যমজ এবং দুইয়ের অধিক গর্ভধারণ

একাধিক গর্ভধারণ বলতে একসাথে একের অধিক সন্তান গর্ভধারণ বোঝায়। সাধারণত একাধিক গর্ভধারণে যমজ বা টুইন শিশু বেশি হলেও কখনো কখনো ট্রিপলেট (একসাথে ৩ টি শিশু) বা এর বেশিও হতে পারে। একক গর্ভধারণ থেকে একাধিক গর্ভধারণ কিছুটা ভিন্ন হয়। নিচের আর্টিকেলে এ নিয়ে বিস্তারিত লিখা হয়েছে।

যমজ কি এবং কিভাবে হয়?

সাধারণত একসাথে দুজন শিশুর গর্ভধারণকে যমজ বলা হয়। পিরিয়ডের সময় একাধিক ডিম্বাণু তৈরি হলে সেগুলো একাধিক শুক্রাণু দিয়ে নিষিক্ত হয়। এ ধরণের যমজকে ‘ফ্র্যাটেরনাল টুইন’ বলে। এছাড়াও শুক্রাণু দিয়ে নিষিক্ত হওয়া ডিম্বাণু বিভাজিত হয়ে দুটি ভ্রুণে রূপান্তরিত হতে পারে। এ ধরণের যমজকে ‘আইডেন্টিকাল টুইন’ বলা হয়। সাধারণত আইডেন্টিকাল টুইনের চেয়ে ফ্র্যাটেরনাল টুইনই বেশি হয়ে থাকে।[১]

আপনার যমজ হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?

প্রতি ১০০০ গর্ভধারণে প্রায় ৯ জন মায়ের যমজ সন্তান হবার সম্ভাবনা থাকে।[২]

যমজ হওয়ার সম্ভাব্য কারণ বা ঝুঁকি

যমজ বাচ্চা কেন হয় এর আসল কারণ বের করা না গেলেও কিছু কিছু কারণ যমজ বাচ্চা হবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। যেমন—

বয়স: যেসব মায়ের বয়স ৩৫ এর বেশি তাদের ক্ষেত্রে যমজ গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকে।[৩] তাদের ক্ষেত্রে মাসিক চক্রের সময় একসাথে এক এর অধিক ডিম্বাণু নিঃসরণ হতে পারে। এ থেকে যমজ বাচ্চা হবার সম্ভাবনা থাকে।[৪] 

পারিবারিক ইতিহাস: আপনার মায়ের বংশের কারো পূর্বে যমজ বাচ্চা হবার ইতিহাস থাকলে, যেমন: আপনার মা, বোন, খালা কেউ আগে যমজ বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকলে আপনারও যমজ বাচ্চা হবার সম্ভাবনা থাকবে।

ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট নিলে: কেউ যদি বাচ্চা হবার জন্য চিকিৎসা নেন, যেমন: ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফ সেটি যমজ সন্তান হবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

অতিরিক্ত ওজন: যেসব মায়েরা অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী বা যাদের বিএমআই ৩০ এর বেশি তাদের যমজ সন্তান জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।নিজের ইতিহাস: আপনার এর আগে যমজ বাচ্চা হলে পরবর্তীতেও আপনার পুনরায় যমজ বাচ্চা হবার সম্ভাবনা আছে।

যমজ গর্ভধারণের লক্ষণ

অন্যান্য স্বাভাবিক গর্ভধারণের মতই যমজ বাচ্চা হবার লক্ষণ হয়ে থাকে। তবে আপনার একক গর্ভকালীন সময়ের চেয়েও লক্ষণগুলো বেশি প্রকট হয়ে থাকলে আপনার যমজ বাচ্চা হতে যাচ্ছে বলে মনে করতে পারেন। যেমন—

