ডায়াবেটিস সারানোর ঘরোয়া উপায় কী? খালি পেটে ও খাওয়ার পরে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল? ডায়াবেটিস নিয়ে এমন সকল কমন জিজ্ঞাসার উত্তর এই আর্টিকেলে তুলে ধরা হয়েছে।
পরিচ্ছেদসমূহ
ডায়াবেটিস কী?
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বাড়িয়ে দেয়। ইনসুলিন নামের একটি হরমোনে আপনার রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এই হরমোনটি পাকস্থলীর পেছনে থাকা অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস নামের একটি গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়। যখন খাবার পরিপাক হয়ে আপনার রক্তে প্রবেশ করে, তখন এই ইনসুলিন রক্ত থেকে সুগারকে (গ্লুকোজকে) কোষের ভেতরে ঢুকিয়ে সেটাকে ভেঙ্গে শক্তি উৎপাদন করে। কিন্তু ডায়াবেটিস হলে আপনার দেহ সুগার তথা গ্লুকোসকে ভেঙ্গে এভাবে শক্তি উৎপাদন করতে পারে না।
ডায়াবেটিস হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা ভালো। শুরু থেকেই চিকিৎসা নিলে ডায়াবেটিসের সাথে অন্যান্য রোগের ঝুঁকিও অনেক কমে যায়। ডায়াবেটিস নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের ডায়াবেটিস কী? কেন হয়? আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় কি?
ডায়াবেটিস সারাতে হলে একটি স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা মেনে চলতে হবে এবং পর্যাপ্ত শরীরচর্চা করতে হবে। এতে যদি ডায়াবেটিস কমানো না যায়, তাহলে ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে।
খাবার: স্বাস্থ্যকর ও সুষম ডায়েটের জন্য আপনাকে বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্যকর খাবার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। একই সাথে কিছু খাবার অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে, যেমন চিনি, লবণ ও চর্বিজাতীয় খাবার। এসব খাবার যতটুকু না খেলেই নয় ঠিক ততটুকুই খাওয়া উচিত। খাবার সময়মত খাবেন, কোনো বেলার খাবার যেন বাদ না পড়ে। স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা আর্টিকেলটি পড়ুন।
ব্যায়াম: নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম রক্তে সুগারের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করবে। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। সপ্তাহের যেকোনো পাঁচ দিন মাত্র ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করলেও সপ্তাহে আড়াই ঘণ্টা শারীরিক পরিশ্রম করা হয়ে যাবে। কী ধরনের ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিস কমবে তা আমাদের ডায়াবেটিস রোগীর ব্যায়াম ও ওজন আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন।
ওষুধ: যদি পর্যাপ্ত ব্যায়াম এবং সুষম খাদ্য তালিকা মেনেও ডায়াবেটিস কমানো না যায়, তাহলে আপনার ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে একেকজনের একেক ধরনের এবং একেক ডোজের ওষুধ খেতে হয়, এমনকি একাধিক ওষুধ সমন্বয় করে সেবন করতে হতে পারে। আবার অনেকের ডায়াবেটিস সারানোর জন্য ইনসুলিনের প্রয়োজন হতে পারে। আপনার জন্য কোন ওষুধটি সঠিক তা ডাক্তার আপনাকে জানাবেন। ওষুধগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা নামক আর্টিকেলে।
ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল?
রক্তে সুগারের মাত্রা কত হলে স্বাভাবিক তা কোন পদ্ধতিতে মাপছেন তার উপরে নির্ভর করে। সাধারণত বাড়িতে কিংবা ফার্মেসিতে গ্লুকোমিটারের সাহায্যে আঙ্গুলের ডগায় থাকা রক্তনালী থেকে ডায়াবেটিস মাপা হয়। অন্যদিকে হাসপাতালের ল্যাবে শিরা থেকে রক্ত নিয়ে ব্লাড সুগার মাপা হয়। হাসপাতালের রিপোর্টের তুলনায় গ্লুকোমিটারে মাপা ব্লাড সুগারের পয়েন্ট সামান্য বেশি আসতে পারে। আমরা দুই পদ্ধতিরই স্বাভাবিক মাত্রা তুলে ধরছি।
গ্লুকোমিটারে ডায়াবেটিস মাপা
যদি একজন সুস্থ মানুষ গ্লুকোমিটারে ডায়াবেটিস মাপেন, তাহলে রক্তে সুগারের মাত্রা খাবার আগে ৪-৬ পয়েন্ট (mmol/l) এবং খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে ৮ পয়েন্টের নিচে হলে তা স্বাভাবিক ধরা হয়।
হাসপাতালের ল্যাবে ডায়াবেটিস মাপা
খালি পেটে: খালি পেটে আপনার শিরা থেকে নেওয়া রক্তে সুগারের মাত্রা ৫.৫ পয়েন্ট (mmol/l)-এর আশেপাশে থাকা ভালো। সুগারের মাত্রা যদি ৬.১ থেকে ৬.৯ পয়েন্ট (mmol/l)-এর মধ্যে থাকে, তাহলে এই অবস্থাকে বলে প্রি-ডায়াবেটিস। প্রি-ডায়াবেটিস বলতে এমন অবস্থাকে বোঝায় যখন আপনার টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি সৃষ্টি হয় এবং হৃদরোগসহ অন্যান্য বিভিন্ন রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই অবস্থাকে আপনি সতর্কবার্তা হিসেবে ধরে নিয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের দিকে মনযোগী হতে পারেন।
ভরা পেটে: ভরা পেটে বা খাবারের পরে রক্তে সুগারের মাত্রা কিছুটা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে এই মাত্রা ৭.৮ পয়েন্টের (mmol/l) বেশি বেড়ে গেলে তাকে প্রি-ডায়াবেটিস ধরা হয়। আর ১১.১ পয়েন্টের বেশি হলে তা ডায়াবেটিসের মাত্রায় চলে যায়। এসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা ভালো। শুরু থেকেই চিকিৎসা নিলে ডায়াবেটিসের সাথে অন্যান্য রোগের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
সুগারের মাত্রা কত হলে বুঝবেন ডায়াবেটিস?
