ডায়াবেটিক নারীর সুস্থ গর্ভধারণ

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একজন নারী সাধারণত সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে মা হতে পারেন। তবে কখনো কখনো কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে, যেগুলো এড়াতে প্রয়োজন সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপ। তাই ডায়াবেটিক নারীরা গর্ভধারণ করতে চাইলে এসব সম্ভাব্য জটিলতার বিষয়ে অধিক সতর্ক থেকে পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।

এই আর্টিকেলে যারা গর্ভবতী হওয়ার আগে থেকে টাইপ ১ ডায়াবেটিস বা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

পূর্বে ডায়াবেটিস না থাকলেও, গর্ভকালীন সময়ে কোনো কোনো নারীর সাময়িক ডায়াবেটিস দেখা যেতে পারে। এতে প্রথমবারের মতো রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। তবে সাধারণত প্রসবের পর তা আবার স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরে আসে। এই ধরণের ডায়াবেটিসকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes Mellitus) বলে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের লক্ষণ ও করণীয় আর্টিকেলটি পড়ুন।

ডায়াবেটিক রোগী গর্ভধারণ করলে কী কী জটিলতার সম্ভাবনা থাকে? 

গর্ভবতীর টাইপ ১ বা টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকলে গর্ভাবস্থায় মা ও গর্ভের শিশু উভয়েরই কিছু জটিল সৃষ্টির ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিচে ডায়াবেটিস রোগীর গর্ভধারণ ও প্রসব সংক্রান্ত ঝুঁকি এবং গর্ভের শিশুর উপর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হলো।

ডায়াবেটিক গর্ভবতী মায়ের ঝুঁকি

ডায়াবেটিস রোগীদের নির্দিষ্ট কিছু স্বাস্থ্য জটিলতা হওয়ার ঝুঁকি বেশি। গর্ভধারণের ফলে এসব ঝুঁকি আরও বেড়ে যেতে পারে। কিংবা আগে থেকে এসব স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে সেগুলো আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। এসব জটিলতার মধ্যে রয়েছে—

  • চোখের জটিলতা (ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি)
    অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে ঝাপসা দৃষ্টি থেকে শুরু করে অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে পারে।
  • কিডনির সমস্যা (ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি)

সমস্যাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ডায়াবেটিসের নানা স্বাস্থ্য জটিলতা ও করণীয় আর্টিকেলটি পড়তে পারেন

এছাড়াও টাইপ ১ ডায়াবেটিসের কিছু রোগীর রক্তে কিটোন নামক ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ জমা হয়ে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস নামের জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইনসুলিনের অভাবে রক্তে সুগারের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে এ সমস্যা হয় এবং দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

ডায়াবেটিস রোগীর গর্ভধারণ ও প্রসব সংক্রান্ত ঝুঁকি

টাইপ ১ বা টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকলে —

  • গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়
  • আকারে বাচ্চা স্বাভাবিকের তুলনায় বড় হতে পারে। এর.ফলে প্রসবকালীন বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময়ে ঔষধ ও অন্যান্য পদ্ধতির সাহায্যে কৃত্রিমভাবে প্রসবের প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়, অথবা সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রয়োজন হয়।

ডায়াবেটিস রোগীর গর্ভের শিশুর ঝুঁকি

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ডায়াবেটিস রোগীর গর্ভের সন্তানের কিছু জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যেমন—

  • বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করার সম্ভাবনা কিছুটা বেড়ে যায়। যেমন: হার্ট ও স্নায়ুতন্ত্রের ত্রুটি।
  • জন্মের পরপর হার্টের সমস্যা বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাসহ অন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে   হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হতে পারে।
  • মৃত সন্তান জন্মগ্রহণ করতে পারে কিংবা জন্মের কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যেতে পারে।
  • পরবর্তী জীবনে স্থূলতা (Obesity) অথবা ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে।

গর্ভধারণের আগে থেকে ও গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে এসব ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

কীভাবে গর্ভবতী ও গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাবেন? 