  • পেট বা যাকে মেডিকেলের ভাষায় ‘ফান্ডাল হাইট’ বলা হয় সেটি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হলে
  • অতিরিক্ত ওজন বাড়লে
  • আগে আগে গর্ভের শিশুর নড়াচড়া টের পেলে
  • একসাথে একাধিক জায়গায় গর্ভের শিশুর নড়াচড়া পেলে
  • ডপলারে একের বেশি শিশুর হার্ট সাউন্ড পেলে
  • প্রেগন্যান্সির যেসব হরমোন আছে যেমন: বিটা HCG, আলফা ফিটো প্রোটিন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে
  • এর পাশাপাশি গর্ভাবস্থার স্বাভাবিক সমস্যা গুলো আরেকটু বেশি অনুভব করলে, যেমন: বমি, স্তনে ব্যথা, দুর্বলতা, খাওয়ার ইচ্ছা, বারবার প্রসাব হওয়া

যমজের ধরণ

নিষিক্ত ডিম্বাণুর সংখ্যা অনুযায়ী

টুইন প্রেগন্যান্সি সাধারণত ২ ধরণের হয়—এক তৃতীয়াংশ টুইন আইডেন্টিকাল এবং দুই তৃতীয়াংশ টুইন নন আইডেন্টিকাল।

আইডেন্টিকাল টুইন

আইডেন্টিকাল টুইনের আরেক নাম মনোজাইগোটিক টুইন। এতে একটিই ডিম্বাণু নিষিক্ত হয় এবং সে ডিম্বাণু দুটি ভাগে ভাগ হয়। এতে করে টুইন দুজনের জিন একই রকম হয় এবং তারা দেখতেও এক রকম হয়। আইডেক্টিকাল টুইনের ক্ষেত্রে দুজনেই একই লিঙ্গের হয়।[৫] অর্থাৎ আপনার দুজন ছেলে শিশু অথবা দুজন মেয়ে শিশু জন্মাবে।

নন আইডেন্টিকাল টুইন

নন আইডেন্টিকাল বা ডাইজাইগোটিক টুইনের ক্ষেত্রে দুটি ডিম্বাণু নিষিক্ত হয় এবং জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত হয়। এক্ষেত্রে যমজ শিশুগুলো অন্যান্য স্বাভাবিক ভাইবোনের মতোই ভিন্ন হয়।[৬] আইডেন্টিকালের চেয়ে নন আইডেন্টিকাল টুইনই বেশি হবার সম্ভাবনা থাকে। এতে দুইজন একই লিঙ্গ কিংবা ভিন্ন লিঙ্গের হতে পারে।

গর্ভফুল ও গর্ভথলির সংখ্যা অনুযায়ী

গর্ভে যমজ বাচ্চাদের থলি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে আবার তিন ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে। যেমন—

দুইটি গর্ভফুল দুইটি থলি: এটি সবচেয়ে ভালো ধরণ। এতে উভয় শিশুই আলাদা গর্ভথলিতে থাকে এবং তাদের আলাদা গর্ভফুল থাকে। এতে করে দুটি শিশুই আলাদা আলাদা ভাবে পুষ্টি পায় এবং নিরাপদে থাকে।

একটি গর্ভফুল দুইটি থলি: এতে গর্ভের শিশুরা আলাদা থলিতে থাকলেও তাদের জন্য একটি গর্ভফুলই থাকে। আইডেন্টিকাল টুইনের ক্ষেত্রে এমন হয়৷ এক্ষেত্রে গর্ভফুল জনিত বিভিন্ন জটিলতা যেমন: ‘টুইন-টুইন ট্রান্সফিউশন সিনড্রোম’ নামের রক্ত সঞ্চালন জনিত সমস্যা হবার ঝুঁকি থাকে। আপনার পরীক্ষায় যদি এ ধরণ দেখতে পান জটিলতা এড়িয়ে চলতে এসময় চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকুন।একটি গর্ভফুল একটি থলি: ভাগাভাগির ক্ষেত্রে এটিই সবচেয়ে জটিল অবস্থা। এক্ষেত্রে গর্ভের শিশুরা একই গর্ভের থলিতে থাকে এবং একই গর্ভফুল ভাগাভাগি করে। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই এমন হয়ে থাকে।

