এ সপ্তাহের হাইলাইটস
বুকের দুধ খাওয়ানোর সঠিক পদ্ধতি শিখুন
বুকের দুধ খাওয়ানোর সঠিক নিয়মগুলো এখন থেকে জানা শুরু করুন। এতে করে প্রসবের পর পরই আপনি ছোট্ট সোনামণিকে ভালোভাবে খাওয়ানো শুরু করে দিতে পারবেন।
ওজিটিটি পরীক্ষা করুন
আপনার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আছে কি না সেটি নির্ণয়ের জন্য গর্ভাবস্থার ২৪তম–২৮তম সপ্তাহে ‘ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট’ বা ‘ওজিটিটি‘ নামের একটি পরীক্ষা করতে হয়। বাইরে থেকে সাধারণত এই রোগের কোন লক্ষণ বোঝা যায় না।[১] তাই পরীক্ষা করে রোগ হয়েছে কি না তা জেনে নেওয়া জরুরি।
নিয়মিত আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট সেবন করুন
বিগত সপ্তাহগুলোর মতো এ সপ্তাহেও নিয়মিত আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যেতে ভুলবেন না। এগুলো গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[২][৩] পাশাপাশি আপনাকে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।[৪]
- মাসে কত দিন? ৬ মাস ১ সপ্তাহ
- কোন ট্রাইমেস্টার? দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক
- আর কত সপ্তাহ বাকি? ১৫
২৫ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি
এ সপ্তাহে আপনার গর্ভের শিশু মাথা থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত প্রায় ৩৪.৬ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে গিয়েছে—প্রায় একটি আনারসের সমান। তার ওজন এখন প্রায় ৬৬০ গ্রাম।
শিশু আরও ভালোভাবে কানে শুনতে শিখছে
আপনার ছোট্ট শিশু দিন দিন আরও ভালোভাবে কানে শুনতে পাচ্ছে। সে আপনার গলার স্বর কিংবা কোনো জোরালো শব্দ বা কোলাহলও শুনতে পারে।[৫] কানে শোনার পাশাপাশি সেই শব্দের প্রতি সাড়াও দেয়।[৬]
শিশুর ফুসফুস পরিণত হচ্ছে
এসময়ে শিশুর ফুসফুসের ভেতরে আরও অনেক ছোটো ছোটো শাখা-প্রশাখা সৃষ্টি হচ্ছে।[৭] এসব ছোটো ছোটো কুঠুরির মতো শাখা-প্রশাখা পরবর্তীতে তাকে অক্সিজেন গ্রহণে সাহায্য করবে। এভাবে তার ছোট্ট ফুসফুস শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে।
শিশু এখন ভালো পরিমাণে প্রস্রাব করে
গর্ভে শিশু পানির মতো এক ধরনের তরল পদার্থের মধ্যে থাকে।[৮] ডাক্তারি ভাষায় এই তরল পদার্থকে বলা হয় ‘অ্যামনিওটিক ফ্লুইড’। সে অল্প অল্প করে এই অ্যামনিওটিক ফ্লুইড গিলে নেয়।[৯]
এই তরল থেকে তার কিডনি প্রস্রাব তৈরি করে এবং শিশু সেই প্রস্রাব ত্যাগ করে।[১০] তবে এই প্রস্রাবের প্রায় পুরোটাই পানি, কারণ মায়ের গর্ভফুল বর্জ্য পদার্থ সরিয়ে নেয়।[১১]
শিশুর কিডনি এখন বেশ ভালো পরিমাণে প্রস্রাব তৈরি করে এবং এই প্রস্রাব আবার তার চারপাশের অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের মধ্যে গিয়ে জমা হয়।[১২] এই অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ছোট্ট শিশুকে গর্ভের ভেতরে সুরক্ষিত রাখে।[১৩]
২৫ সপ্তাহে মায়ের শরীর
ষষ্ঠ চেকআপ
আরেকটা গর্ভকালীন চেকআপের সময় হয়ে এসেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রথম চেকআপের পর থেকে গর্ভকালীন ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি মাসে একবার চেকআপ করা দরকার। তাই এই মাসেও মনে করে সব প্রস্তুতি নিয়ে আপনার সঙ্গীসহ চেকআপে যান।
এই চেকআপে কী কী হতে পারে এবং কীভাবে প্রস্তুতি নিবেন সেসব জানতে গর্ভকালীন চেকআপ আর্টিকেলটি পড়ুন।
রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা
