৩]
মাথা ব্যথার আরও কিছু সহজ ঘরোয়া সমাধান এবং কখন মাথা ব্যথা হলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে—এসব জানার জন্য গর্ভাবস্থায় মাথা ব্যথা আর্টিকেলটি পড়ুন।
মাথা ঘুরানো
এসময়ে আপনার মাথা ঘুরানোর সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে চেয়ারে বসা অথবা বিছানায় শোয়া অবস্থা থেকে হঠাৎ উঠতে গেলে। ব্রেইনে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে এমন হতে পারে। তাই বসা অথবা শুয়ে থাকা অবস্থা থেকে ওঠার সময় ধীরে ধীরে ওঠার চেষ্টা করুন। একটানা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন না, কারণ তাতেও মাথা ঘোরাতে পারে।
এই সমস্যার আরও কিছু ঘরোয়া সমাধান এবং কখন মাথা ঘুরালে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে জানার জন্য গর্ভাবস্থায় মাথা ঘুরানো আর্টিকেলটি পড়ুন।
মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্তপাত
গর্ভাবস্থায় যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত হতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দেওয়া মানেই যে গর্ভধারণে কোনো জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে—এমন নয়। তবে গর্ভপাতের মতো জটিলতার ক্ষেত্রেও এমন লক্ষণ দেখা দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় যোনিপথে রক্তপাত হলে মা ও গর্ভের শিশুর সুস্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য দ্রুত ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।
অন্যান্য লক্ষণ
এ ছাড়াও এই সপ্তাহে আপনার আরও যেসব গর্ভকালীন লক্ষণ থাকতে পারে সেগুলো হলো—
- পেটের বাড়ন্ত অংশের চারপাশে ব্যথা হওয়া
- বমি বমি ভাব বা বমি। একে অনেকসময় ‘মর্নিং সিকনেস’ বলে। তবে এই বমি ভাব দিনের যেকোনো সময়েই হতে পারে
- ঘন ঘন মনমেজাজ বদলানো বা মুড সুইং। এই খুশি, আবার এই মন খারাপ—এমনটা হতে পারে। পাশাপাশি এসময়ে ছোটোখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা অথবা কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দিতে পারে
- মুখে অদ্ভুত অথবা ধাতব স্বাদ পাওয়া
- স্তনে হালকা ব্যথা হওয়া অথবা চাপ দিলে ব্যথা করা
- বুক জ্বালাপোড়া করা ও বদহজম হওয়া
- খাবারের অভ্যাসে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসা। হঠাৎ কোনো খাবারে অরুচি কিংবা নতুন কোনো খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা দেখা দিতে পারে। আবার নির্দিষ্ট কিছু খাবারের গন্ধে বমি বমিও লাগতে পারে
- তীব্র ঘ্রাণশক্তি
- সাদাস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
- পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথার মতো তলপেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা অনুভব করা
- মুখে মেছতার মতো বাদামি ও ছোপ ছোপ দাগ পড়া
- ত্বক তেলতেলে হয়ে যাওয়া ও ত্বকে দাগ পড়া
- চুল ঘন ও ঝলমলে হওয়া
- পেটে অস্বস্তি বা পেট ফাঁপা হয়েছে এমন মনে হওয়া
এ সপ্তাহে বাবার করণীয়
সম্ভব হলে বাসায় ক্যাফেইনযুক্ত খাবার-পানীয় এড়িয়ে চলুন
গর্ভবতী মায়েদের ক্যাফেইনযুক্ত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলতে হয়।[২৪] যেমন: চা, কফি, নির্দিষ্ট সফট ড্রিঙ্কস ও এনার্জি ড্রিঙ্কস। কারণ ক্যাফেইন বিভিন্নভাবে গর্ভের শিশুর ক্ষতি করতে পারে। গর্ভের শিশু স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন নিয়ে জন্মাতে পারে।[২৫] এ ছাড়াও গর্ভপাত ও মৃতপ্রসব হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।[২৬][২৭]
আপনার কিংবা বাসার অন্য কারো যদি এসব ক্যাফেইনযুক্ত খাবার (যেমন: চা-কফি) খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে শিশুর মায়ের জন্য এগুলো এড়িয়ে চলা কঠিন হতে পারে। যদি চা-কফি বানানোর দায়িত্ব শিশুর মায়ের ওপর থাকে, তাহলে হয়তো ব্যাপারটা আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়বে।
তাই এসময়টায় চা-কফি খেতে ইচ্ছে হলে নিজেরা বানিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। বাসায় মেহমান আসলে চা-কফির বিকল্প কোনো পানীয় দিয়ে আপ্যায়ন করতে পারেন।
এ ছাড়াও কোমল পানীয় (যেমন: কোক বা পেপসি)-তেও ক্যাফেইন থাকে, তাই এসময়ে এগুলো বাসায় না আনার চেষ্টা করবেন। তাহলে শিশুর মায়েরও এগুলো এড়িয়ে চলতে সুবিধা হবে।
ক্যাফেইনের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়ে।[২৮] তাই হঠাৎ দুএকবার খেয়ে ফেললে সেটা নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা করবেন না।
শিশুর মায়ের পছন্দের খাবারগুলো আনার চেষ্টা করুন
এসময়ে শিশুর মায়ের নানান ধরনের খাবার খাওয়ার ইচ্ছা হতে পারে। যেমন: কোনো টক বা মিষ্টি ফল, কিংবা কোনো নির্দিষ্ট তরকারি। তার কী কী খেতে ইচ্ছা করে সেটি জেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন। তাহলে সেই অনুযায়ী আপনি বাজার থেকে তার পছন্দমতো খাবারগুলো কিনে আনতে পারবেন।
শিশুর মায়ের যদি অস্বাস্থ্যকর কোনো খাবার খেতে ইচ্ছা করে, তবে তার কাছাকাছি স্বাদের স্বাস্থ্যকর খাবার খুঁজে নিতে সাহায্য করতে পারেন।
সবুজ শাক খেতে সাহায্য করুন
ফলমুল ও শাকসবজিতে শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান থাকে। পাশাপাশি এগুলোতে ভালো পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা শিশুর মায়ের হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই সঙ্গীর খাবার তালিকায় যেন নিয়মিত অন্তত ৪০০ গ্রাম ফলমুল ও শাকসবজি থাকে সেদিকে লক্ষ রাখুন।
আপনি যদি বাজারের দায়িত্বে থাকেন, তাহলে কেনাকাটা করার সময়ে শাকসবজি-ফলমূল নেওয়ার ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন। বিশেষ করে গাঢ় সবুজ শাকসবজি যেন মায়ের খাবার তালিকায় নিয়মিত জায়গা পায়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। যেমন: পালংশাক, পুঁইশাক, লাউশাক, হেলেঞ্চা শাক, পুই শাক।
এগুলোতে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল থাকে, যা ছোটো-বড় নানান রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[২৯][৩০]
পড়ুন: গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
মাথা ঘুরানো কমাতে ছোট্ট সাহায্য করুন
শিশুর মায়ের মাথা ঘুরানোর সমস্যা থাকলে তাকে যেন উপুড় হয়ে কোনো কাজ করতে না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখুন। নিচে কোনো কিছু পড়ে থাকলে, আপনি সেটি তুলে দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। জুতা পরার সময়ে তাকে একটি চেয়ার অথবা টুল এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।
কেননা উপুড় হয়ে কোনো কাজ করলে মাথা ঘোরার সমস্যা আরও বাড়তে পারে।