ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আবশ্যকীয় ১৪টি বিষয়

ডায়াবেটিস রোগীর যে সকল বিষয় জানা আবশ্যক

ডায়াবেটিস হলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেকসময় কোনো লক্ষণ ছাড়াই বিভিন্ন রোগ শরীরে বাসা বাঁধে। তাই এসব স্বাস্থ্য জটিলতা শনাক্ত করতে ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত চেকআপে থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

চেকআপের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কি না সেটি জানা যায়। ফলে সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। চেকআপের অংশ হিসেবে প্রতি বছর রোগীকে কতগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কি না সেটি দেখা হয়।

এই আর্টিকেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি কমানোর জন্য অত্যাবশ্যকীয় ১৪টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

১. রক্তের সুগার পরীক্ষা করিয়ে নিন

রক্তে সুগারের মাত্রা বেশি থাকলে রক্তনালীর ক্ষতি হতে পারে। ফলে বিভিন্ন মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রক্তে সুগারের গড় নিয়ন্ত্রণ পরিমাপ করার জন্য একটি রক্ত পরীক্ষা রয়েছে। পরীক্ষাটির নাম এইচবিএওয়ানসি (HbA1c) পরীক্ষা। বছরে অন্তত একবার পরীক্ষাটি করানো উচিত।

এই পরীক্ষার মাধ্যমে বিগত তিন মাস যাবত ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ কেমন ছিল সেটি নির্ণয় করা যায়। অর্থাৎ, রক্তে সুগারের পরিমাণ আদর্শ লক্ষ্যমাত্রার কতটা কাছাকাছি ছিল সেটি নির্ধারণ করা যায়। এইচবিএওয়ানসি পরীক্ষাটি বাড়িতে ‘গ্লুকোমিটার’ বা ডায়াবেটিস মাপার মেশিনের সাহায্যে রক্তের সুগার মাপার পরীক্ষার চেয়ে ভিন্ন।

ঘরে বসে ডায়াবেটিস মাপার সময়ে কেবল সেই মুহূর্তে রক্তের সুগারের লেভেল জানা যায়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেক রোগীকেই নিয়মিত গ্লুকোমিটারের সাহায্যে সুগারের মাত্রা পরিমাপ করতে হয়।

সব রোগীর ক্ষেত্রে নিয়মিত এভাবে সুগার পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয় না। সাধারণত ইনসুলিন ব্যবহার করেন অথবা ডায়াবেটিসের কিছু বিশেষ ঔষধ সেবন করেন এমন রোগীদের নিয়মিত বাড়িতে রক্তের সুগার লেভেল মেপে দেখতে হয়। আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিয়মিত সুগার মাপতে হবে কি না অথবা কতবার ও কোন সময়ে সুগার মাপতে হবে তা জেনে নিন।

রক্তের সুগারের লেভেল সম্পর্কে সচেতন হোন। ডাক্তার অনেক রোগীর জন্য ডায়াবেটিস তথা রক্তের সুগারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়ে থাকেন। আপনার ক্ষেত্রে এমন কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হলে সেটির পরিবর্তন হচ্ছে কি না সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

২. ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ কত সেটি জেনে নিন

উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালী ও হার্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। ফলে এগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিসের বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব জটিলতার মধ্যে রয়েছে হার্ট, কিডনি ও দৃষ্টিশক্তির বিভিন্ন মারাত্মক সমস্যা।

উচ্চ রক্তচাপ হলে সাধারণত বিশেষ কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তাই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগী অসুস্থ বোধ না-ও করতে পারেন।

কিন্তু এই বাড়তি রক্তচাপ হার্ট ও রক্তনালীর ক্ষতি করতে থাকে। স্বাস্থ্য জটিলতা গুরুতর হয়ে ওঠার আগে সাধারণত এসব সমস্যা ধরা পড়ে না। তাই দ্রুত উচ্চ রক্তচাপের যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। শরীর সচল রাখা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং নিয়মমতো ঔষধ সেবনের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