গর্ভাবস্থার ২৪তম–২৮তম সপ্তাহের মধ্যে আপনাকে রক্ত পরীক্ষা ও প্রস্রাব পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হবে। আগামী চেকআপের সময়েই এসব পরীক্ষার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসতে কিংবা সুযোগ থাকলে একেবারে পরীক্ষা করিয়ে আসতে পারেন।
পরীক্ষায় আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ থেকে রক্তশূন্যতা আছে কি না সেটা নির্ণয় করা হবে। সেই সাথে প্রস্রাব পরীক্ষা করে সেখানে প্রোটিন অথবা ইনফেকশনের চিহ্ন আছে কি না সেটা দেখা হবে।
পরীক্ষার জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন জানতে আমাদের এই লেখাটা পড়ে নিতে পারেন।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ও ওজিটিটি পরীক্ষা
গর্ভাবস্থায় আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। এই সমস্যাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলে। গর্ভাবস্থার যেকোনো সময়েই গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হতে পারে।[১৪] তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিকে অর্থাৎ ৪র্থ থেকে ৯ম মাসে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।[১৫]
তাই গর্ভাবস্থার ২৪–২৮তম সপ্তাহের মধ্যে সাধারণত পরীক্ষা করে দেখা হয় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আছে কি না।[১৬] পরীক্ষার নাম হল ‘ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট’ বা ওজিটিটি। তাই এই সপ্তাহে কিংবা সামনের সপ্তাহগুলোতে আপনার ডাক্তার আপনাকে ওজিটিটি পরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন।
ওজিটিটি পরীক্ষার আগে কীভাবে প্রস্তুতি নিবেন, তা জানতে পড়ুন গর্ভাবস্থায় ওজিটিটি আর্টিকেলটি।
বুকের দুধ খাওয়ানোর সঠিক পদ্ধতি
সঠিকভাবে বুকের দুধ খাওয়ানোর উপায়গুলো রপ্ত করতে আপনার যেমন কিছুটা সময় লাগবে তেমনি ঠিকঠাক দুধ খাওয়া শিখতে ছোট্ট শিশুরও কিছুটা সময় লাগা স্বাভাবিক। এজন্য এখন থেকেই বুকের দুধ খাওয়ানোর সঠিক নিয়মগুলো সম্পর্কে জেনে নিন।
কেননা প্রসবের পরপরেই বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হয়। আর তখন আপনি শারীরিকভাবে ক্লান্ত থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে ঐ মুহূর্তে নতুন করে এসব নিয়ম শিখতে গেলে তা আপনার ক্লান্তি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য আপনি নিজে থেকে শিশুর মুখের ভেতরে স্তনের বোঁটা ঢুকিয়ে দিবেন না। এমন করলে শিশুর দুধ খেতে অসুবিধা হতে পারে। বরং ছোট্ট সোনামণিকে এমনভাবে রাখবেন যাতে তার নাক আপনার স্তনের বোঁটা বরাবর থাকে, আর তার ঠোঁটের সাথে আপনার স্তনের বোঁটার ঘষা লাগে। তখন শিশু নিজেই মুখ হা করে খুলে বুকের দুধ খেতে শুরু করবে।
বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়ে শিশুর মাথা ও শরীর সোজা এক লাইনে রাখবেন। কেননা মাথা অথবা ঘাড় বাঁকা করে করে থাকলে দুধ গিলতে শিশুর কষ্ট হবে।
অন্যান্য লক্ষণ
এ সপ্তাহে আপনার আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—
- ক্লান্তি
- ঘুমের সমস্যা
- স্ট্রেচ মার্ক বা ফাটা দাগ
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে পেটের চারপাশের পেশিতে ব্যথা করা
- পাইলস
- মাথা ব্যথা
- কোমর ব্যথা
- নাক দিয়ে রক্ত পড়া
- পেট ফাঁপা লাগা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- পা কামড়ানো
- অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা
- মাথা ঘুরানো
