গর্ভধারণের ১৭তম সপ্তাহ

১৭তম সপ্তাহ নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন

আপনার শিশু গর্ভে বড় হতে থাকার সাথে সাথে আপনার পেটের আকারও বাড়তে থাকে। সামনের সপ্তাহগুলোতে (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে) আপনি শিশুটির অস্তিত্ব তার নড়াচড়ার মাধ্যমে টের পেতে শুরু করবেন।  

বেশিরভাগ মহিলাই গর্ভাবস্থার এ সময়টাতে বেশ ভালো বোধ করতে থাকেন। অনেকে বলে থাকেন, গর্ভবতী মায়েদের তথাকথিত সৌন্দর্য এসময় অনেক বেড়ে যায় – এসময় তাদের চুল আগের চেয়ে ঘন ও কালো দেখায় (চুল পড়া কমে যাওয়ার ফলে) এবং ত্বকও আগের চেয়ে উজ্জ্বল হয়ে যায় (হরমোনজনিত এবং শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ার কারণে)। 

তবে সবার ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতা একই রকম হয় না। অনেকেই এসময় বিভিন্ন কারণে দুশ্চিন্তা করতে থাকেন৷ গর্ভাবস্থায় যতটা সম্ভব দুশ্চিন্তা না করে রিল্যাক্স করার পরামর্শ দেয়া হয়।

এ সপ্তাহেও বিগত সপ্তাহের মত কিছু লক্ষণ দেখা যায়, যেমন: 

  • বেশি ক্লান্ত লাগা ও ঘুমের সমস্যা হওয়া,
  • দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া,
  • পেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে এর চারপাশে পেশিতে টান বা ব্যথা অনুভব করা,
  • মাথাব্যথা,
  • কিছু ক্ষেত্রে নাক থেকে হালকা রক্ত পড়া, 
  • পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া,
  • বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা,
  • চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব করা,
  • পায়ে ব্যথা,
  • অল্পতেই গরম লাগা কিংবা সামান্য গরম আবহাওয়াতেই অস্বস্তি বোধ করা বা হাঁসফাঁস করা,
  • মাথা ঘুরানো,
  • হাত-পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া,
  • প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন,
  • যোনিপথে অর্থাৎ মাসিক/পিরিয়ডের রাস্তায় ইনফেকশন, 
  • মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ পড়া,
  • অনেকের ক্ষেত্রে মাথার চুল আগের চেয়ে ঘন, কালো হয়ে ওঠা।

যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে: 

সাধারণত ১৮ থেকে ২১ সপ্তাহের মধ্যে (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ২০তম সপ্তাহে) একটি আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করা হয়। এর সাহায্যে আপনার গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ ঠিকমত হচ্ছে কিনা তা দেখা হয়। আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে আপনার আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার তারিখ আগেভাগে নির্ধারণ করে নিন। 

বিশেষ তথ্য
গর্ভাবস্থায় যোনিপথে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হলে তা গুরুতর কোন সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন বা হাসপাতালে চলে যান।

গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে

এ সপ্তাহে আপনার শিশু খুব দ্রুত বেড়ে উঠতে থাকে। এরমধ্যে শিশুর ওজন বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০ গ্রামে, আর শিশু লম্বায় হয় প্রায় ১২ সেন্টিমিটার বা ৫ ইঞ্চি।  

এসময় শিশুটির অবয়বে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে। তার চেহারার আদল অনেকটাই মানুষের মত হয়ে যায়৷ ভ্রূ ও চোখের পাপড়ি তৈরি হয়। শিশু তার চোখের মণি এদিক-সেদিক নাড়াতে পারে, যদিও চোখের পাতা এখনো বন্ধ থাকে। শিশুটি মুখ খুলতে ও বন্ধ করতে পারে। যদিও এসবের ওপর তার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এই সপ্তাহেও তৈরি হয় না। 

শিশুর কানে শোনার ক্ষমতাও এসময় বেড়ে যায়; বিকট কোন আওয়াজ শুনলে শিশু হাত-পা ছুঁড়ে প্রতিক্রিয়া দিতে পারে। 

শিশুটির হাতের আঙুলের চামড়ায় সূক্ষ্ম রেখাগুলো ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে যায়, অর্থাৎ এই সময় থেকে তার নিজস্ব ও স্বতন্ত্র আঙুলের ছাপ (ফিংগার প্রিন্ট) থাকবে। এছাড়া তার হাত ও পায়ের আঙুলের নখগুলো তৈরি হতে থাকে এবং শিশু হাত দিয়ে কোনো কিছু শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার ক্ষমতাও অর্জন করে।

আর্টিকেলটি লেখা ও সম্পাদনায় কাজ করেছেন: সামিয়া আফরিন এবং ডা. ইমা ইসলাম।