এ সপ্তাহের হাইলাইটস
অ্যানোমালি স্ক্যানের প্রস্তুতি নিন
ডাক্তার আপনাকে শীঘ্রই একটি বিশেষ আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিবেন, যার নাম অ্যানোমালি স্ক্যান। এর সাহায্যে শিশুর জন্মগত ত্রুটি খুঁজে দেখা হয়। শিশু ছেলে না মেয়ে, তাও এই পরীক্ষায় জানা যেতে পারে।
নিয়মিত মাছ খান
গর্ভাবস্থায় মা নিয়মিত মাছ খেলে শিশুর ব্রেইনের বিকাশ ভালো হয়, আইকিউ বাড়ে, কথাবার্তায় পটু হয়।[১] তাই সপ্তাহে অন্তত ২৮০ গ্রামের মতো মাছ খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এর মধ্যে অর্ধেক পরিমাণ তৈলাক্ত মাছ খাবেন।[২] যেমন: ইলিশ, চাপিলা, ও পুঁটি। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়েও এভাবে মাছ খাওয়া চালিয়ে যাবেন।
আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান
গর্ভের শিশুর সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত করতে আগের সপ্তাহগুলোর মতো এই সপ্তাহেও প্রতিদিন আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান।[৩][৪]
- মাসে কত দিন? ৪ মাস ১ সপ্তাহ
- কোন ট্রাইমেস্টার? দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক
- আর কত সপ্তাহ বাকি? ২৩
১৭ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি
এ সপ্তাহে আপনার গর্ভের শিশু প্রায় ১২ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে গিয়েছে। তার ওজন এখন প্রায় ১৫০ গ্রাম। সে এখন লম্বায় প্রায় একটি সবরি কলার সমান।
ছোট্ট শিশুর আঙ্গুলের ছাপ তৈরি হচ্ছে
শিশুর হাত-পায়ে আঙুলের চামড়ায় সূক্ষ্ম রেখা বা দাগ তৈরি হচ্ছে।[৫] এই রেখাগুলোকে আমরা আঙুলের ছাপ বলে চিনি। এই সপ্তাহে তার হাতের আঙ্গুলের ছাপের একটা প্যাটার্ন তৈরি হয়ে যাবে।[৬]
প্রতিটি মানুষের আঙুলের ছাপ পুরোপুরি আলাদা হয়।[৭] তাই আপনার শিশুর হাতে-পায়ের আঙ্গুলের এই রেখাগুলো একদম স্বতন্ত্র ও নিজস্ব। এমনকি গর্ভে যমজ শিশু থাকলে, তাদের দুইজনের আঙ্গুলের ছাপও একটি অন্যটি থেকে আলাদা হবে।[৮][৯]
শিশু এখন মুখের কাছে হাত নিতে পারে
ছোট্ট শিশু এখন হাতটা মুখের কাছে নিতে পারে।[১০] এসময়ে তার হাত-পায়ের আঙুলে ছোটো ছোটো নখ তৈরি হচ্ছে।[১১] পাশাপাশি সে এখন নানান ধরনের মুখভঙ্গি করতে শিখছে। কখনো সে মুখ খুলছে কিংবা কখনো হাই তোলার মতো করছে।[১২]
শিশুর হার্ট খুব দ্রুত স্পন্দিত হচ্ছে
আপনার গর্ভের শিশুর ছোট্ট হার্ট মিনিটে প্রায় ১৫০ বার করে স্পন্দিত হচ্ছে।[১৩] অর্থাৎ শিশুর হার্টবিট আপনার হার্টবিটের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ গতিতে চলছে! সময়ের সাথে সাথে এই গতিটা কিছুটা কমে আসবে।[১৪]
১৭ সপ্তাহে মায়ের শরীর
চতুর্থ চেকআপ
আপনার চতুর্থ গর্ভকালীন চেকআপের সময় হয়ে এসেছে। সেটার জন্য প্রস্তুতি নিন। কোনো প্রশ্ন মাথায় আসলে তা লিখে নিয়ে যান। এতে চেকআপের দিন তাড়াহুড়ায় থাকলেও প্রশ্ন ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
নিয়মিত চেকআপে যাওয়া আপনার ও গর্ভের শিশুর সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চেকআপে কোনো সমস্যা ধরা পড়লে দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেটার চিকিৎসা শুরু করা যাবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনাকে গর্ভাবস্থার ২৮তম সপ্তাহ পর্যন্ত মাসে একবার করে চেকআপে যেতে হবে। এরপর ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি ২ সপ্তাহে একবার, তারপর প্রসবের আগ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার চেকআপে যেতে হবে।