- হাত–পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া
- প্রস্রাবের ইনফেকশন
- যোনিপথে ইনফেকশন হওয়া
- মুখে মেছতার মতো বাদামি ও ছোপ ছোপ দাগ পড়া
- তৈলাক্ত ত্বক ও ত্বকে দাগ পড়া
- চুল ঘন ও ঝলমলে হওয়া
এ ছাড়াও এই সপ্তাহে আপনার প্রথম দিকের সময়ের লক্ষণগুলো থাকতে পারে। যেমন—
- ঘন ঘন মনমেজাজ বদলানো বা মুড সুইং। এই খুশি, আবার এই মন খারাপ—এমনটা হতে পারে। পাশাপাশি এসময়ে ছোটোখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা অথবা কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দিতে পারে
- বমি বমি ভাব
- অদ্ভুত জিনিস খাওয়ার ইচ্ছা। যেমন: মাটি
- তীব্র ঘ্রাণশক্তি
- স্তনে ব্যথা এবং বোঁটা থেকে দুধের মতো তরল বের হওয়া
- সাদাস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
- যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত হওয়া। এটা গর্ভফুলের গুরুতর সমস্যার কারণে হতে পারে, তাই এমন হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন
এ সপ্তাহে বাবার করণীয়
ওজিটিটি পরীক্ষা সম্পর্কে জানুন
কখনো কখনো গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগ হতে পারে। তবে বাইরে থেকে সাধারণত এই রোগের কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না।[১৭] একটা বিশেষ ধরনের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ ধরা যায়। পরীক্ষার নাম হলো ওজিটিটি। সাধারণত গর্ভাবস্থার ২৪–২৮তম সপ্তাহের মধ্যে এই পরীক্ষা করে দেখা হয়।
এই পরীক্ষা করানোর বিশেষ কিছু নিয়ম আছে। সেগুলো জানতে আমাদের এই লেখাটি পড়তে পারেন। কখন, কোথায় ও কীভাবে এই পরীক্ষা করা হয় সেসব সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে শিশুর মাকে সহায়তা করতে পারেন।
বুকের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন
শিশুর মা যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আপনি তাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারেন, সেটা তার কাছ থেকে জেনে নিন।
শিশুকে কোন অবস্থানে দুধ খাওয়াতে হয়, কীভাবে ধরতে হয়, মা কীভাবে বসলে সবচেয়ে ভালো হয়, দুধ খাওয়ানোর পর কীভাবে ঢেঁকুর তোলাতে হয়—এই বিষয়গুলো দুজনে এখন থেকেই একসাথে শিখে রাখতে পারেন। এতে শিশুর জন্মের পর নানান চ্যালেঞ্জের মধ্যে তাকে খাওয়ানোর বিষয়টা হয়তো সহজ হয়ে আসবে।
আর যদি শিশুকে কোনো কারণে ফর্মুলা খাওয়াতে হয়, তাহলে সেটা বানানো, সংরক্ষণ ও খাওয়ানো সংক্রান্ত তথ্যগুলো এখন থেকেই জেনে রাখা শুরু করতে পারেন।
প্রতিদিনের ছোটোখাটো কাজে সাহায্য করুন
এসময়ে বাড়ন্ত পেটের কারণে শিশুর মায়ের নড়াচড়া করতে কিছুটা অসুবিধা হতে পারে। গর্ভকালীন নানান ধরনের শারীরিক সমস্যার জন্য হয়তো ঘরের অনেক কাজও তার জন্য অনেক কষ্টকর হয়ে যেতে পারে। তাই ঘরের কাজে তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করুন।
নীচে কিছু পড়ে গেলে মেঝে থেকে সেটি উঠিয়ে দিয়ে তাকে সাহায্য করতে পারেন। সোফা কিংবা চেয়ারে বসার সময়ে পা দুটো উঁচু করে রাখার জন্য একটা ছোটো টুল এগিয়ে দিতে পারেন। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থেকে কোনো কাজ করতে হলে তার মাথা ঘুরাতে পারে।[১৮] যেমন, রান্নাঘরে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে রান্না করলে এমন হতে পারে। তাই বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকার কাজগুলো আপনি করতে পারেন অথবা অন্য কারও সাহায্য নিতে পারেন।