প্যারাসিটামল একটি বহুল পরিচিত ব্যথানাশক ঔষধ। এটি সাধারণত ব্যথা ও প্রদাহ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া জ্বর বা উচ্চ তাপমাত্রা কমাতেও এটি সেবন করা হয়।
প্যারাসিটামল ঔষধটি সাধারণত ট্যাবলেট, সিরাপ, সাপোজিটরি ও ইনজেকশন হিসেবে পাওয়া যায়। এটি অন্যান্য ব্যথানাশক ঔষধের সাথে মেশানো অবস্থায়ও পাওয়া যায়। এ ছাড়া কফ ও সর্দিকাশির চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ঔষধের উপাদান হিসেবে প্যারাসিটামল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এই আর্টিকেলে প্রাপ্তবয়স্কদের ও ১২ বছরের বেশী বয়স্ক শিশুদের জন্য প্যারাসিটামল সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ১২ বছরের কম বয়সীদের জন্য প্যারাসিটামলের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে ‘শিশুদের জন্য প্যারাসিটামল’ আর্টিকেলটি পড়ুন।
প্যারাসিটামল সংক্রান্ত মূল পাঁচটি তথ্য
- প্যারাসিটামল কাজ করতে ঘন্টাখানেক পর্যন্ত সময় নিতে পারে।
- প্রতি ডোজে সাধারণত ৫০০ মিলিগ্রামের এক থেকে দুটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
- প্যারাসিটামল মেশানো আছে এমন কোনো ঔষধ সেবন করলে আলাদাভাবে প্যারাসিটামল সেবন করা যাবে না।
- গর্ভবতী ও বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য ডাক্তারের সুপারিশকৃত মাত্রায় প্যারাসিটামল সেবন করা নিরাপদ।
- বাংলাদেশে প্যারাসিটামলের পরিচিত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে— নাপা, এইস, ফাস্ট, এটিপি, প্যারাপাইরল, পাইরালজিন, রিসেট, রেনোভা, ট্যামেন, এক্সেল ও এক্সপা।
প্যারাসিটামল যারা সেবন করতে পারবেন
বেশিরভাগ মানুষই নিরাপদে প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। এমনকি গর্ভবতী ও বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্যও এটি নিরাপদ।
তবে কারও কারও ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল সেবনের সময়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
যেসব ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল সেবনে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন
- আগে কখনো প্যারাসিটামল অথবা অন্য কোনো ঔষধে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হয়ে থাকলে
- কিডনি অথবা লিভারের সমস্যা থাকলে
- খিঁচুনি বা এপিলেপসি রোগের ঔষধ সেবন করলে
- যক্ষ্মা বা টিবি রোগের জন্য ঔষধ সেবন করলে
- ওয়ারফারিন নামক রক্ত পাতলা করার ঔষধের পাশাপাশি নিয়মিত প্যারাসিটামল সেবনের প্রয়োজন পড়লে
- নিয়মিত মদপানের অভ্যাস থাকলে
প্যারাসিটামল খাওয়ার নিয়ম
সাধারণত ভরাপেটে প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে খালিপেটেও প্যারাসিটামল সেবন করা নিরাপদ।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতি ডোজে সাধারণত ৫০০ মিলিগ্রামের (mg) একটি অথবা দুটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। এভাবে সারাদিনে (২৪ ঘণ্টায়) চারবার পর্যন্ত প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে।
এক ডোজ প্যারাসিটামল সেবনের পরে কমপক্ষে চার ঘণ্টা বিরতি দিয়ে পরবর্তী ডোজটি সেবন করা যাবে।
মাত্রাতিরিক্ত প্যারাসিটামল সেবন করার ফলে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই ব্যথা অসহনীয় মনে হলেও ওপরে উল্লেখ করা ডোজের বেশি প্যারাসিটামল সেবন করা যাবে না।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২৪ ঘণ্টায় প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ অনুমোদিত ডোজ হলো চার বার। অর্থাৎ, ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ আটটি ৫০০ মিলিগ্রামের ট্যাবলেট সেবন করা যাবে। একটি ডোজের কমপক্ষে চার ঘণ্টা পরে পরবর্তী ডোজ সেবন করা যাবে।
বিভিন্ন ধরনের প্যারাসিটামল
প্যারাসিটামল সাধারণত ট্যাবলেট হিসেবে সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি সিরাপ, সাপোজিটরি (পায়ুপথ দিয়ে দেওয়ার ঔষধ) ও ইনজেকশন হিসেবেও ফার্মেসিতে কিনতে পাওয়া যায়।
