ডায়াবেটিস হলে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই এসব জটিলতা দেখা দিবে—ব্যাপারটি এমন নয়। তবে রক্তে সুগারের পরিমাণ যদি সবসময়ই বেশি থাকে, তাহলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা হতে পারে। যেমন—
- হার্টের রোগ
- ব্রেইন স্ট্রোক
- পায়ের রক্ত চলাচলে জটিলতা সহ বিভিন্ন সমস্যা হওয়া। যেমন: ঘা, ক্ষত ও ইনফেকশন
- দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া ও অন্ধত্ব
- স্নায়ুর সমস্যা। যেমন: ব্যথা হওয়া ও অবশ লাগা
- কিডনি রোগ
- দাঁতের মাড়ির রোগ
এসব ঝুঁকি কমানোর সর্বোত্তম উপায় হলো রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নিয়মিত ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের চেকআপে থাকা।
হার্টের পরীক্ষা
বছরে অন্তত একবার রক্তের কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ পরিমাপ করে দেখা প্রয়োজন।
ধূমপানের অভ্যাস থাকলে সেটি ত্যাগ করার পদক্ষেপ নিন। ধূমপান হার্ট অ্যাটাক সহ বিভিন্ন হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিস হলে এই ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
ধূমপান থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় জানতে আমাদের ভিডিওটি দেখতে পারেন।
স্নায়ুর সমস্যা
ডায়াবেটিসের কারণে নার্ভ বা স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে। একে বলা হয় ‘ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি’। স্নায়ুর সমস্যা হলে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন—
- শরীরের বিভিন্ন স্থানে অবশ বা অসাড় লাগা
- ব্যথা
- সুঁই ফোঁটার মত অনুভূতি
- ঝিমঝিম বা খচখচ করা
- যৌন সমস্যা
- কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া
এমন কোনো লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। সময় থাকতে চিকিৎসা করা গেলে স্নায়ুর ক্ষতি গুরুতর হওয়া রোধ করা যায়।
পায়ের যত্ন
ডায়াবেটিস পায়ে রক্ত সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে। যার ফলে পা অবশ বা অসাড় লাগতে পারে। ফলে পায়ে কোনো আঘাত পেলে তা ভালোমতো অনুভব করা যায় না। এ ছাড়া ঘা-ক্ষত হলে তা সহজে সেরে উঠে না। একারণে পায়ে আলসার বা ইনফেকশনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পায়ের যত্নে খুব সাধারণ কিছু বিষয় লক্ষ রাখা জরুরি। যেমন—
- ইনফেকশন প্রতিরোধে পা সবসময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখা
- কাটাছেঁড়া এড়াতে খালি পায়ে বাইরে না যাওয়া
- আঘাত এড়াতে সঠিক মাপের (খুব আঁটসাঁট বা টাইট নয়, আবার বেশি ঢিলাও নয় এমন) জুতা পরা
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে পায়ে কোনো পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে কি না সেটি খেয়াল করা জরুরি। নিচের লক্ষণগুলোর কোনোটি দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে—
- কাটাছেঁড়া
- ঘা বা ক্ষত
- পা ফাটা
- ফোস্কা পড়া
- ব্যথা
- পা ঝিমঝিম অথবা খচখচ করা কিংবা সুঁই ফোঁটার মত অনুভূতি হওয়া
- পায়ের পাতা ও আঙুলে বোধ না পাওয়া
এ ছাড়া বছরে অন্তত একবার ডাক্তারের কাছে গিয়ে পা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
এই বিষয়ে আরও জানতে ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন আর্টিকেলটি পড়ুন।
চোখের যত্ন
ডায়াবেটিসের কারণে চোখের রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যার ফলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি নামক দৃষ্টিশক্তির এক ধরনের সমস্যা হতে পারে, এমনকি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে অন্ধত্বও দেখা দিতে পারে। তাই প্রতিবছর চোখ পরীক্ষা করিয়ে চোখের রক্তনালীগুলো স্বাভাবিক আছে কি না সেটি দেখা প্রয়োজন।
ডায়াবেটিক রোগীদের বাৎসরিক চোখ পরীক্ষাকে স্ক্রিনিং বলা হয়। সচরাচর চোখের যেসব পরীক্ষা করা হয় সেগুলো থেকে এই পরীক্ষাটি ভিন্ন। স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগেই চোখের সমস্যা খুঁজে বের করা যায়।
ডায়াবেটিসের কারণে চোখের যেসব সমস্যা হয় সেগুলো প্রতিরোধ করা এবং সারিয়ে তোলা সম্ভব। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানো খুব জরুরি।
চোখের দৃষ্টিতে নিচের ৩টি সমস্যাসহ যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ করলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে—
- চোখে (বিশেষত রাতে) ঝাপসা দেখা
- চোখের সামনে ছোটো ছোটো বিভিন্ন আকৃতির কিছু ভেসে বেড়াচ্ছে বলে মনে হওয়া
- আলোর প্রতি চোখের সংবেদনশীলতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়া
মুখ ও দাঁতের মাড়ির যত্ন
রক্তে সুগারের মাত্রা বেশি হলে দাঁতের মাড়ির বিভিন্ন রোগ ও ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই মুখের যত্ন নেওয়া জরুরি।
মুখ ও মাড়ি সুস্থ রাখতে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। যেমন—
- দাঁত পরিষ্কার রাখতে দিনে দুইবার ব্রাশ করুন
- কৃত্রিম দাঁতের পাটি ব্যবহার করলে তা নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন
- নিয়মিত দাঁতের ডাক্তার দেখান
- ধূমপান পরিহার করুন। ধূমপান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে মাড়ির ইনফেকশন হলে তা সহজে ভালো হয় না।
নিচের সমস্যাগুলোর সাথে মুখের কোনো সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হোন—
- মুখ, দাঁত অথবা মাড়িতে ব্যথা
- মাড়ি ফুলে যাওয়া
- রক্ত পড়া
- মুখে দুর্গন্ধ হওয়া