সাধারণত রক্তে সুগারের মাত্রা যদি ৭ পয়েন্টের (mmol/l) উপরে চলে যায়, আমরা তাকে ডায়াবেটিস বলি। তবে এই হিসেবটা খালি পেটের। ভরা পেটে বা খাবার ২ ঘণ্টা পরে রক্তে সুগারের মাত্রা ১১.১ পয়েন্টের বেশি হলে তাকে ডায়াবেটিস ধরা হয়। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা জরুরি। শুরু থেকেই চিকিৎসা গ্রহণ করলে ডায়াবেটিসের সাথে অন্যান্য রোগের ঝুঁকিও অনেক কমে যায়।
খালি পেটে ডায়াবেটিস কত থাকে?
খালি পেটে আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা ৫.৫ পয়েন্টের (mmol/l) আশেপাশে থাকা ভালো। যদি ৫.৫ থেকে ৬.৯ পয়েন্টের মধ্যে থাকে, এই অবস্থাকে বলে প্রি-ডায়াবেটিস। যদি ৭ পয়েন্টের উপরে চলে যায়, আমরা তাকে ডায়াবেটিস বলি।
ডায়াবেটিস কি চিরতরে নিরাময় হয়?
স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা মেনে চলা এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করার মাধ্যমে রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় এনে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তখন আর ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিন নেয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে একথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, সকলের পক্ষে ডায়াবেটিসের ডায়েট এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রায় আনা সম্ভব হয় না। ডায়াবেটিস নিরাময় নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা এবং ডায়াবেটিস রোগীর ব্যায়াম ও ওজন শীর্ষক আর্টিকেল দুটি পড়তে পারেন।
সুগার কেন বেশি হয়?
রক্তের সুগার বেশি হওয়ার মূল কারণ শরীরে ইনসুলিন নামের হরমোনের কাজে ব্যাঘাত ঘটা। ইনসুলিন আপনার রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এই হরমোনটি পাকস্থলীর পেছনে থাকা অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস নামের একটি গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়। যখন খাবার পরিপাক হয়ে আপনার রক্তে প্রবেশ করে, তখন এই ইনসুলিন রক্ত থেকে সুগার (গ্লুকোজকে) কোষের ভেতরে ঢুকিয়ে সেটাকে ভেঙ্গে শক্তি উৎপাদন করে। কিন্তু ডায়াবেটিস হলে আপনার দেহ সুগার তথা গ্লুকোসকে ভেঙ্গে এভাবে শক্তি উৎপাদন করতে পারে না।
ডায়াবেটিসের সাথে প্রায়ই নিচের ব্যাপারগুলোর সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়:
- অতিরিক্ত ওজন,
- শারীরিক পরিশ্রমের অভাব,
- পরিবারের কোন সদস্য যেমন বাবা, মা, ভাই বা বোনের টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকা
সুগার কেন হয় তা নিয়ে আরও জানতে আমাদের ডায়াবেটিস কী? কেন হয়? আর্টিকেলটি পড়ুন।
সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায় কী?
এমন কোন নির্দিষ্ট একটি খাবার নেই যা আপনাকে ডায়াবেটিস থেকে সারিয়ে তুলবে। তবে বিভিন্ন গবেষণায় অতিরিক্ত ওজন এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাবের সাথে ডায়াবেটিসের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। তাই ওজন কমানো হতে পারে ঘরোয়াভাবে ব্লাড সুগার কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে আনার প্রথম ধাপ।
ওজন কমানোর খাবার: ওজন কমানোর জন্য একটি সুষম, স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা মেনে চলা জরুরি। খাবার তালিকাটি এমন হবে যেন সেখানে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমানে থাকে এবং খাবারের পরিমাপ হবে পরিমিত যেন তা ওজন কমাতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এমন একটি খাবারের তালিকা পেতে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা আর্টিকেলটি পড়ুন।
ওজন কমানোর ব্যায়াম: ওজন কমাতে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চা করা জরুরী। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। ঘরে বসেই কী ধরনের ব্যায়াম করলে সুগার কমবে তা আমাদের ডায়াবেটিস রোগীর ব্যায়াম ও ওজন আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন।
এভাবে ওজন ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে না আসলে আপনার ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। ডায়াবেটিস কমানোর ওষুধ সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন আমাদের ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা নামক আর্টিকেলে।
ডায়াবেটিস চিকিৎসায় নতুন উপায় কী?
ডায়াবেটিস চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সারিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উপায় নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। তবে এখনও ডায়াবেটিসকে পুরোপুরি নির্মূল করার নতুন কোন চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয় নি। ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা মেনে চলা, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং প্রয়োজনবোধে ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।