এ সপ্তাহের হাইলাইটস
রোদ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন
রোদে থাকা অতিবেগুনী রশ্মির সংস্পর্শে ত্বক পুড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় ত্বক নাজুক থাকে, তাই সূর্যের আলোয় বের হলে নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন। বাইরে বের হওয়ার সময়ে শরীরের উন্মুক্ত স্থানে (যেমন: মুখে, হাতে ও পায়ে) কমপক্ষে SPF 30 বিশিষ্ট সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
গর্ভের শিশুকে ইনফেকশন থেকে দূরে রাখুন
যেসব ইনফেকশন অন্য সময়ে স্বাস্থ্যের ওপর তেমন একটা প্রভাব ফেলে না, গর্ভাবস্থায় সেগুলো গুরুতর হতে পারে। তাই গর্ভের শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে বাড়ির সবাই মিলে বারবার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করবেন। অসুস্থ ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলবেন। একেকজনের প্লেট, গ্লাস ও বোতল আলাদা রাখবেন।
আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান
গর্ভের শিশুর সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত করতে আগের সপ্তাহগুলোর মতো এ সপ্তাহেও প্রতিদিন আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান।[১][২]
- মাসে কত দিন? ৪ মাস
- কোন ট্রাইমেস্টার? দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক
- আর কত সপ্তাহ বাকি? ২৪
১৬ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি
এ সপ্তাহে আপনার গর্ভের শিশু প্রায় ১১.৬ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে গিয়েছে। তার ওজন প্রায় ১০০ গ্রাম। সে এখন প্রায় একটি কামরাঙ্গার সমান লম্বা।
ছোট্ট শিশু চোখ নাড়াতে পারে
আপনার ছোট্ট শিশু এখন তার চোখ ধীরে ধীরে এদিক-ওদিক নাড়াতে পারে।[৩][৪] তবে তার চোখ এখনো বন্ধ অবস্থায় আছে। এসময়ে চোখের পাতা তার চোখ দুটোকে ঢেকে রেখেছে।[৫][৬]
শিশু মুখ হা করতে শিখেছে
শিশুর মুখমণ্ডলের পেশিগুলোর কাজ করার ক্ষমতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এখন সে মুখ হা করতে পারে এবং মুখ বন্ধ করতে পারে।[৭]
শিশুর কানগুলো বিকশিত হচ্ছে
শিশুর কান দুটো ধীরে ধীরে মাথার দুপাশে জায়গামত বসছে।[৮] এ সপ্তাহে শিশুর কানে শোনার ক্ষমতা বিকশিত হচ্ছে।[৯] সময়ের সাথে সাথে গর্ভের শিশু বাইরের আওয়াজ কানে শুনতে শুরু করবে।[১০]
শিশুর নার্ভাস সিস্টেম পরিণত হচ্ছে
ছোট্ট শিশুর স্নায়ুতন্ত্র ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে। ফলে ব্রেইনের সাথে পুরো শরীরের সংযোগ আরও নিখুঁত হচ্ছে।[১১] যার সাহায্যে আপনার শিশু আরও ভালোভাবে হাত–পা নাড়াতে শিখছে।[১২],[১৩]
পায়ের আঙ্গুলের নখ তৈরি হচ্ছে
ছোট্ট শিশুর পায়ের আঙুলগুলোতে ছোট্ট ছোট্ট নখ তৈরি হতে শুরু করেছে।[১৪] হাতের আঙ্গুলের নখ আগেই তৈরি হওয়া শুরু হয়ে গেছে।[১৫] শিশুর হাত-পায়ের আঙুলগুলো প্রথমে একসাথে জোড়া লাগানো অবস্থায় ছিল। সেগুলো আগেই আলাদা হয়ে গেছে—এখন বেশ স্পষ্ট বোঝা যায়।[১৬]
১৬ সপ্তাহে মায়ের শরীর
এ সপ্তাহ থেকে আপনি হয়তো গর্ভের ছোট্টমণির নড়াচড়া অনুভব করতে পারবেন!
