গর্ভধারণের চতুর্থ সপ্তাহ

গর্ভধারণের চতুর্থ সপ্তাহ

এ সপ্তাহের হাইলাইটস

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কিনে রাখুন ও ডাক্তারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন

আগামী সপ্তাহে সময়মতো মাসিক না হলে পরীক্ষা করার জন্য প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কিনে রাখুন। কিভাবে টেস্ট করতে হয়, সেটাও এখনি শিখে রাখতে পারেন। গর্ভধারণ করলে কোন ডাক্তার দেখাবেন, সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন।

ধূমপানের আশেপাশে থাকবেন না

আপনার আশেপাশে কেউ ধূমপান করলে তা আপনার গর্ভের শিশুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।[১][২][৩] তাই বাসায় কেউ ধূমপান করলে তাদের সাথে এই ব্যাপারে আলাপ করুন।

আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যাবেন

শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র সুস্থভাবে বিকশিত হওয়ার জন্য প্রতিদিন আয়রনফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া প্রয়োজন।[৪] এ ব্যাপারে যদি আগে থেকে না জেনে থাকেন, তাহলে দেরি না করে এ সপ্তাহ থেকেই আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করে দিন।

৪ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি

week-4
পোস্তদানা
আপনার বাচ্চা এখন প্রায়
একটি পোস্তদানা
এর সমান
দৈর্ঘ্য
২ মিমি

আপনি বাইরে থেকে এখনো তেমন কিছু টের না পেলেও আপনার শরীরের ভেতরে অনেক কিছু ঘটছে। গত সপ্তাহে আপনার ডিম্বাণু আর সঙ্গীর শুক্রাণুর মিলন হয়ে যে ভ্রূণ তৈরি হয়েছে, সেটা এ সপ্তাহে নিজের জন্য ভালোভাবে বাসা বেধে নিচ্ছে।

গত সপ্তাহে ভ্রূণটা ডিম্বনালি বেয়ে জরায়ুতে চলে এসেছে এবং এ সপ্তাহে জরায়ুর গায়ে সে নিজেকে পুরোপুরি গেঁথে নিচ্ছে।[৫] এখানেই সে আগামী মাসগুলোতে বেড়ে উঠবে।

ভ্রূণ আকারে এখনো খুব ছোটো—মাত্র একটা পোস্তদানার সমান লম্বা। এই ক্ষুদ্র ভ্রূণে আছে এক দলা কোষ, যা মোটা দাগে দুই ভাগে বিভক্ত—বাইরের দিকের কোষ এবং ভেতরের দিকের কোষ।

বাইরের দিকের কোষগুলো থেকে গর্ভফুল তৈরি হবে, যা গর্ভের শিশুকে অক্সিজেন আর পুষ্টির জোগান দিবে। আর ভেতরের দিকের কোষগুলো থেকে ধীরে ধীরে শিশুর দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি হবে।

৪ সপ্তাহে মায়ের শরীর

আপনি সম্ভবত এখনো বুঝতে পারেননি যে আপনি গর্ভবতী। তাই গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন এমন সপ্তাহগুলোতে যা জানা প্রয়োজন, সে বিষয়গুলো আমরা এখানে তুলে ধরছি।

মাসিক হতে দেরি হওয়া—হতে পারে গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণ

গর্ভধারণের সবচেয়ে কমন লক্ষণ হলো মাসিক বা পিরিয়ড না হওয়া, যেটা হয়ত আপনি আগামী সপ্তাহে টের পাবেন। গর্ভধারণের পর ভ্রূণের কোষগুলো বিশেষ এক ধরনের হরমোন তৈরি করে, যার নাম সংক্ষেপে এইচসিজি (hCG)। এই হরমোনের করণে মাসিক হওয়া বন্ধ হয়।[৬]

এই হরমোন নিয়ে আরেকটা মজার তথ্য হলো, বাজারে যেসব প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলো প্রস্রাবে মূলত এই হরমোনের উপস্থিতি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে।[৭] হরমোনটি ধরা পড়লে প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ আসে, যা হয়ত আপনি আগামী সপ্তাহেই দেখতে পাবেন!

গর্ভবতী হওয়ার অন্যান্য লক্ষণ

কারও কারও ক্ষেত্রে এই পর্যায়ে গর্ভধারণের প্রাথমিক কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে।[৮][৯] যেমন—

এর মধ্যে কিছু লক্ষণ কারো কারো ক্ষেত্রে মাসিকের আগে আগে দেখা দেয়। যেমন: স্তনে ব্যথা, পেট ফাঁপা ও কোনো খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা।[১০] আবার অনেকের ক্ষেত্রেই এই সময়টাতে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। ফলে গর্ভধারণের ব্যাপারটা আঁচ করতে দেরি হয়।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কেনা

আগামী সপ্তাহে নির্ধারিত সময়ে মাসিক না হলে আপনি হয়তো চিন্তা করবেন গর্ভধারণ হলো কি না। তখন পরীক্ষা করার জন্য প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিনে রাখতে পারেন।

প্রেগন্যান্সি টেস্টের মাধ্যমে আপনি গর্ভধারণ করেছেন কি না সেটি নির্ধারণ করা যাবে। গর্ভধারণের ব্যাপারে যত তাড়াতাড়ি নিশ্চিত হতে পারবেন, তত দ্রুত আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য সঠিক পদক্ষেপগুলো নিতে পারবেন।