গর্ভফুল ও গর্ভথলির সংখ্যা
ছবি: গর্ভফুল ও গর্ভথলির সংখ্যা

যমজ গর্ভধারণের জটিলতা

যমজ বাচ্চা হওয়া একই সাথে মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই বেশ কিছু জটিলতা নিয়ে আসে৷ যেমন—

মায়ের জটিলতা:

  • রক্তস্বল্পতা[৭]
  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
  • গর্ভকালীন উচ্চরক্তচাপ জনিত প্রি-একলাম্পশিয়া
  • প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা পোস্টপার্টাম হেমোরেজ[৮]

সন্তানের জটিলতা:

  • অকাল প্রসব
  • গর্ভে বৃদ্ধি কমে যাওয়া
  • জন্মগত ত্রুটি যেমন: স্পাইনা বাইফিডা
  • টুইন টু টুইন ট্রান্সফিউশন সিনড্রোম (যেখানে শুধুমাত্র একজন যমজ পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ পায়, বাকিরা পায় না)
  • গর্ভে তরলের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া (পলিহাইড্রামনিওস) কিংবা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া (অলিগোহাইড্রামনিওস)
  • গর্ভফুল ছিঁড়ে আসা বা আলাদা হয়ে যাওয়া

এর পাশাপাশি অকাল প্রসবের ফলে অপরিণত শিশুর জন্ম হলে নিচের সমস্যাগুলো হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়—

  • কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া
  • মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ
  • ফুসফুস অপরিণত থাকার কারণে শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া
  • শরীর গরম রাখতে না পারা
  • খেতে সমস্যা হওয়া
  • দৃষ্টিশক্তি ব্যাহত হওয়া, যাকে মেডিকেলের ভাষায় ‘রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচ্যুরিটি’ বলা হয়

যমজ গর্ভধারণ করলে করণীয়

গর্ভাবস্থায়

জমজ সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে মা ও শিশু উভয়ের কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। তাই যমজ সন্তান হলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণ গর্ভকালীন চেকআপের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক থেকে শুরু করে প্রতি ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পরপর আল্ট্রাসাউন্ড টেস্ট করা হতে পারে[৯], যেন বারবার পরীক্ষার মাধ্যমে যেকোনো জটিলতা প্রতিরোধ বা দ্রুত সনাক্তকরণের মাধ্যমে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়।

প্রসবের সময়

আপনার টুইন শিশুর ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা বা অস্বাভাবিকতা না থাকলে তাদের নরমাল ডেলিভারি করা যেতে পারে। তবে কখনো কখনো নরমাল ডেলিভারির পরিকল্পনা করেও প্রয়োজন অনুসারে পরবর্তীতে সিজারিয়ান সেকশন করা হতে পারে। আবার কখনো কখনো একটি শিশুর নরমাল ডেলিভারির পর অপর শিশুর জন্য সিজারিয়ান সেকশন করা হতে পারে। 

প্রায় অর্ধেকের বেশি টুইন এবং অধিকাংশ ট্রিপলেটের ক্ষেত্রে সিলেক্টিভ সিজারিয়ান সেকশন করা হয়। সাধারণত নিচের কোনো কারণ থাকলে চিকিৎসক আগে থেকেই সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনের পরামর্শ দিবেন। যেমন—

  • আপনার প্রথম শিশুর ব্রিচ প্রেজেন্টেশন থাকলে (অর্থাৎ গর্ভের ভেতরে তার মাথা উপরের দিকে এবং শরীরের বাকি অংশ নিচের দিকে থাকলে)
  • আপনার শিশুরা ট্রান্সভার্স বা আপনার গর্ভের ভিতর আড়াআড়ি অবস্থানে থাকলে
  • আপনার গর্ভফুলের কোনো অস্বাভাবিকতা থাকলে
  • আপনার গর্ভের শিশুরা একই গর্ভফুল ভাগাভাগি করে থাকলে
  • আপনার এর আগে প্রসবের সময় কোনো জটিলতা হয়ে থাকলে