বাড়ন্ত পেটের যত্ন
গর্ভের ভেতরে আপনার শিশু বেশ দ্রুত গতিতে বড় হচ্ছে। এরই মধ্যে আপনার পেটের আকার অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছে। বাড়ন্ত জরায়ু বড় হয়ে তলপেটের ওপরে উঠে আসা শুরু করেছে। ফলে আপনার গর্ভধারণের ব্যাপারটা আরও অনেক স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
এ সপ্তাহে আপনার বাড়ন্ত পেটের যত্ন-আত্তি নেওয়া বাড়িয়ে দিন। পেটে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর সময়ে পেটের ওপর আলতো করে হাত বুলাতে পারেন। বাড়ন্ত পেটের ভেতরে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে থাকা ছোট্টমণির সাথে কথা বলতে পারেন। তাকে গান গেয়ে শোনাতে পারেন। আপনার কথা শুনে কিংবা পেটের ওপরে আপনার হাতের স্পর্শ পেয়ে সে একটুখানি নড়াচড়া করে উঠতে পারে।
টিডি টিকা নেওয়া
গর্ভাবস্থায় সাধারণত ৪ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ২ ডোজ টিডি টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।[১৫] টিডি টিকা আপনাকে ও আপনার শিশুকে টিটেনাস বা ধনুষ্টংকারের মতো মারাত্মক রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে।[১৬] সেই সাথে ডিপথেরিয়া রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করবে।[১৭]
গর্ভাবস্থায় টিডি টিকা নেওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ।[১৮][১৯] সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আপনি বিনামূল্যে এই টিকা নিতে পারবেন। তবে আপনার ১৫ বছর বয়সের পর যদি টিটেনাস টিকার ৫টি ডোজ নেওয়া থাকে, তাহলে গর্ভাবস্থায় সাধারণত আবার টিটেনাস টিকা নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।[২০] আপনার এই টিকা নিতে হবে কি না এবং নিলে কয় ডোজ নিতে হবে, তা নিয়ে আপনার চিকিৎসকের সাথে আলাপ করে নিন।
গর্ভাবস্থার বিশেষ আলট্রাসনোগ্রাফি: অ্যানোমালি স্ক্যান
আপনাকে গর্ভাবস্থার ১৮–২২তম সপ্তাহের মধ্যে একটি আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হবে। এর নাম অ্যানোমালি স্ক্যান, যার সাহায্যে শিশুর জন্মগত ত্রুটি খুঁজে বের করা যেতে পারে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে আগে থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। শিশুর জন্ম-পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে আগেভাগে পরিকল্পনা করে রাখা যায়। এর পাশাপাশি শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা এবং শিশু ছেলে না কি মেয়ে—এই সংক্রান্ত তথ্যও জানা সম্ভব হয় এই স্ক্যান থেকে।
এই পরীক্ষা করার সময় গর্ভের শিশুকে ভালোভাবে দেখতে ডাক্তার আপনার পেটে প্রোব দিয়ে আলতো করে চাপ দিবেন। এতে পেটে কিছুটা অস্বস্তি লাগতে পারে, কিন্তু সাধারণত কোনো ব্যথা লাগে না। কখন এই পরীক্ষা করালে ভালো হবে, তা নিয়ে ডাক্তারের সাথে আলাপ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করে ফেলুন।
স্ক্যান করানোর আগে এটা নিয়ে মনে কোনো প্রশ্ন থাকলে সেটাও ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিন। প্রস্তুতি ও ফলাফল সম্পর্কে জানতে আমাদের এই লেখাটা পড়তে পারেন।
অন্যান্য লক্ষণ
বাড়ন্ত পেটের জন্য এই সময়ে আপনার পেট ব্যথার সমস্যা হতে পারে। সাধারণত বিশ্রাম নিলে এই ব্যথা কমে যায়। বিশ্রামের পরেও ব্যথা না কমলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
