একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখাতে সাহায্য করবে। সাথে সাথে প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দিবে এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকতে সাহায্য করবে।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিত?
টাইপ ২ ডায়াবেটিস হলেই যে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়া একেবারে ছেড়ে দিতে হবে—তা নয়। আপনি বিভিন্ন রকমের খাবার খেতে পারবেন, তবে কিছু খাবার অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।
এক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ—
- বৈচিত্রময় খাবার খাওয়া: প্রতিদিন একই ধরনের খাবার না খেয়ে, নানান রকমের ফলমূল, শাকসবজি ও কিছু শ্বেতসার-জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন: লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি ও আলু।
- এসব খাবার কমিয়ে দিন: চিনি, লবণ ও চর্বিজাতীয় খাবারের পরিমাণ একেবারেই কমিয়ে দেওয়া, অর্থাৎ যতটুকু না খেলেই নয় ঠিক ততটুকুই খাওয়া।
- সময়মত খাবার খান: প্রতিদিন সকালের নাশতা, দুপুরের ও রাতের খাবার সময়মত খেতে হবে। কোনো বেলার খাবার যেন বাদ না পড়ে।
আপনার যদি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে একটু একটু করে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন। এভাবে পরিবর্তন আনা আপনার জন্য সহজ হবে। একেবারে সম্পূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেলার চেষ্টা না করাই ভালো।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় যা যা থাকতে হবে
একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম ডায়েটের জন্য পাচঁটি প্রধান গ্রুপ বা পদের খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এসব হচ্ছে—
- ফলমূল ও শাকসবজি
- শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার। যেমন: লাল বা বাদামী চালের ভাত, লাল আটার রুটি বা পাউরুটি
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। যেমন: ডিম, মাছ, মাংস, শিম ও অন্যান্য বীন, ডাল, বিভিন্ন ধরনের বাদাম
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার। যেমন: দই, ছানা ও পনির
- বিভিন্ন ধরনের তেল, মাখন, ঘি
আপনার দৈনিক কতটুকু খাবার ও পানীয় প্রয়োজন তা নির্ভর করে আপনার বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক পরিশ্রম এবং আপনি আপনার ওজন ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী ধরনের লক্ষ্য নির্ধারণ করছেন তার ওপর। সুষম খাদ্যাভ্যাসের অর্থ হল নির্দিষ্ট কিছু খাবার বেশি পরিমাণে এবং অন্যান্য খাবারগুলো কম পরিমাণে খাওয়া। আবার, কেবল এক ধরনের খাবার দেহের সব পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মূল হল বৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র্য আনা যায় প্রতিদিন মূল পাঁচটি গ্রুপের প্রত্যেকটি থেকে বিভিন্ন খাবার বেছে নেওয়ার মাধ্যমে।
এখানে প্রত্যেক গ্রুপের খাবার নিয়ে আলোচনা করা হবে। এগুলোর কোনোটি আপনার হার্টকে সুরক্ষিত রাখে, আবার কোনোটি রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এসব খাবারের সঠিক সমন্বয়ে তৈরি একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস কীভাবে ডায়াবেটিসের বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে তা জেনে রাখা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এখন পাঁচটি গ্রুপের প্রতিটির ভূমিকা, উপকারিতা, কোন গ্রুপ থেকে কী পরিমাণে খাবেন এবং কী কী খেতে পারেন তা তুলে ধরছি।
ফল ও সবজি
ডায়াবেটিস থাকলে যে আপনি ফলমূল খেতে পারবেন না এমন কোন কথা নেই। ফলমূল ও শাকসবজিতে সাধারণত ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে; এগুলো প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও আঁশ তথা ফাইবারে পরিপূর্ণ। তাছাড়া এগুলো প্রত্যেক বেলার খাবারে নতুন স্বাদ ও বৈচিত্র্য যোগ করে।
টাটকা, ফ্রোজেন, শুকানো কিংবা ক্যান ও টিনের বোতলে প্রক্রিয়াজাত যেকোন ধরনের ফলই খাওয়া যায়। শরীরের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের চাহিদা পুরণ করার জন্য যত প্রকারের রঙ-বেরঙের ফল খাবেন, ততই ভালো। তবে ফলের জুস ও স্মুদি না খেলেই ভালো, কারণ এতে আঁশের পরিমাণ খুব কম থাকে।
আপনি যদি খাদ্যতালিকায় থাকা শর্করার পরিমাণ কমিয়ে এনে লো-কার্ব ডায়েট মেনে চলতে চান, তাহলে হয়তো আপনি খাদ্যতালিকা থেকে ফল ও শাকসবজি বাদ দিতে চাইবেন। তবে এমনটা না করে এগুলো আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে নিচের তালিকা থেকে তুলনামূলকভাবে কম শর্করাযুক্ত শাকসবজি ও ফলমূল বেছে নিন।
ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার উপকারিতা
- আপনার পরিপাকতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে
- আপনার শরীরকে হার্টের বিভিন্ন সমস্যা, স্ট্রোক ও কয়েক ধরনের ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত রাখে
কী পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি খাবেন?
