এ সপ্তাহের হাইলাইটস
প্রসব-পরবর্তী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ঠিক করে ফেলুন
প্রসবের পর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালেও, এমনকি মাসিক শুরু না হলেও আবারও গর্ভধারণ করে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রসব-পরবর্তী সময়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।
এক পাশে কাত হয়ে ঘুমান
এ সপ্তাহেও ঘুমানোর সময়ে আপনার সুবিধামতো ডান অথবা বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমাবেন। কারণ চিৎ হয়ে ঘুমালে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।[১][২] ঘুমের সময়ে সাপোর্ট দেয় এমন আরামদায়ক কয়েকটা বালিশ নিয়ে ঘুমাতে পারেন।
আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান
বিগত সপ্তাহগুলোর মতো এ সপ্তাহেও নিয়মিত আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যাবেন। এগুলো গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[৩][৪] পাশাপাশি আপনাকে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।[৫]
- মাসে কত দিন? ৯ মাস ৩ সপ্তাহ
- কোন ট্রাইমেস্টার? তৃতীয় ত্রৈমাসিক
- আর কত সপ্তাহ বাকি? ১
৩৯ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি
আপনার গর্ভের শিশু এখন মাথা থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত প্রায় ৫০.৭ সেন্টিমিটার লম্বা—প্রায় দুইটা আনারসের সমান। তার ওজন প্রায় ৩.৩ কেজি হয়ে গিয়েছে।
গর্ভে পানির পরিমাণ বেড়ে ১ লিটার হবে
এ সপ্তাহে আপনার গর্ভে পানির পরিমাণ হবে ১ লিটারের কাছাকাছি![৬] একসময় পানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩০ মিলিলিটারের মতো।[৭] ছোট্ট শিশু ‘অ্যামনিওটিক ফ্লুইড’ নামের এই বিশেষ ধরনের পানির মধ্যে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে। অবশ্য এখন যেকোনো মুহূর্তে আপনার পানি ভাঙতে পারে।
শিশু জন্মের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে
ছোট্ট সোনামণি জন্মের জন্য এখন প্রায় প্রস্তুত। এ সপ্তাহ পূর্ণ হয়ে গেলে শিশুকে ফুল টার্ম হিসেবে বিবেচনা করা হবে।[৮] অর্থাৎ সে মায়ের গর্ভে বেড়ে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত সময় পেয়েছে। জন্মের পর শিশুর ফুসফুস, ব্রেইনসহ আরও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকশিত হতে থাকবে।[৯][১০]
শিশুর হার্ট দ্রুত স্পন্দিত হচ্ছে
এসময়ের দিকে শিশুর হার্ট মিনিটে প্রায় ১৩০ বার স্পন্দন করে।[১১] আপনার হার্টের তুলনায় ছোট্ট শিশুর হার্ট বেশ দ্রুত গতিতে চলছে। আপনার হার্ট সাধারণত মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার স্পন্দিত হয়।
৩৯ সপ্তাহে মায়ের শরীর
এ সপ্তাহটা পার হলে আপনার প্রেগন্যান্সিকে ফুল টার্ম প্রেগন্যান্সি হিসেবে বিবেচনা করা হবে।[১২] এর অর্থ হলো শিশু পরিপূর্ণভাবে বেড়ে ওঠার জন্য গর্ভের ভেতরে পর্যাপ্ত সময় পেয়েছে।
ডেলিভারির জন্য শিশুর উপযুক্ত অবস্থান
আপনার শিশু হয়তো বাইরের পৃথিবীতে আসার জন্য একেবারে মুখিয়ে আছে! খুব সম্ভবত সে এখন প্রসবের রাস্তার দিকে মাথা দিয়ে আছে। এসময়ে বেশিরভাগ শিশু মাথা নিচের দিকে রেখে মায়ের কোমরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকে, যা ডেলিভারির জন্য সবচেয়ে উপযোগী অবস্থান।[১৩]
শিশুর মাথা তলপেটের দিকে ঢুকে যাওয়ার ঘটনাকে ডাক্তারি ভাষায় ‘এঙ্গেইজমেন্ট’ বলে। এর ফলে আপনার পেট আগের চেয়ে আকারে কিছুটা ছোটো হয়ে যেতে পারে।
প্রসবের পর পিরিয়ড শুরু হওয়া
