এ সপ্তাহের হাইলাইটস
সবজি ও ফলমূল খাওয়া বাড়িয়ে দিন
গর্ভের শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন আর মিনারেলের জোগান দিতে প্রতিবেলায় খাবারে কিছু সবজি ও ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন। সব মিলিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৪০০ গ্রাম পরিমাণ শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
নিয়মিত ব্যায়াম করা চালিয়ে যান
নতুন করে ব্যায়াম করা শুরু করলে একটু চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে। পরিবারের অন্য কোনো সদস্য অথবা বন্ধুদের সাথে একত্রে ব্যায়াম করতে পারেন। এতে সবাই বিষয়টা উপভোগ করতে পারবেন, স্বাস্থ্যেরও উপকার হবে।
আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান
আপনার শিশু এ সপ্তাহেও খুব দ্রুত বেড়ে উঠছে। ব্রেইন ও বিভিন্ন অঙ্গ দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। এসব যাতে সঠিকভাবে তৈরি হতে পারে, সেজন্য আগের সপ্তাহগুলোর মতো এই সপ্তাহেও অবশ্যই মনে করে প্রতিদিন আয়রন–ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যাবেন।[১]
- মাসে কত দিন? ২ মাস ১ সপ্তাহ
- কোন ট্রাইমেস্টার? প্রথম ত্রৈমাসিক
- আর কত সপ্তাহ বাকি? ৩১
৯ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি
আপনার গর্ভের ছোট্ট শিশু এখন প্রায় ২২ মিলিমিটার লম্বা—প্রায় একটি আঙ্গুরের সমান।
চোখের বিভিন্ন অংশ তৈরি হচ্ছে
এ সপ্তাহে শিশুর চোখের পাতাগুলো তৈরি হয়ে যাবে।[২] নির্দিষ্ট অংশ কিছুটা রঙিন হতে শুরু করেছে।[৩] সাথে সাথে চোখ জোড়া একটু একটু করে বড় হচ্ছে। চোখের ভেতরের অংশগুলো আরও বিকশিত হচ্ছে।
শিশুর জিভ ও ঠোঁট তৈরি হচ্ছে
আপনার শিশুর মুখমণ্ডল ধীরে ধীরে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ওপরের ঠোঁট তৈরি হতে শুরু করেছে।[৪] মুখের ভেতরে জিভ ও জিভে ছোট্ট ছোট্ট টেস্ট বাড বা স্বাদ কোরকও তৈরি হচ্ছে।[৫] স্বাদ কোরকের সাহায্যে পরবর্তীতে সে খাবারের স্বাদ বুঝতে পারবে।
হাত-পায়ের আঙুল আলাদা হতে শুরু করেছে
হাত–পায়ের শেষ প্রান্তে খাঁজগুলো জোড়া লাগানো অবস্থা থেকে আলাদা হতে শুরু করেছে।[৬] তবে এখনো আঙুলগুলো পুরোপুরি তৈরি হয়নি। হাত-পায়ের মাংসপেশি তৈরি হতে শুরু করেছে এই সপ্তাহে।[৭] শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় তৈরি হওয়ার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে এর মধ্যে।
শরীরের জনন অঙ্গ গড়ে উঠছে
শরীরের ভেতরে ছোট্ট শিশুর হার্ট, ব্রেইন, ফুসফুস, কিডনি ও পরিপাকতন্ত্র দিন দিন আরও বিকশিত হচ্ছে। এ সপ্তাহে আপনার শিশুর স্তনের বোঁটা তৈরি হয়ে যাবে। পায়ুপথ তৈরি হবে।[৮] শিশুর জনন অঙ্গ তৈরির কাজ অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে।[৯] তবে সে ছেলে না কি মেয়ে সেটি আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে বোঝার জন্য আরও বেশ কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে আপনার।
৯ সপ্তাহে মায়ের শরীর
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আপনার শরীরে গর্ভকালীন সময়ের একটি বিশেষ হরমোনের মাত্রা বেশ দ্রুত গতিতে বেড়ে চলছে। এই হরমোনটির নাম হলো human chorionic gonadotropin বা সংক্ষেপে এইচসিজি (hCG)। এই সপ্তাহে আপনার শরীরে এই হরমোনটির সর্বোচ্চ পরিমাণে থাকবে।
