এ সপ্তাহের হাইলাইটস
আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান
শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র সুস্থভাবে বিকশিত হওয়ার জন্য প্রতিদিন আয়রন–ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া প্রয়োজন।[১] এ ব্যাপারে যদি আগে থেকে না জেনে থাকেন, তাহলে দেরি না করে এ সপ্তাহ থেকেই আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করে দিন।
ধূমপানের আশেপাশে থাকবেন না
আপনার আশেপাশে কেউ ধূমপান করলে তা আপনার গর্ভের শিশুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।[২][৩][৪] তাই বাসায় কেউ ধূমপান করলে তাদের সাথে এই ব্যাপারে আলাপ করুন।
কোন ডাক্তার দেখাবেন তা নিয়ে আগেভাগেই খোঁজখবর নিন
গর্ভধারণের পরে যত দ্রুত সম্ভব চেকআপ করানো প্রয়োজন। আপনার সুস্বাস্থ্য এবং গর্ভের শিশু সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য এই চেকআপ খুবই জরুরি।[৫] কোন ডাক্তার দেখাবেন এখনো ঠিক না করে থাকলে আগেভাগেই খোঁজখবর নেওয়া শুরু করুন। এ বিষয়ে আপনার সঙ্গীর সাহায্য নিতে পারেন।
- মাসে কত দিন? ৩ সপ্তাহ
- কোন ট্রাইমেস্টার? প্রথম ত্রৈমাসিক
- আর কত সপ্তাহ বাকি? ৩৭
৩ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি
আপনি বাইরে থেকে এখনো তেমন কিছু টের না পেলেও আপনার শরীরের ভেতরে অনেক কিছু ঘটছে। এ সপ্তাহের প্রথমদিকে আপনার ডিম্বাণু আর সঙ্গীর শুক্রাণুর মিলন হয়ে ভ্রূণ তৈরি হবে। এই ভ্রূণই নয়টা মাস ধরে আপনার গর্ভে বড় হতে থাকবে।
ভ্রূণটা তৈরি হওয়ার পরে ডিম্বনালি বেয়ে জরায়ুতে চলে আসবে। এ সপ্তাহের পর সে জরায়ুর গায়ে নিজেকে পুরোপুরি গেঁথে নিবে।[৬] সেখানেই সে আগামী মাসগুলোতে বেড়ে উঠবে।
৩ সপ্তাহে মায়ের শরীর
আপনি সম্ভবত এখনো বুঝতে পারেননি যে আপনি গর্ভবতী। তাই গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন এমন সপ্তাহগুলোতে যা জানা প্রয়োজন, সে বিষয়গুলো আমরা এখানে তুলে ধরছি।
মাসিক হতে দেরি হওয়া—হতে পারে গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণ
গর্ভধারণের সবচেয়ে কমন লক্ষণ হলো মাসিক বা পিরিয়ড না হওয়া, যেটা হয়তো আপনি আগামী সপ্তাহ শেষে টের পাবেন। গর্ভধারণের পর ভ্রূণের কোষগুলো বিশেষ এক ধরনের হরমোন তৈরি করে, যার নাম সংক্ষেপে এইচসিজি (hCG)। এই হরমোনের কারণে মাসিক হওয়া বন্ধ হয়।[৭]
এই হরমোন নিয়ে আরেকটা মজার তথ্য হলো, বাজারে যেসব প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলো প্রস্রাবে মূলত এই হরমোনের উপস্থিতি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে।[৮] হরমোনটি ধরা পড়লে প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ আসে। যা হয়তো আপনি আগামী ২–১ সপ্তাহের মধ্যে দেখতে পাবেন!