ডেলিভারির পর পিরিয়ড শুরু হতে একেকজনের একেকরকম সময় লাগে। তাই আপনার ঠিক কতদিন পর পিরিয়ড শুরু হবে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। শিশুকে যদি নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ান, তাহলে যতদিন বুকের দুধ খাওয়াবেন, ততদিন পিরিয়ড বন্ধ থাকতে পারে। আর যদি শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ান, তাহলে ডেলিভারির ৬–৮ সপ্তাহের মধ্যেই পিরিয়ড শুরু হয়ে যেতে পারে।[১৪]
ডেলিভারির পর আবারও মা হওয়া
ডেলিভারির মাত্র ৩ সপ্তাহের মধ্যে আবারও গর্ভবতী হওয়া সম্ভব, যদিও এমন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। প্রসবের পর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালেও, এমনকি মাসিক শুরু না হলেও, গর্ভধারণের একটা সম্ভাবনা থাকে। তাই ডেলিভারির পর ৩ সপ্তাহের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।[১৫]
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে কম্বাইন্ড জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহারের আগে সাধারণত অন্তত ৬ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়।[১৬] তবে ডেলিভারির পর যেকোনো সময়ে কাঠি পদ্ধতি বা ইমপ্ল্যান্ট, জন্মনিয়ন্ত্রক ইনজেকশন, মিনি পিল অথবা আপনার সঙ্গীর জন্য কনডম বেছে নিতে পারেন।
এই পদ্ধতিগুলো সঠিক নিয়মে ব্যবহার করতে পারলে খুবই কার্যকর। এর মধ্যে ইমপ্ল্যান্ট, ইনজেকশন, কম্বাইন্ড পিল ও মিনি পিল ৯৯% এর চেয়েও বেশি কার্যকর।[১৭][১৮][১৯][২০] আর সঠিক ব্যবহারে কনডম ৯৮% সুরক্ষা দিতে পারবে।[২১]
ডেলিভারির পর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে চেকআপের সময়ে ডাক্তারের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে নিন।
পরিকল্পিত সিজারিয়ান সেকশন
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যদি আগে থেকে সিজার করানোর পরিকল্পনা থাকে, তাহলে সম্ভবত গর্ভাবস্থার অন্তত ৩৯তম সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ আগামী সপ্তাহে সিজার করার তারিখ হতে পারে। ৩৯তম সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় কারণ শিশুর ফুসফুস এই সময়টুকু কাজে লাগিয়ে পুরোপুরি বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়।[২২]
গর্ভকালীন চেকআপ
প্রেগন্যান্সি সাধারণত ৪০ সপ্তাহ ধরে চলে। তবে বেশিরভাগ নারী ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখের ১ সপ্তাহ আগে কিংবা পরে সন্তান জন্মদান করেন। শেষের এই সময়টায় আপনার ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে শিডিউল অনুযায়ী চেকআপে যাওয়া জরুরি।
সাধারণত এই পর্যায়ে প্রতি সপ্তাহে চেকআপে যেতে বলা হয়। আপনারও এমন শিডিউল হলে এই সপ্তাহে চেকআপ করানোর ব্যবস্থা করে ফেলুন।
অন্যান্য লক্ষণ
এ সপ্তাহে আপনার আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—
- পেট টান-টান বা শক্ত হওয়া। একে ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্র্যাকশনও বলা হয়
- ঘুমের সমস্যা
- স্ট্রেচ মার্ক বা ফাটা দাগ
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে পেটের চারপাশের পেশিতে ব্যথা করা
- পাইলস
- মাথা ব্যথা
- কোমর ব্যথা
- পেট ফাঁপা লাগা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা
- অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা
- পা কামড়ানো
- মাথা ঘুরানো
- হাত–পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া
- প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হওয়া
- যোনিপথে ইনফেকশন হওয়া