ডায়াবেটিস রোগীদের বছরে অন্তত একবার ডাক্তারের কাছে গিয়ে প্রেসার মাপতে হবে। পাশাপাশি বাসায় নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করতে পারেন। ডাক্তারের সাথে কথা বলে আপনার ব্লাড প্রেসার কত থাকা দরকার সেটি জেনে নিন।

বাড়িতে রক্তচাপ মাপলে রিডিংগুলো একটি খাতায় অথবা ডায়েরিতে লিখে রাখুন। পরবর্তী চেকআপের সময়ে ডাক্তারকে রিডিংগুলো দেখান।

৩. ‘লিপিড প্রোফাইল’ সম্পর্কে জেনে নিন

রক্তে কোলেস্টেরল নামের এক ধরনের চর্বিজাতীয় পদার্থ থাকে। রক্তের কোলেস্টেরল মূলত দুই ধরনের—LDL ও HDL। LDL কে ‘ক্ষতিকর’ কোলেস্টেরল বলা হয়। কারণ এটি রক্তনালীর ভেতরে জমা হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা দেয়। এভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে HDL কে বলা হয় ‘ভালো’ কোলেস্টেরল। কারণ এটি LDL কোলেস্টেরলকে রক্ত থেকে সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে।

রক্তে কোলেস্টেরলসহ অন্যান্য চর্বির মাত্রা পরিমাপ করার জন্য ফাস্টিং লিপিড প্রোফাইল নামের একটি পরীক্ষা করা হয়। এই রক্ত পরীক্ষাটি খালিপেটে (সাধারণত ১২ ঘণ্টা পানি ছাড়া অন্য কোনো খাবার না খেয়ে) করাতে হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের বছরে একবার এই পরীক্ষা করাতে হয়।

রক্তের সুগার ও রক্তচাপের পাশাপাশি রক্তের চর্বির লক্ষ্যমাত্রাও একেক জনের জন্য একেক রকম হতে পারে। আপনার জন্য সঠিক লক্ষ্যমাত্রা কত সেটি ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন। লিপিড প্রোফাইল এর ফলাফল লক্ষ্যমাত্রার ওপরে থাকলে ডাক্তারের কাছ থেকে সেটি কমিয়ে আনার উপায় সংক্রান্ত পরামর্শ নিন।

৪. চোখের খেয়াল রাখুন

ডায়াবেটিসের কারণে চোখের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় সুগার থাকার কারণে চোখের রক্তনালীর ক্ষতি হয়। তাই ডায়াবেটিস দৃষ্টিশক্তি হারানোর অন্যতম কারণ। তবে সুগার নিয়ন্ত্রণে রেখে এবং প্রতি বছর চোখের বিশেষ চেকআপের মাধ্যমে এই অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা যায়।

ডায়াবেটিসের জন্য চোখের ‘স্ক্রিনিং পরীক্ষা’ করাতে হয় যা চোখের সাধারণ পরীক্ষার চেয়ে ভিন্ন। এক্ষেত্রে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ রোগীর চোখের পেছনের অংশের ছবি তুলে সেখানে কোনো পরিবর্তন আছে কি না সেটি দেখবেন। এভাবে সময়মতো সমস্যা নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করা যায়। ফলে দৃষ্টিশক্তির নানান গুরুতর সমস্যা রোধ করা যায়। এছাড়া দুটি স্ক্রিনিং পরীক্ষার মধ্যবর্তী সময়ে দৃষ্টিশক্তিতে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করলেও দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

উল্লেখ্য, ধূমপানও চোখের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। তাই আপনি ধূমপায়ী হয়ে থাকলে নিজের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ধূমপান ছেড়ে দেওয়া উচিত।

৫. পা ও পায়ের পাতার চেকআপ করান

ডায়াবেটিস পায়ে রক্ত সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে। ফলে পা অবশ বা অসাড় লাগতে পারে। একারণে পায়ে কোনো আঘাত পেলে তা ভালোমতো অনুভব করা যায় না। এ ছাড়া ঘা-ক্ষত হলে তা সহজে সেরে ওঠে না। তাই পায়ে আলসার বা ইনফেকশনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

