গর্ভধারণের অষ্টম সপ্তাহ

এ সপ্তাহের হাইলাইটস

শিশুর বুদ্ধিবিকাশে খাবার তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ রাখুন

ভবিষ্যতের ছোট্টমণিকে মেধার দিক দিয়ে এগিয়ে রাখার সম্ভাবনা বাড়াতে সপ্তাহে অন্তত ২৮০ গ্রাম মাছ খাবেন। এর মধ্যে অর্ধেক খাবেন ইলিশ, পুঁটি ও চাপিলার মতো তৈলাক্ত মাছ।

বমিভাবের জন্য আদা খেতে পারেন

বমিভাব হলে গরম পানিতে একটু আদা কুচি খেয়ে দেখতে পারেন। এতে অনেকের বমিভাব কমে যায়।

মনে করে আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাবেন

আপনার শিশু এখন দ্রুত বেড়ে উঠছে। চোখ-নাক-কান ও ব্রেইন তৈরি হচ্ছে। এসব যাতে সঠিকভাবে তৈরি হতে পারে, সেজন্য আগের সপ্তাহগুলোর মতো এ সপ্তাহেও অবশ্যই মনে করে প্রতিদিন আয়রনফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যাবেন।[১]

ডাক্তারের কাছে চেকআপ করিয়ে ফেলুন

কী করলে মা ও শিশু সুস্থ থাকবে, কোন ওষুধ খেতে হবে, কোন পরীক্ষা করতে হবে—এসব জানার জন্য গর্ভধারণের পর পরই দ্রুত ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। এখনো করা না হয়ে থাকলে এ সপ্তাহেই ডাক্তার দেখান। কোন ডাক্তার দেখালে ভালো হবে সে ব্যাপারে আপনার সঙ্গীর সাহায্য নিতে পারেন।

৮ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি

Week-8
মিষ্টি কুমড়ার বিচি
আপনার বাচ্চা এখন প্রায়
একটি একটি মিষ্টি কুমড়ার বিচি
এর সমান
দৈর্ঘ্য
১৬ মিমি
ওজন
খুবই ছোট্টো

এ সপ্তাহে আপনার গর্ভের শিশু অনেক দ্রুত বেড়ে উঠছে। সে এখন প্রায় ১৬ মিলিমিটার লম্বা—একটি মিষ্টি কুমড়ার বিচির সমান।

শিশুর কান দুটো তৈরি হচ্ছে

এ সপ্তাহে ছোট্ট শিশুর কানের বাইরের অংশ তৈরি হওয়া শুরু হয়ে গেছে।[২] চোখ, নাক ও ঠোঁটের আকৃতি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আপনার শিশুর মুখমণ্ডল তৈরি হওয়ার এই প্রক্রিয়া চলতে থাকবে পুরো সপ্তাহ জুড়েই।

শিশুর আঙ্গুলগুলো তৈরি হচ্ছে

শিশুর ছোট্ট ছোট্ট হাত-পায়ে আঙুলের খাঁজ তৈরি হতে শুরু করেছে।[৩] এই খাঁজ থেকে হাত-পায়ের আঙ্গুল তৈরি হবে। এখন শিশুর পায়ের চেয়ে হাতগুলো বেশি লম্বা, কারণ এই সময়ে শরীরের নিচের অংশের চেয়ে ওপরের অংশ তাড়াতাড়ি বাড়তে থাকে। পায়ের পাতা, গোড়ালি, হাঁটু ও আঙুলগুলো স্পষ্টভাবে বোঝা যেতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

শরীরের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গড়ে উঠছে

শরীরের বাইরের অংশের সাথে তাল মিলিয়ে শরীরের ভেতরের নানান অঙ্গ–প্রত্যঙ্গও বিকশিত হতে শুরু করেছে এর মধ্যেই। ফুসফুস তৈরির কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। পেটের ভেতরের পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও মূত্রথলিসহ আরও বেশ কিছু অঙ্গ বেড়ে উঠছে। আগের সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও আপনার শিশুর ব্রেইন বিকশিত হচ্ছে এবং ব্রেইনের বিভিন্ন অংশগুলো বেশ স্পষ্ট হতে শুরু করে।

৮ সপ্তাহে মায়ের শরীর

গর্ভধারণের অষ্টম সপ্তাহ

এ সপ্তাহে আপনার গর্ভধারণের দুই মাস পূর্ণ হবে! বাইরে থেকে দেখলে হয়ত কেউ এখনো বুঝতে পারছে না যে আপনি মা হতে চলেছেন। কাছের মানুষগুলোকে এই সুখবর না দিয়ে থাকলে কখন কীভাবে তাদেরকে জানাবেন সেটা চিন্তা করতে পারেন।