ডায়াবেটিসের ফলে গর্ভকালীন ঝুঁকি কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো গর্ভধারণের আগে থেকেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা। এজন্য গর্ভবতী হওয়ার পূর্বে সঠিক পরিকল্পনা ও পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। 

তাই গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত নিলে প্রথমে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রেফার করতে পারেন।

১. গর্ভধারণের পূর্বপ্রস্তুতি

রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ

  • রক্তে সুগারের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য ডাক্তার এইচবিএওয়ানসি (HbA1C) পরীক্ষা করানোর উপদেশ দিতে পারেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমে গত ২-৩ মাসে রক্তে সুগারের নিয়ন্ত্রণ কেমন ছিল সেই সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
    • গর্ভধারণের আগে HbA1C এর মাত্রা ৬.৫% এর কম থাকা সবচেয়ে উত্তম। মা ও গর্ভের সন্তানের জটিলতার ঝুঁকি কমানোর জন্য এই মাত্রা ৬.৫% এর যথাসম্ভব কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করতে হবে।
    • HbA1C এর মাত্রা ১০% বা এর বেশি হলে এ মুহূর্তে গর্ভধারণ না করাই সবচেয়ে নিরাপদ। সুগারের মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসলে আবার গর্ভধারণের চেষ্টা করা যেতে পারে।
  • রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। আপনার জন্য কোন পদ্ধতি সবচেয়ে ভালো হবে তা ডাক্তারের সাথে কথা বলে জেনে নিন। 
  • আপনার যদি টাইপ ১ ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে রক্তে কিটোনের মাত্রা দেখে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস হচ্ছে কিনা সেটি খেয়াল করুন। রক্তে কিটোনের মাত্রা বোঝার জন্য টেস্টিং স্ট্রিপ ও মনিটর কিনে নিতে পারেন। এ ব্যাপারে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জেনে নিন।

বাড়িতে কিটোনের মাত্রা পরিমাপ করবেন যদি, ১) রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায় এবং ২) বমি বা ডায়রিয়া হয়

ফলিক এসিড সেবন

গর্ভধারণের চেষ্টা শুরু করার সময় থেকে গর্ভকালীন ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত একজন ডায়াবেটিস রোগীকে প্রতিদিন ৫ মিলিগ্রাম করে ফলিক এসিড সেবন করতে হবে। এই ডোজ স্বাভাবিক মাত্রার তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এগুলো খাওয়া উচিত নয়।

ফলিক এসিড আপনার সন্তানকে স্পাইনা বিফিডার (Spina bifida) মতো বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি থেকে রক্ষা করে।

ফলিক এসিড আপনার সন্তানকে স্পাইনা বিফিডার (Spina bifida) মতো বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি থেকে রক্ষা করে।

২. গর্ভাবস্থায় করণীয়

ডায়াবেটিসের ঔষধ

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঔষধ পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। ডায়াবেটিসের সাথে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন উচ্চ রক্তচাপের জন্য ঔষধ সেবন করলে সেটিও পরিবর্তন করতে হতে পারে।

ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় এতদিন ট্যাবলেট সেবন করে থাকলে গর্ভধারণের পর তা সাধারণত বন্ধ রাখা হয়। এর পরিবর্তে ইনসুলিন ইনজেকশন নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সাথে মেটফরমিন নামক একটি ঔষধও যোগ করা হতে পারে। 

আপনি যদি ইতোমধ্যেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ইনসুলিন ইনজেকশন নিয়ে থাকেন, তাহলে সেটা বদলে ভিন্ন ধরনের ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

নিয়মিত রক্তের সুগার পরিমাপ

যেহেতু গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব (মর্নিং সিকনেস) ও বমির কারণে রক্তে সুগারের মাত্রা প্রভাবিত হয়, তাই এ সময়ে বাড়িতে নিয়মিত রক্তের সুগার পরিমাপ করতে হবে। আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিন।

রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে বার বার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। একে সংক্ষেপে অনেকে হাইপো বলেন, যার অর্থ রক্তে সুগারের মাত্রা অতিরিক্ত কমে যাওয়া। এটি আপনার বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর নয় কিন্তু সুস্থতার জন্য আপনাকে ও আপনার পরিবারকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। একজন ডাক্তার বা ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে নিন।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের জন্য চোখ পরীক্ষা

ডায়াবেটিস থাকলে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানো উচিত। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির লক্ষণ চিহ্নিত করার জন্য এই চেকআপ করা হয়।

গর্ভাবস্থায় চোখের মারাত্মক সমস্যাগুলোর ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়, তাই এই পরীক্ষা করানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুরুতেই ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

