গর্ভধারণের ২৫তম সপ্তাহ

২৫তম সপ্তাহ নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন

এই সময়ে আপনার মুখে, হাতে বা পায়ে পানি জমে কিছুটা ফোলা ফোলা ভাব আসতে পারে। গর্ভাবস্থার এমনটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক, তাই সাধারণত ঘাবড়ানোর কোন কারণ নেই। পায়ে পানি আসলে, কোন পিঁড়ি বা উঁচু স্থানে পা রেখে আরাম করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করুন। তবে কোনোমতেই এই ব্যপারটি আপনার ডাক্তারকে জানাতে ভুলবেন না। কারণ অনেক সময় ‘প্রি-এক্লাম্পসিয়া’ নামের গর্ভাবস্থার একটি জটিল সমস্যার কারণেও হাতে-পায়ে পানি আসতে পারে। 

গর্ভের আকার বাড়ার সাথে সাথে পাকস্থলীতে চাপ বেড়ে গিয়ে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসময় অনেকের প্রতিবার খাওয়ার পরপরই বুকে জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে।

এছাড়া এসময়ের অন্যান্য যেসব লক্ষণগুলো থাকতে পারে:

  • বেশি ক্লান্ত অনুভব করা,
  • স্ট্রেচ মার্কস (পেটের আকার বাড়াতে থাকায় চামড়ায় যে টান পড়ে তার কারণে ফাটা দাগের মত চিহ্ন দেখা দেওয়া),
  • ঘুমের সমস্যা হওয়া,
  • দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
  • পেটে ব্যথা,
  • কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া, 
  • পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
  • বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
  • চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
  • পায়ে ব্যথা,
  • অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
  • মাথা ঘুরানো বা মাথা ব্যথা,
  • হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
  • প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
  • যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন, 
  • মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
  • অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে

  • গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের পরে নানা ধরনের ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে সচেতন থাকার চেষ্টা করুন। 
  • আপনি কোথায় অর্থাৎ কোন হাসপাতালে বা ক্লিনিকে সন্তান প্রসব করতে চান তা আপনার সুবিধা অনুযায়ী আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন। এক্ষেত্রে আপনার বাসার কাছাকাছি হয় এমন একটি ভালো সেবাদানকারী কোন প্রতিষ্ঠানকেই বেছে নেয়া উচিত। বাড়িতে সন্তান প্রসব করতে চাইলে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, দক্ষ ও অভিজ্ঞ ধাত্রীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।
  • চাকরিজীবী মায়েরা সন্তান প্রসবের মাস তিনেক আগে মাতৃত্বকালীন ছুটি’র জন্য আবেদন করে রাখতে পারেন। আপনার অফিস বা কর্মক্ষেত্রে এ বিষয়ে কী ধরনের নিয়মকানুন রয়েছে তা আগে থেকেই জেনে রাখার চেষ্টা করুন।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে

এই সপ্তাহে আপনার শিশু লম্বায় প্রায় ৩৪.৬ সেন্টিমিটার বা প্রায় সাড়ে ১৩ ইঞ্চি হয়। এসময় তার ওজন হয় প্রায় ৬৬০ গ্রাম৷ 

এ সময়ে সে গর্ভের ভেতর বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। সে এখন ক্রমাগত নড়াচড়া করতে থাকে, জোরে কোন শব্দ শুনলে বা মায়ের গলার স্বর শুনলে হাত পা ছুঁড়ে প্রতিক্রিয়াও জানাতে পারে৷ তার সব ধরনের নড়াচড়াই আপনি এখন স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন, এমনকি শিশু মাঝেমাঝে হেঁচকি তুললে সেটাও আপনি টের পেতে পারেন। 

শিশু এখন তার অ্যামনিওটিক থলের ভেতরে নিয়মিত প্রস্রাব তথা মূত্রত্যাগ করতে থাকে, অর্থাৎ অ্যামনিওটিক থলের ভেতরে যেই অ্যামনিওটিক তরল দিয়ে শিশুটি চারপাশে ঘেরা থাকে তার একটা বড় অংশ হল তার নিজের প্রস্রাব। এই তরল শিশুটির চারপাশে একটি স্থিতিশীল তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।