নবম সপ্তাহ নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন
৯ম সপ্তাহে আপনার শরীরে গর্ভকালীন বিশেষ হরমোন ‘হিউম্যান কোরিয়নিক গোনাডোট্রপিন’-এর মাত্রা সবচেয়ে বেড়ে যায়। এছাড়া ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন হরমোনগুলোও উচ্চমাত্রায় থাকে। এসব হরমোন গর্ভের শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করে। তবে সেই সাথে এদের মাত্রার এই ওঠা-নামার কারণে এসময় আপনার আবেগ-অনুভূতি বা সংবেদনশীলতা চরম মাত্রায় থাকে। অনেকেই এই অভিজ্ঞতাকে ‘ইমোশনাল রোলারকোস্টার’ বা ‘অনুভূতির চড়াই-উৎরাই’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।
গর্ভাবস্থার এই সময়টা অনেকের জন্য বেশ কঠিন বা অস্বস্তিকর হতে পারে। তবে পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে আস্তে আস্তে গর্ভবতী মায়েরা এই অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে থাকেন।
নিচের লক্ষণগুলো এসময় আরও তীব্রভাবে দেখা দেয়:
- স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্লান্ত অনুভব করা,
- স্তনে হালকা ব্যথা বা চাপ দিলে ব্যথা অনুভব করা,
- মুখে ধাতব এক ধরনের স্বাদ (মেটালিক টেস্ট) পাওয়া বা খবারের স্বাদ বুঝতে না পারা,
- বমি বমি ভাব হওয়া (মর্নিং সিকনেস),
- মাথাব্যথা,
- মুড সুইং বা ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন হওয়া,
- খাদ্যাভ্যাসে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসা – হঠাৎ নতুন কোন খাবারে তীব্র রুচি বা প্রিয় কোন খাবারে অরুচি দেখা দেওয়া,
- ঘ্রাণ শক্তি আগের চেয়ে তীব্র হওয়া,
- ছোটখাটো বিষয়ে মন খারাপ লাগা/কান্না করে ফেলার প্রবণতা দেখা দেওয়া। গর্ভাবস্থায় শরীরের হরমোনগুলোর ওঠানামার কারণে এসব লক্ষণ দেখা দেয়,
- সাদস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া,
- পিরিয়ডের ব্যথার মত তলপেটে মোচড়ানো বা ব্যথা হওয়া,
- পেটে অস্বস্তি বা পেট ফাঁপা হয়েছে এমন মনে হওয়া,
- চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ হওয়া।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
এসময় আপনার আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। যতটা সম্ভব নিজেকে উৎফুল্ল ও হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করুন। প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নিন ও চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
নিয়মিত মাঝারি বা হালকা ধরনের শরীরচর্চা করলে এসময় শরীর ও মন ভালো থাকে, তবে ভারী কাজ বা বেশি শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কোন ব্যায়াম করা উচিত নয়। এছাড়া ভারী কিছু ওঠানামা করা থেকেও এসময় বিরত থাকা উচিত।
অনেকের এই সময়টায় ঘন ঘন মাথাব্যথা হতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ সেবন করতে নিষধ করা হয়। গর্ভাবস্থায় মাথাব্যথা বা অন্য কোন শারীরিক সমস্যায় ওষুধ সেবনের আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিশ্চিত হয়ে তবেই ওষুধ সেবন করা উচিত।
গর্ভের শিশু কীভাবে বড় হচ্ছে
এ সপ্তাহে শিশুটির মুখমণ্ডল ধীরে ধীরে সুগঠিত হতে থাকে। চোখগুলো আরও বড় ও স্পষ্ট হতে থাকে, সাথে চোখের মণিও রঙিন হতে থাকে। মুখ ও এর ভেতরের জিভ তৈরি হয়; জিভের মধ্যে ছোট ছোট টেস্ট বাড বা স্বাদকুঁড়ি (জিভের যে অংশগুলোর সাহায্যে খাবারের স্বাদ পাওয়া যায়) তৈরি হয়।
শিশুর হাত ও পা বিকশিত হয়। এই সপ্তাহেও আঙুলগুলো একে অপরের থেকে আলাদা হয় না, তবে উঁচু জায়গাগুলো (ridge) দেখে বোঝা যায় হাত ও পায়ের আঙুলগুলো কোথায় তৈরি হবে।
হৃৎপিণ্ড (হার্ট), মস্তিষ্ক (ব্রেইন), ফুসফুস, কিডনি ও অন্ত্রের মত প্রধান অঙ্গগুলোর বিকাশ চলতে থাকে। শিশুটির যৌনাঙ্গও এসময় ধীরে ধীরে গঠিত হতে থাকে। তবে ১৮ থেকে ২১ সপ্তাহের আগ পর্যন্ত শিশুটি মেয়ে না ছেলে তা বোঝা যায় না।
গর্ভের ৯ম সপ্তাহে শিশুটি মাথা থেকে পা পর্যন্ত প্রায় ২২ মিলিমিটার বা ১ ইঞ্চির মত (আকারে প্রায় মাঝারি সাইজের একটি লিচু বা আমলকীর সমান) লম্বা হয়ে থাকে।