দিনে অন্তত পাঁচ পরিবেশন ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। এক পরিবেশন = এক হাতের তালুতে যে পরিমাণ খাবার আঁটে।
ডায়াবেটিস রোগী কোন ফল ও শাকসবজি খেতে পারেন?
- এক ফালি বাঙ্গি বা জাম্বুরা খেতে পারেন, সাথে একটু টক দই মিশিয়ে নিতে পারেন। যেকোনো ধরনের মৌসুমি ফলই খাওয়া ভালো
- খেজুর, আলুবোখারা এগুলোও খাওয়া যায়
- খিচুড়ি, পাস্তা ও অন্যান্য রান্নায় গাজর, মটরশুঁটি, বরবটি ও শিম ব্যবহার করুন
- ভাতের সাথে মটরশুঁটি, মাংসে বেশি করে পেঁয়াজ বা একমুঠো পালংশাকও যোগ করা যেতে পারে
- কম শর্করাযুক্ত শাকসবজির উৎস হিসেবে মাশরুম, শশা, পালংশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি ও লেটুস খাওয়া যেতে পারে
- বরই ও তরমুজ কম শর্করাযুক্ত ফলের ভালো উৎস। যারা দেশের বাইরে থাকেন তারা বিদেশি ফলের মধ্যে আভোকাডো, পীচ ও বিভিন্ন বেরি খেতে পারেন
শ্বেতসার-সমৃদ্ধ খাবার
শ্বেতসার-সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে আলু, ভাত, রুটি, নানরুটি, পাস্তা, পাউরুটি ও কাঁচকলা। এগুলোর সবগুলোতেই শর্করা থাকে, যেগুলো আমাদের শরীরের ভেতরে ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয়। এই গ্লুকোজই আমাদের দেহের কোষগুলোর জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।
সমস্যা হল, কিছু শ্বেতসারজাতীয় খাবার খুব দ্রুত রক্তে সুগার তথা গ্লুকজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এসব খাবারকে বলা হয় উচ্চ ‘গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই)’-যুক্ত খাবার।
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) কী?
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এমন একটি স্কেল যা একটি খাবার রক্তে সুগারের মাত্রা কত দ্রুত বা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে দেয় তার ওপর ভিত্তি করে বানানো। যেসব খাবার রক্তে সুগারের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, সেগুলোর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি, আর যেগুলো রক্তে সুগারের মাত্রাকে ধীরে ধীরে প্রভাবিত করে সেগুলোর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম।
কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের খাবারগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ভালো। এমন কিছু শ্বেতসারজাতীয় খাবার হল লাল চাল ও বাসমতি চালের ভাত, লাল আটার রুটি ও পাস্তা এবং লাল আটার পাউরুটি। এগুলোতে আঁশের পরিমাণও বেশি থাকে, যা আপনার পরিপাকতন্ত্রকে ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। তাই খাবারে শর্করার পরিমাণ কমাতে চাইলে আগে সাদা চালের ভাত ও সাধারণ আটা-ময়দার রুটি ও পাউরুটি খাওয়া কমান।
শ্বেতসার-সমৃদ্ধ খাবারের উপকারিতা
- এসব খাবারের আঁশ আপনার পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে
- নির্দিষ্ট কিছু শ্বেতসার আপনার রক্তে সুগারের মাত্রাকে ধীরে ধীরে প্রভাবিত করে
- গোটা শস্যদানা আপনার হার্টকে সুরক্ষিত রাখে
কী পরিমাণ শ্বেতসার-সমৃদ্ধ খাবার খাবেন?