এ বিষয়ে শিশুর বাবার সাথেও আলাপ করতে পারেন। অনেকে প্রথম তিন মাস পার হওয়ার পর খবরটা জানান, কারণ তখন মিসক্যারেজ বা গর্ভপাতের সম্ভাবনা অনেকখানি কমে আসে।

নিয়মিত মাছ খাওয়া
মাছে যে পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়, তা গর্ভের শিশুর ব্রেইন ও চোখের রেটিনা গঠনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[৪] গর্ভাবস্থায় মা নিয়মিত মাছ খেলে শিশুর ব্রেইন ভালো হয়, আইকিউ বাড়ে, কথাবার্তায় পটু হয় ও সবমিলিয়ে বুদ্ধিবৃত্তি নানানভাবে বিকশিত হয় বলে গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে।[৫] তাই গর্ভাবস্থায় খাবার তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ রাখার চেষ্টা করবেন।

কতটুকু মাছ খাবেন? সপ্তাহে অন্তত ২৮০ গ্রাম মাছ খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এর মধ্যে ১৪০ গ্রাম পরিমাণ তৈলাক্ত মাছ খাবেন। যেমন: ইলিশ, পুঁটি, ও চাপিলা।[৬] খাওয়ার সময়ে ভেজে খাওয়ার পরিবর্তে ভাপে সেদ্ধ করে, কম তেল দিয়ে রান্না করে অথবা সবজি মিশিয়ে তরকারির মতো খেতে পারেন। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়েও এভাবে মাছ খাওয়া চালিয়ে যাবেন।

বমিভাব ও বমি

এ সময়ে আপনার বমিভাব ও বমি হতে পারে। শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এই সমস্যাগুলো দেখা দেয় বলে ধারণা করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম তিন মাস পর বমিভাব ও বমি কমে আসে।[৭]

আপনার এই সমস্যা হলে কিছু ঘরোয়া উপায়ে সমাধান করার চেষ্টা করতে পারেন। যেমন, আদা খেলে অনেকের বমিভাব ও বমি কমে আসে।[৮][৯], কুসুম গরম পানিতে আদা কুচি দিয়ে খেতে পারেন বা খানিকটা কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন।

কিছুক্ষণ পর পর অল্প পরিমাণে ছোটো ছোটো চুমুক দিয়ে পানি পান করবেন, তাতে বমিভাব কমতে পারে। দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান নিশ্চিত করবেন, নাহলে পানিশূন্যতার কারণে বমিভাব বেড়ে যেতে পারে।[১০]

ঘরে বসেই করতে পারবেন এমন আরও কিছু সহজ সমাধান জানতে আমাদের গর্ভাবস্থায় বমি বা মর্নিং সিকনেস লেখাটি পড়ুন।

ক্লান্তি

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে আপনার অনেক ক্লান্ত লাগতে পারে।[১১] সকালবেলা বিছানা ছেড়ে উঠতেই অনেক কষ্ট লাগতে পারে। এটা স্বাভাবিক। যদিও এসময়ে গর্ভের শিশু খুব ছোটো থাকে, তাকে সঠিকভাবে বড় করার জন্য আপনার শরীরে নানান আয়োজন চলতে থাকে। ফলে আপনার খুব ক্লান্ত লাগতে পারে। প্রথম তিন মাস পর এই ক্লান্তিভাব ধীরে ধীরে কমে আসে।[১২] তবে শেষ তিন মাসে আবার ক্লান্ত লাগতে পারে।

ক্লান্তি কমাতে রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম নিশ্চিত করুন। পারলে রাতে একটু আগে আগে ঘুমাতে যেতে পারেন। দিনের বেলায় ক্লান্ত লাগলে প্রয়োজনমত বিশ্রাম নিন।

ক্লান্তি কমানোর আরও কিছু সহজ ঘরোয়া সমাধান পেতে আমাদের গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি লেখাটি পড়তে পারেন।

ঘন ঘন প্রস্রাব

আপনার শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে আপনার জরায়ু আকারে বড় হচ্ছে। এখন আপনার জরায়ু বেড়ে প্রায় একটা মাঝারি আকারের কমলার সমান হয়ে গেছে। জরায়ুর খুব কাছেই মুত্রথলি থাকে, যেখানে প্রস্রাব জমা হয়। বাড়তে থাকা জরায়ু গিয়ে মুত্রথলিতে চাপ দেয়, ফলে আপনার বারবার প্রস্রাবের বেগ আসতে পারে।

এ কারণে রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হলে ঘুমানোর কয়েক ঘন্টা আগে থেকে কম পানি পান করুন।[১৩] তবে শরীরে যেন পানির ঘাটতি না হয়, এজন্য দিনের বেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করে নেবেন। যদি প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করে, আপনার প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হয়ে থাকতে পারে, যার জন্য ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