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কেনা
আগামী সপ্তাহে নির্ধারিত সময়ে মাসিক না হলে আপনি হয়তো চিন্তা করবেন গর্ভধারণ হলো কি না। তখন পরীক্ষা করার জন্য প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিনে রাখতে পারেন।
প্রেগন্যান্সি টেস্টের মাধ্যমে আপনি গর্ভধারণ করেছেন কি না সেটি নির্ধারণ করা যাবে। গর্ভধারণের ব্যাপারে যত তাড়াতাড়ি নিশ্চিত হতে পারবেন, তত দ্রুত আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য সঠিক পদক্ষেপগুলো নিতে পারবেন।
কখন ও কীভাবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়, তা নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন।
কোন ডাক্তার দেখাবেন তা নিয়ে আগেভাগেই খোঁজখবর নেওয়া
গর্ভধারণের পরে যত দ্রুত সম্ভব চেকআপ করানো প্রয়োজন। আপনার সুস্বাস্থ্য ও গর্ভের শিশু সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য এই চেকআপ খুবই জরুরি।[৯] তাই প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ আসার পর পরই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
কোন ডাক্তার দেখাবেন এখনো ঠিক না করে থাকলে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করুন। এ বিষয়ে আপনার সঙ্গীর সাহায্য নিতে পারেন। তিনি সম্ভাব্য ডাক্তারদের তালিকা, চেম্বারের ঠিকানা ও রোগী দেখার শিডিউলগুলো বের করতে সাহায্য করতে পারবেন। এতে আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হতে পারে।
এ সপ্তাহে বাবার করণীয়
আপনি হয়তো জানেন না যে আপনি কিছু মাসের মধ্যে বাবা হতে চলেছেন। তাই গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন এমন সপ্তাহগুলোতে যা করণীয়, সেই বিষয়গুলো আমরা এখানে তুলে ধরছি।
গর্ভধারণের প্রস্তুতি নিতে চেকআপে যান
গর্ভধারণের আগে থেকেই চেকআপে যাওয়া উচিত। কারণ চেকআপের মাধ্যমে শিশুর মায়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসতে পারে।
ডাক্তার আয়রন ও ফলিক এসিড খাওয়া শুরু করার পরামর্শ দিতে পারেন। মা ইতোমধ্যে কোনো ওষুধ খেতে থাকলে সেটা গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ কি না অথবা পরিবর্তন করতে হবে কি না, এসব সংক্রান্ত জরুরি উপদেশ দিতে পারবেন।
জীবনধারায় ছোটোখাটো পরিবর্তন আনতে হলে সেটা নিয়ে ডাক্তার আপনাদের সাথে বিস্তারিত কথা বলবেন। আগে কখনো গর্ভধারণের চেষ্টা করতে গিয়ে দুর্ঘটনা হয়ে থাকলে বিশেষ পরামর্শ দিতে পারবেন।
তাই এ সপ্তাহেই একজন গাইনী ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে চেকআপ করিয়ে আসতে পারেন।
অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করুন
গর্ভধারণের আগে থেকেই শিশুর মায়ের ওজন একটা স্বাস্থ্যকর সীমায় রাখা প্রয়োজন। কেননা অতিরিক্ত ওজন শুধু আপনার সঙ্গীর জন্যই নয়, গর্ভের শিশুর জন্যও নানান ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেমন: নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অপরিণত বা প্রিম্যাচিউর অবস্থায় জন্মগ্রহণ করা, জন্মগত ত্রুটি দেখা দেওয়া ও মৃতপ্রসব। তাই এখন থেকেই সঙ্গীর বাড়তি ওজনের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করুন।
ওজন কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস মেনে চলা ও নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি। সুস্থ থাকতে সবারই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। আর নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা মেনে চলা—এগুলো সবার জন্যই উপকারী।
আপনারা দুজনে যদি একসাথে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন শুরু করেন, তাহলে হয়তো সঙ্গীর জন্য ওজন কমানো সহজ হবে। দিনের একটা সময় দুজনে একসাথে শরীরচর্চা করতে পারেন। হাঁটতে যেতে পারেন। বাজার করার সময়ে বেশি বেশি শাকসবজি, ফলমূল ও মাছ কিনেও সাহায্য করতে পারেন।
ধূমপান ছেড়ে দিন
গর্ভবতী মা ধূমপানের আশেপাশে থাকলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শিশু প্রিম্যাচিউর হওয়া বা সময়ের আগে প্রসব হওয়া, ওজন কম হওয়া, জন্মগত ত্রুটি হওয়াসহ নানান জটিলতার সম্ভাবনা বাড়ে।[১০][১১][১২] তাই আপনি ধূমপান করলে সেটা ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। বাসায় অন্য কেউ ধূমপান করলে, তার সাথে এই ব্যাপারে আলাপ করুন।