যাদের ট্যাবলেট গিলতে সমস্যা হয় তারা বিকল্প হিসেবে প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করতে পারে।
অতিরিক্ত ডোজে প্যারাসিটামল সেবনের ফলাফল
প্যারাসিটামল ভুলক্রমে নির্দেশিত ডোজের থেকে একটি অথবা দুটি ট্যাবলেট বেশি খেয়ে ফেললে সাধারণত তেমন ক্ষতি হয় না, যদি না ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সর্বমোট আটটির বেশি ট্যাবলেট খাওয়া হয়ে যায়।
অন্যথায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেকোনো ধরনের প্যারাসিটামল সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
জরুরি তথ্য
অতিরিক্ত প্যারাসিটামল সেবনের ফলাফল মারাত্মক হতে পারে এবং জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
নিচের দুটি ক্ষেত্রে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে ১৬২৬৩ নাম্বারে ফোন করে পরামর্শ নিতে পারেন।
১. যদি নির্দেশিত ডোজের ওপরে দুইটির বেশি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট সেবন করা হয়ে থাকে
২. ২৪ ঘণ্টায় আটটির বেশি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট সেবন করা হয়ে থাকে
নিকটস্থ হাসপাতালে অথবা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সময়ে যেই প্যাকেট অথবা পাতা থেকে ঔষধ খাওয়া হয়েছে তাতে বাকি থাকা ঔষধগুলো সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। প্যাকেট অথবা প্যাকেটের ভেতরে থাকা নির্দেশিকাও সাথে নিয়ে যাওয়া উচিত।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: সরকারি মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন’ এর হেল্পলাইন ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে দিনরাত ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যায়। এ ছাড়া হেল্পলাইনের মাধ্যমে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক অন্যান্য তথ্য পাওয়া যাবে।
ঔষধ সেবন করতে ভুলে গেলে করণীয়
যদি নিয়মিত প্যারাসিটামল সেবন করতে হয় তাহলে যখনই মনে পড়বে তখনই বাদ পড়া ডোজটি সেবন করতে হবে। তবে যদি ভুলে যাওয়া ডোজটির কথা এমন সময়ে মনে পড়ে যে তখন পরবর্তী ডোজের সময় প্রায় হয়ে এসেছে, তাহলে ভুলে যাওয়া ডোজটি আর সেবন করবেন না।
ভুলে যাওয়া ডোজের ক্ষতি পূরণ করতে গিয়ে কখনো দ্বিগুণ ডোজে ঔষধ খেয়ে ফেলবেন না।
ঔষধ সেবন করতে প্রায়ই ভুলে গেলে মোবাইল ফোন অথবা ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখতে পারেন। এ ছাড়া পরিবারের দায়িত্বশীল একজন সদস্যকে ঔষধ সেবনের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য বলতে পারেন।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সঠিক ডোজে প্যারাসিটামল সেবন করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবার সম্ভাবনা খুবই বিরল। বিশেষ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা হলে অথবা অস্বাভাবিক কিছু খেয়াল করলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
মারাত্মক অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন
বিরল কিছু ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল সেবনের ফলে মারাত্মক অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হতে পারে।
নিচের ৫টি লক্ষণের যেকোনো একটি দেখা দেওয়ার সাথে সাথে নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যেতে হবে—
- চামড়ায় চুলকানিসহ লাল লাল ফুসকুঁড়ি বা র্যাশ দেখা দিলে
- চামড়া ফুলে উঠলে অথবা ফোস্কা পড়লে কিংবা শরীরের কিছু জায়গা থেকে চামড়া উঠে আসার মতো অবস্থা হলে
- হাঁপানি রোগীদের মত শোঁ শোঁ শব্দ করে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হলে
- বুক অথবা গলা আঁটসাঁট হয়ে বা আটকে আসছে এমন অনুভব করলে
- কথা বলতে অথবা শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে সমস্যা হলে
- মুখ, ঠোঁট, জিহ্বা অথবা গলা ফুলে যেতে শুরু করলে
এখানে প্যারাসিটামলের সবগুলো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উল্লেখ করা নেই। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ তালিকার জন্য ঔষধের সাথে থাকা নির্দেশিকা পড়ুন।