- মুখে মেছতার মতো বাদামি ও ছোপ ছোপ দাগ পড়া
- তৈলাক্ত ত্বক ও ত্বকে দাগ পড়া
- চুল ঘন ও ঝলমলে হওয়া
এ ছাড়াও এই সপ্তাহে আপনার প্রথম দিকের সময়ের লক্ষণগুলো থাকতে পারে। যেমন—
- ঘন ঘন মনমেজাজ বদলানো বা মুড সুইং। এই খুশি, আবার এই মন খারাপ—এমনটা হতে পারে। পাশাপাশি এসময়ে ছোটোখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা অথবা কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
- অদ্ভুত জিনিস খাওয়ার ইচ্ছা হওয়া। যেমন: মাটি
- তীব্র ঘ্রাণশক্তি
- স্তনে ব্যথা
- স্তন থেকে তরল নিঃসৃত হওয়া
- যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত হওয়া। এমন হলে অবশ্যই একজন ডাক্তার দেখাবেন, কারণ এটা মারাত্মক জটিলতার লক্ষণ হতে পারে
এ সপ্তাহে বাবার করণীয়
ডেলিভারির সময় একেবারেই কাছে চলে এসেছে! এখন আমরা ডেলিভারি সংক্রান্ত তথ্যের পাশাপাশি শিশুর জন্মের পর পর কোন কাজগুলো গুরুত্বপূর্ণ, সেটাও তুলে ধরছি। এতে আপনি ডেলিভারির পর থেকেই নতুন শিশু ও শিশুর মায়ের যত্ন নিতে পারবেন।
ডেলিভারির পর যখন থেকে নিরাপদে সহবাস করতে পারবেন
ডেলিভারির পর ঠিক কবে থেকে সহবাস করা যাবে তার কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। ডাক্তারের বিশেষ নিষেধাজ্ঞা না থাকলে আপনার সঙ্গী ও আপনি যখন থেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হবেন, তখন থেকেই সহবাস করতে পারবেন। অনেক ডাক্তার প্রসবের পর ৬ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে বলেন।[২৩]
গর্ভধারণ ও ডেলিভারি শেষে প্রত্যেক নারী ভিন্ন ধরনের অনুভূতির মধ্য দিয়ে যায়। তাই সহবাসের ব্যাপারে তিনি কী ভাবছেন, সেটা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলুন। এই বিষয়ে আপনাদের মধ্যে বোঝাপড়া থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
মাসিক শুরু হওয়ার আগেই আবারও গর্ভধারণ সম্ভব
শিশুর জন্মের পর শিশুর মায়ের পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগেই তিনি আবারও গর্ভধারণ করতে সক্ষম। তাই পিরিয়ড হয়নি বলে এখন গর্ভধারণ করার সম্ভাবনা নেই—এটা ভেবে ভুল করবেন না। মাসিক শুরু না হলে কিংবা বুকের দুধ খাওয়ালেই যে গর্ভধারণ হবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই প্রসবের পর প্রথম সহবাস থেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করবেন।।[২৪]
বসে না থেকে শিশুর মাকে সাহায্য করুন
শিশুর মা মুখ ফুটে না বললেও ঘর-বাড়ি গোছানোর কাজে আপনি কিছু দায়িত্ব নিয়ে নিন। তার গোছগাছের কাজকর্ম যদি আপনার কাছে জরুরি না-ও মনে হয়, তবুও তার কোনো সাহায্য লাগবে কি না সেটা জিজ্ঞেস করুন। কীভাবে সাহায্য করলে সবচেয়ে ভালো হবে সেটা জেনে নিন।
তিনি হয়তো এসময়ে সবকিছু পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নতুন নতুন আইডিয়া বের করতে পারেন। যেমন: জুতা একেবারেই ঘরের ভেতরে ঢোকানো যাবে না কিংবা পরনের কাপড় খুলে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় জমা করতে হবে। এমন নতুন নিয়মের সাথে আপনি পুরোপুরি একমত না-ও হতে পারেন। তাই বলে কথা কাটাকাটিতে জড়াবেন না। বোঝাপড়ার মাধ্যমে এসব বিষয় সামলানোর চেষ্টা করুন।
প্রকৃতিতে কিছুক্ষণ সময় কাটান
ঘরের বাইরে বেরিয়ে কিছুক্ষণ প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটিয়ে আসুন। পার্কে হেঁটে আসতে পারেন, আশেপাশে গাছ-গাছালি ঘেরা লোকালয় থাকলে সেদিক থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। এতে একদিকে ভালো ব্যায়াম হবে, সাথে মনেও প্রশান্তি আসবে।