প্রতিদিনই কিছু পরিমাণে শ্বেতসারযুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
ডায়াবেটিস রোগী কোন শ্বেতসার-সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন?
- লাল চালের ভাত
- লাল আটার রুটি, চাপাতি, পাস্তা ও নুডল্স
- বিভিন্ন ধরনের শস্যদানা থেকে বানানো হোল্গ্রেইন ও মাল্টিগ্রেইন পাউরুটি
- খোসাসহ সেদ্ধ বা বেক করা মিষ্টি আলু
প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার
ডিম ও মাছ-মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা আপনার পেশীকে সুস্থ রাখে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস গড়ে তুলতে খাদ্যতালিকা থেকে লাল মাংস (যেমন গরু, খাসি ও ভেড়ার মাংস) ও প্রক্রিয়াজাত মাংস (সসেজ, পেপারনি ও সালামি)-এর পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে, কারণ এগুলো খাওয়ার সাথে ক্যান্সার ও হার্টের রোগের সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
সামুদ্রিক মাছসহ বিভিন্ন তৈলাক্ত মাছে প্রচুর ওমেগা-৩ থাকে, যা হার্টকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। অন্যান্য প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে শিম, বরবটি ও অন্যান্য বীনজাতীয় খাবার, ডাল এবং বিভিন্ন ধরনের বাদাম; যারা নিরামিষাশী বা ভেগান খাদ্যাভ্যাস মেনে চলেন তাদের জন্য এগুলো প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে।
প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারের উপকারিতা
- এগুলো আপনার পেশীকে সুস্থ রাখে
- তৈলাক্ত মাছ আপনার হার্টকে সুস্থ রাখে
কী পরিমাণ প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার খাবেন?
প্রতিদিনই এই গ্রুপ থেকে কিছু কিছু খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে সপ্তাহে এক বা দুই পরিবেশন তৈলাক্ত মাছ খান, তবে প্রতিদিন মাংস খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
ডায়াবেটিস রোগী কোন প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন?
- নাস্তায় ছোট এক মুঠ বাদাম খাওয়া যেতে পারে, প্রয়োজনে সালাদের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন
- মাংসের পরিবর্তে রান্নায় ডাল বা শিমের বীচি ব্যবহার করতে পারেন
- ডিম সেদ্ধ, পোচ বা ভাজি – যেভাবে আপনার পছন্দ সেভাবেই খেতে পারেন
- কম তেল-মশলায় রান্না, গ্রিল ও বেক করা মাছ-মাংস খাওয়া যেতে পারে
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
দুধ, পনির ও দই-এ প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন থাকে, যা আপনার হাড়, দাঁত ও পেশীর গঠনের জন্য খুব উপকারী। কিন্তু কিছু দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে চর্বি, বিশেষ করে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই কম চর্বিযুক্ত বিকল্পগুলো বেছে নেওয়া জরুরি।
তবে সেক্ষেত্রে এসব বিকল্প যেন অতিরিক্ত চিনিমুক্ত হয় সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারের উপকারিতা
- হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য উপকারী
- আপনার পেশীকে সুস্থ রাখে
কী পরিমাণ দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাবেন?
আমাদের প্রতিদিনই গড়ে ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
ডায়াবেটিস রোগী কোন দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খেতে পারেন?