গর্ভাবস্থায় ও বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের ক্ষেত্রে
গর্ভবতী অথবা বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য ব্যথানাশক ঔষধ হিসেবে প্রথম পছন্দ হলো প্যারাসিটামল।
গর্ভবতী অথবা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান এমন অনেক নারী প্যারাসিটামল সেবন করে থাকেন। এতে মা অথবা শিশুর উপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায় না।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
গর্ভাবস্থায় অথবা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়ে প্যারাসিটামল সেবন করলে নিচের দুটি বিষয়ে লক্ষ রাখা উচিত—
১. রোগীর ক্ষেত্রে ন্যূনতম যেই ডোজে প্যারাসিটামল কাজ করে সেই ডোজেই ঔষধটি সেবন করা
২. অপ্রয়োজনে ঔষধ সেবন চালিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকা—যতদিন পর্যন্ত ঔষধ না খেলেই নয় ঠিক ততদিনই ঔষধ সেবন করা
গর্ভাবস্থায় প্যারাসিটামল সেবনের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ঔষধের সাথে থাকা নির্দেশিকা পড়ুন।
প্যারাসিটামলের সাথে ভিন্ন ব্যথানাশক ঔষধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা
সাধারণ ব্যথানাশক ঔষধের সাথে নিরাপদে প্যারাসিটামল সেবন করা যায়। এক্ষেত্রে সাধারণ ব্যথানাশক ঔষধ বলতে প্যারাসিটামল মেশানো নেই এমন ব্যথানাশক বোঝানো হয়েছে। যেমন: আইবুপ্রোফেন, অ্যাসপিরিন ও ট্রামাডল।
তবে কোনো ব্যথানাশক ঔষধের সাথে প্যারাসিটামল মেশানো থাকলে সেই ঔষধের পাশাপাশি আলাদাভাবে প্যারাসিটামল সেবন করা যাবে না। প্যারাসিটামলযুক্ত দুটি ভিন্ন ঔষধ একত্রে খেলে প্যারাসিটামলের ডোজ মাত্রাতিরিক্ত সীমায় পৌঁছে যাওয়ার, অর্থাৎ, ওভারডোজ হওয়ার, ঝুঁকি থাকে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
যেকোনো ঔষধ সেবন করার পূর্বে ঔষধের প্যাকেটের লেখা অথবা সাথে থাকা নির্দেশিকা থেকে সেটিতে প্যারাসিটামল যোগ করা আছে কি না তা ভালো করে দেখে নিন।
ফার্মেসিতে পাওয়া যায় এমন অনেক ঔষধের অন্যতম উপাদান হিসেবে প্যারাসিটামল ব্যবহার করা হয়। যেমন—
- মাইগ্রেনের ঔষধ
- কফ ও সর্দিকাশি নিরাময়ের ঔষধ
কিছু ব্যথানাশক ঔষধে ব্যথানাশকের সাথে প্যারাসিটামল যোগ করা থাকে। এসব ঔষধের পাশাপাশি আলাদাভাবে প্যারাসিটামল সেবন করা যাবে না।
প্যারাসিটামলযুক্ত এমন একটি ব্যথানাশক ঔষধ হলো প্যারাসিটামল ও ট্রামাডল। এটি আমাদের দেশে প্যারাসিটামলের একটি প্রচলিত কম্বিনেশন। এই ঔষধ ফার্মেসিতে অ্যাসিট্রাম, ডলসেটা, ডলোরান প্লাস, ফাপডল, ফাস্টডল, ফিভিডল, নাপাডল, নভোডল, প্যানজেসিক, রেনোভা-টি, রেসাডল, সিনডল প্লাস, ট্যামেনল, ট্র্যাম্প ও এক্সেল ম্যাক্স নামে পাওয়া যায়।
প্যারাসিটামলের মেশানো অন্যান্য ব্যথানাশকের মধ্যে রয়েছে কো-কোডামল (প্যারাসিটামল ও কোডেইন) ও কো-ড্রাইডামল (প্যারাসিটামল ও ডাইহাইড্রোকোডেইন)।
প্যারাসিটামলের সাথে অন্যান্য ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে সতর্কতা
বেশিরভাগ ঔষধের সাথে নিরাপদে প্যারাসিটামল সেবন করা যায়। এমনকি বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন চলাকালে প্যারাসিটামল সেবন করা নিরাপদ।
তবে কারও কারও জন্য প্যারাসিটামল সেবন করা উপযুক্ত নয়। নিচের তিনটি ঔষধের মধ্যে কোনো একটি সেবন চলাকালে প্যারাসিটামল খাওয়ার প্রয়োজন হলে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে—
১. ওয়ারফারিন নামক রক্ত পাতলা করার ঔষধ
২. খিঁচুনি বা এপিলেপসি রোগের ঔষধ
৩. যক্ষ্মা বা টিবি রোগের ঔষধ
ভেষজ বা হারবাল ঔষধের সাথে প্যারাসিটামল সেবন
সাধারণত কোনো ভেষজ/হারবাল ঔষধ, ভিটামিন ও বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট সেবন চলাকালে প্যারাসিটামল সেবন করলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।
তবে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতার জন্য সেইন্ট জন’স উয়্যার্ট (St. John’s Wort) জাতীয় ভেষজ/হারবাল ঔষধ (যেমন: রিনোডেপ, জনর্ট, পার্কআপ ও অ্যানজর্ট) ব্যবহার করলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এক্ষেত্রে প্যারাসিটামলের ডোজ কমানোর প্রয়োজন হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ
যেকোনো ঔষধ—এমনকি হারবাল ঔষধ, ভিটামিন অথবা কোনো সাপ্লিমেন্ট—সেবন করলে ডাক্তারকে বিষয়টি জানাতে হবে।
প্যারাসিটামল সংক্রান্ত সাধারণ জিজ্ঞাসা
প্যারাসিটামলের দুটি অন্যতম কাজ হলো ব্যথা উপশম করা ও জ্বর কমিয়ে আনা।
ব্যথা উপশম: শরীরের কোনো অংশ কোনো কারণে ব্যথা হলে এই অনুভূতির সিগন্যাল মস্তিষ্কে পৌঁছে আমাদের ব্যথার অনুভব তৈরি হয়। নির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিক এই ব্যথার বার্তা মস্তিষ্কে বহন করার কাজটি করে। প্যারাসিটামল এসব রাসায়নিকের বার্তা বহনের কাজে বাধা দেয়। এভাবে এটি ব্যথা উপশম করে।
জ্বর কমানো: মস্তিষ্কের একটি অংশ শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কাজে নিয়োজিত। এই অংশের যেসব রাসায়নিক বার্তাবাহক থাকে সেগুলোর কাজে প্যারাসিটামল প্রভাব ফেলে এবং জ্বর বা শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনে।
প্যারাসিটামল কাজ করতে ঘন্টাখানেক পর্যন্ত সময় নিতে পারে। এক ডোজ সেবনের পর এটি প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করে।
ব্যথার ধরনের ওপর নির্ভর করে উপযুক্ত ব্যথার ঔষধ বাছাই করা হয়।
প্যারাসিটামল ও আইবুপ্রোফেন ভিন্ন উপায়ে কাজ করে। তাই কিছু ধরনের ব্যথা উপশমের জন্য প্যারাসিটামল আইবুপ্রোফেনের চেয়ে বেশি কার্যকর।
সাধারণত মাথাব্যথা ও পেটব্যথাসহ বেশিরভাগ ব্যথার চিকিৎসায় প্যারাসিটামলকে সর্বোত্তম ব্যথানাশক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আবার দাঁত ব্যথা অথবা মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথায় আইবুপ্রোফেন তুলনামূলকভাবে ভালো কাজ করতে পারে। কেউ কেউ পিঠ অথবা কোমরের ব্যথায় আইবুপ্রোফেন ব্যবহারে প্যারাসিটামলের তুলনায় বেশি উপকার পায়।
প্যারাসিটামল কাজ না করলে অন্য কোনো ব্যথানাশক সেবন করা যায়। যেমন: আইবুপ্রোফেন। এটি নন-স্টেরয়ডাল প্রদাহনাশক গ্রুপের একটি ঔষধ।
আইবুপ্রোফেনসহ নন-স্টেরয়ডাল প্রদাহনাশক গ্রুপের কিছু ব্যথানাশক ঔষধ মলমের মতো ক্রিম অথবা জেল হিসেবে পাওয়া যায়।
কিছু ব্যথানাশক ঔষধ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ও সীল ছাড়া কেনা যায় না। এসব ঔষধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে আসক্তি তৈরি হতে পারে।
ঔষধ ছাড়াও অন্য কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি কিছু রোগীর জন্য অধিক উপযোগী হতে পারে। যেমন: ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপি। এই বিষয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে সবচেয়ে উপযুক্ত পদ্ধতিটি বেছে নিতে হবে।
প্যারাসিটামল পুরুষ অথবা নারীর—কারোর প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়—এই মর্মে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
প্যারাসিটামল কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে না। সাধারণ জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা বড়ি ও ইমারজেন্সি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল—কোনোটির কার্যকারিতার ওপরেই প্যারাসিটামল সেবনের কোনো প্রভাব পড়ে না।
প্যারাসিটামল সেবন চলাকালে স্বাভাবিক সব ধরনের খাবার ও পানীয় খাওয়া যাবে। খালিপেটে প্যারাসিটামল সেবন করলে কোনো সমস্যা হয় না।
প্যারাসিটামল সেবনকালে মদপান করা ঠিক নয়। কেউ মদপান করলে অবশ্যই সেটি স্বল্পমাত্রার মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। মদপানের সর্বোচ্চ অনুমোদিত মাত্রা (সাপ্তাহিক ১৪ ইউনিট) অতিক্রম করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
নির্দিষ্ট কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা (যেমন: লিভারের সমস্যা) থাকলে প্যারাসিটামল সেবনের পাশাপাশি মদপান চালিয়ে যাওয়া ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
প্যারাসিটামল সেবনকালে মদপানের বিষয়ে আরও জানতে ঔষধের প্যাকেটের ভেতরে থাকা কাগজ বা লিফলেটটি পড়ুন।