গর্ভধারণের প্রথম তিন সপ্তাহ

আপনার গর্ভের বাচ্চার বয়স কত সে অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হয়। তাই শুরুতেই আলোচনা করছি কীভাবে এই হিসাব করতে হয়।

আপনার সর্বশেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে আপনার গর্ভকাল অর্থাৎ আপনি কতদিন ধরে গর্ভধারণ করেছেন তা হিসাব করা হবে। ধরুন, গত মাসের ৫ তারিখ আপনার মাসিক শুরু হয়ে ১০ তারিখে শেষ হয়েছে। এরপর আপনার আর মাসিক হয়নি। তাহলে গত মাসের ৫ তারিখ থেকে আপনার গর্ভকাল হিসাব করা হবে।

প্রথম থেকে তৃতীয় সপ্তাহে আপনার করনীয়

সবার আগে নারীরা যে বিষয়টি খেয়াল করেন তা হল তাদের মাসিক বা পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া। 

আপনি গর্ভবতী কিনা তা জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হল প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা। ঘরে বসেই স্ট্রিপের মাধ্যমে প্রস্রাব পরীক্ষা করে জেনে নিতে পারেন আপনি গর্ভবতী কিনা। প্রায় সব ফার্মেসিতেই এই স্ট্রিপ কিনতে পাওয়া যায়। আপনার নিকটস্থ ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষা করেও নিশ্চিত হতে পারেন।

এসময় কিছু কিছু শারীরিক পরিবর্তন বা লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন:

  • স্তনে, বিশেষ করে স্তনের বোঁটায় খোঁচাখোঁচা ভাব বা অস্বস্তি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় স্তনে রক্ত সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে এমনটা হয়ে থাকে। 
  • যোনিতে অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় রক্ত সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে যোনিদ্বার তথা মাসিকের রাস্তার মুখের অংশটি গাঢ় বা কালচে হয়ে যেতে পারে; সাধারণত এটি ফ্যাকাশে গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। 
  • সাদাস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে, এতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। 
  • গর্ভধারণের ২-৩ সপ্তাহে যোনিপথ তথা মাসিকের রাস্তা থেকে হালকা বা কয়েক ফোঁটা রক্তপাত হতে পারে। 
  • এসময় ক্ষুধা বা খাদ্যাভাসে লক্ষণীয় কিছু পরিবর্তন আসতে পারে, যেমন হঠাৎ হঠাৎ কোন খাবার খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা অথবা প্রিয় কোন খাবারের প্রতি হঠাৎ অনীহা। সাধারণত গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে টকজাতীয় খাবারের প্রতি বাড়তি আগ্রহ অথবা ডিম, ভাজাপোড়া বা ক্যাফেইন-জাতীয় পানীয়ের (চা, কফি, ইত্যাদি) প্রতি অরুচি দেখা যায়।
  • এসময় খুব ক্লান্ত বা অবসন্ন বোধ হতে পারে। আপনার গর্ভের শিশুর বৃদ্ধির জন্য শরীরে যে অতিরিক্ত শক্তি খরচ হচ্ছে তার জন্য এমনটা বোধ হয়। তাই এসময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া উচিত। 

আপনি গর্ভধারণ করেছেন এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর আপনার গর্ভকালীন পরিচর্যা শুরু করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার বা আপনার নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে যোগাযোগ করুন।

চেকআপের জন্য কোথায় যোগাযোগ করবো?

আপনি নিচের যেকোন স্থানে যোগাযোগ করতে পারেন:

  • বিভাগীয় হাসপাতালের গাইনী বা প্রসূতিসেবা বিভাগে
  • আপনার জেলা-শহরের কোন ম্যাটারনিটি ক্লিনিকে
  • পরিচিত কোন গাইনী ডাক্তারের চেম্বারে
  • এছাড়া নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ব্র্যাক ও সূর্যের হাসি’র মত এনজিও-র স্বাস্থ্যকর্মীরা আপনাকে দিকনির্দেশনা দিতে পারবে

কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে ?

গর্ভাবস্থার একদম শুরুর দিকে (কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ) আপনি হয়তো নাও জানতে পারেন যে আপনি গর্ভবতী। 

এসময় আপনি এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন –

  • গর্ভধারণের চেষ্টা শুরু করার পর থেকে গর্ভধারণের ১২তম সপ্তাহ পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম তিন মাসে দৈনিক ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন। ফলিক এসিড আপনার গর্ভের শিশুকে ‘স্পাইনা বিফিডা’ সহ নিউরাল টিউবের (এটি থেকেই পরবর্তীতে ব্রেন বা মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড ও স্নায়ুতন্ত্র তৈরি হয়) অন্যান্য সমস্যা থেকে রক্ষা করবে।
  • দৈনিক ১০ মাইক্রোগ্রাম করে ভিটামিন-ডি ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন। ভিটামিন ডি শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনে ভূমিকা রাখবে।  
  • ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা পেতে কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। ডাক্তার আপনাকে এ বিষয়ে পরামর্শ দিবে।
  • গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে অবশ্যই ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলা উচিত।

আপনি যদি ভিটামিন ডি বা ফলিক এসিড এর চাহিদা পূরণের জন্য মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট সেবন করতে চান, তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যে এতে যেন ভিটামিন এ অথবা রেটিনল না থাকে। কারণ গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিটামিন এ সেবনের ফলে গর্ভের শিশুর শরীরে জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে৷   

আপনি গর্ভবতী অবস্থায় সরকারি হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ফলিক অ্যাসিড সংগ্রহ করতে পারেন।