পায়ের এসব সমস্যা দ্রুত নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা না করালে জটিলতা আরও বাড়তে পারে। এমনকি পা কেটে ফেলতে হতে পারে। তাই নিয়মিত পায়ের ত্বক, রক্ত চলাচল ব্যবস্থা ও বোধশক্তির (স্নায়ুর) পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরী। এজন্য বছরে অন্তত একবার ডাক্তারের কাছে পা পরীক্ষা করাতে হবে। এ ছাড়া পায়ে কোনো ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে কি না সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। সেই সাথে নিয়মিত ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন নিতে হবে।

৬. কিডনির খেয়াল রাখুন

ডায়াবেটিসের রোগীদের একটি বড় অংশের মধ্যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিডনির নানান ধরনের রোগ দেখা দেয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কিডনির রক্তনালীর ক্ষতি করে। ফলে কিডনি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।

কিডনিতে সমস্যা হলে প্রথমদিকে কোনো লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। এজন্য নিয়মিত কিডনির পরীক্ষা করানো জরুরী। এতে কিডনির কোনো সমস্যা থাকলে সেটি সময়মতো শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া যায়।

নিয়মিত চেকআপ কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। যেমন: এইচবিএওয়ানসি, রক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টেরল নিয়মিত পরীক্ষা করা। এভাবে ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এসবের মাত্রা যতটা সম্ভব স্বাভাবিকের কাছাকাছি রাখলে স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি কমে আসে।

কিডনি ঠিকমতো কাজ করছে কি না সেটি পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রতি বছর দুটি পরীক্ষা করানো উচিত—

১. প্রস্রাব পরীক্ষা। প্রস্রাবে প্রোটিন নামক পদার্থের উপস্থিতি দেখে কিডনির সমস্যা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

২. রক্ত পরীক্ষা (যেমন: ক্রিয়েটিনিন অথবা ইজিএফআর)। এই পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনি কেমন কাজ করছে সেটি জানা সম্ভব হয়।

৭. স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলুন

একজন ডাক্তার অথবা রেজিস্টার্ড পুষ্টিবিদের কাছ থেকে আপনার ব্যক্তিগত ডায়েট সম্পর্কে আলোচনা করুন। তিনি আপনার সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে সঠিক উপদেশ দিতে পারবেন। এর পাশাপাশি আপনাকে নিয়মিত ওজন মাপতে হবে। ওজন বেড়ে গেলে তা কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

খাবারের তালিকায় লবণ ও চর্বিযুক্ত খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিলে তা আপনার রক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। ফলে ডায়াবেটিসের বিভিন্ন জটিলতার ঝুঁকি কমে আসবে।

ডায়াবেটিস হলেই যে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়া একেবারে ছেড়ে দিতে হবে তা নয়। এই বিষয়ে আরও জানতে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।

৮. মানসিক সহায়তা গ্রহণ করুন

ডায়াবেটিস ধরা পড়লে অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এমন একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা নিয়ে জীবনযাপন করা কঠিন মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে এবং নিয়মিত চেকআপে গেলে স্বাস্থ্য জটিলতাবিহীন জীবন যাপন করা সম্ভব।

ডায়াবেটিসের কারণে আপনি মানসিক চাপে ভুগলে সেটি রক্তের সুগার আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি যেকোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত বোধ করলে নির্দ্বিধায় ডাক্তারের সাথে সেই বিষয়ে আলোচনা করুন। আপনার পরিবার ও বন্ধুরাও হয়তো আপনাকে সাহায্য করতে চান। আপনার উদ্বেগের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনবেন এমন কারও সাথে কথা বলুন। আপনার অনুভূতি অন্যদের জানানোর মাধ্যমে আপনি ভালো বোধ করতে পারেন।

৯. ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানুন

ডায়াবেটিস আপনার শরীরে কী প্রভাব ফেলে এবং এটি নিয়ন্ত্রণে আপনি কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন এসব বিষয়ে ধারণা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে বেশ কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যায়।