কখন ও কীভাবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়, তা নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন।

কোন ডাক্তার দেখাবেন তা নিয়ে আগেভাগেই খোঁজখবর নেওয়া

গর্ভধারণের পরে যত দ্রুত সম্ভব চেকআপ করানো প্রয়োজন। আপনার সুস্বাস্থ্য ও গর্ভের শিশু সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য এই চেকআপ খুবই জরুরি।[১১] তাই প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ আসার পর পরই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

কোন ডাক্তার দেখাবেন এখনো ঠিক না করে থাকলে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করুন। এ বিষয়ে আপনার সঙ্গীর সাহায্য নিতে পারেন। তিনি সম্ভাব্য ডাক্তারদের তালিকা, চেম্বারের ঠিকানা ও রোগী দেখার শিডিউলগুলো বের করতে সাহায্য করতে পারবেন। এতে আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হতে পারে।

খাবারে অন্তত ৪০০ গ্রাম ফলমূল ও শাকসবজি রাখা

এসময়ে একটা স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা মেনে চলা বিশেষভাবে জরুরি। কারণ আপনার খাবার থেকেই মূলত আপনার ও গর্ভের শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তির যোগান আসে। নিজেকে ও গর্ভের শিশুকে সুস্থ রাখতে একটা সুষম খাবার তালিকা মেনে চলবেন।

প্রতিদিন অন্তত ৪০০ গ্রাম ফল ও শাকসবজি খাবেন। প্রতি বেলায় খাওয়ার সময়ে অর্ধেক প্লেট পরিমাণ শাকসবজি ও ফল খেতে পারেন। তিনবেলা এভাবে খেলে অনেকখানি ফল ও শাকসবজি খাওয়া হয়ে যাবে।

প্রতি বেলার খাবারের মাঝে হালকা নাস্তা হিসেবেও বিভিন্ন ফল, শসা, গাজর অথবা টমেটো খেতে পারেন। এর সাথে পর্যাপ্ত পানি পান করবেন।

মাস অনুযায়ী গর্ভবতীর খাবার তালিকা পেতে এই লেখাটি পড়ুন।

এ সপ্তাহে বাবার করণীয়

আপনার সঙ্গী এখনো হয়তো বুঝতে পারেনি যে সে গর্ভবতী। ফলে আপনিও হয়ত জানেন না যে আপনি বাবা হতে চলেছেন। তাই গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন এমন সপ্তাহগুলোতে যা করনীয়, সে বিষয়গুলো আমরা এখানে তুলে ধরছি।

দুজনে মিলে দিনের খাবারের পরিকল্পনা করুন

গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহগুলোতে শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। দুজনে মিলে দিনের খাবারগুলো পরিকল্পনা করতে পারেন, যাতে বেশি বেশি শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া হয় এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়া হয়।

বাজার-সদাইয়ে সচেতন হোন

কী খাবেন সেটা পরিকল্পনা করা হয়ে গেলে সেই অনুযায়ী বাজার করতে সাহায্য করুন। বাজার করার দায়িত্ব আপনার হলে, এসময়ে বেশি বেশি ফল ও শাকসবজি কিনবেন। কয়েক ধরনের ফল ও শাকসবজি কিনে নিতে পারেন, তাহলে খেতে একঘেয়ে লাগবে না।

স্বাদে ভিন্নতা আসার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানও পাওয়া যাবে। অন্যদিকে প্রক্রিয়াজাত খাবার কিনে ফেলা সহজ অপশন হলেও সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। তাই এসব খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলবেন।

ধূমপান ছেড়ে দিন

ধূমপানের আশেপাশে গর্ভবতী মা থাকলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শিশু প্রিম্যাচিউর হওয়া বা সময়ের আগে প্রসব হওয়া, ওজন কম হওয়া, জন্মগত ত্রুটি হওয়াসহ নানান জটিলতার সম্ভাবনা বাড়ে।[১২][১৩][১৪] তাই আপনি ধূমপান করলে সেটা ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। বাসায় অন্য কেউ ধূমপান করলে, তার সাথে এই ব্যাপারে আলাপ করুন।

ব্যায়ামে উৎসাহ দিতে ভুলবেন না

অনেকেই মনে করেন যে, গর্ভাবস্থায় হয়তো ব্যায়াম করা যাবে না। এটা সঠিক নয়, বরং মা ও গর্ভের শিশুর জন্য ব্যায়াম অনেকভাবে উপকার করে। এমনকি ডেলিভারির সময়ে সিজারের প্রয়োজন হওয়ার সম্ভাবনাও কমাতে পারে![১৫][১৬]

তাই সঙ্গীকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে উৎসাহ দিন। সম্ভব হলে আপনিও সময় বের করে নিয়ে দুজনে একসাথে ব্যায়াম করুন।

গর্ভাবস্থায় নিরাপদে ব্যায়ামের উপায় জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন। সেই সাথে গর্ভাবস্থার জন্য স্টেপ বাই স্টেপ ব্যায়ামের গাইড পেতে এই লেখাটা দেখতে পারেন।