প্রসবের পরে

জন্মের পর যমজ শিশুর যত্ন নিয়ে মায়েদের কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়৷ নিচের পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করলে আপনি কিছুটা উপকার পেতে পারেন—

  • যেকোনো জায়গায় ভ্রমনের সময় বাচ্চাদের জন্য ছোট বিছানা বা দোলনা নিতে পারেন। বাজারে এগুলো ‘ট্রাভেল কট’ নামে কিনতে পাওয়া যায়। এতে এক শিশু নিয়ে ব্যস্ত থাকলে আরেকজনকে রাখতে পারবেন
  • যমজ শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় আলাদা করে না খাইয়ে একই সাথে খাওয়াতে পারেন। এতে করে সময় ও শ্রম উভয়ই সাশ্রয় হবে
  • যমজ শিশুদের একসাথেই গোসল করাতে পারেন। গোসল করানোর আগেই টাওয়াল, ন্যাপি, পোশাকসহ আনুষাঙ্গিক জিনিস গুছিয়ে হাতের কাছে রাখুন
  • যমজ শিশুদের যত্নের বিষয়ে পরিবারের অন্যদের সহায়তা নিন

সাধারণ জিজ্ঞাসা

কত সপ্তাহ পরে গর্ভে যমজ বাচ্চা আছে তা বুঝা যায়?

সাধারণত গর্ভাবস্থার ১২ সপ্তাহে স্ক্যান করলে গর্ভে যমজ সন্তান আছে কিনা তা বুঝা যায়। এসময় তারা আইডেন্টিকাল বা একই গর্ভফুল ভাগাভাগি করে কিনা, নন আইডেন্টিকাল কিংবা ভিন্ন ভিন্ন গর্ভফুল ভাগাভাগি করে কিনা এসব সম্পর্কেও জানতে পারবেন। যদি প্রথম স্ক্যান থেকে এটি বুঝা না যায় তাহলে দ্বিতীয় বার স্ক্যান করতে পারেন।

গর্ভে যমজ বাচ্চা থাকলে কোন কোন বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে?

গর্ভে যমজ বা একসাথে একাধিক শিশু থাকলে তাদের স্বাভাবিক সময় বা টার্মের আগেই ডেলিভারি হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই একক শিশুর চেয়ে যমজ শিশুর জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন—
– এসময় নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে রক্তস্বল্পতা যাচাই করে প্রয়োজনে আয়রন ট্যাবলেট নিন
– আপনার রক্তচাপ ও প্রস্রাব পরীক্ষা করে প্রিএকলাম্পশিয়া প্রতিরোধী ঔষধ গ্রহণ করুন
– সন্তান ডেলিভারির অপশন নিয়ে কথা বলে রাখুন
– ডেলিভারি পরবর্তী রক্তপাত কমাতে আগে থেকেই ঔষধ নিন

যমজ বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রে কি নরমাল ডেলিভারি নিরাপদ?

অনেক মা ভাবেন টুইন প্রেগন্যান্সি হলেই তার সিজারিয়ান সেকশন করতে হবে।  অন্য কোনো জটিলতা না থাকলে টুইন শিশুর ক্ষেত্রেও নরমাল ডেলিভারি করা যায়। তবে এতে কখনো কখনো ফোরসেপ বা ভ্যাকুয়ামের সাহায্য নিয়ে ডেলিভারি করতে হয়। একে মেডিকেলের ভাষায় ‘এসিস্টেড ডেলিভারি’ বলে।

গর্ভে যমজ বাচ্চার হার্টবিট কত সপ্তাহে আসে?