ডাক্তার আপনাকে ডায়াবেটিস সংক্রান্ত একটি পুস্তিকা বা বুকলেট দিতে পারেন। সেখানে ডায়াবেটিসের কারণ, লক্ষণ, জটিলতা ও নিয়ন্ত্রণের উপায়সহ বিভিন্ন তথ্য বিস্তারিত আলোচনা করা থাকে। এছাড়া আত্মীয় অথবা বন্ধুদের মধ্যে কারও ডায়াবেটিস থাকলে এবং এই বিষয়ে তাদের ভালো ধারণা থাকলে তাদের কাছ থেকেও বিভিন্ন তথ্য জেনে নিতে পারেন।

পড়ুন: ডায়াবেটিস নিয়ে কমন প্রশ্নের উত্তর

১০. বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস বা এন্ডোক্রাইন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

এ ছাড়া ডায়াবেটিস শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। যেমন: চোখ, পা, কিডনি ও হার্ট। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী এসবের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন হতে পারে।

১১. গর্ভধারণ করতে চাইলে পূর্বপরিকল্পনা করে রাখুন

আপনি যদি গর্ভধারণ করতে চান তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে অধিক সচেতন হতে হবে। ডায়াবেটিসের রোগী গর্ভধারণ করলে মা ও শিশুর বিভিন্ন ধরনের জটিলতা হতে পারে।

তাই সন্তান নেওয়ার আগে থেকেই রক্তের সুগার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। গর্ভধারণের পূর্বে ও গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রক্তের সুগার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার সময় থেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সন্তান ধারণ পূর্ববর্তী পরামর্শ নিতে হবে। সন্তান ধারণের প্রস্তুতির সময় থেকে শুরু করে প্রসব-পরবর্তী পরিচর্যা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

পড়ুন: ডায়াবেটিক নারীর সুস্থ গর্ভধারণ

১২. হাসপাতালে ভর্তি হলে বিশেষজ্ঞ সেবা নিন

যেকোনো অসুস্থতার কারণে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হলে সামগ্রিক চিকিৎসার বিষয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস (এন্ডোক্রাইন) বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

হাসপাতালে ভর্তির কারণটি যদি ডায়াবেটিস না-ও হয়, তবুও রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং চলমান চিকিৎসার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

১৩. যৌন সমস্যা নিয়ে কথা বলুন

ডায়াবেটিস পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই যৌন সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যৌন সমস্যার পেছনে শারীরিক, মানসিক অথবা জীবনধারা সম্পর্কিত কারণ থাকতে পারে। এ ছাড়া কিছু ঔষধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে যৌন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

রক্তে সুগারের মাত্রা বেশি হওয়ার কারণে রক্তনালীর ক্ষতি হয়। ফলে যৌনাঙ্গে ঠিকমতো রক্ত সরবরাহ হয় না। মানসিক চাপ অথবা মন ভালো না থাকার কারণেও যৌন সমস্যা হতে পারে।

পুরুষদের ক্ষেত্রে ইরেকটাইল ডিসফাংশনের (অর্থাৎ, যৌন উত্তেজনা না হওয়া অথবা উত্তেজনা ধরে রাখতে না পারার) মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গ অথবা মূত্রথলির ইনফেকশনের মতো সমস্যা হতে পারে।

ডাক্তারকে এই বিষয়ে জানাতে সংকোচ বোধ করবেন না। এসব ব্যাপারে কথা বলা কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু ডাক্তারকে জানালে তিনি সঠিক চিকিৎসা দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন।

১৪. ধূমপান ছেড়ে দিন

ডায়াবেটিস হলে হার্টের রোগ ও স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ধূমপান এই ঝুঁকি আরও অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। ধূমপানের কারণে হার্ট ও শরীরের অন্যান্য স্থানের রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া ধূমপান রক্তচাপও বাড়িয়ে দেয়। ফলে দৃষ্টিশক্তি হারানো ও স্নায়ুর ক্ষতিসহ নানান জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

তাই ধূমপানের অভ্যাস ছেড়ে দেওয়ার সংকল্প করতে হবে। ধূমপান ছাড়তে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তিনি ঔষধ ও কাউন্সেলিং সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়ে প্রক্রিয়াটি সহজ করে তুলতে পারবেন।

বিনা ঔষধে ধূমপান ছাড়ার কার্যকর উপায় জানতে আমাদের ভিডিওটি দেখতে পারেন।

https://youtu.be/CP5PJ_jFx00