পাশাপাশি গর্ভকালীন সময়ের অন্যান্য হরমোনগুলো (যেমন: ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন) পরিমাণে বেশি থাকে। এসব হরমোন আপনার গর্ভে রক্ত সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়, যা আপনার গর্ভের শিশুর বেড়ে ওঠায় সাহায্য করবে।
স্তনে পরিবর্তন
শিশু জন্মের পরে মায়ের বুকের দুধ থেকে সব ধরনের পুষ্টি পায়। এই কাজের জন্য স্তন গর্ভাবস্থা থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। প্রথম ৩ মাসে স্তনের আকার বাড়তে থাকে, সাথে সাথে ব্রা এর কাপ সাইজও বেড়ে যায়। এই মাসে আপনার ব্রা এর মাপ পুরো এক কাপ সাইজ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।[১০] সাথে স্তনে ব্যথাও হতে পারে।
এজন্য সঠিক মাপের, আরামদায়ক ও ভালো সাপোর্ট দেয় এমন ব্রা বেছে নিন। গর্ভাবস্থার জন্য বিশেষ ম্যাটারনিটি ব্রা বেছে নিতে পারেন। প্রয়োজনে ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল খেতে পারেন।
সঠিক সাইজের আরামদায়ক ব্রা বেছে নিতে আমাদের এই গাইডটি দেখতে পারেন।
সাদা স্রাব
গর্ভাবস্থায় তুলনামূলকভাবে বেশি সাদা স্রাব হওয়া স্বাভাবিক। এতে ভয় পাবেন না। সাদা স্রাব হলে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে না, দুর্বল লাগে না, শরীর থেকে পুষ্টিও বেরিয়ে যায় না। এটা বন্ধ করার কোনো প্রয়োজন নেই।
তবে কিছু ক্ষেত্রে সাদা স্রাব ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। যেমন: অস্বাভাবিক গন্ধ কিংবা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব যাওয়া, যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হওয়া কিংবা চুলকানো। এসব লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন।
স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস
যখন আপনার ক্লান্ত লাগবে, মন তেমন ভালো লাগবে না, তখন হাতের কাছে থাকা বিস্কুট-চানাচুর খেয়ে ফেলাটাই সহজ মনে হতে পারে। কিন্তু এগুলো আপনার ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই সবসময় চেষ্টা করুন স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস বেছে নিতে। বেছে নিতে পারেন একটা আপেল, একটা সেদ্ধ ডিম বা কয়েক টুকরা গাজর।
দ্বিতীয় চেকআপ
আপনার দ্বিতীয় গর্ভকালীন চেকআপের সময় হয়ে এসেছে। সেটার জন্য প্রস্তুতি নিন, কোনো প্রশ্ন মাথায় আসলে তা লিখে রাখুন। এতে তাড়াহুড়ায় থাকলেও প্রশ্ন ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনাকে মাসে একবার করে চেকআপে যেতে হবে, গর্ভাবস্থার ২৮তম সপ্তাহ পর্যন্ত। এরপর ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি ২ সপ্তাহে একবার, তারপর প্রসবের আগ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার চেকআপে যেতে হবে।
কোনো কারণে যদি এখনো প্রথম চেকআপ না করিয়ে থাকেন, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটার ব্যবস্থা করুন।
অন্যান্য লক্ষণ
এ সপ্তাহে আপনার আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—
- স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্লান্ত লাগা
- বমি বমি ভাব বা বমি। একে অনেকসময় ‘মর্নিং সিকনেস’ বলে। তবে এই বমি ভাব দিনের যেকোনো সময়েই হতে পারে
- পেটে অস্বস্তি বা পেট ফাঁপা হয়েছে এমন মনে হওয়া
- মাথা ব্যথা
- তীব্র ঘ্রাণশক্তি