প্রস্রাবের রাস্তার ইনফেকশনের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের ঘরোয়া সমাধান জানতে আমাদের গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাব লেখাটি পড়ুন।

গর্ভকালীন চেকআপ

বিগত সপ্তাহগুলোতে গর্ভকালীন চেকআপ না করিয়ে থাকলে এ সপ্তাহেই গর্ভকালীন চেকআপ করাতে যান। যত দ্রুত গর্ভকালীন সেবা নেওয়া শুরু করবেন, তত দ্রুত আপনার এবং গর্ভের শিশুর জন্য সঠিক পদক্ষেপগুলো নিতে পারবেন।

গর্ভকালীন চেকআপের জন্য নিকটস্থ সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক, এমনকি স্যাটেলাইট ক্লিনিকেও যোগাযোগ করতে পারেন।

অন্যান্য লক্ষণ

এ সপ্তাহে আপনার আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—

এ সপ্তাহে বাবার করণীয়

বেশি করে মাছ কিনুন

মাছ গর্ভের শিশুর ব্রেইন-বুদ্ধির বিকাশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।[১৪] মাছে থাকা পুষ্টি উপাদান শিশুর মেধা বাড়ায় বলে গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।[১৫] তাই শিশুর মায়ের পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

আপনি যদি বাজার করার দায়িত্বে থাকেন, তাহলে নিয়মিত মাছ কিনতে ভুলবেন না। এমন পরিমাণে মাছ কিনবেন যেন শিশুর মায়ের সপ্তাহে অন্তত ২৮০ গ্রামের মতো মাছ খাওয়া হয়। কেনার সময়ে এক ভাগ সাধারণ মাছ, আরেকভাগ ইলিশ, চাপিলা অথবা পুঁটির মতো তৈলাক্ত মাছ কেনার চেষ্টা করবেন। পরিবারের অন্য কেউ বাজার করলে তার সাথে এ নিয়ে আলাপ করবেন।

বমিভাব কমাতে ছোট্ট সাহায্য করুন

আপনার সঙ্গীর সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর পরই খালি পেটে কোনো কাজ করলে বমি বমি ভাব হওয়ার সমস্যা থাকতে পারে। তার জন্য একটি ছোট্ট সাহায্য করতে পারেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিছানার পাশে তার জন্য একটি ক্র্যাকার বিস্কুটের প্যাকেট রেখে ঘুমান।[১৬] সকালে উঠে কিছু খেয়ে নিলে তার বমি বমি ভাব কমে যেতে পারে।[১৭]

কিছু কাজ ভাগাভাগি করে নিন

এ সময়ে গর্ভবতী মায়ের অনেক ক্লান্ত লাগতে পারে।[১৮] আগে যেসব কাজ সে অনায়াসে করতে পারতেন, এখন সেগুলোতে দ্রুত ক্লান্তি চলে আসতে পারে। তার হাতের কিছু কাজ আপনি নিয়ে নিতে পারেন, যাতে সে বিশ্রাম করতে পারে এবং ক্লান্তি কিছুটা কমে।

পরিবারের অন্য সদস্যদেরকেও তাকে সহায়তা করতে বলতে পারেন। তবে তাদেরকে এখনো গর্ভাবস্থার কথা না জানিয়ে থাকলে সাহায্য চাওয়া কিছুটা কঠিন হতে পারে।

ঘন ঘন প্রস্রাবের বিপদচিহ্নগুলো জেনে রাখুন

এসময়ে বাড়ন্ত শিশুর চাপে সঙ্গীর বারবার প্রস্রাবের বেগ আসতে পারে। তবে কখনো কখনো ইউরিন ইনফেকশনের কারণেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। সময়মতো এর চিকিৎসা না করলে কিডনির ইনফেকশন পর্যন্ত হতে পারে। এতে মা ও গর্ভের শিশুর বিভিন্ন মারাত্মক জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।[১৯]

তাই ঘন ঘন প্রস্রাবের বিপদচিহ্নগুলো জেনে রাখুন। যেমন: প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া, অস্বাভাবিক গন্ধযুক্ত অথবা ঘোলাটে প্রস্রাব হওয়া, শরীরে কাঁপুনি হওয়া, জ্বর আসা বা গা গরম লাগা। সঙ্গীর এমন কোনো লক্ষণ দেখা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান।