সাধারণত গর্ভে ৪ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার পর ভ্রূণদেহে হার্টবিট শুরু হয়।[১০] আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় এই হার্টবিট বোঝা যায়। তবে ১০ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চার হার্টবিট আপনি ফিটাল ডপলারে শুনতে পাবেন।

গর্ভে যমজ বাচ্চার নড়াচড়া কেমন হতে পারে?

গর্ভাবস্থায় এক বাচ্চার তুলনায় যমজ বাচ্চার নড়াচড়া বেশি বোঝা যায়। ১৮ থেকে ২০ সপ্তাহের মাঝে এটি টের পাবেন আপনি। তবে আপনি যদি আগে মা হয়ে না থাকেন, সেক্ষেত্রে নড়াচড়ার পার্থক্য করাটা কঠিন হতে পারে

গর্ভাবস্থায় যমজ বাচ্চাদের ওজন কি একই হবে নাকি আলাদা আলাদা হতে পারে?

গর্ভাবস্থায় যমজ বাচ্চাদের মধ্যে ১৫ শতাংশ ওজনের পার্থক্য হতে পারে।[১১] দেখা যায় যে বাচ্চার ওজন বেশি সে আগে প্রসব হয়৷ তবে স্বাভাবিকের তুলনায় যমজ বাচ্চারা আগে জন্ম নেয়, তাই তাদের অন্যদের তুলনায় কম ওজনের হবার সম্ভাবনা থাকে।

যে কেউ চাইলেই কি যমজ বাচ্চা নিতে পারবে?

যমজ বাচ্চা নেওয়া কারো হাতে নেই। তবে আপনি যদি ৩০ এর পর গর্ভধারণ করেন, আপনার ওজন বেশি হলে, শিশুকে বেশি বেশি বুকের দুধ খাওয়ালে, আপনার মায়ের পরিবারে কারো যমজ বাচ্চা হবার ইতিহাস থাকলে এবং আপনি বাচ্চা হবার জন্য ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট নিলে আপনার যমজ বাচ্চা হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

যমজ বাচ্চা গর্ভধারণের জন্য কি কোনো খাবার ভূমিকা রাখতে পারে?

অনেকে ভাবে বিশেষ ধরণের খাবার খেলে যমজ বাচ্চা হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এরকম কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ তবে ডেইরি প্রোডাক্ট অর্থাৎ দুধের তৈরি খাবার খেলে যমজ বাচ্চা হবার সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু এই তথ্যটিও নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়।

যমজ সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে কতটুকু অতিরিক্ত ওজন বাড়াতে হয়?

সাধারণত একজন শিশুর গর্ভধারণে দৈনিক অতিরিক্ত ৩০০ ক্যালরির প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে যমজ সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৬০০ ক্যালরির প্রয়োজন। তবে আপনি যদি ট্রিপলেট বা তিনজন শিশু গর্ভধারণ করেন, সেক্ষেত্রে আপনার অতিরিক্ত কতটুকু খেতে হবে বা কতটুকু ওজন বাড়াতে হবে সেটি চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে জেনে নিন।

যমজ সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে কতটুকু ব্যায়াম করা উচিত?

যমজ শিশু গর্ভধারণের ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে কর্মক্ষম বা এক্টিভ থাকা প্রয়োজন। তবে এসময় অতিরিক্ত পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলুন। এসময় হালকা পরিশ্রমের কাজ যেমন: সাঁতার, হাঁটাচলা, ইয়োগা করতে পারেন। আপনি প্রতিদিন অন্তত ত্রিশ মিনিট এসব কাজ করুন। তবে এ থেকে কোনো সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তা এড়িয়ে চলুন।

সকল যমজ শিশুর কি অকাল প্রসব হয়?