গর্ভের শিশুর নড়াচড়া
শিশু নড়াচড়া করতে শুরু করলে আপনার পেটের ভেতরে হালকা ঝাঁকুনি থেকে শুরু করে বুদবুদের মতো কিছু একটা নড়াচড়া করছে, কিছু একটা সরে যাচ্ছে, হালকাভাবে ঝাপটা–ঝাপটি করছে কিংবা পেটের ভেতরে আলতোভাবে ঘুরছে—এমন যেকোনো অনুভূতি হতে পারে।
আপনি ১৬তম সপ্তাহ–২৪তম সপ্তাহের মধ্যে প্রথমবারের মতো শিশুর নড়াচড়া টের পেতে শুরু করবেন। তবে এটা আপনার প্রথম গর্ভধারণ হলে ২০তম সপ্তাহ পার হওয়ার আগে গর্ভের শিশুর নড়াচড়া না-ও বুঝতে পারেন। এমনকি কারও কারও ক্ষেত্রে প্রথমবার নড়াচড়া বুঝতে গর্ভধারণের ২০তম সপ্তাহের পর আরও কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে যেতে পারে।
কিন্তু যদি গর্ভধারণের ২৪তম সপ্তাহের মধ্যেও শিশুর কোনো ধরনের নড়াচড়া অনুভব না করেন, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাবেন।
রোদ থেকে সুরক্ষা
আপনি হয়তো জেনে থাকবেন যে, সূর্যের তীব্র আলোয় ত্বক পুড়ে যায়। তবে শুনে অবাক হতে পারেন যে, আকাশ মেঘলা থাকলেও এমন হতে পারে।[১৭][১৮] গর্ভকালীন সময়ে সাধারণত ত্বক বেশি সংবেদনশীল থাকে, তাই সহজেই পুড়ে যেতে পারে। আবার রোদে থাকা অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে মুখে গাঢ় ছোপ ছোপের মত দাগ বা মেছতা হতে পারে।[১৯] তাই গর্ভাবস্থায় রোদ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা প্রয়োজন।
বাইরে বের হওয়ার ১৫ মিনিট আগে মুখ, গলা, হাত, পা ও শরীরের উন্মুক্ত স্থানে কমপক্ষে SPF 30 মাত্রার সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।[২০] কেনার সময়ে সানস্ক্রিনটি UVA ও UVB দুটোর বিরুদ্ধেই সুরক্ষা দেয় কি না সেটা দেখে নিন।
সানস্ক্রিন লাগানোর সময়ে বেশ ভালো পরিমাণে সানস্ক্রিন নিন যাতে ত্বকের ওপরে সানস্ক্রিনের একটি পুরু আস্তরণ সৃষ্টি হয়। সেই সাথে রোদ থেকে সুরক্ষিত থাকতে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। বাইরে যখন প্রখর রোদ থাকে, তখন গাছতলার মতো ছায়াযুক্ত জায়গায় দাঁড়ান।
পিঠ ও কোমর ব্যথা
বাড়ন্ত পেটের ভার আর গর্ভকালীন হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে আপনার পিঠের নিচের দিকে ও কোমরে চাপ পড়তে পারে। এর সমাধানে ছোটো ছোটো কিছু টিপস মেনে চলতে পারেন। যেমন—
- বসার সময়ে পিঠ সোজা রেখে বসবেন।
- হিল জুতা না পরে ফ্ল্যাট বা সমতল জুতা পরুন। তাতে ওজন সমানভাবে বণ্টন হবে।
- বিছানায় এমন জাজিম, তোষক বা ম্যাট্রেস ব্যবহার করুন, যা সঠিকভাবে শরীরের ভার বহন করতে পারে। প্রয়োজনে নরম জাজিমের নিচে একটি হার্ডবোর্ড রেখে সেটাকে কিছুটা শক্ত করার ব্যবস্থা করতে পারেন।[২১]
ব্যথা সারানোর ব্যায়াম এবং আরও কিছু সহজ টিপস জানতে আমাদের এই লেখাটা পড়তে পারেন।
ইনফেকশন থেকে সুরক্ষা
এমন কিছু ইনফেকশন রয়েছে, যেগুলো আপনার গর্ভের ছোট্টমণির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এসব জীবাণুর সংস্পর্শ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার একটা কার্যকর উপায় হলো নিয়মিত ও নিয়মমতো হাত ধোয়া। আপনি, আপনার সঙ্গী ও বাড়ির সবাই মিলে বারবার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করবেন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে রাখতে পারেন, যাতে হাত ধোওয়ার ব্যবস্থা না থাকলে অন্তত এটা দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিতে পারেন।
ইনফেকশন এড়াতে আরেকটা বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। সেটা হলো, অন্য কারও সাথে খাবার, পানি ও কোমল পানীয় শেয়ার করবেন না, অর্থাৎ একই প্লেট, গ্লাস বা বোতল থেকে এসব খাবেন না। অসুস্থ ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
মনে রাখবেন, অন্য সময়ে সাধারণ হলেও অনেক ইনফেকশন গর্ভাবস্থায় মারাত্মক রূপ নিয়ে গর্ভের শিশুর ক্ষতি করতে পারে। তাই আপনার সঙ্গী অসুস্থ হলে তাকেও সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্য ঘরে থাকার অনুরোধ করতে দ্বিধাবোধ করবেন না।
অন্যান্য লক্ষণ
গর্ভকালীন সময়টা কারও জন্য সহজ নয়। তাই যেকোনো সময়ে আপনার মানসিক কিংবা শারীরিকভাবে একটু বেশি খারাপ লাগতে পারে। সমস্যা বেশি মনে হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