- খাবারের অভ্যাসে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসা। হঠাৎ কোনো খাবারে অরুচি কিংবা নতুন কোনো খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা দেখা দিতে পারে। আবার নির্দিষ্ট কিছু খাবারের গন্ধে বমি বমিও লাগতে পারে
- মুখে অদ্ভুত অথবা ধাতব স্বাদ পাওয়া
- ঘন ঘন মনমেজাজ বদলানো বা মুড সুইং। এই খুশি, আবার এই মন খারাপ—এমনটা হতে পারে। পাশাপাশি এসময়ে ছোটোখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা অথবা কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দিতে পারে
- পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথার মতো তলপেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা অনুভব করা
- মুখে মেছতার মতো বাদামি ও ছোপ ছোপ দাগ পড়া
- চুল ঘন ও ঝলমলে হওয়া
- যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত হওয়া। এমন হলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তার দেখাবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা কোনো মারাত্মক কারণে হয় না। তবে কখনো কখনো এটা গর্ভপাতের একটা লক্ষণ হতে পারে
লক্ষণগুলোর কারণে এখন বেশ অস্বস্তি হলেও আগামী সপ্তাহগুলোতে আপনার একটু একটু করে ভালো লাগা শুরু হতে পারে।
এ সপ্তাহে বাবার করণীয়
পরের চেকআপের জন্য প্রস্তুত হোন
এখন শিশুর মায়ের দ্বিতীয় চেকআপের সময় হয়ে এসেছে। অ্যাপয়েন্টমেন্টের শিডিউল দেখে তাকে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করুন। যদি এখনো প্রথম চেকআপ করানো না হয়ে থাকে, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সঙ্গীর চেকআপ শুরু করার ব্যবস্থা করুন।
গর্ভাবস্থায় কোন কোন সময়ে চেকআপে যেতে হবে, তা জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন।
ডাক্তারের জন্য প্রশ্নের লিস্ট তৈরি করে ফেলুন
গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্য ও প্রেগন্যান্সি সংক্রান্ত যেকোনো প্রশ্ন মাথায় আসলে সেটি লিখে রাখুন, যেন চেকআপের সময়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আপনার ও শিশুর মায়ের প্রশ্নগুলো মিলিয়ে একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলুন।
মা-বাবা অথবা পরিবারের অন্য কারো কাছ থেকে আসা কোনো দরকারি প্রশ্নও লিখে রাখতে পারেন। এতে চেকআপের সময়ে কোনো প্রয়োজনীয় বিষয়ে কথা বলতে ভুলে যাবেন না।
সাদা স্রাব বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক
সঙ্গী আপনাকে সাদা স্রাব বেড়ে যাওয়ার কথা জানালে কিংবা আপনি তার এমন কোনো পরিবর্তন খেয়াল করলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাবেন না। গর্ভাবস্থায় এমন হওয়াটা স্বাভাবিক ঘটনা, এতে চিন্তার কিছু নেই।
একসাথে ব্যায়াম করুন
আপনার সঙ্গীর জন্য এসময়ে ব্যায়াম করাটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।[১১] আপনারা দুইজন একসাথে ব্যায়াম করলে ব্যায়ামের প্রতি সঙ্গীর আগ্রহ বাড়তে পারে। দুজনেই হয়তো সময়টা বেশি উপভোগ করবেন, সাথে স্বাস্থ্যেরও উপকার হবে।
বমিভাব উদ্রেক করে এমন জিনিস কিনবেন না
যেসব খাবারে শিশুর মায়ের বমির উদ্রেক হয়, সেগুলো বাসায় আনা বাদ দিতে পারেন। আপনার হয়তো সেসব খাবার খেতে সমস্যা হয় না, বেশ পছন্দ করেই খান। তারপরও এই সময়টায় সঙ্গীর কথা মাথায় রেখে এগুলো এড়িয়ে চলুন।
আগে থেকে বাসায় এমন খাবার থাকলে সেগুলো অন্য কাউকে দিয়ে দিন বা সরিয়ে রাখুন। তাহলে শিশুর মায়ের বমির পাশাপাশি আপনার অস্বস্তির সম্ভাবনাও কমে যাবে।