প্রায় অর্ধেকের চেয়ে কিছুটা বেশি সংখ্যক যমজ শিশুর ক্ষেত্রে অকাল প্রসব অর্থাৎ ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ করার আগেই ডেলিভারি হয়। সাধারণত স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে ৪০ সপ্তাহের আশেপাশে প্রসব হয়। অধিকাংশ যমজ শিশু সাধারণত ৩৬ সপ্তাহে (যমজের ধরণের উপর নির্ভর করে ৩২-৩৮ সপ্তাহে) ডেলিভারি হয়। সাধারণ গর্ভধারণে অকাল প্রসব প্রতিরোধ করা গেলেও যমজ শিশুর ক্ষেত্রে সেটি কিছুটা চ্যালেঞ্জিং।

ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট কিভাবে যমজ সন্তান হতে সাহায্য করে?

 ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট নিলে তা বিভিন্নভাবে যমজ শিশু হবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। যেমন—
– ফার্টিলির ঔষধগুলো একাধিক ডিম্বাণুর নিঃসরণ উৎসাহিত করে
– ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্টের একটি বিশেষ ধরণ আইভিএফ পদ্ধতিতে একাধিক ভ্রুণ প্রতিস্থাপন করা হয়
– আইভিএফ পদ্ধতিতে জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত ভ্রুণ শুরুর দিকেই দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়

(১১)

  1. American College of Obstetricians and Gynecologists. “Multiple Pregnancy.” ACOG, https://www.acog.org/womens-health/faqs/multiple-pregnancy. Accessed 17 Apr. 2024.
  2. Hossain, Kazi Zubair, and Iftekhar Hasan. “Trends in Twin Births and Survival in Bangladesh: An Analysis of Half a Century of Evidence.” Twin Research and Human Genetics, Feb. 2024, pp. 1–8.
  3. McLennan, Amelia S., et al. “The Role of Maternal Age in Twin Pregnancy Outcomes.” American Journal of Obstetrics and Gynecology, vol. 217, no. 1, July 2017, p. 80.e1-80.e8.
  4. American College of Obstetricians and Gynecologists. “Multiple Pregnancy.” ACOG, https://www.acog.org/womens-health/faqs/multiple-pregnancy. Accessed 17 Apr. 2024.
  5. Royal College of Obstetricians and Gynaecologists. “Multiple Pregnancy: Having More than One Baby.” RCOG, Sept. 2021, https://www.rcog.org.uk/for-the-public/browse-our-patient-information/multiple-pregnancy-having-more-than-one-baby/. Accessed 17 Apr. 2024.
  6. Royal College of Obstetricians and Gynaecologists. “Multiple Pregnancy: Having More than One Baby.” RCOG, Sept. 2021, https://www.rcog.org.uk/for-the-public/browse-our-patient-information/multiple-pregnancy-having-more-than-one-baby/. Accessed 17 Apr. 2024.
  7. Royal College of Obstetricians and Gynaecologists. “Multiple Pregnancy: Having More than One Baby.” RCOG, Sept. 2021, https://www.rcog.org.uk/for-the-public/browse-our-patient-information/multiple-pregnancy-having-more-than-one-baby/. Accessed 17 Apr. 2024.
  8. Royal College of Obstetricians and Gynaecologists. “Multiple Pregnancy: Having More than One Baby.” RCOG, Sept. 2021, https://www.rcog.org.uk/for-the-public/browse-our-patient-information/multiple-pregnancy-having-more-than-one-baby/. Accessed 17 Apr. 2024.
  9. American College of Obstetricians and Gynecologists. “Multiple Pregnancy.” ACOG, https://www.acog.org/womens-health/faqs/multiple-pregnancy. Accessed 17 Apr. 2024.
  10. Valenti, Oriana, et al. “Fetal Cardiac Function during the First Trimester of Pregnancy.” Journal of Prenatal Medicine, vol. 5, no. 3, July 2011, pp. 59–62.
  11. Atoof, Fatemeh, et al. “Two-Year Comparison of Growth Indices of Twins with Dissimilar Weight at Birth (Low Birth Weight vs. Normal Twin).” Iranian Journal of Public Health, vol. 44, no. 7, July 2015, pp. 969–78.