এসময়টাতে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। এটি গর্ভবতীদের খুব কমন একটি সমস্যা। এক্ষেত্রে আপনার পায়খানা করতে কষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা লাগা ও বমি বমি ভাব হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য ছাড়াও এই সপ্তাহে আগের মতো আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে পেটের চারপাশের পেশিতে ব্যথা করা। একে লিগামেন্টের ব্যথা বলা হয়।
- মাথা ব্যথা
- নাক থেকে রক্ত পড়া
- বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা
- স্তনে ব্যথা
- পা কামড়ানো
- বেশি গরম লাগা
- মাথা ঘুরানো
- হাত–পা ফুলে যাওয়া
- প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হওয়া
- যোনিপথে ইনফেকশন হওয়া
- মুখে মেছতার মতো বাদামি ও ছোপ ছোপ দাগ পড়া
- তৈলাক্ত ত্বক ও ত্বকে দাগ পড়া
- চুল ঘন ও ঝলমলে হওয়া
এ ছাড়া গর্ভাবস্থার প্রথমদিকের কিছু লক্ষণ থেকে যেতে পারে। যেমন—
- তীব্র ঘ্রাণশক্তি
- ঘন ঘন মনমেজাজ বদলানো বা মুড সুইং। এই খুশি, আবার এই মন খারাপ—এমনটা হতে পারে। পাশাপাশি এ সময়ে ছোটোখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা অথবা কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দিতে পারে
- সাদাস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত হওয়া। এমন হলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তার দেখাবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা কোনো মারাত্মক কারণে হয় না। তবে কখনো কখনো এটা গর্ভপাতের একটা লক্ষণ হতে পারে
এ সপ্তাহে বাবার করণীয়
বিছানায় শক্ত তোষক ব্যবহার করুন
এসময়ে শিশুর মায়ের পিঠ ও কোমরে ব্যথা হতে পারে। সমস্যা সমাধানে আপনাদের বিছানায় শরীরের ভার সঠিকভাবে বহন করে এমন জাজিম, তোষক অথবা ম্যাট্রেস ব্যবহার করতে পারেন। যদি এই মুহূর্তে নতুন ম্যাট্রেস কিনতে অসুবিধা হয়, তাহলে নরম জাজিম বা তোষকের নিচে একটা হার্ডবোর্ড রেখে সেটাকে কিছুটা শক্ত করার ব্যবস্থা করতে পারেন।[২২]
অসুস্থ ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরে থাকুন
গর্ভাবস্থায় কিছু ইনফেকশন শিশুর মা ও ছোট্টমণির জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে।[২৩][২৪] এমনকি এসময়ে ফ্লু এর মতো সচরাচর দেখা রোগও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।[২৫] এসব জীবাণু ত্বকের সংস্পর্শ, হাঁচি-কাশি, এমনকি বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় অসুস্থ ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বাড়ির কোনো সদস্যের মাধ্যমে অসুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে আসা জীবাণু ঘরে প্রবেশ করতে পারে। তাই আপনিসহ বাড়ির সব সদস্যকে এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের কাছ থেকে আপাতত দূরে থাকতে হবে।
বাসায় কারও অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিলে তাকে শিশুর মায়ের থেকে দূরে আলাদা একটা ঘরে থাকার ব্যবস্থা করুন। বারবার সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন এবং প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করুন। মোট কথা, শিশুর মাকে ও গর্ভের শিশুকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সবাই সচেতন থাকুন।
ওষুধ নিয়ে সতর্ক থাকুন
কিছু ওষুধ গর্ভাবস্থায় সেবনের জন্য নিরাপদ নয়। তাই ফার্মেসি থেকে নিজেরা ওষুধ কিনে খাওয়ার ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকবেন। শিশুর মায়ের জন্য যেকোনো ওষুধ কেনার আগে সাথে থাকা নির্দেশিকা থেকে সেটা গর্ভাবস্থায় ব্যবহারের জন্য নিরাপদ কি না তা দেখে নিবেন।
আগে থেকে কোনো ঔষধ সেবন করতে থাকলে ডাক্তারকে জানাতে মনে করিয়ে দিন
শিশুর মা যদি গর্ভাবস্থার আগে থেকে কোনো ঔষধ সেবন করে আসতে থাকেন, তাহলে তা ডাক্তারকে জানাতে মনে করিয়ে দিতে পারেন। এতে করে গর্ভকালীন সময়ে সেসব ঔষধ সেবন চালিয়ে যাওয়া যাবে কি না সেই বিষয়ে ডাক্তার বিস্তারিত ধারণা দিতে পারবেন।
অনেকক্ষেত্রে গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ডাক্তার কিছু ঔষধ বাদ দিয়ে দিতে পারেন কিংবা বদলে দিতে পারেন। তবে এই বিষয়ে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।