বিপদচিহ্ন ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লেখাটি পড়ুন।

দুর্গন্ধ এড়াতে সহজ টিপস মাথায় রাখুন

শিশুর মায়ের বমির গন্ধে যদি আপনারও বমির উদ্রেক হয়, তাহলে নাকের নিচে আপনার পছন্দের কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করুন। যেমন: আফটারশেইভ, সুন্দর গন্ধের কোনো লিপ বাম, বা ভ্যাসলিন। পেপারমিন্ট অয়েল বা এমন কোনো এসেনশিয়াল অয়েল হাতের কাছে থাকলে সেটা ব্যবহার করতে পারেন।

অনলাইনে ‘নোজ প্লাগ’ বা ‘নোজ ক্লিপ’ পাওয়া যায়, দাম ১০০–৩০০ টাকা। গন্ধ এড়াতে সেগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।

(১৯)

  1. World Health Organization. “WHO Recommendation on Daily Oral Iron and Folic Acid Supplementation.” WHO – RHL, https://srhr.org/rhl/article/who-recommendation-on-daily-oral-iron-and-folic-acid-supplementation-1. Accessed 12 Mar. 2023.
  2. Sadler, T. W. Langman’s Medical Embryology. Lippincott Williams & Wilkins, 2022, pp. 351–59.
  3. Sadler, T. W. “Third to Eighth Weeks: The Embryonic Period.” Langman’s Medical Embryology, Lippincott Williams & Wilkins, 2022, pp. 72–95.
  4. Coletta, Jaclyn M., et al. “Omega-3 Fatty Acids and Pregnancy.” Reviews in Obstetrics and Gynecology, vol. 3, no. 4, Jan. 2010.
  5. Bramante, Carolyn T., et al. “Fish Consumption During Pregnancy.” JAMA Pediatrics, vol. 172, no. 9, Sept. 2018, p. 801.
  6. Center for Food Safety, and Applied Nutrition. “Advice about Eating Fish.” FDA, https://www.fda.gov/food/consumers/advice-about-eating-fish.
  7. Royal College of Obstetricians and Gynaecologists. “Pregnancy Sickness (Nausea and Vomiting of Pregnancy and Hyperemesis Gravidarum).” RCOG, https://www.rcog.org.uk/for-the-public/browse-all-patient-information-leaflets/pregnancy-sickness-nausea-and-vomiting-of-pregnancy-and-hyperemesis-gravidarum/. Accessed 15 Apr. 2023.
  8. World Health Organization. “WHO Recommendations on Antenatal Care for a Positive Pregnancy Experience.” WHO, 28 Nov. 2016, https://www.who.int/publications/i/item/9789241549912. Accessed 15 Apr. 2023.
  9. Fotinos, C. “Ginger Was Equivalent to Pyridoxine Hydrochloride (Vitamin B6) for Reducing Nausea and Vomiting in Pregnancy.” Evidence-Based Medicine, vol. 10, no. 1, Feb. 2005, pp. 14–14.
  10. American College of Obstetricians and Gynecologists. Your Pregnancy and Childbirth: Month to Month. American College of Obstetricians and Gynecologists Women’s Health Care Physicians, 2021, p. 50.
  11. Behrenz, Kristin, and Manju Monga. “Fatigue in Pregnancy: A Comparative Study.” American Journal of Perinatology, vol. 16, no. 04, 1999, pp. 185–88.
  12. American College of Obstetricians and Gynecologists. Your Pregnancy and Childbirth: Month to Month. American College of Obstetricians and Gynecologists Women’s Health Care Physicians, 2021, p. 52.
  13. Oelke, Matthias, et al. “A Practical Approach to the Management of Nocturia.” International Journal of Clinical Practice, vol. 71, no. 11, Oct. 2017, p. e13027.
  14. Coletta, Jaclyn M., et al. “Omega-3 Fatty Acids and Pregnancy.” Reviews in Obstetrics and Gynecology, vol. 3, no. 4, Jan. 2010.
  15. Bramante, Carolyn T., et al. “Fish Consumption During Pregnancy.” JAMA Pediatrics, vol. 172, no. 9, Sept. 2018, p. 801.
  16. Niebyl, Jennifer R. “Nausea and Vomiting in Pregnancy.” New England Journal of Medicine, vol. 363, no. 16, Oct. 2010, pp. 1544–50.
  17. American College of Obstetricians and Gynecologists. Your Pregnancy and Childbirth: Month to Month. American College of Obstetricians and Gynecologists Women’s Health Care Physicians, 2021, p. 50.
  18. Behrenz, Kristin, and Manju Monga. “Fatigue in Pregnancy: A Comparative Study.” American Journal of Perinatology, vol. 16, no. 04, 1999, pp. 185–88.
  19. Kalinderi, Kallirhoe, et al. “Urinary Tract Infection during Pregnancy: Current Concepts on a Common Multifaceted Problem.” Journal of Obstetrics and Gynaecology, vol. 38, no. 4, Feb. 2018, pp. 448–53.