এ সপ্তাহেও আগের সপ্তাহের মতো আপনার যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—
- ক্লান্তি
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া ও মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- মাথা ব্যথা
- নাক থেকে রক্ত পড়া
- পেট ফাঁপা লাগা ও কোষ্ঠকাঠিন্য
- বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া করা
- স্তনে ব্যথা
- পা কামড়ানো
- বেশি গরম লাগা
- মাথা ঘুরানো
- হাত–পা ফুলে যাওয়া
- প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন
- যোনিপথে ইনফেকশন
- মুখে মেছতার মতো বাদামি ও ছোপ ছোপ দাগ পড়া
- তৈলাক্ত ত্বক ও ত্বকে দাগ পড়া
- চুল ঘন ও ঝলমলে হওয়া
এ ছাড়া গর্ভাবস্থার প্রথমদিকের কিছু লক্ষণ থেকে যেতে পারে। যেমন—
- তীব্র ঘ্রাণশক্তি
- ঘন ঘন মনমেজাজ বদলানো বা মুড সুইং। এই খুশি, আবার এই মন খারাপ—এমনটা হতে পারে। পাশাপাশি এসময়ে ছোটোখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা অথবা কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দিতে পারে
- সাদাস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত হওয়া। এমন হলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তার দেখাবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা কোনো মারাত্মক কারণে হয় না। তবে কখনো কখনো এটা গর্ভপাতের একটা লক্ষণ হতে পারে
এ সপ্তাহে বাবার করণীয়
অ্যানোমালি স্ক্যান সম্পর্কে জানুন
গর্ভাবস্থার ১৮–২২তম সপ্তাহের মধ্যে আপনার সঙ্গীর একটি আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করা হয়। এর নাম ‘অ্যানোমালি স্ক্যান’। শিশুর কোন জন্মগত ত্রুটি থাকলে এই পরীক্ষায় তা খুঁজে বের করা যেতে পারে। পাশাপাশি শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা এবং শিশু ছেলে না কি মেয়ে—এসবও জানা যায়।
শীঘ্রই এই পরীক্ষাটা করাতে হবে। যেহেতু শিশুর বেড়ে ওঠা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাবে, এই পরীক্ষার সময় আপনি সাথে থাকার চেষ্টা করুন।
গর্ভের শিশু ছেলে না মেয়ে জানতে চান?
অনেক দম্পতি তাদের সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে, সেটা জানতে মুখিয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ আগে থেকে এই প্রশ্নের উত্তর জেনে ছোট্টমণিকে স্বাগত জানানোর রোমাঞ্চ ও চমক নষ্ট করার বিপক্ষে! তাই আপনি ও আপনার সঙ্গী স্ক্যানের ফলাফল থেকে গর্ভের শিশু ছেলে না মেয়ে—এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চান কি না, সেটা আগে থেকেই ঠিক করে নিন।
স্ক্যান করানোর আগে আপনাদের সিদ্ধান্ত ডাক্তারকে জানিয়ে রাখুন। এতে তিনি আপনাদের সিদ্ধান্ত মাথায় রেখে সঠিক রিপোর্ট তৈরি করতে পারবেন।
দায়িত্ব ভাগাভাগি
বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার কারণে আপনার সঙ্গীর সপ্তাহের সব করণীয় খেয়াল না-ও থাকতে পারে। তাই সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত করতে শিশুর মাকে সাহায্য করতে পারেন।
সময়টা একত্রে উপভোগ করুন
মাঝের তিন মাসে যেহেতু শিশুর মায়ের শারীরিক অস্বস্তিগুলো কমে আসে, এসময়টুকু দুজনে মিলে যথাসম্ভব উপভোগ করার চেষ্টা করুন। হয়তো বন্ধুদের সাথে কোথাও ঘুরতে গেলেন কিংবা পছন্দের কোনো রেস্তোরাঁয় খেতে গেলেন। বাইরে যেতে ইচ্ছে না করলে ঘরে বসেই একত্রে রিল্যাক্স করতে পারেন।