নিয়মিত গর্ভকালীন চেকআপ

নিয়মিত গর্ভকালীন চেকআপ করানো অত্যন্ত জরুরী। এতে ডাক্তার আপনার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এছাড়া আপনার ও আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে এমন যেকোনো পরিবর্তন হলে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।

৩. সন্তান প্রসবের সময় করণীয়

ডায়াবেটিস রোগীদের সন্তান জন্মদানের সময় অবশ্যই এমন হাসপাতাল বেছে নেওয়া উচিত, যেখানে বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরিচালিত দক্ষ ডাক্তার ও নার্স, মা ও সন্তানের উপযুক্ত যত্ন নিতে পারবেন।

প্রসবের জন্য হাসপাতালে যাওয়ার সময় আপনার ব্লাড সুগার মাপার যন্ত্র এবং আপনি যেসব ঔষধ সেবন করেন সেগুলো সাথে নিয়ে যাবেন। সাধারণত প্রসববেদনা শুরু অথবা অপারেশনের পূর্বে, কিংবা ডাক্তার ঔষধ সেবন নিষেধ করার আগ পর্যন্ত নিয়মিত সুগার মেপে ঔষধ সেবন বা ইনসুলিন ব্যবহার করা চালিয়ে যেতে হয়।

গর্ভাবস্থা দীর্ঘ হলে আপনার ও আপনার সন্তানের জটিলতার ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই ডাক্তার হয়তো ঔষধ বা অন্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কৃত্রিম উপায়ে প্রসব প্রক্রিয়া শুরু করে ফেলার পরামর্শ দিতে পারেন। সন্তান আকারে স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হলে নিরাপদ প্রসবের জন্য ডাক্তার সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনের পরামর্শও দিতে পারেন।

সন্তান প্রসবের পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে আপনার ব্লাড সুগার পর্যবেক্ষণ করা হবে। প্রয়োজনে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে শিরায় ইনসুলিন ও গ্লুকোজ দেয়া হতে পারে।

৪. সন্তান জন্মদানের পর

সাধারণত সন্তান জন্মদানের পরপরই আপনি শিশুকে কোলে নিতে বা বুকের দুধ পান করাতে পারবেন। শিশুকে জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব (৩০ মিনিটের মধ্যে) বুকের দুধ পান করানো গুরুত্বপূর্ণ। এরপর ২-৩ ঘণ্টা পরপর তাকে নিয়মিত দুধ পান করাতে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত তার ব্লাড সুগারের পরিমাণ নিরাপদ ও স্থিতিশীল হচ্ছে।

জন্মের কয়েক ঘণ্টা পর নবজাতকের রক্তে সুগারের পরিমাণ ঠিক আছে কি না তা দেখার জন্য পায়ের গোড়ালি থেকে রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করা হতে পারে। সুগারের পরিমাণ যদি নিরাপদ মাত্রার ভেতরে না থাকে কিংবা শিশু যদি ঠিকমতো খেতে না পারে তাহলে বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়।

রক্তে সুগার বাড়ানোর জন্য শিশুকে সাময়িকভাবে নল বা ড্রপের মাধ্যমে খাওয়ানো হতে পারে, এমনকি শিরায় গ্লুকোজ দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। যদি শিশুটি অসুস্থ থাকে বা নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে, তবে তাকে দেখাশুনার জন্য নবজাতকের বিশেষ ইউনিটে (যেমন নিওনেটাল আইসিইউ) রাখা হতে পারে।

সন্তান জন্মদানের পরে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ইনসুলিন বা মুখে খাওয়ার ঔষধের ডোজের পরিবর্তন হবে। গর্ভধারণের আগে যে পরিমাণে ইনসুলিন নিতেন বা যেভাবে মুখে ট্যাবলেট খেতেন সেই ডোজে হয়তো ফিরে যেতে পারেন। ডাক্তার আপনার সাথে কথা বলে সঠিক ঔষধ ও ডোজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।

সন্তান প্রসবের পর বাড়ি যাওয়ার আগে একবার এবং ৬ সপ্তাহ পরের চেকআপের সময় আরেকবার রক্তে সুগারের মাত্রা মেপে দেখা হবে। সেই সাথে প্রসব-পরবর্তী স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা ও ব্যায়াম সম্পর্কেও উপদেশ দেওয়া হবে।