- এক গ্লাস দুধ সরাসরি খেতে পারেন, বা গন্ধ ভালো না লাগলে এতে অল্প পরিমাণে দারুচিনি দিয়ে নিতে পারেন। ওটস বা নাস্তায় সিরিয়ালের সাথে মিশিয়েও দুধ খেতে পারেন
- ফল বা তরকারির সাথে টক দই মিশিয়ে খাওয়া যায়
- গাজর ও শসার সাথে পনির খেতে পারেন নাস্তা হিসেবে
- সন্ধ্যার নাস্তার সাথে লাচ্ছি, মাঠা বা সাধারণ দই খেতে পারেন
চর্বি ও বিভিন্ন ধরনের তেল
ডায়াবেটিস রোগীর দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় কিছু চর্বিজাতীয় খাবার থাকা প্রয়োজন। তবে স্যাচুরেটেড ফ্যাট প্রয়োজন খুব কম। স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়, যা পরবর্তীতে হার্টের বিভিন্ন রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। মাখন, নারিকেল তেল ও পাম অয়েল এ ধরনের অধিক স্যাচুরেটেড ফ্যাট-যুক্ত তেল।
এগুলোর স্বাস্থ্যকর বিকল্প হলো কম পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট আছে এমন তেল (যেমন: অলিভ অয়েল বা অন্যান্য ভেজিটেবল অয়েল) ও বাদাম থেকে তৈরি বাটার (যেমন: পিনাট বাটার, আমন্ড বাটার)।
চর্বি ও তেলের উপকারিতা
- অসম্পৃক্ত বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট আপনার হার্টকে সুস্থ রাখে
ডায়াবেটিস রোগী কোন তেল খেতে পারেন?
- সালাদে অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল দিয়ে খেতে পারেন
- টোস্টের সাথে সাধারণ মাখনের পরিবর্তে পিনাট বাটার খেতে পারেন
ডায়াবেটিস রোগী যে খাবার এড়িয়ে চলবেন
অতিরিক্ত চর্বি, লবণ ও চিনিসমৃদ্ধ খাবার—এসব যত কম খাওয়া যায়, ততই ভালো। কিন্তু আমরা জানি সব সময় এসব খাবার এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়, তাই আপনার শরীরের ওপর এগুলো কী ধরনের প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি।
এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে বিস্কুট, চিপ্স, চকলেট, কেক, আইসক্রিম, মাখন ও অতিরিক্ত চিনি দেওয়া কোমল পানীয়। এসব খাবার ও পানীয়তে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে, এবং এরা রক্তে সুগারের মাত্রা অনেক বাড়িয়ে দেয়। তাই চিনিমুক্ত, কম ক্যালরির বিকল্প খুঁজে নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো, উপাদেয় পানীয় হল পানি—এতে কোনো ক্যালরি নেই।
এগুলোতে অস্বাস্থ্যকর স্যাচুরেটেড ফ্যাটও প্রচুর পরিমাণে থাকে। তাই এগুলো রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং আপনার হার্টের স্বাস্থ্য—কোনটির জন্যই মোটেও ভালো নয়। এছাড়া এসব খাবারে, বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রচুর লবণও থাকে। অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। দিনে মোট ১ চা চামচ (৬ গ্রাম) এর বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।
আমরা কখনোই বিশেষ ডায়াবেটিক আইক্রিম বা মিষ্টি খাওয়ার পরামর্শ দেই না। কোন খাবারকে “ডায়াবেটিক” খাবার বলা আসলে নীতিবিরুদ্ধ কারণ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ছাড়া এই ধরনের কোনো খাবারে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়—এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এসব খাবার খাওয়া কমানোর উপায়
- সম্পূর্ণভাবে বাড়িতে রান্না করা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে আপনি কী পরিমাণে লবণ খাচ্ছেন তা সঠিকভাবে খেয়াল রাখতে পারবেন।
- চিনি ছাড়া চা-কফি খাওয়ার চেষ্টা করুন। এগুলো ফলের জুস বা স্মুদির থেকে ভালো, কারণ তাতে অতিরিক্ত শর্করা বা ক্যালরি থাকে না।
- খাবারের সাথে কাঁচা লবণ খাওয়া বন্ধ করে দিন – এর পরিবর্তে গোল মরিচের গুঁড়া এবং অন্যান্য মশলা ও হার্ব ব্যবহার করে স্বাদে নতুনত্ব আনা যেতে পারে।
- দোকানের সস ও মশলা মিক্স না কিনে বাড়িতেই বিভিন্ন সস ও ম্যারিনেট করার মশলা তৈরী করে খান।